মার্থাকে উপদেশ ও প্রার্থনা সংক্রান্ত নির্দেশ
অধ্যায় ৭৪
মার্থাকে উপদেশ ও প্রার্থনা সংক্রান্ত নির্দেশ
যীশুর যিহূদীয়ায় পরিচর্য্যাকালে, তিনি বৈথনিয়া গ্রামে যান। আর এখানেই মার্থা, মরিয়ম ও তাদের ভাই লাসার থাকত। হয়তো এর আগে যীশুর পরিচর্য্যাকালে এই তিনজনের সঙ্গে দেখা হয় আর সেইজন্য তারা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যাইহোক, যীশু এখন এই মার্থার ঘরে যান আর মার্থা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়।
মার্থা যীশুকে তার যা সবচেয়ে ভাল জিনিষ আছে তাই দিতে অগ্রহী। সত্যই, প্রতিজ্ঞাত মশীহ যদি একজনের ঘরে আসেন তবে তাহা বহু সম্মানের বিষয়! তাই মার্থা এক বিরাট ভোজের আয়োজন করতে লেগে গেল এবং যীশুর অবস্থিতি যেন মনোরম ও আরামদায়ক হয় তার জন্য বিস্তারিত আয়োজন আরম্ভ করল।
অপর দিকে, মার্থার বোন মরিয়ম যীশুর পায়ের ধারে বসে তাঁর কথা শুনতে লাগল। কিছু সময় পর, মার্থা যীশুর কাছে এসে বলে: “প্রভু, আপনি কি কিছু মনে করিতেছেন না যে, আমার ভগিনী পরিচর্য্যার ভার একা আমার উপরে ফেলিয়া রাখিয়াছে? অতএব, উহাকে বলিয়া দিউন, যেন আমার সাহায্য করে।”
কিন্তু যীশু মরিয়মকে কিছু বলতে অস্বীকৃত। বরং, তিনি মার্থাকে উপদেশ দিলেন জাগতিক বিষয়ের জন্য অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকার কারণে। “মার্থা, মার্থা,” তিনি স্নেহের সাথে তিরস্কার করলেন, “তুমি অনেক বিষয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন আছ। কিন্তু অল্প কয়েকটি বিষয়, বরং একটি মাত্র বিষয় অবশ্যক।” যীশু বলছেন যে বহু ধরনের রান্না রেঁধে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। মাত্র কয়েকটি বা একটি ধরনের ব্যঞ্জনই যথেষ্ট।
মার্থার মনোভাব ভাল; সে একজন ভাল অতিথি সেবিকা হতে চায়। কিন্তু, তার উদ্বিগ্নভাবে খাদ্যবস্তুর আয়োজনে অতি মনোযোগী হওয়ার ফলে, সে ঈশ্বরের নিজ পুত্রের কাছ থেকে ব্যক্তিগত নির্দেশ পাবার সুযোগ হারিয়ে ফেলছে! সুতরাং যীশু শেষ করেন: “বাস্তবিক মরিয়ম সেই উত্তম অংশটি মনোনীত করিয়াছে, যাহা তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে না।”
পরে, আর এক ক্ষেত্রে, এক শিষ্য যীশুকে বলেন: “প্রভু, আমাদিগকে প্রার্থনা করিতে শিক্ষা দিউন, যেমন যোহনও আপন শিষ্যদিগকে শিক্ষা দিয়াছিলেন।” হয়ত এই শিষ্য প্রায় দেড় বৎসর আগে উপস্থিত ছিল না যখন যীশু পর্বতে দত্ত উপদেশে আদর্শ প্রার্থনা শিখিয়েছিলেন। সুতরাং যীশু তাঁর নির্দেশাবলী পুনরাবৃত্তি করলেন কিন্তু তারপর আমাগত প্রার্থনায় রত থাকার উপর জোর দেবার জন্য এক দৃষ্টান্ত বললেন।
“তোমাদের মধ্যে কাহারও যদি বন্ধু থাকে,” যীশু শুরু করলেন, “আর সে যদি মধ্যরাত্রে তাহার নিকটে গিয়া বলে, ‘বন্ধু, আমাকে তিনখানা রুটি ধার দেও, কেননা আমার এক বন্ধু পথে যাইতে যাইতে আমার কাছে আসিয়াছেন, তাহার সম্মুখে রাখিবার আমার কিছুই নাই?’ তাহা হইলে সেই ব্যক্তি ভিতরে থাকিয়া কি এমন উত্তর দিবে, ‘আমাকে কষ্ট দিও না। এখন দ্বার বদ্ধ, এবং আমার সন্তানেরা আমার কাছে শুইয়া আছে, আমি উঠিয়া তোমাকে দিতে পারি না।’ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, সে যদ্যপি বন্ধু বলিয়া উঠিয়া তাহা না দেয়, তথাপি উহার অগ্রহ প্রযুক্ত উঠিয়া উহার যত প্রয়োজন, তাহা দিবে।”
এই তুলনামূলক বিষয়টিতে যীশু এটি বলতে চাইছেন না যে যিহোবা ঈশ্বর যাচ্ঞা সময়ে উত্তর দেন না, ঠিক যেমন এই কাহিনীর বন্ধুটি করেছিল। না, বরং তিনি ব্যাখ্যা করছেন যে যেমন এক অনিচ্ছুক বন্ধু অবিরাম অনুরোধের উত্তর দেবেই, তাহলে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা আরও কত বেশী না করবেন! যার জন্য যীশু বলে চলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাচ্ঞা করে, সে গ্রহণ করে এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে দ্বারে আঘাত করে, তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।”
যীশু এরপর অসিদ্ধ, পাপে পূর্ণ মানব পিতাদের উল্লেখ করে বলেন: “তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কে, যাহার পুত্র মাছ চাহিলে মাছের পরিবর্ত্তে সর্প দিবে? কিম্বা ডিম চাহিলে, তাহাকে বৃশ্চিক দিবে? অতএব তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন!” সত্যই, যীশু কত না প্রেরণামূলক উৎসাহ দিলেন প্রার্থনায় রত থাকার উপর। লূক ১০:৩৮–১১:১৩.
▪ মার্থা যীশুর জন্য অত বিশেষ ধরনের আয়োজন কেন করেছিল?
▪ মরিয়ম কি করছিল, এবং যীশু কেন মার্থার চাইতে তার বেশী প্রশংসা করেছিলেন?
▪ প্রার্থনা সংআন্ত নির্দেশাবলীকে পুনরাবৃত্তি করতে কোন বিষয়টি যীশুকে প্ররোচিত করে?
▪ যীশু প্রার্থনায় রত থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর কিভাবে দৃষ্টান্ত দেন?