“সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র”
অধ্যায় ১২৬
“সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র”
যীশু যাতনাদণ্ডে অল্পক্ষণই ছিলেন যখন, মধ্যাহ্নে, তিনঘন্টা যাবৎ অদ্ভুত অন্ধকার নেমে আসে। সূর্য্য গ্রহণ ঘটছে সেইজন্য নয়, কারণ তা হয় কেবল আমাবষ্যার পরে নূতন চাঁদ যখন ওঠে তখন, কিন্তু নিস্তারপর্ব কাল পূর্ণ চন্দ্রের সময়। আর, সূর্য্য গ্রহণ কেবল কয়েক মিনিট থাকে। তাই এই অন্ধকার ঐশিক উৎস থেকে হয়েছে! ইহা সবেত যারা যীশুর বিদ্রূপ করছিল তাদের কিছুক্ষণের জন্য থামায়, এবং তাদের উপহাসকে বন্ধ করে।
যদি এই আতঙ্কজনক ঘটনা, একজন দস্যু যখন তার সঙ্গীকে ভর্ৎসনা করে ও যীশুকে বলে তাকে স্মরণ করতে, তার আগে ঘটে থাকে, তাহলে সবেত এটি তার অনুতাপের একটি কারণ ছিল। হয়ত এই অন্ধকারের সময় চারজন স্ত্রীলোক, যীশুর মাতা ও তার বোন শালোমী, মগ্দলীনী মরিয়ম, ও ছোট যাকোবের মা মরিয়ম, যাতনাদণ্ডের নিকটে আসেন। যোহন, যীশুর প্রিয় শিষ্য, তাদের সাথে সেখানে ছিলেন।
যীশুর মায়ের হৃদয় কত ‘বিদীর্ণ না হয়’ যখন তিনি দেখেন তাঁর সন্তান যাকে লালন পালন করেছেন তিনি সেইভাবে যন্ত্রণায় ঝুলছেন! তবুও যীশু তাঁর যন্ত্রণা সম্বন্ধে নয়, কিন্তু তার মায়ের মঙ্গল সম্বন্ধে চিন্তা করেন। অনেক চেষ্টা করে, তিনি যোহনের দিকে মাথা নেড়ে তাঁর মাকে বলেন: “হে, নারি, ঐ দেখ! তোমার পুত্র!” তারপর মরিয়মের দিকে ঘাড় নেড়ে, যোহনকে বলেন: “ঐ দেখ! তোমার মাতা!”
যীশু এইভাবে তাঁর মাতার দেখাশোনার ভার তাঁর প্রিয় প্রেরিতকে দেন, কারণ তাঁর মা হয়ত এখন একজন বিধবা। তিনি এইরূপ করেন কারণ মরিয়মের অন্য পুত্ররা তখনও তাঁর প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন করেনি। তাই তিনি এক সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেন কেবল তাঁর মায়ের দৈহিক নয় কিন্তু আত্মিক প্রয়োজনীয়তারও ব্যবস্থা করার দ্বারা।
অপরাহ্নে প্রায় তিনটের সময়, যীশু বলেন: “আমার পিপাসা পাইয়াছে।” যীশু বুঝতে পারেন যে তাঁর পিতা, তাঁর উপর থেকে রক্ষা ব্যবস্থা তুলে নিয়েছেন, যাতে তাঁর বিশ্বস্ততার পরীক্ষা পূর্ণ মাত্রায় হয়। তাই তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন: “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করিয়াছ?” এই কথা শুনে অনেকে যারা নিকটে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা বলে ওঠে: “দেখ! ও এলিয়কে ডাকিতেছে।” আর সঙ্গে সঙ্গে একজন দৌড়ে গিয়ে স্পঞ্জে সিরকা ভরে নলে লাগিয়ে তাঁকে পান করতে দেয়। কিন্তু অন্যরা বলে: “থাক! দেখি, এলিয় উহাকে নামাইতে আসেন কিনা।”
যীশু সেই সিরকা গ্রহণ করার পর, উচ্চ রবে বলে ওঠেন: “সমাপ্ত হইল!” হ্যাঁ, তাঁর পিতা যা কিছু করতে তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তিনি সব কিছুই সম্পন্ন করেছেন। অবশেষে, তিনি বলেন: “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” যীশু এইভাবে তাঁর জীবনী শক্তি ঈশ্বরের হস্তে সঁপে দেন পূর্ণ আস্থা সহকারে যে ঈশ্বর ইহা আবার তাঁকে ফিরিয়ে দেবেন। এরপর তিনি মস্তক নিচু করে প্রাণ ত্যাগ করেন।
যে মুহূর্তে যীশু তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়, শৈল সকল বিদীর্ণ হয়। এই কম্পন এত তীব্র ছিল যে যিরূশালেমের বাইরে কবর সকল ভেঙ্গে খুলে যায় ও মৃতদের দেহ তার থেকে ছিট্কে বেরিয়ে পড়ে। পথচারীরা যারা মৃতদেহসকল অনাবৃত দেখতে পায় নগরে প্রবেশ করে সেই বিষয়ে সংবাদ দেয়।
আর, যখন যীশুর মৃত্যু হয় সেই মুহূর্তে, ঈশ্বরের মন্দিরে পবিত্র ও অতি পবিত্র স্থানের মাঝে যে বড় পর্দা ছিল তা চিরে যায় উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। এই পর্দা অলঙ্কার দিয়ে সজ্জিত প্রায় ১৮ মিটার উঁচু ও খুব ভারী! এই অলৌকিক কাজ কেবল যে ঈশ্বরের আধ তাঁর পুত্রের হত্যাকারীদের বিপক্ষে প্রকাশ করে তা নয় কিন্তু এও দেখায় যে অতি পবিত্র স্থান, যা হল স্বর্গ, সেখানে যাওয়া এখন সবে হল যীশুর মৃত্যুর মাধ্যমে।
যখন লোকেরা ভূমিকম্প, ও অন্য ঘটনা ঘটতে দেখে, তারা খুব ভীত হয়। আর যে সেনাধ্যক্ষ যীশুর প্রাণদণ্ডের তত্বাবধান করছিল সে ঈশ্বরের গৌরব করে। “সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন,” সে বলে। সে হয়ত সেই সময় উপস্থিত ছিল যখন যীশুর বিচারে তাঁর ঈশ্বরের পুত্র হওয়া সম্বন্ধে আলোচনা হয় পীলাতের সামনে। আর এখন সে নিশ্চিত যে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, হ্যাঁ, তিনি সর্বকালের জীবিতদের মধ্যে মহত্তম ব্যক্তি।
অন্যরাও এই আশ্চর্য্য ঘটনাবলী দেখে প্রভাবিত, তাই তারা ঘরে ফিরে যায় বক্ষে আঘাত করতে করতে যা প্রদর্শন করে তাদের মর্মান্তিক দুঃখ ও লজ্জা। দূর থেকে এই ঘটনা লক্ষ্য করছিল যীশুর অনেক শিষ্যরা যারা খুবই প্রভাবিত হয়। প্রেরিত যোহনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মথি ২৭:৪৫-৫৬; মার্ক ১৫:৩৩-৪১; লূক ২৩:৪৪-৪৯; ২:৩৪, ৩৫; যোহন ১৯:২৫-৩০.
▪ তিন ঘন্টা যে অন্ধকার নেমে আসে তার জন্য কেন সূর্য্য গ্রহণ দায়ী নয়?
▪ তাঁর মৃত্যুর কিছু পূর্বে, যীশু যাদের বৃদ্ধ পিতা মাতা আছে তাদের জন্য কি উদাহরণ স্থাপন করেন?
▪ যীশুর মৃত্যুর পূর্বের শেষ চারটি উক্তি কি?
▪ সেই ভূমিকম্প কি সাধন করে, এবং মন্দিরের পর্দা চিরে যাওয়ার তাৎপর্য্য কি?
▪ যে সেনাধ্যক্ষ হত্যার তত্বাবধানে ছিল তার উপর আশ্চর্য্য কাজগুলি কি প্রভাব ফেলে?