গালীল সমুদ্রে
অধ্যায় ১৩০
গালীল সমুদ্রে
প্রেরিতরা এবার গালীলে ফিরে আসেন, যেমন যীশু তাদের পূর্বের নির্দেশে বলেছিলেন। কিন্তু তারা নিশ্চিত নন যে সেখানে তারা কি করবেন। কিছু সময় পরে, থোমা, নথনেল, যাকোব ও তার ভাই যোহন এবং আরও দুইজন প্রেরিতকে পিতর বলেন: “আমি মাছ ধরিতে যাই।”
“আমরাও তোমার সঙ্গে যাই,” সেই ছয়জন উত্তর করেন।
সারা রাত, তারা কিছুই ধরতে পারেন না। কিন্তু এবার সকাল হয়ে আসছে, তখন যীশু তীরে উপস্থিত হন, কিন্তু প্রেরিতরা বুঝতে পারেন না যে তিনি যীশু। তিনি চিৎকার করে ডাকেন: “বৎসেরা, তোমাদের নিকটে কিছু খাবার আছে?”
“না!” তারা জলের ওপার থেকে চেঁচিয়ে বলে।
“নৌকার দক্ষিণ পার্শ্বে জাল ফেল, পাইবে,” তিনি বলেন। আর তারা যখন তা করেন, জাল টেনে তুলতে পারেন না কারণ তাতে এত মাছ।
“উনি প্রভু!” যোহন চিৎকার করে ওঠেন।
ইহা শুনে, পিতর তার উপরের বস্ত্র পরেন, কারণ তিনি তার কাপড় খুলে রেখেছিলেন, এবং জলে ঝাঁপ দেন। তখন প্রায় ৯০ মিটার সাঁতার কেটে কূলে আসেন। অন্য প্রেরিতরা সেই ছোট নৌকায় আসেন, মাছে ভরা জাল টেনে তুলে।
তারা যখন কূলে আসেন, সেখানে কাঠ কয়লার আগুন জ্বলছিল, তার উপর মাছ, ও রুটি রয়েছে। “যে মাছ এখন ধরিলে, তাহার কিছু আন,” যীশু বলেন। পিতর নৌকায় গিয়ে জাল কূলে টেনে আনেন। তাতে ১৫৩টি বড় মাছ!
“আইস, আহার কর,” যীশু তাদের আমন্ত্রণ করেন।
তাদের মধ্যে কেউ সাহস করেন না জিজ্ঞাসা করতে যে, “আপনি কে?” কারণ সকলে জানেন যে তিনি যীশু। এটা পুনরুত্থানের পর তাঁর সপ্তম আবির্ভাব, আর তৃতীয়বার দলগত প্রেরিতদের সামনে। তিনি এবার সকালের খাবার, তাদের প্রত্যেককে রুটি ও মাছ দেন।
তাদের আহার শেষ হলে পরে, যীশু সবেত সেই অনেক মাছ যা তারা ধরেছেন সেইদিকে তাকিয়ে, পিতরকে জিজ্ঞাসা করেন: “যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি আমাকে অধিক প্রেম কর কি?” নিঃসন্দেহে তিনি বলতে চান, তুমি মৎস ব্যবসাতে কি বেশী আসক্ত আমি যে কাজের জন্য তোমাকে প্রস্তুত করেছি তার থেকেও?
“আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভালবাসি,” পিতর উত্তর দেন।
“আমার মেষশাবকগণকে চরাও।” যীশু উত্তর দেন।
আবার, দ্বিতীয়বার, তিনি জিজ্ঞাসা করেন: “যোহনের পুত্র শিমোন, তুমি কি আমাকে প্রেম কর?”
“হ্যাঁ, প্রভু, আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভালবাসি,” পিতর আন্তরিকতার সাথে উত্তর দেন।
“আমার মেষগণকে পালন কর,” যীশু আবার আজ্ঞা দেন।
তারপর, তৃতীয়বার, তিনি জিজ্ঞাসা করেন: “হে যোহনের পুত্র শিমোন, তুমি কি আমাকে ভালবাস?”
এইবার পিতর দুঃখ পেলেন। তিনি হয়ত চিন্তা করছেন যীশু তার আনুগত্য সম্বন্ধে সন্দেহ রাখেন। কারণ যখন সম্প্রতিকালে যীশু বিচারিত হচ্ছিলেন জীবনের জন্য, পিতর তাঁকে জানা সত্ত্বেও তিনবার অস্বীকার করেন। তাই পিতর বলেন: “প্রভু, আপনি সকলই জানেন; আপনি জ্ঞাত আছেন যে, আমি আপনাকে ভালবাসি।”
“আমার মেষগণকে চরাও,” যীশু তৃতীয়বার আজ্ঞা দেন।
যীশু পিতরকে ব্যবহার করেন যে কাজ তিনি চান তারা করুন সেই কাজের বিষয় স্পষ্টরূপে অন্যদের উপর প্রভাব ফেলার জন্য। তিনি শীঘ্রই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, আর তিনি চান তারা নেতৃত্ব নেন তাদের সাহায্য করার জন্য যারা ঈশ্বরের খোঁয়াড়ে আসবে।
যীশু যেমন বন্দী হন ও তাঁর প্রাণদণ্ড হয় কারণ তিনি সেই কাজ করেন যা ঈশ্বর তাঁকে করতে দিয়েছিলেন, তাই এখন প্রকাশ করেন, যে পিতরের জন্যও একই দুঃখভোগ হবে। “যখন যুবা ছিলে,” যীশু তাকে বলেন, “তখন আপনি আপনার কটি বন্ধন করিতে এবং যেখানে ইচ্ছা বেড়াইতে। কিন্তু যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন তোমার হস্ত বিস্তার করিবে, এবং আর একজন তোমার কটি বন্ধন করিয়া দিবে, ও যেখানে যাইতে তোমার ইচ্ছা নাই, সেইখানে তোমাকে লইয়া যাইবে।” যদিও পিতরের জন্য শহীদের মৃত্যু অপেক্ষা করছিল, যীশু তাকে উৎসাহ দান করেন: “আমার পশ্চাৎ আইস।”
ফিরে তাকিয়ে, পিতর যোহনকে দেখেন ও জিজ্ঞাসা করেন: “প্রভু, ইহার কি হইবে?”
“আমি যদি ইচ্ছা করি এ আমার আগমন পর্যন্ত থাকে,” যীশু উত্তর দেন, “তাহাতে তোমার কি? তুমি আমার পশ্চাৎ আইস।” এই কথাগুলিতে অনেক শিষ্যরা মনে করেন প্রেরিত যোহন কখনও মরবেন না। যাইহোক, যেমন প্রেরিত যোহন পরে ব্যাখ্যা করেন, যীশু এই কথা বলেননি যে তিনি মরবেন না, কিন্তু যীশু কেবল মাত্র বলেন: “আমি যদি ইচ্ছা করি, এ আমার আগমন পর্যন্ত থাকে, তাহাতে তোমার কি?”
যোহন পরে এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন: “যীশু আরও অনেক কর্ম্ম করিয়াছিলেন; সে সকল যদি এক এক করিয়া লেখা যায়, তবে আমার বোধ হয় লিখিতে লিখিতে এত গ্রন্থ হইয়া উঠে যে, জগতেও তাহা ধরে না।” যোহন ২১:১-২৫; মথি ২৬:৩২; ২৮:৭, ১০.
▪ কি দেখায় প্রেরিতরা অনিশ্চিত যে গালীলে কি করবেন?
▪ কি করে প্রেরিতরা যীশুকে গালীল সমুদ্রে চিনতে পারেন?
▪ তাঁর পুনরুত্থানের পর যীশু এখন কতবার দেখা দিয়েছেন?
▪ তিনি যা চান তাঁর প্রেরিতরা করুন তা যীশু কিভাবে জোর দেন?
▪ পিতরের কি ধরনের মৃত্যু হবে যীশু কিভাবে দেখান?
▪ যীশু যোহন সম্বন্ধে যে উক্তি করেন কিভাবে অনেক শিষ্যরা তা ভুল বোঝেন?