রাজাবলির দ্বিতীয় খণ্ড ২৩:১-৩৭

২৩  তাই, রাজা আদেশ দিলেন আর তারা যিহূদা ও জেরুসালেমের সমস্ত প্রাচীনকে ডেকে পাঠাল। ২  এরপর, রাজা যোশিয় যিহূদার সমস্ত লোক, যাজক ও ভাববাদীকে ও সেইসঙ্গে জেরুসালেমের সাধারণ ও উঁচুশ্রেণীর সমস্ত লোককে নিয়ে যিহোবার গৃহে গেলেন। তারপর, তিনি সবাইকে চুক্তির সেই পুস্তকের সমস্ত কথা পড়ে শোনালেন, যেটা যিহোবার গৃহে পাওয়া গিয়েছিল। ৩  রাজা স্তম্ভের পাশে দাঁড়ালেন আর তিনি যিহোবার সামনে এই চুক্তি* করলেন যে, তিনি যিহোবাকে অনুসরণ করবেন আর সমস্ত হৃদয় এবং সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাঁর আজ্ঞা, নিয়ম এবং তিনি যে-নির্দেশনাগুলো স্মরণ করিয়ে দেন, সেগুলো পালন করবেন আর এই পুস্তকে লেখা চুক্তির কথাগুলো সবসময় পালন করবেন। তখন সমস্ত লোক এই চুক্তি অনুসারে কাজ করার জন্য একমত হল। ৪  এরপর, রাজা মহাযাজক হিল্কিয়কে, দ্বিতীয় শ্রেণীর যাজকদের এবং দারোয়ানদের আদেশ দিলেন, যেন তারা যিহোবার মন্দির থেকে সেইসমস্ত বাসনপত্র বের করে দেয়, যেগুলো বাল, উপাসনার খুঁটি* এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তারপর, তিনি সেগুলো জেরুসালেমের বাইরে নিয়ে গিয়ে কিদ্রোণের ঢালু জায়গায় পুড়িয়ে দিলেন আর সেগুলোর ছাই বৈথেলে নিয়ে গেলেন। ৫  তিনি অন্য দেবতাদের যাজকদের দূর করে দিলেন, যাদের যিহূদার রাজারা যিহূদার নগরগুলোর এবং জেরুসালেমের আশেপাশের উঁচু জায়গাগুলোতে বলি উৎসর্গ করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন, যাতে বলি থেকে ধোঁয়া বের হয়। এ ছাড়া, তিনি সেই লোকদেরও দূর করে দিলেন, যারা বাল, সূর্য, চাঁদ, রাশিচক্রের নক্ষত্রপুঞ্জ এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীর জন্য বলি উৎসর্গ করত, যাতে বলি থেকে ধোঁয়া বের হয়। ৬  তিনি যিহোবার গৃহ থেকে উপাসনার খুঁটি* বের করে জেরুসালেমের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে সেটাকে পুড়িয়ে দিলেন। তারপর, তিনি সেটাকে গুঁড়ো করলেন এবং সেটার ধুলো সাধারণ লোকদের কবরের উপর ছড়িয়ে দিলেন। ৭  এ ছাড়া, তিনি যিহোবার গৃহে অবস্থিত মন্দিরের পুরুষ-বেশ্যাদের ঘরগুলো ভেঙে দিলেন। সেই ঘরগুলোতে মহিলারা উপাসনার খুঁটির* জন্য উপাসনার তাঁবু বুনত। ৮  তারপর, তিনি যিহূদার নগরগুলো থেকে সমস্ত যাজককে বের করে আনলেন। আর তিনি গেবা থেকে শুরু করে বের্‌-শেবা পর্যন্ত সমস্ত উঁচু জায়গাকে উপাসনার অযোগ্য করে তুললেন। সেই জায়গাগুলোতে যাজকেরা বলি উৎসর্গ করত, যাতে বলি থেকে ধোঁয়া বের হয়। তিনি নগরের অধ্যক্ষ যিহোশূয়ের দরজার পাশে অবস্থিত সেই উঁচু জায়গাগুলোও ধ্বংস করে দিলেন, যেগুলো নগরে ঢোকার সময় বাঁ-দিকে পড়ত। ৯  উঁচু জায়গাগুলোর যাজকদের জেরুসালেমে যিহোবার বেদির সামনে সেবা করতে দেওয়া হল না, কিন্তু তারা অন্য যাজকদের সঙ্গে খামিরবিহীন* রুটি খেত। ১০  এ ছাড়া, রাজা হিন্নোম উপত্যকায়* অবস্থিত তোফৎকেও* উপাসনার অযোগ্য করে তুললেন। তিনি এমনটা করলেন, যাতে কেউ নিজের ছেলে বা মেয়েকে মোলকের উদ্দেশে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করতে না পারে।* ১১  আর রাজা সূর্যের কাছে উৎসর্গীকৃত* ঘোড়াগুলোকে যিহোবার গৃহে নিয়ে যেতে নিষেধ করলেন। এই ঘোড়াগুলোকে যিহূদার রাজারা সূর্যের কাছে উৎসর্গ করেছিলেন আর এগুলোকে স্তম্ভের বারান্দার পাশে অবস্থিত রাজকর্মচারী নথন-মেলকের ঘরের* মধ্য দিয়ে গৃহে নিয়ে যাওয়া হত। আর রাজা সূর্যের কাছে উৎসর্গীকৃত রথগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিলেন। ১২  এ ছাড়া, আহসের উপরের ঘরের ছাদে যিহূদার রাজারা যে-সমস্ত বেদি স্থাপন করেছিলেন, রাজা সেই বেদিগুলোও ভেঙে দিলেন আর তিনি সেই বেদিগুলোও ধ্বংস করে দিলেন, যেগুলো মনঃশি যিহোবার গৃহের দুই প্রাঙ্গণে স্থাপন করেছিলেন। তিনি সেই বেদিগুলো চূর্ণবিচূর্ণ করে সেগুলোর ধুলো কিদ্রোণ উপত্যকায় ছড়িয়ে দিলেন। ১৩  আর জেরুসালেমের সামনে এবং ধ্বংসের পর্বতের* দক্ষিণ দিকে* যে-উঁচু জায়গাগুলো ছিল, সেগুলোকেও রাজা উপাসনার অযোগ্য করে তুললেন। এই উঁচু জায়গাগুলো ইজরায়েলের রাজা শলোমন সীদোনীয়দের জঘন্য দেবী অষ্টারোৎ, মোয়াবের জঘন্য দেবতা কমোশ এবং অম্মোনীয়দের জঘন্য দেবতা মিল্‌কমের জন্য তৈরি করেছিলেন। ১৪  রাজা যোশিয় উপাসনার স্তম্ভগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন, উপাসনার খুঁটিগুলো* কেটে দিলেন এবং সেগুলো যে-জায়গাগুলোতে অবস্থিত ছিল, সেগুলোকে মানুষের হাড় দিয়ে ভরিয়ে দিলেন। ১৫  এ ছাড়া, নবাটের ছেলে যারবিয়াম বৈথেলে যে-বেদি এবং উঁচু জায়গা স্থাপন করে ইজরায়েলেকে দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন, তিনি সেগুলোও ধ্বংস করে দিলেন। তারপর, তিনি সেই উঁচু জায়গা আগুনে পুড়িয়ে দিলেন, সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন এবং উপাসনার খুঁটিটা* পুড়িয়ে দিলেন। ১৬  যোশিয় যখন ঘুরে পর্বতের উপরে অবস্থিত কবরগুলো দেখলেন, তখন তিনি সেগুলোর মধ্য থেকে হাড়গোড় বের করিয়ে সেগুলো সেই বেদির উপর পোড়ালেন, যাতে সেটা উপাসনার অযোগ্য হয়ে ওঠে। এভাবে যিহোবার সেই কথা পূর্ণ হল, যেটা তিনি তাঁর দাসের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন। সত্য ঈশ্বরের সেই দাস ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, এই সমস্ত কিছু ঘটবে। ১৭  এরপর, যোশিয় জিজ্ঞেস করলেন: “এই কবরটা কার?” নগরের লোকেরা তাকে বলল: “এটা সত্য ঈশ্বরের সেই দাসের কবর, যিনি যিহূদা থেকে এসেছিলেন। আপনি বৈথেলের বেদির প্রতি যা করলেন, তিনিই সেই বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন।” ১৮  তখন রাজা বললেন: “তার কবরটা ছেড়ে দাও। কেউ যেন তার হাড়গুলো না ছোঁয়।” তাই, তারা তার হাড়গুলো ছুঁল না আর তারা শমরিয়া থেকে আসা ভাববাদীর হাড়গুলোও ছুঁল না। ১৯  যোশিয় শমরিয়ার নগরগুলোর উঁচু জায়গাগুলোতে অবস্থিত সমস্ত উপাসনার ঘরও ধ্বংস করে দিলেন। ইজরায়েলের রাজারা এই উপাসনার ঘরগুলো তৈরি করে ঈশ্বরকে রাগিয়ে তুলেছিলেন। যোশিয় বৈথেলের উঁচু জায়গার প্রতি যা করেছিলেন, এগুলোর প্রতিও তা-ই করলেন। ২০  যে-যাজকেরা উঁচু জায়গাগুলোতে সেবা করত, তিনি বেদিগুলোর উপর তাদের বলি দিলেন আর সেই বেদিগুলোর উপর মানুষের হাড় পোড়ালেন। এরপর, তিনি জেরুসালেমে ফিরে গেলেন। ২১  তারপর, রাজা সমস্ত লোককে আজ্ঞা দিলেন: “তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার জন্য নিস্তারপর্ব পালন করো, ঠিক যেমনটা চুক্তির এই পুস্তকে লেখা আছে।” ২২  যোশিয়ের দিনে যেভাবে নিস্তারপর্ব পালন করা হল, ইজরায়েলের বিচারকদের সময় থেকে শুরু করে ইজরায়েলের রাজাদের সময় এবং যিহূদার রাজাদের সময় পর্যন্ত কখনো সেভাবে নিস্তারপর্ব পালন করা হয়নি। ২৩  যোশিয়ের রাজত্বের ১৮তম বছরে জেরুসালেমে যিহোবার উদ্দেশে এই নিস্তারপর্ব পালন করা হল। ২৪  এ ছাড়া, যোশিয় যিহূদা ও জেরুসালেম থেকে সেই লোকদের বের করে দিলেন, যারা মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার দাবি করত এবং ভবিষ্যৎ বলে দিত। এর পাশাপাশি তিনি কুলদেবতাদের মূর্তি, জঘন্য মূর্তি* এবং অন্যান্য সমস্ত জঘন্য জিনিস দূর করে দিলেন। যিহোবার গৃহে যাজক হিল্কিয় যে-পুস্তকটা খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটাতে লেখা ব্যবস্থার কথাগুলো পালন করার জন্য যোশিয় এই সমস্ত কাজ করলেন। ২৫  যোশিয়ের আগে এমন কোনো রাজা ছিলেন না, যিনি মোশির ব্যবস্থা পালন করে নিজের সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ এবং সমস্ত শক্তির সঙ্গে যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিলেন। যোশিয়ের পরেও এইরকম কোনো রাজা হননি। ২৬  তারপরও, যিহূদার বিরুদ্ধে যিহোবার ক্রোধের আগুন জ্বলতে থাকল কারণ মনঃশি অনেক মন্দ কাজ করে তাঁকে রাগিয়ে তুলেছিলেন। ২৭  যিহোবা বললেন: “ঠিক যেভাবে আমি ইজরায়েলকে দূর করে দিয়েছি, সেভাবেই আমি যিহূদাকেও আমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দেব। আমি যে-জেরুসালেম নগরকে বেছে নিয়েছিলাম, সেই নগরকে প্রত্যাখ্যান করব এবং যে-গৃহের বিষয়ে বলেছিলাম, ‘এটার সঙ্গে আমার নাম চিরকাল জুড়ে থাকবে,’ সেই গৃহকেও প্রত্যাখ্যান করব।” ২৮  যোশিয়ের জীবনের বাকি কাহিনি এবং তার সমস্ত কাজের বিবরণ যিহূদার রাজাদের ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে। ২৯  তার সময়ে মিশরের রাজা ফরৌণ নখো অশূরের রাজাকে সাহায্য করার জন্য ইউফ্রেটিস* নদীর কাছে এলেন। তখন রাজা যোশিয় নখোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। কিন্তু, নখো যখন যোশিয়কে দেখলেন, তখন তিনি মগিদ্দোয় তাকে মেরে ফেললেন। ৩০  যোশিয়ের সেবকেরা তার মৃতদেহ রথে করে মগিদ্দো থেকে জেরুসালেমে নিয়ে এল এবং তাকে তার কবরে কবর দিল। তারপর, যিহূদার লোকেরা যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াহসকে অভিষেক করল এবং তাকে তার বাবার জায়গায় রাজা করল। ৩১  যিহোয়াহস ২৩ বছর বয়সে রাজা হলেন আর তিনি জেরুসালেম থেকে তিন মাস রাজত্ব করলেন। তার মায়ের নাম ছিল হমূটল, যিনি লিব্‌নার বাসিন্দা যিরমিয়ের মেয়ে ছিলেন। ৩২  যিহোয়াহস তার পূর্বপুরুষদের মতো যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করতে লাগলেন। ৩৩  ফরৌণ নখো তাকে হমাৎ দেশের রিব্‌লায় কারাগারে বন্দি করে রাখলেন, যাতে তিনি জেরুসালেমে রাজত্ব করতে না পারেন। তারপর, নখো যিহূদা দেশকে ১০০ তালন্ত* রুপো এবং এক তালন্ত সোনা জরিমানা করলেন। ৩৪  আর ফরৌণ নখো যোশিয়ের জায়গায় তার ছেলে ইলীয়াকীমকে রাজা করলেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে যিহোয়াকীম রাখলেন। কিন্তু, নখো যিহোয়াহসকে মিশরে নিয়ে গেলেন, যেখানে পরবর্তী সময়ে তিনি মারা গেলেন। ৩৫  যিহোয়াকীম ফরৌণকে সেই রুপো ও সোনা দিলেন। কিন্তু, তার দাবি পূরণ করার জন্য তাকে দেশের জমির উপর কর চাপাতে হল। যিহোয়াকীম প্রত্যেক ব্যক্তির জমির মূল্য অনুযায়ী তার কাছ থেকে সোনা-রুপো আদায় করলেন, যাতে ফরৌণ নখোকে তা দিতে পারেন। ৩৬  যিহোয়াকীম ২৫ বছর বয়সে রাজা হলেন আর তিনি জেরুসালেম থেকে যিহূদার উপর এগারো বছর ধরে রাজত্ব করলেন। তার মায়ের নাম ছিল সবীদা, যিনি রূমার বাসিন্দা পদায়ের মেয়ে ছিলেন। ৩৭  যিহোয়াকীম তার পূর্বপুরুষদের মতোই যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করতে থাকলেন।

পাদটীকাগুলো

বা “সামনে পুনরায় এই চুক্তি।”
শব্দকোষ দেখুন।
শব্দকোষ দেখুন।
শব্দকোষ দেখুন।
অর্থাৎ ইস্ট অথবা ইস্ট-জাতীয় দ্রব্যবিহীন। শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “হিন্নোমের ছেলেদের উপত্যকায়।” শব্দকোষ দেখুন, “গিহেন্না।”
জেরুসালেমের বাইরে অবস্থিত একটা জায়গা, যেখানে ধর্মভ্রষ্ট ইজরায়েলীয়েরা শিশুদের বলি দিত।
আক্ষ., “আগুনের মধ্য দিয়ে পার না করায়।”
আক্ষ., “সূর্যকে দেওয়া।”
বা “খাওয়ার ঘরের।”
অর্থাৎ জৈতুন পর্বত, বিশেষ করে দক্ষিণের প্রান্ত, যেটাকে অপরাধের পর্বতও বলা হত।
আক্ষ., “ডান দিকে।” অর্থাৎ যখন কেউ পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়ায়, তখন তার দক্ষিণ দিক।
শব্দকোষ দেখুন।
শব্দকোষ দেখুন।
এরজন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় শব্দ সম্ভবত “মলের” জন্য ব্যবহৃত শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর এটা এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যে, বস্তুটা কতটা ঘৃণ্য।
বা “ফরাৎ।”
এক তালন্ত সমান ৩৪.২ কিলোগ্রাম। পরিশিষ্টের খ১৪ দেখুন।