বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১১:১-৪০

১১  গিলিয়দের বাসিন্দা যিপ্তহ একজন বীরযোদ্ধা ছিলেন। তিনি একজন বেশ্যার ছেলে ছিলেন আর তার বাবার নাম ছিল গিলিয়দ। ২  গিলিয়দের স্ত্রীও* তার জন্য ছেলেদের জন্ম দিল। এই স্ত্রীর ছেলেরা যখন বড়ো হল, তখন তারা এই বলে যিপ্তহকে তাড়িয়ে দিল: “তুমি অন্য মহিলার ছেলে, তাই তুমি আমাদের বাবার সম্পত্তির কোনো ভাগ পাবে না।” ৩  তখন যিপ্তহ তার ভাইদের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে টোব নামের একটা এলাকায় বাস করতে শুরু করলেন। সেখানে কয়েক জন বেকার লোক তার সঙ্গে যোগ দিল। তারা একসঙ্গে মিলে শত্রুদের উপর আক্রমণ করতে যেত। ৪  কিছুসময় পর, অম্মোনীয়েরা ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ৫  যখন অম্মোনীয়েরা ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এল, তখন গিলিয়দের প্রাচীনেরা যিপ্তহকে ফিরিয়ে আনার জন্য সঙ্গেসঙ্গে টোবে গেল। ৬  তারা যিপ্তহকে বলল: “তুমি আমাদের সেনাপতি হও, যাতে আমরা অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি।” ৭  কিন্তু, যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনদের বললেন: “তোমরা আমাকে ঘৃণা করতে, তাই তোমরা আমাকে আমার বাবার ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে। এখন বিপদে পড়ে আমার কাছে এসেছ?” ৮  গিলিয়দের প্রাচীনেরা বলল: “তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু দেখো! আমরা তোমার কাছে ফিরে এসেছি। তুমি যদি আমাদের সঙ্গে গিয়ে অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তা হলে আমরা তোমাকে গিলিয়দের সমস্ত বাসিন্দার উপর নেতা হিসেবে নিযুক্ত করব।” ৯  তখন যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনদের বললেন: “তোমরা যদি আমাকে অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ফিরিয়ে নাও আর যিহোবা যদি আমার হয়ে তাদের পরাজিত করেন, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের নেতা হব।” ১০  গিলিয়দের প্রাচীনেরা যিপ্তহকে বলল: “আমরা রাজি। তুমি যেমনটা বললে, আমরা তেমনটাই করব আর যিহোবা যেন আমাদের মাঝে এই বিষয়টার সাক্ষি* হন।” ১১  তখন যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনদের সঙ্গে গেলেন আর লোকেরা তাকে নিজেদের নেতা ও সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করল। যিপ্তহ যে-কথাগুলো বলেছিলেন, তিনি মিস্‌পায় যিহোবার সামনে আবারও সেই কথাগুলো বললেন। ১২  তারপর, যিপ্তহ অম্মোনীয়দের রাজার কাছে বার্তাবাহকদের পাঠিয়ে বললেন: “আমি আপনার বিরুদ্ধে এমন কী করেছি যে, আপনি আমার দেশ আক্রমণ করতে এসেছেন?” ১৩  অম্মোনীয়দের রাজা যিপ্তহের বার্তাবাহকদের এই বলে পাঠালেন: “ইজরায়েলীয়েরা আমার কাছ থেকে আমার এলাকা কেড়ে নিয়েছে। তারা যখন মিশর থেকে বের হয়ে এসেছিল, তখন তারা অর্ণোন থেকে শুরু করে যব্বোক ও জর্ডন পর্যন্ত পুরো এলাকা দখল করে নিয়েছিল। এখন তুমি ভালোয় ভালোয় সেগুলো আমাকে ফিরিয়ে দাও।” ১৪  তখন যিপ্তহ আবারও অম্মোনীয়দের রাজার কাছে তার বার্তাবাহকদের পাঠালেন, ১৫  যাতে তারা তাকে বলে: “যিপ্তহ এই কথা বলেন: ‘ইজরায়েলীয়েরা মোয়াবীয় ও অম্মোনীয়দের কাছ থেকে তাদের এলাকা কেড়ে নেয়নি। ১৬  মিশর থেকে মুক্ত হয়ে তারা প্রান্তরের মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরে* এসে পৌঁছাল আর তারপর, কাদেশে এল। ১৭  তখন ইজরায়েল ইদোমের রাজার কাছে বার্তাবাহকদের পাঠিয়ে বলল: “দয়া করে আমাদের আপনার দেশের মধ্য দিয়ে যেতে দিন।” কিন্তু, ইদোমের রাজা তাদের কথায় কান দিল না। তারা মোয়াবের রাজার কাছেও একই অনুরোধ করল, কিন্তু তিনিও রাজি হলেন না। তাই, ইজরায়েলীয়েরা কাদেশেই রইল। ১৮  তারপর, তারা ইদোম ও মোয়াবের পাশ দিয়ে প্রান্তরের মধ্যে যাত্রা করল। তারা মোয়াবের পূর্ব দিক হয়ে অর্ণোনের এলাকায় এল আর সেখানে শিবির স্থাপন করল। কিন্তু, তারা অর্ণোন পার হল না কারণ সেটা মোয়াবের সীমানা ছিল। ১৯  “‘এরপর, ইজরায়েলীয়েরা হিষ্‌বোনে ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের কাছে বার্তাবাহকদের পাঠিয়ে তাকে বলল: “দয়া করে আমাদের আপনার দেশের মধ্য দিয়ে যেতে দিন, যাতে আমরা আমাদের এলাকায় পৌঁছাতে পারি।” ২০  কিন্তু, ইজরায়েলীয়দের উপর সীহোনের আস্থা ছিল না। তাই, তিনি তাদের নিজের এলাকার মধ্য দিয়ে যেতে দিলেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তার লোকদের নিয়ে যহসে শিবির স্থাপন করে ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ২১  তখন ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবা সীহোন এবং তার সমস্ত লোককে ইজরায়েলীয়দের হাতে সমর্পণ করলেন। ইজরায়েলীয়েরা সেখানে বসবাসরত ইমোরীয়দের পরাজিত করল আর তাদের সমস্ত এলাকা দখল করে নিল। ২২  এভাবে তারা অর্ণোন থেকে শুরু করে যব্বোক পর্যন্ত এবং প্রান্তর থেকে শুরু করে জর্ডন পর্যন্ত ইমোরীয়দের সমস্ত এলাকা দখল করে নিল। ২৩  “‘ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবাই যখন ইমোরীয়দের তাঁর লোকদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, তা হলে কেন আপনি এখন আমাদের এখান থেকে তাড়াতে চাইছেন? ২৪  আপনার দেবতা কমোশ যদি আপনাকে কোনো এলাকা দেন, তা হলে আপনি কি সেটা দখল করে নেবেন না? একইভাবে, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের সামনে থেকে যাদের তাড়িয়ে দিয়েছেন, আমরা তাদের প্রত্যেকের এলাকা দখল করে নিয়েছি। ২৫  আপনি কি সিপ্পোরের ছেলে এবং মোয়াবের রাজা বালাকের চেয়েও শ্রেষ্ঠ? তিনি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস দেখাননি আর আপনি সেই সাহস দেখাচ্ছেন? ২৬  ইজরায়েলীয়েরা বিগত ৩০০ বছর ধরে হিষ্‌বোন এবং সেটার আশেপাশের নগর, অরোয়ের এবং সেটার আশেপাশের নগর আর অর্ণোনের তীরের পাশে অবস্থিত সমস্ত নগরে বাস করছে। এত বছর ধরে তো আপনারা সেই এলাকাগুলো ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করেননি, তা হলে এখন কেন এসেছেন? ২৭  আমি আপনার বিরুদ্ধে কোনো পাপ করিনি, কিন্তু আপনি আমাকে আক্রমণ করে ঠিক করেননি। এখন সর্বোচ্চ বিচারক যিহোবাই যেন ইজরায়েলীয় ও অম্মোনীয়দের মধ্যে বিচার করেন।’” ২৮  যিপ্তহের এই বার্তায় অম্মোনীয়দের রাজা কান দিলেন না। ২৯  তারপর, যিহোবার পবিত্র শক্তি যিপ্তহের উপর এল আর তিনি গিলিয়দ ও মনঃশি হয়ে গিলিয়দের মিস্‌পায় গেলেন। সেখান থেকে তিনি অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এলেন। ৩০  তখন যিপ্তহ যিহোবার কাছে অঙ্গীকার করে বললেন: “তুমি যদি অম্মোনীয়দের আমার হাতে সমর্পণ কর, ৩১  তা হলে আমার বিজয়ের আনন্দে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আমার বাড়ি থেকে সবচেয়ে প্রথমে যে বের হয়ে আসবে, সে যিহোবার হয়ে যাবে আর আমি তাকে হোমবলির* মতো ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করব।” ৩২  তখন যিপ্তহ অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন আর যিহোবা তাদের তার হাতে সমর্পণ করে দিলেন। ৩৩  যিপ্তহ অরোয়ের থেকে শুরু করে মিন্নীত পর্যন্ত ২০টা নগরে প্রচুর লোককে হত্যা করলেন আর সেই নগরগুলো দখল করে নিলেন। তিনি আবেল-করামীম পর্যন্ত অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। এভাবে অম্মোনীয়েরা ইজরায়েলীয়দের হাতে পরাজিত হল। ৩৪  যিপ্তহ যখন মিস্‌পায় নিজের বাড়ি ফিরে এলেন, তখন তিনি দেখলেন, তার মেয়ে খঞ্জনি বাজিয়ে নাচতে নাচতে তার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। সে তার একমাত্র সন্তান ছিল। তার আর কোনো ছেলে অথবা মেয়ে ছিল না। ৩৫  যেই-না তিনি তার মেয়েকে দেখলেন, অমনি তিনি দুঃখে নিজের পোশাক ছিঁড়ে বললেন: “হায় হায়, মেয়ে আমার! তুমি আমার মন ভেঙে দিলে কারণ এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে পাঠাতে হবে। আমি যিহোবাকে কথা দিয়েছি, এখন তা আর ফিরিয়ে নিতে পারব না।” ৩৬  তখন তার মেয়ে তাকে বলল: “বাবা, তুমি যদি যিহোবাকে কথা দিয়ে থাক, তা হলে তুমি যেমনটা প্রতিজ্ঞা করেছ, আমার প্রতি তেমনটাই করো কারণ যিহোবা তোমার শত্রু অম্মোনীয়দের তোমার হাতে সমর্পণ করে দিয়েছেন, যাতে তুমি তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পার।” ৩৭  তারপর, সে তার বাবাকে বলল: “শুধু একটাই অনুরোধ: আমাকে দু-মাস সময় দাও। আমি আমার বান্ধবীদের সঙ্গে পর্বতে গিয়ে আমার কুমারীত্বের জন্য শোক করতে চাই।”* ৩৮  এতে যিপ্তহ তার মেয়েকে বললেন: “যাও!” তিনি তাকে দু-মাসের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। সে তার বান্ধবীদের সঙ্গে পর্বতে গিয়ে এই বিষয়ে শোক করতে থাকল যে, সে সারাজীবন কুমারী হয়ে থাকবে। ৩৯  দু-মাস পর সে তার বাবার কাছে ফিরে এল। তারপর, যিপ্তহ তার বিষয়ে যে-অঙ্গীকার করেছিলেন, সেটা পূরণ করলেন। তার মেয়ে সারাজীবন কুমারী হয়ে রইল। আর ইজরায়েলে এক রীতির* প্রচলন হল: ৪০  প্রতি বছর চার দিনের জন্য ইজরায়েলীয় মেয়েরা গিলিয়দীয় যিপ্তহের মেয়ের প্রশংসা করার জন্য তার কাছে যেত।

পাদটীকাগুলো

স্পষ্টতই, তার আরও এক স্ত্রী ছিল।
আক্ষ., “শ্রোতা।”
বা “সূফসাগরে।”
স্পষ্টতই, এটা একটা বাক্যালঙ্কার, যেটার অর্থ ঈশ্বরের সেবায় পুরোপুরিভাবে দিয়ে দেওয়া।
বা “আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে কাঁদতে চাই কারণ আমি কখনো বিয়ে করব না।”
বা “নিয়মের।”