মুদ্রাগুলির দৃষ্টান্ত
অধ্যায় ১০০
মুদ্রাগুলির দৃষ্টান্ত
যীশু হয়ত তখন সক্কেয়র গৃহে আছেন, যেখানে তিনি থেমেছেন যিরূশালেমে যাবার পথে। তাঁর শিষ্যরা বিশ্বাস করেন যে তারা যিরূশালেম পৌঁছানোর পর, তিনি নিজেকে মশীহ বলে ঘোষণা করবেন ও তাঁর রাজ্য স্থাপন করবেন। এই ধারণাকে ঠিক করার জন্য ও বোঝাবার জন্য যে রাজ্য এখনও অনেক দূরে, যীশু এক দৃষ্টান্ত দেন।
“ভদ্র বংশীয় এক ব্যক্তি,” তিনি বর্ণনা করেন, “দূরদেশে গেলেন, অভিপ্রায় এই যে, আপনার জন্য রাজপদ লইয়া ফিরিয়া আসিবেন।” যীশু হচ্ছেন সেই “ভদ্র বংশীয়” ব্যক্তি, স্বর্গ হচ্ছে সেই “দূরদেশ।” যখন তিনি সেখানে যান, তখন তাঁর পিতা তাঁকে সেই রাজ ক্ষমতা দান করেন।
যাবার পূর্বে, যাইহোক, সেই ভদ্র বংশীয় ব্যক্তি তার দশজন দাসকে ডেকে তাদের প্রত্যেক জনকে এক রৌপ্য মুদ্রা দেন এই বলে: “আমি যে পর্যন্ত না আসি, ব্যবসা কর।” এই দশজন দাস প্রথম পরিপূর্ণতায় যীশুর প্রথম শিষ্যদের নির্দেশ করে। বৃহৎভাবে, তাদের সকলকে চিত্রিত করে যারা তাঁর সাথে স্বর্গীয় রাজ্যে রাজত্ব করার আশা পোষণ করেন।
রৌপ্যমুদ্রা খুব দামী পয়সা, যার একটির মূল্য একজন ক্ষেতমজুরের তিন মাসের মজুরির সমান। কিন্তু এই রৌপ্যমুদ্রা কি চিত্রিত করে? আর দাসরা কি ধরনের ব্যবসা করবে এটি নিয়ে?
এই মুদ্রাগুলি চিত্রিত করে ব্যবহার্য্য সমস্ত সম্পত্তিকে যা তারা ব্যবহার করবে স্বর্গ রাজ্যের জন্য আরও আত্মায় জাত শিষ্য তৈরি করার জন্য যতক্ষণ না যীশু সেই প্রতিজ্ঞাত রাজ্যে রাজারূপে আসেন। তাঁর পুনরুত্থান ও শিষ্যদের কাছে দেখা দেবার পর, তিনি তাদের এই রূপক মুদ্রা দেন যাতে তারা স্বর্গরাজ্যের যারা সদস্য তাদের মত আরও শিষ্য তৈরি করতে পারে।
“কিন্তু,” যীশু বলে চলেন, “তাঁহার প্রজাগণ তাঁহাকে [ভদ্র বংশীয় ব্যক্তিকে] দ্বেষ করিত, তাহারা তাঁহার পশ্চাৎ দূত পাঠাইয়া দিল, কহিল, ‘আমাদের ইচ্ছা নয় যে, এই ব্যক্তি আমাদের উপরে রাজত্ব করে।’” এই প্রজাগণ ইস্রায়েলীয় বা যিহূদীরা, তাঁর শিষ্যরা এর মধ্যে নেই। যীশু স্বর্গে চলে যাবার পর, এই যিহূদীরা, তাঁর শিষ্যদের তাড়না করার দ্বারা জানিয়ে দেয় যে তারা তাঁকে রাজা হিসাবে চায় না। এইভাবে তারা সেই প্রজাগণ যারা তাঁর পিছনে দূত পাঠিয়ে দেয় তাদের মত আচরণ করে।
এই দশজন দাস তাদের মুদ্রা কিভাবে ব্যবহার করে? যীশু ব্যাখ্যা করেন: “পরে তিনি রাজপদ প্রাপ্ত হইয়া যখন ফিরিয়া আসিলেন, তখন যাহাদিগকে টাকা দিয়াছিলেন, সেই দাসদিগকে তাঁহার কাছে ডাকিয়া আনিতে বলিলেন, যেন তিনি জানিতে পারেন, তাহারা ব্যবসায় কে কত লাভ করিয়াছেন। তখন প্রথম ব্যক্তি নিকটে আসিয়া কহিল, ‘প্রভু, আপনার মুদ্রায় আরও দশ মুদ্রা হইয়াছে।’ তিনি তাহাকে কহিলেন, ‘ধন্য, উত্তম দাস! তুমি অতি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে; এ জন্য দশ নগরের উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।’ দ্বিতীয় ব্যক্তি আসিয়া কহিল, ‘প্রভু, আপনার মুদ্রায় আরও পাঁচ মুদ্রা হইয়াছে।’ তিনি তাহাকেও কহিলেন, ‘তুমিও পাঁচ নগরের কর্ত্তা হও।’”
যে দাস দশটি রৌপ্যমুদ্রা অর্জন করে সে চিত্রিত করে, ৩৩ সা.শ. পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে এখন পর্যন্ত এক দল বা শ্রেণীর শিষ্যদের, যার মধ্যে প্রেরিতরাও অন্তর্ভুক্ত। যে দাস পাঁচটি রৌপ্যমুদ্রা পেয়েছিল সে চিত্রিত করে সেই দলকে, যারা এই একই সময়ে তাদের সুযোগ ও সামর্থকে ব্যবহার করেছে, যাতে পৃথিবীতে রাজার ধন বৃদ্ধি করতে পারে। এই দুই দল উৎসাহের সাথে সুসমাচার প্রচার করে, আর ফলে সহৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তিরা খ্রীষ্টান হয়। দাসদের মধ্যে নয়জন সার্থকভাবে ব্যবসা করে ও তাদের পুঁজিকে বৃদ্ধি করে।
“কিন্তু,” যীশু বলে চলেন, “পরে আর একজন আসিয়া কহিল, ‘প্রভু, দেখুন, এই আপনার মুদ্রা; আমি ইহাকে রুমালে বাঁধিয়া রাখিয়াছিলাম। কারণ আমি আপনা হইতে ভীত ছিলাম, কেননা আপনি কঠিন লোক, যাহা রাখেন নাই, তাহা তুলিয়া লন, এবং যাহা বুনেন নাই, তাহা কাটেন।’ তিনি তাহাকে কহিলেন, ‘দুষ্ট দাস, আমি তোমার নিজের মুখের প্রমাণে তোমার বিচার করিব। তুমি না জানিতে, আমি কঠিন লোক, যাহা রাখি নাই তাহাই তুলিয়া লই, এবং যাহা বুনি নাই তাহাই কাটি? তবে আমার টাকা পোফ্লারদের কাছে কেন রাখ নাই? তাহা করিলে আমি আসিয়া সুদের সহিত তাহা আদায় করিতাম।’ আর যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, ‘ইহার নিকট হইতে ঐ মুদ্রা লও, এবং যাহার দশ মুদ্রা আছে, তাহাকে দেও।’”
সেই দুষ্ট দাসের জন্য, প্রতীক মুদ্রা হারানর অর্থ হচ্ছে স্বর্গ রাজ্যে স্থান হারান। হ্যাঁ, সে সেই দশ নগর, বা পাঁচ নগরের উপর রাজত্ব করার যে অধিকার তা হারায়। আরও, লক্ষ্য করুন, যে এই দাসকে মন্দ কাজ করার জন্য দুষ্ট ঘোষিত করা হচ্ছে না, বরং, তার প্রভুর রাজ্যের ধন বৃদ্ধি করার ব্যর্থতার কারণে।
যখন দুষ্ট দাসের মুদ্রা প্রথম দাসকে দেওয়া হয়, তখন আপত্তি ওঠে: “প্রভু, উহার যে দশ মুদ্রা আছে!” তবুও, যীশু উত্তর দেন: “যে কাহারও আছে, তাহাকে দেওয়া যাইবে; কিন্তু যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। পরন্তু আমার এই যে শত্রুগণ ইচ্ছা করে নাই যে, আমি তাহাদের উপরে রাজত্ব করি, তাহাদিগকে এই স্থানে আন, আর আমার সাক্ষাতে বধ কর।” লূক ১৯:১১-২৭; মথি ২৮:১৯, ২০.
▪ কি যীশুকে মুদ্রার দৃষ্টান্ত দিতে পরিচালিত করে?
▪ সেই ভদ্র বংশীয় ব্যক্তি কে, আর কোন দেশে তিনি যান?
▪ সেই দাসরা কারা, আর মুদ্রা কি চিত্রিত করে?
▪ কারা সেই প্রজাগণ, আর তারা তাদের ঘৃণা কি ভাবে দেখায়?
▪ কেন একজন দাসকে মন্দ বলা হয়েছে, আর তার মুদ্রা হারানর অর্থ কি?