লূক লিখিত সুসমাচার ৭:১-৫০

  • একজন সেনাপতির বিশ্বাস (১-১০)

  • নায়িন নগরে যিশু একজন বিধবার ছেলেকে পুনরুত্থিত করেন (১১-১৭)

  • যোহন বাপ্তাইজকের প্রশংসা করা হয় (১৮-৩০)

  • সাড়া দেয় না এমন প্রজন্মের নিন্দা করা হয় (৩১-৩৫)

  • যিশু একজন পাপী মহিলাকে ক্ষমা করে দেন (৩৬-৫০)

    • ঋণীদের বিষয়ে দৃষ্টান্ত (৪১-৪৩)

৭  লোকদের এইসমস্ত কথা বলে শেষ করার পর যিশু কফরনাহূমে গেলেন। ২  সেখানে একজন সেনাপতি ছিলেন, যার এক দাস খুবই অসুস্থ হয়ে প্রায় মরণা­পন্ন অবস্থায় ছিল। সেই দাসকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। ৩  তিনি যখন যিশুর বিষয়ে শুনতে পেলেন, তখন তিনি কয়েক জন যিহুদি নেতাকে তাঁর কাছে পাঠালেন, যেন তারা তাঁকে আসার জন্য এবং তার দাসকে সুস্থ করার জন্য অনুরোধ করে। ৪  তারা যিশুর কাছে এসে তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করে বলতে লাগল: “তাকে সাহায্য করুন, তিনি এর যোগ্য, ৫  কারণ তিনি আমাদের জাতিকে ভালোবাসেন, এমনকী আমাদের সমাজগৃহ তৈরি করে দিয়েছেন।” ৬  তখন যিশু তাদের সঙ্গে গেলেন। কিন্তু, তিনি বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন, এমন সময় সেই সেনাপতি তার বন্ধুদের এই বলে পাঠালেন: “প্রভু, আপনার এত কষ্ট করার দরকার নেই, কারণ আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার বাড়িতে আসবেন। ৭  আর আমিও আপনার কাছে আসার জন্য নিজেকে যোগ্য বলে মনে করিনি। আপনি শুধু মুখে বলুন, তা হলেই আমার দাস সুস্থ হয়ে যাবে। ৮  কারণ আমি কর্তৃপক্ষের অধীন এবং আমার অধীনেও সৈন্যেরা রয়েছে আর আমি যখন তাদের একজনকে বলি, ‘যাও!’ তখন সে যায়; আবার যখন আরেকজনকে বলি, ‘এসো!’ তখন সে আসে; আর যখন আমার দাসকে বলি, ‘এটা করো!’ তখন সে তা করে।” ৯  এইসমস্ত কথা শুনে যিশু অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন এবং যে-লোকেরা তাঁর পিছন পিছন আসছিল, তাদের দিকে ঘুরে তাকিয়ে তিনি বললেন: “আমি তোমাদের বলছি, এমনকী ইজরায়েলে কোনো ব্যক্তির মধ্যেও আমি এমন গভীর বিশ্বাস দেখিনি।” ১০  আর যাদের পাঠানো হয়েছিল, তারা যখন বাড়িতে ফিরে এল, তখন তারা দেখল, সেই দাস সুস্থ হয়ে গিয়েছে। ১১  পরে তিনি নায়িন্‌ নামে এক নগরে গেলেন আর তাঁর সঙ্গে তাঁর শিষ্যেরা এবং অনেক লোক গেল। ১২  তিনি যখন নগরের দ্বারের কাছে এলেন, তখন দেখো! লোকেরা খাটিয়ায় করে একজন মৃত ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। সে তার মায়ের একমাত্র ছেলে আর তার মা বিধবা ছিল। নগরের অনেক লোকও সেই মায়ের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। ১৩  যখন প্রভু তাকে দেখতে পেলেন, তখন তিনি তার জন্য গভীর সমবেদনা বোধ করলেন এবং তাকে বললেন: “কেঁদো না।” ১৪  পরে তিনি কাছে গিয়ে সেই খাটিয়া স্পর্শ করলেন, এতে বাহকেরা দাঁড়িয়ে পড়ল। আর তিনি বললেন: “হে যুবক, আমি তোমাকে বলছি, ওঠো!” ১৫  তখন সেই মৃত ব্যক্তি উঠে বসল এবং কথা বলতে লাগল আর যিশু তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। ১৬  এতে সকলে খুব ভয় পেয়ে গেল এবং এই বলে ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল: “আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদী এসেছেন” আর “ঈশ্বর তাঁর লোকদের স্মরণ করেছেন।” ১৭  তাঁর এই কাজের কথা সমস্ত যিহূদিয়া এবং আশেপাশের সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল। ১৮  পরে যোহনের শিষ্যেরা এই সমস্ত বিষয় যোহনকে জানাল। ১৯  তখন যোহন তার দু-জন শিষ্যকে ডেকে প্রভুকে এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য পাঠালেন: “আপনিই কি সেই ব্যক্তি, যাঁর আসার কথা ছিল, না কি আমরা অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করব?” ২০  সেই শিষ্যেরা যিশুর কাছে এসে তাঁকে বলল: “যোহন বাপ্তাইজক আপনাকে এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য আমাদের পাঠিয়েছেন, ‘আপনিই কি সেই ব্যক্তি, যাঁর আসার কথা ছিল, না কি আমরা অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করব?’” ২১  সেই সময়ই তিনি অনেক লোকের অসুস্থতা এবং গুরুতর রোগ দূর করলেন, অনেকের মধ্য থেকে মন্দ স্বর্গদূত বের করে দিলেন আর অনেক অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ২২  পরে উত্তরে তিনি তাদের বললেন: “তোমরা যাও, যা যা শুনেছ ও দেখেছ, তা যোহনকে জানাও: অন্ধ ব্যক্তিরা এখন দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়া ব্যক্তিরা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা শুচি হচ্ছে, বধির ব্যক্তিরা শুনতে পাচ্ছে, মৃত ব্যক্তিদের জীবিত করা হচ্ছে এবং দরিদ্রদের সুসমাচার জানানো হচ্ছে। ২৩  সুখী সেই ব্যক্তি, যে আমার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করে* না।” ২৪  যোহনের বার্তাবাহকেরা চলে যাওয়ার পর, যিশু লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন: “তোমরা প্রান্তরে কী দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে দুলতে থাকা নলখাগড়া? ২৫  তাহলে কী দেখতে গিয়েছিলে? মোলায়েম* কাপড়পরা কোনো ব্যক্তিকে? যারা জমকালো পোশাক পরে এবং বিলাসী জীবনযাপন করে, তারা তো রাজপ্রাসাদে থাকে। ২৬  তাহলে কী দেখতে গিয়েছিলে? কোনো ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তিনি একজন ভাববাদী, এমনকী ভাববাদীর চেয়েও মহান। ২৭  ইনিই সেই ব্যক্তি, যার বিষয়ে লেখা আছে: ‘দেখো! আমি তোমার আগে আমার বার্তাবাহককে পাঠাচ্ছি আর সে তোমার আগে তোমার জন্য পথ প্রস্তুত করবে।’ ২৮  আমি তোমাদের বলছি, নারীদের গর্ভ থেকে যত মানুষের জন্ম হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউই যোহনের চেয়ে মহান নয়, কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যে যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তি, সে যোহনের চেয়ে মহান।” ২৯  (আর সমস্ত লোক এবং কর আদায়কারীরা যখন এই কথা শুনল, তখন তারা ঈশ্বরকে ন্যায়পরায়ণ বলে স্বীকার করল, কারণ তারা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। ৩০  কিন্তু, ফরীশীরা ও ব্যবস্থাবেত্তারা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নেয়নি বলে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে চাইল না।) ৩১  যিশু আরও বললেন: “আমি এই প্রজন্মের লোকদের কাদের সঙ্গে তুলনা করব আর তারা কাদের মতো? ৩২  এরা এমন ছোটো ছেলে-মেয়েদের মতো, যারা বাজারে বসে একে অন্যকে ডেকে বলে: ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম কিন্তু তোমরা নাচলে না; আমরা বিলাপ করলাম কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’ ৩৩  একইভাবে, যোহন বাপ্তাইজক এসে সাধারণ লোকদের মতো ভোজন-পান করেননি আর তাই তোমরা বল: ‘তাকে মন্দ স্বর্গদূতে পেয়েছে।’ ৩৪  মনুষ্যপুত্র* এসে সাধারণ লোকদের মতো ভোজন-পান করেন আর তাই তোমরা বল, ‘ওই দেখো! একজন পেটুক ও মদ্যপায়ী, কর আদায়কারীদের ও পাপীদের বন্ধু!’ ৩৫  কিন্তু, প্রজ্ঞা নিজ ফলের* মাধ্যমেই সঠিক* বলে প্রমাণিত হয়।” ৩৬  পরে একজন ফরীশী তাঁকে বার বার তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে লাগল। তাই, তিনি সেই ফরীশীর বাড়িতে প্রবেশ করে টেবিলে খেতে* বসলেন। ৩৭  আর দেখো! সেই নগরে একজন মহিলা ছিল, যাকে সবাই পাপী বলে মনে করত। সে যখন জানতে পারল, যিশু সেই ফরীশীর বাড়িতে খেতে* বসেছেন, তখন সে একটা শ্বেতপাথরের বোতলে সুগন্ধি তেল নিয়ে এল। ৩৮  পরে সে যিশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে বসে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখের জলে যিশুর পা ভিজিয়ে দিতে লাগল আর সে তার মাথার চুল দিয়ে যিশুর পা মুছে দিল। এরপর সে তাঁর পায়ে কোমলভাবে চুম্বন করল এবং সুগন্ধি তেল ঢেলে দিল। ৩৯  তা দেখে যে-ফরীশী তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, সে মনে মনে বলতে লাগল: “এই ব্যক্তি যদি সত্যিই একজন ভাববাদী হতেন, তা হলে তিনি জানতেন, তাঁকে যে স্পর্শ করছে, সে কে এবং কেমন মহিলা আর তিনি বুঝতে পারতেন, এই মহিলা পাপী।” ৪০  কিন্তু, তার চিন্তা বুঝতে পেরে যিশু তাকে বললেন: “শিমোন,* আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।” এতে শিমোন বললেন: “গুরু, বলুন!” ৪১  “দু-জন ব্যক্তি একজন মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল; একজন ৫০০ দিনার* এবং আরেকজন ৫০ দিনার। ৪২  যেহেতু তাদের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য ছিল না, তাই মহাজন তাদের ঋণ পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিলেন। তাহলে, সেই দু-জনের মধ্যে কে তাকে বেশি ভালোবাসবে?” ৪৩  উত্তরে শিমোন বললেন: “আমার মনে হয়, যে-ব্যক্তির বেশি ঋণ ক্ষমা করা হয়েছিল, সে।” যিশু তাকে বললেন: “তুমি সঠিক উত্তর দিলে।” ৪৪  এরপর তিনি সেই মহিলার দিকে ঘুরে তাকালেন এবং শিমোনকে বললেন: “তুমি কি এই মহিলাকে লক্ষ করেছ? আমি তোমার বাড়িতে প্রবেশ করেছি; তুমি আমাকে পা ধোয়ার জন্য জল দাওনি। কিন্তু, এই মহিলা তার চোখের জল দিয়ে আমার পা ভিজিয়ে দিয়েছে এবং তার চুল দিয়ে পা মুছে দিয়েছে। ৪৫  তুমি আমাকে চুম্বন করনি, কিন্তু আমি আসার পর থেকে এই মহিলা আমার পায়ে কোমল­ভাবে চুম্বন করছে। ৪৬  তুমি আমার মাথায় তেল ঢেলে দাওনি, কিন্তু এই মহিলা আমার পায়ে সুগন্ধি তেল ঢেলে দিয়েছে। ৪৭  তাই, আমি তোমাকে বলছি, তার পাপ বেশি হওয়া সত্ত্বেও তা ক্ষমা করা হল, কারণ সে বেশি ভালোবেসেছে। কিন্তু, যাকে কম ক্ষমা করা হয়, সে কম ভালোবাসে।” ৪৮  পরে তিনি সেই মহিলাকে বললেন: “তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।” ৪৯  যারা তাঁর সঙ্গে টেবিলে খেতে* বসেছিল, তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল: “এই ব্যক্তি কে, যে এমনকী পাপও ক্ষমা করে?” ৫০  কিন্তু, তিনি সেই মহিলাকে বললেন: “তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করেছে; শান্তিতে যাও।”

পাদটীকাগুলো

বা “আমার কারণে হোঁচট খায়।”
বা “মিহি সুতোর।”
যিশু নিজের সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “সন্তানদের।”
বা “ধার্মিক।”
বা “হেলান দিয়ে।”
বা “টেবিলে হেলান দিয়ে।”
ইনি সেই ফরীশী, যিনি যিশুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
শব্দকোষ দেখুন।
বা “হেলান দিয়ে।”