রুটি এবং তাড়ী
অধ্যায় ৫৮
রুটি এবং তাড়ী
বিস্তর জনতা দিকাপলিতে যীশুর কাছে এসে জড়ো হয়। বহু ব্যক্তি বহু দূর থেকে এই পরজাতীয় লোকে ভরা অঞ্চলে কেবলমাত্র যীশুর কথা শুনতে এবং তাদের রোগ ও দুর্বলতা থেকে সুস্থ হতে এসেছিল। তাদের সঙ্গে তারা বড় বড় বাস্কেট বা ঢাকনা দেওয়া বড় ঝুড়ি এনেছিল, যা তাদের রীতি অনুযায়ী পরজাতীয় দেশের মধ্য দিয়ে যাবার সময় খাদ্যদ্রব্য বহনের জন্য রাখত।
অবশেষে, যীশু তাঁর শিষ্যদিগকে ডেকে বললেন: “এই লোক সমূহের প্রতি আমার করুণা হইতেছে; কেননা ইহারা আজ তিন দিবস আমার সঙ্গে রহিয়াছে, এবং ইহাদের নিকটে খাবার কিছুই নাই; আর আমি ইহাদিগকে অনাহারে বিদায় করিতে ইচ্ছা করি না, পাছে ইহারা পথে মূর্চ্ছা পড়ে। আবার ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ দূর হইতে আসিয়াছে।”
“এখানে প্রান্তরের মধ্যে কে কোথা হইতে রুটি দিয়া এ সকল লোককে তৃপ্ত করিতে পারিবে?” তাঁর শিষ্যরা প্রশ্ন করলেন।
যীশু জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমাদের কাছে কয়খানা রুটি আছে?”
“সাতখানা,” তারা বললেন, “আর কয়েকটি ছোট মাছ।”
তখন তিনি লোকদের ভূমিতে বসতে আজ্ঞা করলেন, পরে তিনি সেই সাতখানা রুটি ও সেই কয়টি মাছ নিলেন ও ধন্যবাদ পূর্বক ভাঙ্গলেন ও শিষ্যদের দিতে আরম্ভ করলেন। শিষ্যরা, আবার লোকেদের দিলেন, যারা সকলে আহার করে তৃপ্ত হল। পরে, অবশিষ্ট খাবার জড় করে দেখা গেল, সাতঝুড়ি খাবার রয়েছে, যদিও কমপক্ষে ৪০০০ পুরুষ, নারী ও শিশুর খাওয়া হয়ে গিয়েছিল!
এখন যীশু জনতাকে বিদায় জানিয়ে, শিষ্যদের সঙ্গে নৌকায় উঠে, সমুদ্র পার হয়ে গালীলের পশ্চিম উপকূলে এলেন। এখানে ফরীশী ও সদ্দূকী সম্প্রদায়ভুক্তরা তাঁর সাথে বাদানুবাদ শুরু করে এবং যীশুকে পরীক্ষা করার চেষ্টায় আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখতে চাইল।
তাদের উদ্দেশ্য যে তাঁকে পরীক্ষায় ফেলা তা বুঝে, যীশু বলেন: “সন্ধ্যা হইলে তোমরা বলিয়া থাক, ‘পরিষ্কার দিন হইবে কারণ আকাশ লাল হইয়াছে।’ আর প্রাতঃকালে বলিয়া থাক, ‘আজ ঝড় হইবে, কারণ আকাশ লাল ও ঘোর হইয়াছে।’ তোমরা আকাশের লক্ষণ বুঝিতে পার, কিন্তু কালের চিহ্ন সকল বুঝিতে পার না।”
সেই সঙ্গে, যীশু তাদের এক দুষ্ট ও ব্যভিচারী বংশ বলে সতর্ক করে দেন যে, যেমন তিনি পূর্বে ফরীশীদের বলেন, যোনার চিহ্ন ব্যতিরেকে আর কোনও চিহ্ন তাদের দেওয়া যাবে না। সেখান থেকে প্রস্থান করে, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা এক নৌকায় চড়ে গালীল সমুদ্রের উত্তর পূর্ব উপকূল ধরে বৈৎসৈদার দিকে অগ্রসর হলেন। যাত্রা পথে, তাঁর শিষ্যরা দেখে তারা রুটি আনতে ভুলে গেছেন, কেবল ১টি রুটি আছে।
ফরীশী ও হেরোদ রাজার সদ্দূকী সমর্থনকারীদের সম্মুখীন হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রেখে, যীশু সতর্ক করে বলেন: “সাবধান, তোমরা ফরীশীদের তাড়ীর বিষয়ে ও হেরোদের তাড়ীর বিষয়ে সাবধান থাকিও।” শিষ্যরা মনে করে যে যীশুর তাড়ীর উল্লেখ তাদের রুটি আনতে ভুলে যাওয়ার কথা ইঙ্গিত করছে, এই ভেবে তারা তর্ক শুরু করে। তাদের এই ভুল বোঝার সূত্র বুঝে, যীশু বলেন: “রুটি নাই বলে কেন পরস্পর তর্ক করিতেছ?”
সম্প্রতি, যীশু অলৌকিক ভাবে কয়েক হাজার ব্যক্তিকে রুটি যুগিয়েছিলেন, হয়তবা এই শেষ আশ্চর্য্য কাজটি মাত্র দু-একদিন আগে করেছিলেন। তাদের বোঝা উচিৎ যে তিনি অক্ষরিক রুটির জন্য উদ্বিগ্ন নন। “মনে নাই,” তিনি তাদের স্মরণ করান, “আমি যখন পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে পাঁচখানা রুটী ভাঙ্গিয়াছিলাম, তখন তোমরা গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা কত ডালা তুলিয়া লইয়াছিলে?”
“বারো ডালা,” তারা উত্তর করল।
“যখন চারি হাজার লোকের মধ্যে সাতখানা রুটী ভাঙ্গিয়া দিয়াছিলাম, তখন গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা কত ঝুড়ি তুলিয়া লইয়াছিলে?”
“সাত ঝুড়ি,” তারা উত্তরে বলল।
“তোমরা কি এখনও বুঝিতে পারিতেছ না?” যীশু বললেন। “তোমরা কেন বুঝ না যে আমি তোমাদিগকে রুটির বিষয়ে বলি নাই? কিন্তু তোমরা ফরীশীদের ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাকিও।”
শিষ্যরা অবশেষে বিষয়টি বুঝতে পারলেন। তাড়ী, এমন একটি পদার্থ যা গাঁজিয়ে রুটিকে ফুলিয়ে তোলে, এই শব্দ বিকৃতিকে বুঝায়। অতএব শিষ্যরা এবার বুঝতে পারলেন যে যীশু তাদের এক প্রতীক ব্যবহার করে বোঝাতে চাইলেন যে, তারা যেন “ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষার” বিষয়ে সতর্ক থাকে, যে শিক্ষার মধ্যে আছে বিকৃতি। মার্ক ৮:১-২১; মথি ১৫:৩২–১৬:১২.
▪ কেন লোকেরা তাদের সঙ্গে বড় বড় প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের ঝুড়ি বহন করত?
▪ দিকাপলি ছেড়ে যাবার পর, নৌকায় যীশু কোন্ কোন্ ভ্রমণ করেন?
▪ যীশুর তাড়ীর উল্লেখে শিষ্যদের মধ্যে কি ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়?
▪ “ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ীর” কথা বলতে যীশু কি বোঝাতে চাইলেন?