ফরীশীদের স্বেচ্ছাকৃত অবিশ্বাস
অধ্যায় ৭১
ফরীশীদের স্বেচ্ছাকৃত অবিশ্বাস
সেই পূর্বের অন্ধ ভিখারীর পিতা মাতাকে ফরীশীদের সামনে আসতে যখন ডেকে পাঠানো হল তখন তারা ভয় পেয়ে গেল। তারা জানত এটা সুনিশ্চিৎ যে কেউ যদি যীশুতে বিশ্বাস দেখায় ত সমাজগৃহ থেকে বহিষ্কৃত হবে। এই ধরনের সামাজিক মেলামেশায় বঞ্চিত হলে এক ব্যক্তিকে প্রচুর কষ্ট স করতে হত, বিশেষ করে যদি কোনও গরীব পরিবারে তা ঘটত। সুতরাং পিতামাতা খুবই সতর্ক ছিল।
“এ কি তোমাদের পুত্র, যাহার বিষয়ে তোমরা বলিয়া থাক, এ অন্ধই জন্মিয়াছিল?” ফরীশীরা তাদের জিজ্ঞাসা করে। “তবে এখন কি প্রকারে দেখিতে পাইতেছে?”
“আমরা জানি, এ আমাদের পুত্র, এবং অন্ধই জন্মিয়াছিল,” তার পিতামাতা নিশ্চয়তা দিল। “তবে এখন কি প্রকারে দেখিতে পাইতেছে তাহা জানি না, এবং কেই বা ইহার চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে তাহাও আমরা জানি না।” ইহা নিশ্চিৎ যে তাদের পুত্র কি ঘটেছিল তা জানিয়েছিল, তবুও সাবধান হয়ে পিতামাতা উত্তর দেয়: “ইহাকেই জিজ্ঞাসা করুন, এ বয়ঃপ্রাপ্ত, আপনার কথা আপনি বলিবে।”
সুতরাং, ফরীশীরা আবার সেই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠাল। এই সময়ে তাকে ভয় দেখাতে চাইল এই সংকেত দিয়ে যে তারা যীশুর বিরুদ্ধে দোষারোপমূলক প্রমাণ পেয়েছে। “ঈশ্বরের গৌরব স্বীকার কর,” তারা দাবি করে। “আমরা জানি যে সেই ব্যক্তি পাপী।”
পূর্বের অন্ধ ব্যক্তি তাদের অভিযোগে অস্বীকৃত না হয়ে বলল: “তিনি পাপী কিনা, তাহা জানি না।” কিন্তু সে যোগ দিল: “একটি বিষয় জানি, আমি অন্ধ ছিলাম, এখন দেখিতে পাইতেছি।”
তার সাক্ষ্যে ত্রুটি ধরার চেষ্টা করে, ফরীশীরা আবার জিজ্ঞাসা করে: “সে তোমার প্রতি কি করিয়াছিল? কি প্রকারে তোমার চক্ষু খুলিয়া দিল?”
“একবার আপনাদিগকে বলিয়াছি,” ব্যক্তিটি অভিযোগ করে, “আপনারা শুনেন নাই। তবে আবার শুনিতে চাহেন কেন?” ব্যঙ্গপূর্বক সে জিজ্ঞাসা করে: “আপনারাও কি তাঁহার শিষ্য হইতে চাহেন?”
এই উত্তর ফরীশীদের আধান্বিত করে। “তুই সেই ব্যক্তির শিষ্য,” তারা অভিযোগ করে, “আমরা মোশির শিষ্য। আমরা জানি, ঈশ্বর মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন; কিন্তু এ কোথা হইতে আসিল, তাহা জানি না।”
সেই নম্র ভিক্ষুকটি, আশ্চর্য্যের সাথে উত্তর দেয়: “ইহার মধ্যে ত আশ্চর্য্য এই যে, তিনি কোথা হইতে আসিলেন, তাহা আপনারা জানেন না, তথাপি তিনি আমার চক্ষু খুলিয়া দিয়াছেন।” এর দ্বারা কোন শেষ সিদ্ধান্তে আসা যায়? ভিক্ষুকটি এই অনুমোদিত সিদ্ধান্তের মূলটি উল্লেখ করে: “আমরা জানি, ঈশ্বর পাপীদের কথা শুনেন না, কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি ঈশ্বরের ভক্ত হয়, আর তাঁহার ইচ্ছা পালন করে, তিনি তাহারই কথা শুনেন। কখনও শুনা যায় নাই, কেহ জন্মান্ধের চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে।” যার জন্য, এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিৎ: “তিনি যদি ঈশ্বর হইতে না আসিতেন, তবে কিছুই করিতে পারিতেন না।”
ফরীশীদের কাছে এই ধরনের স্পষ্ট যুক্তির কোন উত্তর নেই। তারা সত্যের মোকাবিলা করতে পারছে না, যার জন্য তারা ব্যক্তিটিকে অভিযুক্ত করে: “তুই একেবারে পাপেই জন্মিয়াছিস, আর তুই আমাদিগকে শিক্ষা দিতেছিস?” পরে, তারা তাকে বার করে দিল, হয়তো সমাজগৃহ থেকে বহিষ্কৃত করল।
যখন যীশু জানতে পারলেন তারা তার প্রতি কি করেছে, তিনি ব্যক্তিটিকে খুঁজে জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি কি ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাস করিতেছ?”
উত্তরে, সেই পূর্বের অন্ধ ভিখারী প্রশ্ন করে: “প্রভু, তিনি কে, আমি যেন তাহাতে বিশ্বাস করি?”
“তিনিই তোমার সঙ্গে কথা কহিতেছেন,” যীশু উত্তর দিলেন।
তৎক্ষণাৎ সে তাঁহাকে প্রণাম করে বলে: “বিশ্বাস করিতেছি, প্রভু।”
যীশু তখন ব্যাখ্যা করেন: “বিচারের জন্য আমি এ জগতে আসিয়াছি, যেন যাহারা দেখে না, তাহারা দেখিতে পায়, এবং যাহারা দেখে, তাহারা যেন অন্ধ হয়।”
এতে, ফরীশীরা যারা শুনছিলেন জিজ্ঞাসা করে: “আমরাও কি অন্ধ নাকি?” যদি তারা স্বীকার করে যে তারা মানসিকভাবে অন্ধ, তাহলে যীশুর প্রতি তাদের বিরোধীতার জন্য অজুহাত থাকবে। যার জন্য যীশু তাদের বলেন: “যদি অন্ধ হইতে, তোমাদের পাপ থাকিত না।” তবুও, তারা কঠিন হৃদয়ে জোর করতেই থাকে যে তারা অন্ধ নয় আর তাদের আত্মিক আলোর দরকার নেই। তাই যীশু বললেন, “কিন্তু এখন তোমরা বলিয়া থাক, ‘আমরা দেখিতেছি।’ তোমাদের পাপ রহিয়াছে।” যোহন ৯:১৯-৪১.
▪ কেন সেই পূর্বের অন্ধ ভিক্ষুকের পিতামাতা ভীত হয়েছিল যখন তাদের ফরীশীদের সামনে ডাকা হয়, এবং কিভাবে তারা সাবধান হয়ে উত্তর দেয়?
▪ কিভাবে ফরীশীরা পূর্বের অন্ধ ব্যক্তিকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে?
▪ ব্যক্তিটির কোন যুক্তিযুক্ত তর্ক ফরীশীদের রাগান্বিত করে?
▪ যীশুর বিরোধীতাতে কেন ফরীশীদের কোন অজুহাত থাকতে পারে না?