গল্প ১০১
যিশুকে মেরে ফেলা হয়
দেখো, এখানে কী ভয়ানক ঘটনা ঘটছে! যিশুকে মেরে ফেলা হচ্ছে। তারা তাঁকে একটা দণ্ডের ওপর টাঙিয়ে দিয়েছে। তাঁর হাতে ও পায়ে পেরেক গেঁথে দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি কেন যিশুর প্রতি এইরকম আচরণ করতে চাইবে?
এর কারণ হল কিছু ব্যক্তি যিশুকে ঘৃণা করে। তুমি কি জান, তারা কারা? তাদের মধ্যে একজন হল মন্দদূত শয়তান দিয়াবল। শয়তানই হল সেই ব্যক্তি, যে আদম ও হবাকে যিহোবার অবাধ্য হওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। আর শয়তানই হল সেই ব্যক্তি, যে যিশুর শত্রুদের দিয়ে এইরকম ভয়ানক এক অপরাধ করিয়েছে।
এমনকী যিশুকে এই দণ্ডে পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করার আগে তাঁর শত্রুরা তাঁর প্রতি অনেক খারাপ আচরণ করেছে। মনে আছে, কীভাবে তারা গেৎশিমানী বাগানে এসেছিল এবং তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল? ওই শত্রুরা কারা? হ্যাঁ, তারা হল ধর্মীয় নেতারা। চলো আমরা দেখি এরপর কী ঘটে।
ধর্মীয় নেতারা যখন যিশুকে ধরে নিয়ে যায়, তখন তাঁর প্রেরিতরা পালিয়ে গিয়েছিল। তারা যিশুকে একা শত্রুদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে কারণ তারা ভয় পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু, প্রেরিত পিতর ও যোহন বেশি দূরে যায় না। তারা যিশুর কী হয়, তা দেখার জন্য অনুসরণ করতে থাকে।
যাজকরা যিশুকে নিয়ে হানন নামে একজন বয়স্ক ব্যক্তির কাছে যায়, যিনি আগে মহাযাজক ছিলেন। কিন্তু, সেই জনতা এখানে বেশিক্ষণ থাকে না। এরপর তারা যিশুকে নিয়ে কায়াফার বাড়িতে যায়, যিনি এখন মহাযাজক। তার বাড়িতে অনেক ধর্মীয় নেতা জড়ো হয়েছে।
এখানে কায়াফার বাড়িতে বিচার হয়। যিশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলার জন্য লোকেদের আনা হয়। ধর্মীয় নেতারা সকলে বলে: ‘যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।’ তারপর, তারা তাঁর মুখে থুথু দেয় এবং তাঁকে ঘুসি মারে।
যখন এইসব ঘটনা চলছে, তখন পিতর বাইরে উঠানে রয়েছেন। তখন শীতের রাত আর তাই লোকেরা আগুন জ্বালায়। তারা আগুন পোহানোর সময় একজন দাসী পিতরকে দেখে বলে ওঠে: ‘এই লোকটিও যিশুর সঙ্গে ছিলেন।’
‘না, আমি ছিলাম না!’ পিতর উত্তর দেয়।
লোকেরা তিন বার পিতরকে বলে যে, তিনি যিশুর সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু, প্রতি বার পিতর বলেন যে, তা সত্য নয়। তৃতীয় বার যখন পিতর তা বলেন, তখন যিশু ঘুরে তার দিকে তাকান। পিতর এই মিথ্যাগুলো বলার কারণে অনেক দুঃখিত হন আর দূরে গিয়ে কান্নাকাটি করেন।
শুক্রবার সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গেসঙ্গে, যাজকরা যিশুকে তাদের বড়ো সভার যে-জায়গা রয়েছে, সেই মহাসভার ঘরে নিয়ে যায়। এখানে তারা যিশুকে নিয়ে কী করা যায়, সেই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে। তারা তাঁকে যিহূদিয়ার শাসক পন্তীয় পীলাতের কাছে নিয়ে যায়।
‘এই লোকটি খুবই খারাপ,’ যাজকরা পীলাতকে বলে। ‘ওকে মেরে ফেলা উচিত।’ যিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পীলাত বলেন: ‘আমি তো তাঁর কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।’ তারপর, পীলাত যিশুকে হেরোদ আন্তিপার কাছে পাঠিয়ে দেন। হেরোদ হলেন গালীলের শাসক কিন্তু তিনি যিরূশালেমে থাকেন। হেরোদও যিশুর কোনো দোষ খুঁজে পান না আর তাই তিনি তাঁকে আবার পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দেন।
পীলাত যিশুকে ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু, যিশুর শত্রুরা এর পরিবর্তে অন্য একজন বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হোক বলে চায়। সেই লোকটি হলেন দস্যু বারাব্বা। পীলাত যখন যিশুকে বাইরে নিয়ে আসেন, তখন প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছে। তিনি লোকেদের বলেন: ‘দেখো! তোমাদের রাজা!’ কিন্তু, প্রধান যাজকরা চিৎকার করে বলে: ‘ওকে দূর করে দিন! ওকে মেরে ফেলুন! মেরে ফেলুন!’ তাই, পীলাত বারাব্বাকে ছেড়ে দেন আর তারা যিশুকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যায়।
শুক্রবার দুপুরের পরে যিশুকে একটা দণ্ডের ওপর পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করা হয়। যিশুর দু-পাশে দু-জন অপরাধীকেও দণ্ডের ওপর টাঙিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তবে তুমি তাদেরকে এই ছবিতে দেখতে পাচ্ছ না। যিশু মারা যাওয়ার ঠিক অল্পসময় আগে, অপরাধীদের মধ্যে একজন তাঁকে বলেন: ‘আপনি যখন রাজ্যে প্রবেশ করবেন, তখন আমার কথা মনে রাখবেন।’ আর যিশু তখন উত্তর দেন: ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি, পরমদেশে তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।’
এটা কি এক চমৎকার প্রতিজ্ঞা নয়? তুমি কি জান, যিশু কোন পরমদেশের বিষয়ে বলছেন? ঈশ্বর একেবারে শুরুতে যে-পরমদেশ তৈরি করেছিলেন, সেটা কোথায় ছিল? হ্যাঁ, এই পৃথিবীতে। আর যিশু যখন স্বর্গে রাজা হিসেবে শাসন করবেন, তখন তিনি এই ব্যক্তিকে নতুন পরমদেশ উপভোগ করার জন্য জীবন ফিরিয়ে দেবেন। আমরা কি সেই কারণে আনন্দিত হতে পারি না?