সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কীভাবে আমি হস্তমৈথুনের অভ্যাস ছাড়তে পারি?

কীভাবে আমি হস্তমৈথুনের অভ্যাস ছাড়তে পারি?

অধ্যায় ২৫

কীভাবে আমি হস্তমৈথুনের অভ্যাস ছাড়তে পারি?

“আট বছর বয়স থেকে আমার হস্তমৈথুনের অভ্যাস শুরু হয়। এই বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা জানার পর যত বারই আমি এটা করে ফেলতাম তত বারই আমার প্রচণ্ড অপরাধবোধ হত। আমার মনে হত, আমার মতো একজনকে ঈশ্বর কখনোই ভালোবাসতে পারেন না।”—লুইজ।

তুমি যখন বড়ো হয়ে উঠতে থাক, বিশেষ করে তোমার বয়ঃসন্ধিকালে যৌন আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠতে পারে, আর সেই সময়ে তোমার হস্তমৈথুনের অভ্যাস শুরু হতে পারে। a অনেকের কাছে এটা কোনো বড়ো বিষয় নয়। তারা বলে, ’এতে তো কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।‘ তবে, আমাদের এই ধরনের অভ্যাসে জড়িয়ে পরা উচিত নয়। লক্ষ করো যে, প্রেরিত পৌল কী লিখেছিলেন: “অতএব, তোমাদের ... দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গে যে-সমস্ত প্রবণতা প্রকাশ পায়, সেগুলো পুরোপুরি দূর করে ফেলো, যেন তোমরা ... যৌন আকাঙ্ক্ষার বশবর্তী না হও।” (কলসীয় ৩:৫) হস্তমৈথুন যৌন আকাঙ্খাকে দূর করে না বরং এই আকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও নীচে দেওয়া অন্যান্য কারণগুলো লক্ষ করো:

● হস্তমৈথুনের অভ্যাস একজন ব্যক্তিকে স্বার্থপর করে তোলে। যেমন, হস্তমৈথুন করার সময় একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজেকে খুশি করার বিষয়ে চিন্তা করে।

● হস্তমৈথুনের অভ্যাস থাকলে একজন ব্যক্তি বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদেরকে শুধুমাত্র যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর একটা বস্তু হিসেবে দেখে।

● হস্তমৈথুনের অভ্যাসের কারণে একজন ব্যক্তি যেহেতু স্বার্থপর হয়ে ওঠে, তাই তার বিবাহিত জীবনে পরিতৃপ্তিদায়ক যৌন সম্পর্ক উপভোগ করা কঠিন হতে পারে।

তাই, হস্তমৈথুন না করে নিজের আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচেষ্টা করো। (১ থিষলনীকীয় ৪:৪, ৫) কী তোমাকে তা করতে সাহায্য করবে? বাইবেল পরামর্শ দেয়, এমন যেকোনো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলো যেটার কারণে তোমার হস্তমৈথুন করার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠতে পারে। (হিতোপদেশ ৫:৮, ৯) কিন্তু, যদি ইতিমধ্যে তোমার হস্তমৈথুনের অভ্যাস থেকে থাকে, তা হলে? তুমি হয়তো অনেকবার এই অভ্যাস ছাড়তে চেষ্টা করেছ, কিন্তু পারনি। আর এখন তোমার মনে হচ্ছে যে, তুমি আর কখনোই এই অভ্যাস ছাড়তে পারবে না এবং ঈশ্বরের মান অনুসারেও চলতে পারবে না। পেদ্রো নামের এক কিশোররেও একইরকম মনে হয়েছিল। সে বলে: “অনেক বার ছাড়তে চেষ্টা করার পরও যখন আমি আবারও তা করে ফেলতাম, তখন আমার খুবই খারাপ লাগত। আমার মনে হত, এরজন্য ঈশ্বর আমাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। তাঁর কাছে আমি প্রার্থনাও করতে পারতাম না।“

তোমারও যদি একইরকম মনে হয়, তা হলে চিন্তা করো না। এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তোমার মতো অনেক অল্পবয়সি আর এমনকী প্রাপ্তবয়স্করাও এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। তাই তুমিও অবশ্যই পারবে!

যেভাবে দোষী মনোভাব কাটিয়ে ওঠা যায়

যাদের হস্তমৈথুনের অভ্যাস রয়েছে, তারা প্রায়ই নিজেদের খুবই অপরাধী বলে মনে করে। এটা ঠিক যে, “ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে দুঃখিত” হওয়া তোমাকে এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেবে। (২ করিন্থীয় ৭:১১) তবে, নিজেকে অতিরিক্ত দোষ দেওয়া ক্ষতিকর। কারণ তা করলে তোমার নিজেকে এতটাই ব্যর্থ বলে মনে হবে যে, তুমি সেই অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টা করাই বন্ধ করে দেবে।—হিতোপদেশ ২৪:১০.

এসো দেখি, হস্তমৈথুন কতটা গুরুতর। হস্তমৈথুন হল এক ধরনের অশুচি কাজ। এটা তোমাকে “বিভিন্ন মন্দ আকাঙ্ক্ষা ও সুখভোগের দাস” করে তুলবে এবং তোমাকে সঠিক উপায় চিন্তা করতে বাধা দেবে। (তীত ৩:৩) তবে, হস্তমৈথুন ব্যভিচারের মতো গুরুতর পাপ নয়। (যিহূদা ৭) তাই তোমার যদি এই অভ্যাস থেকে থাকে, তা হলে এমন মনে কোরো না যে, তুমি ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেছ। এক্ষেত্রে তুমি কী করতে পারো? হস্তমৈথুন করার ইচ্ছাকে প্রতিরোধ করে চলো আর এই অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টা করা কখনও বন্ধ কোরো না!

হস্তমৈথুনের অভ্যাস ছাড়তে চেষ্টা করার পরও যদি তুমি তা করে ফেল, তখন নিরাশ হোয়ো না। এমনটা ঘটলে হিতোপদেশ ২৪:১৬ পদের কথাগুলো তুমি মনে করো: “ধার্ম্মিক সাত বার পড়িলেও আবার উঠে; কিন্তু দুষ্টেরা বিপৎপাতে নিপাতিত হইবে।” কিছু সময়ের জন্য ব্যর্থ হওয়ার মানে এই নয় যে, তুমি খুব খারাপ কেউ। তাই হাল ছেড়ে দিও না। এর পরিবর্তে, কেন তুমি ব্যর্থ হয়েছ তা নিয়ে চিন্তা করো এবং সেই একই পরিস্থিতিতে যেন আবারও না পড়, সেই বিষয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করো।

যিহোবার প্রেম এবং তাঁর করুণা সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় করে নাও। এই বিষয়ে গীতরচক দায়ূদের কাছ থেকে তুমি শিখতে পারো। কোনো মন্দ কাজ করার পরে কেমন লাগে, তা তিনি জানতেন। তবে, তিনি যিহোবার করুণা সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪) হ্যাঁ, যিহোবা জানেন যে, কেন আমরা মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলি, আর তিনি “ক্ষমাবান্‌” তাই তিনি আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত। (গীতসংহিতা ৮৬:৫) কিন্তু, তিনি এও চান যেন আমরা তাঁর বাধ্য থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। তাই, হস্তমৈথুনের অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে চলো। এই বিষয়ে তুমি আর কী কী করতে পার?

সঠিক বিনোদন বাছাই করো। তুমি যে-টিভি প্রোগ্রাম বা সিনেমা দেখ কিংবা যে-সমস্ত ওয়েবসাইটে যাও, সেখানে কি এমন বিষয় থাকে যা তোমার হস্তমৈথুন করার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলে? ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় গীতরচক বলেছিলেন: “অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও।” bগীতসংহিতা ১১৯:৩৭.

ভালো কিছু চিন্তা করতে তোমার মনকে বাধ্য করো। উইলিয়াম নামের একজন খ্রিস্টান বলেন: “ঘুমানোর আগে বাইবেলভিত্তিক কোনো কিছু পড়ো। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তোমার দিন যেন ঈশ্বরবিষয়ক কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে করতে শেষ হয়।“—ফিলিপীয় ৪:৮.

সমস্যাটা নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলো। কিন্তু, লজ্জার কারণে তুমি হয়তো এই বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে চাও না। তবে, কারো সঙ্গে কথা বললে তুমি তোমার অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে সাহায্য পাবে। ডেভিড এভাবেই সাহায্য পেয়েছিল। সে বলে: “আমি বাবার সঙ্গে একা একা কথা বলেছিলাম। আমার কথা শুনে বাবা যা বলেছিলেন, তা আমি কখনো ভুলব না। আমাকে আশ্বস্ত করার জন্য মুখে একটা হাসি নিয়ে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে নিয়ে অনেক গর্বিত।’ বাবা জানতেন, কথাগুলো বলার জন্য আমার কতটা সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল। তার এই কথাগুলো আমাকে কতটা সাহস দিয়েছিল আর আমার এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার জন্য কতটা শক্তি দিয়েছিল, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না।

“এরপর তিনি আমাকে কিছু শাস্ত্রপদ দেখিয়ে বুঝতে সাহায্য করেন যে, আমি ক্ষমার অযোগ্য কোনো কাজ করিনি। তবে, আমার কাজটা যে হালকা করে দেখার বিষয় নয়, তা বোঝানোর জন্য তিনি অন্য কিছু শাস্ত্রপদও দেখান। তিনি বলেছিলেন যেন আমি কিছু সময়ের জন্য এই কাজ না করার আপ্রাণ চেষ্টা করি আর তারপর আমরা এ নিয়ে আবার কথা বলব। আর যদি আমি এই সময়ের মধ্যে কোনোভাবে ব্যর্থ হই, তা হলে যেন অতিরিক্ত মন খারাপ না করি। বরং আমি যেন প্রথমে একটা লম্বা সময় ধরে এই কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি।” ডেভিড তার বাবার সঙ্গে কথা বলে কি উপকৃত হয়েছিল? হ্যাঁ! সে বলে: “কাউকে আমার সমস্যাটা সম্বন্ধে জানানো এবং তার সাহায্য নেওয়া আমাকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত করেছে।” c

পরের অধ্যায়ের বিষয় ক্যাজুয়াল সেক্স হালকাভাবে দেখার মতো কোনো বিষয় নয়। কারণগুলো পড়ে দেখো।

[পাদটীকাগুলো]

a হস্তমৈথুন এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে আসা যৌন উদ্দীপনা একই বিষয় নয়। যেমন, ছেলেদের স্বপ্নদোষ হতে পারে অর্থাৎ রাতে তাদের বীর্যপাত হতে পারে কিংবা তারা যৌন উত্তেজনা নিয়ে বা যৌনাঙ্গ সক্রিয় অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে। মেয়েদেরও অনিচ্ছাকৃতভাবে যৌন উত্তেজনা জেগে উঠতে পারে, বিশেষ করে তাদের পিরিয়ডের আগে বা পরে। কিন্তু, হস্তমৈথুন হল ইচ্ছাকৃতভাবে যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে তোলার জন্য নিজের যৌনাঙ্গে হাত বোলানো বা নাড়াচাড়া করা।

মুখ্য শাস্ত্রপদ

“তুমি যৌবনকালের কামনাবাসনা থেকে পালিয়ে যাও, কিন্তু যারা শুচি হৃদয়ে প্রভুকে ডাকে, তাদের সঙ্গে ধার্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তির পথে চলার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করো।২ তীমথিয় ২:২২.

পরামর্শ

তোমার যৌন আকাঙ্ক্ষা জোরালো হওয়ার আগেই যিহোবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো। এই প্রলোভনে না পড়ার জন্য তাঁর কাছে বিনতি করো যেন তিনি তোমাকে “অসাধারণ শক্তি” দেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.

তুমি কি জানতে…

নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করা খুব সহজ। তবে, যে-ব্যক্তি এমন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকী একা থাকার সময়েও, সে দেখায় যে, সে একজন পরিপক্ব ব্যক্তি।

আমি কী করব?

আমি আমার মনকে সবসময় ভালো বিষয়গুলো দিয়ে পূর্ণ রাখতে পারি, যদি আমি ․․․․․

হস্তমৈথুন করার আকাঙ্ক্ষার কাছে আমি নতিস্বীকার করব না, বরং সেই সময়ে আমি ․․․․․

এই বিষয়ে আমি আমার বাবা অথবা মাকে যা জিজ্ঞেস করতে চাই, তা হল ․․․․․

তুমি কী মনে কর?

● যিহোবা ঈশ্বর হলেন “ক্ষমাবান্‌” অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত, তা মনে রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?—গীতসংহিতা ৮৬:৫.

● যদিও ঈশ্বর আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তবে তিনি এও বলেছেন যেন আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করি। তাহলে, তুমি কী করতে পারবে বলে তিনি নিশ্চিত?

[ব্লার্ব]

“এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার পর আমি যিহোবার সামনে এক শুচি বিবেক বজায় রাখতে পেরেছি এবং আমি আর এমন কোনো কিছুই করতে চাই না যে-কারণে তা নষ্ট হয়ে যাবে।—সারা

[ছবি]

দৌড়ানোর মাঝপথে পড়ে যাওয়ার মানে এই নয় যে, তোমাকে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। একইভাবে, হস্তমৈথুনের অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টা করার মাঝপথে যদি তা এক বার করে ফেলো, তা হলে এর মানে এই নয় যে, তোমার সব চেষ্টাই বৃথা হয়ে গেছে