সুখের উৎস
অধ্যায় ৭৫
সুখের উৎস
গালীলে পরিচর্য্যা কালে, যীশু বহু অলৌকিক কাজ করেছিলেন, আর তিনি এখন যিহূদীয়ায় সেগুলির পুনরাবৃত্তি করছেন। যেমন, তিনি এক ব্যক্তি থেকে ভূত ছাড়ালেন যে তাকে গোঁগা বানিয়ে রেখেছিল। লোকেরা আশ্চর্য্য হয়ে গেল, কিন্তু সমালোচকেরা গালীলের মত সেই একই আপত্তি করে উঠল। “এ ব্যক্তি ভূতগণের অধিপতি বেল্সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়ায়,” তারা দাবী করল। অন্যরা যীশুর পরিচয় স্বরূপ বড় ধরনের প্রমাণ দাবী করে, এবং তারা আকাশ থেকে চিহ্ন দাবী করে তাঁকে পরীক্ষা করার চেষ্টা করে।
যীশু জানতেন তাদের চিন্তাধারা কোনদিকে, তাই গালীলের মত যিহূদীয়ার সমালোচকদের একই উত্তর দিলেন। তিনি জানালেন কোন রাজ্য নিজের বিপক্ষে বিভক্ত হলে উচ্ছিন্ন হবে। “সুতরাং,” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “শয়তানও যদি আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তবে তাহার রাজ্য কি প্রকারে স্থির থাকিবে?” সমালোচকরা কত বিপদজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে তা বুঝাবার জন্য যীশু বললেন: “কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আঙ্গুলি দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে আসিয়া পড়িয়াছে।”
যারা যীশুর অলৌকিক কার্য দেখেছিল তাদের প্রতিক্রিয়া শত শত বৎসর আগে মোশির কৃত অলৌকিক কাজের দর্শকদের অনুরূপ হওয়া উচিৎ ছিল। তারা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলেছিল “এ ঈশ্বরের আঙ্গুলি!” “ঈশ্বরের আঙ্গুলিই” প্রস্তর ফলকে দশ আজ্ঞা খোদাই করে। “ঈশ্বরের আঙ্গুলি”—তাঁর পবিত্র আত্মা অথবা সক্রিয় শক্তি—যীশুকে মন্দ আত্মা তাড়াতে বা রোগীদের সুস্থ করতে সমর্থ করেছিল। সুতরাং ঈশ্বরের রাজ্য সত্যই সেই সমালোচকদের কাছে এসে পড়েছে, কারণ সেই রাজ্যের নিযুক্ত রাজা, যীশু তাদের মধ্যেই রয়েছেন।
যীশু এর পর ব্যাখ্যা করলেন যে মন্দ আত্মাকে দূর করার সামর্থ্য প্রমাণ করে শয়তানের উপর তাঁর শক্তি আছে, ঠিক যেমন এক অধিক বলবান ব্যক্তি এসে আস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এক গৃহ রক্ষককে পরাজিত করে। তিনি গালীলে যে অশুচি আত্মার বিষয়ে দৃষ্টান্ত দেন সেটিরও পুনরাবৃত্তি করেন। সেই অশুচি আত্মা ব্যক্তির কাছ হতে বের হয়ে যায়, কিন্তু যদি ব্যক্তিটি ভাল বিষয় দিয়ে শূন্যস্থান না ভরায়, তবে আত্মা আরও সাতটা আত্মাকে নিয়ে ফিরে আসে, আর তাতে সেই মনুষ্যের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও মন্দ হয়।
এই শিক্ষণীয় বিষয়গুলি শুনে, ভিড়ের মধ্যে এক স্ত্রীলোক প্রভাবিত হয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলে ওঠে: “ধন্য সেই গর্ভ, যাহা আপনাকে ধারণ করিয়াছিল, আর সেই স্তন, যাহার দুগ্ধ আপনি পান করিয়াছিলেন!” যেহেতু প্রতিটি যিহূদী স্ত্রীলোকের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল যে তারা কোন ভাববাদীর জন্মদাত্রী হয় এবং বিশেষ করে মশীহর মাতা হন, এটা বোঝা যায় যে স্ত্রীলোকটি সেই জন্য এইভাবে বলে। আপাতরূপে সে ভাবে যে মরিয়ম সত্যই সুখী কারণ তিনি যীশুর মা হতে পেরেছেন।
যাইহোক, যীশু তৎক্ষণাৎ স্ত্রীলোকটিকে সংশোধন করে দেন সুখের প্রকৃত উৎস সম্পর্কে। “না,” তিনি উত্তর করেন, “কিন্তু বরং ধন্য তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে!” কখনও যীশু বলেননি যে তার মা, মরিয়মকে বিশেষ সম্মান দেখাতে হবে। পরিবর্তে, তিনি বললেন প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সেবক হয়ে, কিন্তু মাংসিক সম্পর্কে বা বিশেষ কার্য সম্পাদন করে নয়।
যেমন তিনি গালীলে করেন, এই যিহূদীয়ার জনতাকেও তিনি ধমক দেন কারণ তারা আকাশ থেকে চিহ্নের অনুরোধ করে। তিনি বললেন কোন চিহ্ন দেওয়া হবে না কেবলমাত্র যোনার চিহ্ন ছাড়া। যোনা এক চিহ্নস্বরূপ হন দুই ক্ষেত্রে, তিন দিন মাছের পেটে থেকে এবং প্রচার কার্যের দ্বারা, যার ফলে নীনবীয়রা অনুতপ্ত হয়। “দেখ!” যীশু বলেন: “যোনা হইতেও মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন।” ঠিক তেমনই, দক্ষিণ দেশের রাণী শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনে মুগ্ধ হন। “দেখ!” যীশু আবার বলেন, “শলোমন হইতেও মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন।”
যীশু ব্যাখ্যা করলেন যখন এক ব্যক্তি প্রদীপ প্তালে, তখন গুপ্তস্থানে অথবা কাঠার নীচে রাখে না, কিন্তু দ্বীপাধারের উপরেই রাখে যাতে মনুষ্যেরা আলো দেখতে পায়। হয়ত তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে তাঁর শ্রোতাবৃন্দের এই সমস্ত একগুঁয়ে ব্যক্তিদের সামনে তাঁর এই আশ্চর্য্য কাজ করা বা শিক্ষা দেওয়া ঠিক যেন আলোকে গুপ্ত স্থানে রেখে দেওয়ার মত। এই সমস্ত দর্শকদের চক্ষু সরল নয়, বা কেন্দ্রীভূত নয়, যার জন্য তাঁর অলৌকিক কার্যের উদ্দেশ্য সাধিত হল না।
যীশু সবেমাত্র এক মন্দ আত্মাকে বের করেছেন এবং এক গোঁগাকে কথা বলিয়েছেন। ইহাই মনুষ্যদের পরিচালিত করবে যারা সরল, অথবা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে, এই মহান কার্যের প্রশংসা করতে ও সুসমাচার প্রচার করতে! কিন্তু, এই সমালোচকরা, তা করেনি। তাই, যীশু শেষে বললেন: “অতএব দেখিও, তোমাদের অন্তরে যে দীপ্তি আছে, তাহা অন্ধকার কিনা। বাস্তবিক তোমার সমুদয় শরীর যদি দীপ্তিময় হয়, কোনও অংশ অন্ধকারময় না থাকে, তবে প্রদীপ যেমন নিজ তেজে তোমাকে দীপ্তিদান করে, তেমনি তোমার শরীর সম্পূর্ণরূপে দীপ্তিময় হইবে।” লূক ১১:১৪-৩৬; যাত্রাপুস্তক ৮:১৮, ১৯; ৩১:১৮; মথি ১২:২২, ২৮.
▪ যীশুর দ্বারা ব্যক্তিটিকে সুস্থ করার প্রতিক্রিয়া কি হয়?
▪ “ঈশ্বরের অঙ্গুল” কি, এবং কিভাবে ঈশ্বরের রাজ্য যীশুর শ্রোতাবৃন্দের কাছে এসে পড়েছে?
▪ প্রকৃত সুখের উৎস কি?
▪ কিভাবে এক ব্যক্তির চক্ষু সরল থাকে?