যীশুর প্রথম শিষ্যরা
অধ্যায় ১৪
যীশুর প্রথম শিষ্যরা
প্রান্তরে ৪০ দিন থাকার পর, যীশু যোহনের নিকট ফিরে আসেন, যিনি তাঁকে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন। যখন তিনি তাঁর কাছে আসেন, যোহন তাঁর দিকে দেখিয়ে যারা উপস্থিত ছিল তাদের বলেন: “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান! উনি সেই ব্যক্তি যাহার বিষয়ে আমি বলিয়াছিলাম, আমার পশ্চাতে এমন এক ব্যক্তি আসিতেছেন, যিনি আমার অগ্রগণ্য হইলেন, কেননা তিনি আমার পূর্বে ছিলেন।” যদিও যোহন তাঁর মাসতুতো ভাই যীশুর থেকে বড়, যোহন জানেন যে যীশু একজন আত্মিক ব্যক্তিরূপে তাঁর আগে স্বর্গে অস্তিত্বে ছিলেন।
অথচ, কয়েক সপ্তাহ পূর্বে, যখন যীশু বাপ্তিস্ম নিতে এসেছিলেন, যোহন হয়ত নিশ্চিতরূপে জানতেন না যে যীশুই সেই মশীহ। “আর আমি তাঁহাকে চিনিতাম না,” যোহন স্বীকার করেন, “কিন্তু তিনি যেন ইস্রায়েলের নিকট প্রকাশিত হন, এই জন্য আমি আসিয়া জলে বাপ্তাইজিত করিতেছি।”
যোহন তাঁর শ্রোতাদের বলে চলেন তিনি যীশুকে বাপ্তাইজিত করার সময় কি ঘটে: “আমি আত্মাকে কপোতের ন্যায় স্বর্গ হইতে নামিতে দেখিয়াছি, আর তিনি তাঁহার উপরে অবস্থিতি করিলেন। আর আমি তাঁহাকে চিনিতাম না, কিন্তু যিনি আমাকে জলে বাপ্তাইজিত করিতে পাঠাইয়াছেন তিনিই আমাকে বলিলেন, ‘যাঁহার উপরে আত্মাকে নামিয়া অবস্থিতি করিতে দেখিবে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করেন।’ আর আমি দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিয়াছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্র।”
পরদিন যোহন তাঁর দুই শিষ্যকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আবার, যীশুকে তাদের দিকে আসতে দেখে, তিনি বলেন: “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক!” আর তখন, যোহন বাপ্তাইজকের এই দুই জন শিষ্য যীশুর পশ্চাৎগামী হলেন। তাদের মধ্যে একজন আন্দ্রিয় এবং অন্যজন নিশ্চিত তিনি, যিনি এই কথাগুলি লিপিবদ্ধ করেছেন, যাকে যোহন বলা হয়। এই যোহন, তথ্য অনুসারে, যীশুর মাসতুতো ভাই, সবেত মরিয়মের বোন শালোমীর এক পুত্র।
ফিরে তাকিয়ে যখন দেখলেন, আন্দ্রিয় ও যোহন তাঁর পশ্চাতে আসছে, যীশু জিজ্ঞাসা করেন: “কিসের অন্বেষণ করিতেছ?”
“রব্বি,” তারা জিজ্ঞাসা করে, “আপনি কোথায় থাকেন?”
“আইস, দেখিবে,” যীশু উত্তর দেন।
তখন প্রায় ৪ ঘটিকা অপরাহ্নের সময়, আর আন্দ্রিয় ও যোহন যীশুর সাথে বাকী দিন থাকেন। তারপর আন্দ্রিয় এত উৎসুক হন যে তিনি দ্রুত গিয়ে তার ভাইকে খুঁজে বের করেন, যার নাম পিতর। “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি,” তিনি তাকে বলেন। আর তিনি পিতরকে যীশুর কাছে নিয়ে যান। হয়ত একই সময় যোহন তার ভাই যাকোবকে পান আর তাকেও যীশুর কাছে নিয়ে আসেন; অথচ, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুসারে, তার সুসমাচারের পুস্তকে এই ব্যক্তিগত বিষয়টি বাদ দিয়ে গেছেন।
এর পরের দিন, যীশু ফিলিপকে পান, যিনি বৈৎসৈদা নিবাসী, ওই একই নগর থেকে আন্দ্রিয় ও পিতরও এসেছিলেন। তিনি তাকে ডাকেন: “আমার পশ্চাৎ আইস।”
ফিলিপ তারপর নথনেলকে পান, যাকে বর্থলময়ও বলা হয়, তাকে বলেন: “মোশির ব্যবস্থায় ও ভাববাদীগণ যাঁহার কথা লিখিয়াছেন, আমরা তাঁহার দেখা পাইয়াছি, তিনি নাসরতীয় যীশু, যোষেফের পুত্র।” নথনেল কিন্তু অনিশ্চিত। “নাসরৎ হইতে কি উত্তম কিছু উৎপন্ন হইতে পারে?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
ফিলিপ তাকে বললেন, “আইস দেখ।” যীশু তাদের আপনার নিকটে আসিতে দেখিয়া নথনেলের বিষয়ে বললেন, “ঐ দেখ, একজন প্রকৃত ইস্রায়েলীয়, যাহার অন্তরে ছল নাই।”
“আপনি কিসে আমাকে চিনিলেন?” নথনেল প্রশ্ন করেন।
“ফিলিপ তোমাকে ডাকিবার পূর্বে যখন তুমি সেই ডুমুরগাছের তলায় ছিলে, তখন তোমাকে দেখিয়াছি,” যীশু উত্তর করেন।
নথনেল আশ্চর্য্য হন। আর তিনি বলেন: “রব্বি [অর্থ শিক্ষক], আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা।”
“আমি তোমাকে বলিলাম ডুমুর গাছের তলায় দেখিয়াছিলাম, সেই জন্য কি বিশ্বাস করিলে?” যীশু জিজ্ঞাসা করেন। “এ সকল হইতেও মহৎ মহৎ বিষয় তুমি দেখিবে।” তারপর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন: “সত্য সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা দেখিবে, স্বর্গ খুলিয়া গিয়াছে, এবং ঈশ্বরের দূতগণ মনুষ্যপুত্রের কাছে উঠিতেছেন ও নামিতেছেন।”
এর কিছু পরেই, যীশু তাঁর নূতন প্রাপ্ত শিষ্যদের নিয়ে, যর্দ্দন উপত্যকা পার হয়ে গালীলে যান। যোহন ১:২৯-৫১.
▪ যীশুর প্রথম শিষ্য কারা?
▪ কিভাবে পিতর, ও সবেত যাকোব, যীশুর সাথে পরিচিত হন?
▪ কি নথনেলের বিশ্বাস জন্মায় যে যীশুই ঈশ্বরের পুত্র?