ইয়োব ১৫:১-৩৫

১৫  উত্তরে তৈমনীয় ইলীফস বললেন:  ২  “একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি কি অযৌক্তিক কথা বলবে? সে কি ভুল চিন্তাভাবনা* দিয়ে নিজের মনকে পূর্ণ করবে?  ৩  শুধু মুখে বকাঝকা করে কোনো লাভ নেইআর বড়ো বড়ো কথা বললে কোনো উপকার হয় না।  ৪  তোমার কারণে ঈশ্বরের প্রতি লোকদের ভয় কমে গিয়েছেআর অন্যেরা ঈশ্বরের ব্যাপারে চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছে।  ৫  তোমার অপরাধ তোমাকে এই ধরনের কথা বলতে শেখায়আর তুমি প্রতারণামূলক কথা বলে থাক।  ৬  আমি নই বরং তোমার নিজের মুখ তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করছে,তোমার নিজের ঠোঁট তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে।  ৭  মানুষের মধ্যে তুমি কি সবচেয়ে প্রথমে জন্মেছিলে? পাহাড়েরও আগে কি তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল?  ৮  ঈশ্বর কি তোমার সামনে গোপন কথা বলেন? সমস্ত প্রজ্ঞা কি তোমার কাছেই রয়েছে?  ৯  তুমি এমন কী জান, যেটা আমরা জানি না? তুমি এমন কী বোঝ, যেটা আমরা বুঝি না? ১০  আমাদের মাঝে এমন লোকেরা রয়েছে, যাদের চুল পেকে গিয়েছে এবং যারা বৃদ্ধ,যাদের বয়স তোমার বাবার চেয়েও বেশি। ১১  ঈশ্বরের দেওয়া সান্ত্বনা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? তোমাকে কোমলভাবে যে-কথা বলা হয়েছে, সেটা কি যথেষ্ট নয়? ১২  কেন তোমার মন তোমাকে একগুঁয়ে করে তুলেছে? কেন তোমার চোখ রাগে লাল হয়ে গিয়েছে? ১৩  তুমি কি ঈশ্বরের উপর তোমার রাগ দেখাচ্ছআর নিজের মুখ থেকে এইরকম কথা বের করছ? ১৪  মরণশীল মানুষ কী যে, তাকে শুচি বলে মনে করা হবে? মহিলার গর্ভে জন্মানো মানুষ কী যে, তাকে ধার্মিক বলে মনে করা হবে? ১৫  দেখো! ঈশ্বর তো তাঁর স্বর্গদূতদেরও* বিশ্বাস করেন না,এমনকী স্বর্গও তাঁর দৃষ্টিতে শুচি নয়। ১৬  তাহলে, তিনি একজন জঘন্য ও কলুষিত মানুষকে কেন শুচি বলে মনে করবেন,যে মন্দ কাজ করার জন্য লালসা করে, ঠিক যেভাবে একজন তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি জলের জন্য করে থাকে? ১৭  শোনো, আমি তোমাকে বলছি! আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি, আমি কী দেখেছি। ১৮  আমি তোমাকে সেই কথাগুলো বলছি, যেগুলো বিজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছিলেন,তারা সেগুলো লুকিয়ে রাখেননি। ১৯  তাদের পূর্বপুরুষদের এই দেশ দেওয়া হয়েছিলআর কোনো বিদেশি তাদের এলাকার মধ্য দিয়ে যায়নি। ২০  একজন মন্দ ব্যক্তি সারাজীবন কষ্ট ভোগ করে,সে যত দিন বেঁচে থাকে, কখনোই শান্তি পায় না। ২১  সে ভয়ানক শব্দ শুনতে পায়,শান্তির সময়ও লুটকারীরা তাকে আক্রমণ করে। ২২  তার মনে হয় না, সে অন্ধকার থেকে রক্ষা পাবে,তার মৃত্যু নির্ধারিত, সে তলোয়ারের আঘাতে মারা যাবে। ২৩  সে হন্যে হয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়,সে জানে, অন্ধকারের দিন কাছে এসে গিয়েছে। ২৪  দুশ্চিন্তা ও উদ্‌বেগ তাকে ভয় দেখাতে থাকে,তারা এমনভাবে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, যেভাবে রাজা তার দলবল নিয়ে আক্রমণ করেন। ২৫  কারণ সে স্বয়ং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তার হাত তোলেআর সর্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার দুঃসাহস দেখায়।* ২৬  সে একগুঁয়েভাবে তাঁর বিরুদ্ধে দৌড়ে আসে,সে মোটা ও শক্ত ঢাল নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসে। ২৭  তার মুখ চর্বিতে ঢেকে গিয়েছে,তার কোমর চর্বিতে ভরে গিয়েছে। ২৮  তাই, সে যে-নগরগুলোতে থাকে, সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হবে,সে যে-বাড়িগুলোতে থাকে, সেগুলোতে আর কেউ থাকবে না,সেগুলো পাথরের ঢিবিতে পরিণত হবে। ২৯  সে ধনী হতে কিংবা ধনসম্পদ সংগ্রহ করতে পারবে না,সে সারা দেশে সমৃদ্ধিশালী হতে পারবে না। ৩০  সে অন্ধকার থেকে রক্ষা পাবে না,তার ডালপালাগুলো আগুনে পুড়ে যাবে*আর ঈশ্বরের* প্রবল নিঃশ্বাসে সে উড়ে যাবে। ৩১  সে যেন মূল্যহীন জিনিসগুলোর উপর আস্থা রেখে নিজেকে বোকা না বানায়কারণ সে কেবল হতাশই হবে। ৩২  সময়ের আগেই তার প্রতি এই সমস্ত কিছু ঘটবে,তার ডালপালা কখনো বেড়ে উঠবে না। ৩৩  সে এমন আঙুর গাছের মতো হবে, যেটার ফল পাকার আগেই পড়ে যায়,সে এমন জলপাই গাছের মতো হবে, যেটার ফুল ঝরে পড়ে। ৩৪  ভক্তিহীন* লোকদের মণ্ডলী বৃদ্ধি পাবে না,যারা ঘুস নেয়, তাদের তাঁবু আগুনে পুড়ে যাবে। ৩৫  তারা গর্ভে সমস্যা ধারণ করে এবং মন্দতার জন্ম দেয়,তাদের গর্ভ প্রতারণা উৎপন্ন করে।”

পাদটীকাগুলো

আক্ষ., “কি পূর্ব দিকের বাতাস।”
আক্ষ., “পবিত্র ব্যক্তিদেরও।”
বা “বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করে।”
অর্থাৎ রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না।
আক্ষ., “তাঁর মুখের।”
বা “ধর্মভ্রষ্ট।”