অধ্যায় ৮
পুনর্স্থাপনের শক্তি—যিহোবা ‘সকলই নূতন করিতেছেন’
১, ২. আজকে মানব পরিবার কোন কোন ক্ষতি দ্বারা আক্রান্ত আর এগুলো কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে?
একটা বাচ্চার কোনো প্রিয় খেলনা হারিয়ে বা ভেঙে গেলে সে কাঁদে। কান্নার শব্দ কষ্ট দেয়! কিন্তু, আপনি কি কখনও দেখেছেন যে, বাচ্চার মুখ কতটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, যখন তার বাবা অথবা মা হারিয়ে যাওয়া জিনিসটা পুনরায় ফিরিয়ে দেন? বাবা অথবা মার কাছে, একটা খেলনা খুঁজে দেওয়া বা এমনকি তা মেরামত করে দেওয়া হয়তো সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু, বাচ্চাটি খুবই খুশি ও অবাক হয়। যেটা চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছিল, সেটা পুনরায় পাওয়া গেছে!
২ সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা, যিহোবার সেই বিষয়টা পুনর্স্থাপন করার শক্তি রয়েছে, যেটা ফিরে পাবার আশা নেই বলে তাঁর পার্থিব সন্তানেরা মনে করে। অবশ্যই, আমরা কোনো খেলনার কথা বলছি না। এই ‘বিষম সময়ে’ আমাদের এমন কিছু হারাতে হয়, যা অনেক অনেক বেশি গুরুতর। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) লোকেরা যে-বিষয়গুলোকে মূল্যবান মনে করে, সেগুলোর বেশির ভাগই হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—বাড়ি, সম্পত্তি, চাকরি, এমনকি স্বাস্থ্য। এ ছাড়া, আমরা হয়তো আতঙ্কিত হতে পারি যখন আমরা পরিবেশের ধ্বংস এবং এর ফলে বিলোপসাধনের দ্বারা অনেক জীবিত প্রজাতির হারিয়ে যাওয়ার কথা গভীরভাবে চিন্তা করি। কিন্তু, আর কোনোকিছুই আমাদেরকে এতখানি আঘাত দেয় না, যা কিনা আমরা আমাদের কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুতে পাই। হারিয়ে ফেলার এবং শক্তিহীন হয়ে পড়ার অনুভূতি চরম হতে পারে।—২ শমূয়েল ১৮:৩৩.
৩. প্রেরিত ৩:২১ পদে কোন সান্ত্বনাদায়ক প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করা আছে আর যিহোবা কীসের দ্বারা এটা পরিপূর্ণ করবেন?
৩ তাই, যিহোবার পুনর্স্থাপনের শক্তি সম্বন্ধে জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক! আমরা যেমন দেখব যে, ঈশ্বর তাঁর পার্থিব সন্তানদের জন্য যা পুনর্স্থাপন করতে পারেন ও করবেন, সেগুলোর পরিধি বিস্ময়কর। বাস্তবিকপক্ষে, বাইবেল দেখায় যে যিহোবা “সমস্ত বিষয়ের পুনঃস্থাপনের” উদ্দেশ্য স্থির করেছেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (প্রেরিত ৩:২১) আর তা সম্পন্ন করার জন্য যিহোবা তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের দ্বারা শাসিত মশীহ রাজ্য ব্যবহার করবেন। প্রমাণ দেখায় যে, এই রাজ্য ১৯১৪ সালে স্বর্গে শাসন শুরু করেছে। a (মথি ২৪:৩-১৪) কী পুনর্স্থাপন করা হবে? আসুন আমরা যিহোবার পুনর্স্থাপনের কিছু মহৎ কাজ বিবেচনা করি। এগুলোর মধ্যে একটা আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পারছি ও অভিজ্ঞতা লাভ করছি। অন্যগুলো ভবিষ্যতে ব্যাপক আকারে ঘটবে।
বিশুদ্ধ উপাসনার পুনর্স্থাপন
৪, ৫. সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে ঈশ্বরের লোকেদের কী হয়েছিল আর যিহোবা তাদের কোন আশা দিয়েছিলেন?
৪ একটা বিষয় যা যিহোবা ইতিমধ্যেই পুনর্স্থাপন করেছেন, তা হল বিশুদ্ধ উপাসনা। এর মানে কী, তা বোঝার জন্য আসুন আমরা সংক্ষেপে যিহূদা রাজ্যের ইতিহাস পরীক্ষা করি। তা করা আমাদেরকে যিহোবা তাঁর পুনর্স্থাপনের শক্তি কীভাবে প্রয়োগ করেন, সেই সম্বন্ধে এক রোমাঞ্চকর অন্তর্দৃষ্টি দেবে।—রোমীয় ১৫:৪.
৫ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় বিশ্বস্ত যিহুদিদের কেমন লেগেছিল, তা কল্পনা করুন। তাদের প্রিয় শহর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এর দেয়ালগুলো ভেঙে পড়েছিল। এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল যে, শলোমনের নির্মিত মহান মন্দির, সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনার একমাত্র কেন্দ্রস্থল ধ্বংসাবস্থায় পড়ে ছিল। (গীতসংহিতা ৭৯:১) ধ্বংস থেকে রক্ষাপ্রাপ্তদের বাবিলের বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের মাতৃভূমিকে বন্যপশুদের যাতায়াতের জন্য জনশূন্য অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। (যিরমিয় ৯:১১) একজন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, সমস্তই হারিয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়েছিল। (গীতসংহিতা ১৩৭:১) কিন্তু যিহোবা যিনি অনেক আগেই এই ধ্বংস সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তিনি আশা দিয়েছিলেন যে সামনে এক পুনর্স্থাপনের সময় রয়েছে।
৬-৮. (ক) ইব্রীয় ভাববাদীদের লেখায় কোন বিষয়টা বার বার পাওয়া যায় এবং কীভাবে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল? (খ) আধুনিক সময়ে, ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে পুনর্স্থাপনের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে?
৬ বাস্তবিকপক্ষে, ইব্রীয় ভাববাদীদের লেখাগুলোতে পুনর্স্থাপনের বিষয়টা বার বার পাওয়া যায়। b তাদের মাধ্যমে যিহোবা এমন এক দেশের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যা পুনর্স্থাপিত ও পুনরায় জনবসতিপূর্ণ, উর্বর, বন্যপশু ও শত্রুদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত। তিনি তাদের পুনর্স্থাপিত দেশকে এক প্রকৃত পরমদেশ বলে বর্ণনা করেছিলেন! (যিশাইয় ৬৫:২৫; যিহিষ্কেল ৩৪:২৫; ৩৬:৩৫) সবচেয়ে বড় কথা হল, বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মন্দির পুনর্নির্মিত হবে। (মীখা ৪:১-৫) এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বন্দি যিহুদিদের আশা দিয়েছিল, বাবিলে তাদের ৭০ বছরের বন্দিত্ব সহ্য করতে সাহায্য করেছিল।
৭ শেষ পর্যন্ত, পুনর্স্থাপনের সময় এসেছিল। বাবিল থেকে মুক্ত হয়ে, যিহুদিরা যিরূশালেমে ফিরে গিয়েছিল এবং সেখানে যিহোবার মন্দির পুনর্নিমাণ করেছিল। (ইষ্রা ১:১, ২) যতদিন পর্যন্ত তারা বিশুদ্ধ উপাসনার সঙ্গে যুক্ত ছিল, যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তাদের ভূমিকে উর্বর ও সমৃদ্ধশালী করেছিলেন। তিনি শত্রুদের ও বন্যপশুদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছিলেন, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে তাদের দেশ দখল করে রেখেছিল। তারা যিহোবার পুনর্স্থাপনের শক্তিতে কতই না আনন্দিত হয়েছিল! কিন্তু সেই ঘটনাগুলো পুনর্স্থাপনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর শুধু এক প্রাথমিক, সীমিত পরিপূর্ণতা ছিল। আরও বড় আকারের পরিপূর্ণতা “শেষকালে” অর্থাৎ আমাদের সময়ে হওয়ার কথা ছিল, যখন রাজা দায়ূদের দীর্ঘ-প্রতিজ্ঞাত উত্তরাধিকারী সিংহাসনে উপবিষ্ট হবেন।—যিশাইয় ২:২-৪; ৯:৬, ৭.
৮ যিশু ১৯১৪ সালে স্বর্গীয় রাজ্যে সিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়ার কিছুদিন পর, তিনি পৃথিবীতে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত লোকেদের আধ্যাত্মিক চাহিদার প্রতি নজর দিয়েছিলেন। পারস্য বিজয়ী কোরস যেমন সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে যিহুদিদের এক অবশিষ্টাংশকে বাবিল থেকে মুক্ত করেছিলেন, ঠিক তেমনই যিশু আত্মিক যিহুদিদের এক অবশিষ্টাংশকে—তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণকারীদের—আধুনিক দিনের বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের প্রভাব থেকে মুক্ত করেছিলেন। (রোমীয় ২:২৯; প্রকাশিত বাক্য ১৮:১-৫) ১৯১৯ সাল থেকে বিশুদ্ধ উপাসনা প্রকৃত খ্রিস্টানদের জীবনে এর উপযুক্ত স্থানে পুনর্স্থাপিত হয়েছে। (মালাখি ৩:১-৫) সেই সময় থেকে, যিহোবার লোকেরা তাঁর শুচিকৃত আত্মিক মন্দিরে অর্থাৎ বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য করা ঈশ্বরের ব্যবস্থায় তাঁর উপাসনা করে আসছে। আজকে কেন এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
আধ্যাত্মিক পুনর্স্থাপন—যেকারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ
৯. প্রেরিতদের যুগের পর, খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো ঈশ্বরের উপাসনাকে কী করেছিল কিন্তু যিহোবা আমাদের দিনে কী করেছেন?
৯ ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করুন। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা অনেক আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ উপভোগ করেছিল। কিন্তু যিশু ও প্রেরিতরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, সত্য উপাসনা কলুষিত হবে এবং হারিয়ে যাবে। (মথি ১৩:২৪-৩০; প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) প্রেরিতদের যুগের পর, খ্রিস্টীয়জগতের উদ্ভব হয়েছিল। এর পাদরিরা পৌত্তলিক শিক্ষা ও অভ্যাসগুলো গ্রহণ করেছিল। এ ছাড়া, তারা ঈশ্বরকে অবোধগম্য ত্রিত্ব হিসেবে বর্ণনা করে এবং লোকেদের যিহোবার কাছে পাপস্বীকার করার পরিবর্তে যাজকদের কাছে করতে আর মরিয়ম ও বিভিন্ন ‘সাধুদের’ কাছে প্রার্থনা করতে শিক্ষা দিয়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল। এখন, সেই কলুষতার অনেক শতাব্দী পর, যিহোবা কী করেছেন? আজকের এই জগতে—যে-জগৎ ধর্মীয় মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ ও অধার্মিক অভ্যাসগুলোর দ্বারা অপরিচ্ছন্ন—তিনি বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপন করার পদক্ষেপ নিয়েছেন! কোনোরকম বাড়িয়ে বলা ছাড়াই, আমরা বলতে পারি যে, এই পুনর্স্থাপন হল আধুনিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা।
১০, ১১. (ক) আধ্যাত্মিক পরমদেশের অন্তর্ভুক্ত দুটো দিক কি আর আপনি কীভাবে প্রভাবিত হন? (খ) যিহোবা কোন ধরনের লোকেদের আধ্যাত্মিক পরমদেশে একত্রিত করেছেন এবং তারা কী দেখার বিশেষ সুযোগ পাবে?
১০ অতএব সত্য খ্রিস্টানরা আজকে এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করে। এই পরমদেশের অন্তর্ভুক্ত কী? প্রধানত, দুটো দিক। প্রথমটা হল, সত্য ঈশ্বর যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনা। তিনি আমাদের এমন এক উপাসনা পদ্ধতি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, যা মিথ্যা ও বিকৃতি থেকে মুক্ত। তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক খাবার সরবরাহ করেছেন। এটা আমাদের স্বর্গীয় পিতা সম্বন্ধে জানতে, তাঁকে খুশি করতে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে সমর্থ করে। (যোহন ৪:২৪) আধ্যাত্মিক পরমদেশের দ্বিতীয় দিকটা লোকেদের অন্তর্ভুক্ত করে। যিশাইয় যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “শেষকালে” যিহোবা তাঁর উপাসকদের শান্তির পথগুলোর বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদের মধ্যে থেকে যুদ্ধ বিলোপ করেছেন। আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, তিনি আমাদের “নূতন মনুষ্য” পরিধান করতে সাহায্য করেন। তিনি তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়ে আমাদের প্রচেষ্টাগুলোতে আশীর্বাদ করেন, যা আমাদের মধ্যে চমৎকার ফলগুলো উৎপন্ন করে। (ইফিষীয় ৪:২২-২৪; গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আপনি যখন ঈশ্বরের আত্মার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেন, তখন আপনি সত্যিই আধ্যাত্মিক পরমদেশের অংশ হন।
১১ যিহোবা এই আধ্যাত্মিক পরমদেশে সেই ধরনের লোকেদের একত্রিত করেছেন, যাদের তিনি ভালবাসেন—যারা তাঁকে ভালবাসে, শান্তি ভালবাসে এবং “তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন।” (মথি ৫:৩, NW) এইরকম লোকেরাই এমনকি আরও আকর্ষণীয় পুনর্স্থাপন অর্থাৎ মানবজাতি ও সম্পূর্ণ পৃথিবীর পুনর্স্থাপন দেখার বিশেষ সুযোগ পাবে।
“দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি”
১২, ১৩. (ক) পুনর্স্থাপনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কেন এখনও অন্য আরেকভাবে পরিপূর্ণ হবে? (খ) পৃথিবীর জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য কী, যা এদনে বলা হয়েছিল এবং কেন এটা আমাদের ভবিষ্যতের আশা দেয়?
১২ পুনর্স্থাপনের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী শুধু আধ্যাত্মিক পুনর্স্থাপনের চেয়ে আরও বেশি কিছুকে ইঙ্গিত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিশাইয় এমন এক সময় সম্বন্ধে লিখেছিলেন, যখন অসুস্থ, খোঁড়া, অন্ধ এবং বধির ব্যক্তিদের সুস্থ করা হবে আর এমনকি মৃত্যুকে চিরকালের জন্য বিনষ্ট করা হবে। (যিশাইয় ২৫:৮; ৩৫:১-৭) এইরকম প্রতিজ্ঞাগুলো প্রাচীন ইস্রায়েলে আক্ষরিক অর্থে পরিপূর্ণ হয়নি। আর আমাদের দিনে এই প্রতিজ্ঞাগুলো আধ্যাত্মিক অর্থে পরিপূর্ণ হতে দেখে আমাদের বিশ্বাস করার দৃঢ় কারণ রয়েছে যে, ভবিষ্যতে এগুলো আক্ষরিকভাবে ও পূর্ণমাত্রায় পরিপূর্ণ হবে। কীভাবে আমরা তা জানি?
১৩ এদনে, যিহোবা পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন: এটা এক সুখী, স্বাস্থ্যকর, একতাবদ্ধ মানব পরিবার দিয়ে পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। পুরুষ ও নারীর, পৃথিবী ও এর সমস্ত সৃষ্টির যত্ন নেওয়ার, সম্পূর্ণ গ্রহকে এক পরমদেশে পরিণত করার কথা ছিল। (আদিপুস্তক ১:২৮) সেটা বর্তমান অবস্থা থেকে একেবারে ভিন্ন ছিল। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো কখনও ব্যর্থ হবে না। (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) যিহোবার নিযুক্ত মশীহ রাজা হিসেবে, যিশু বিশ্বব্যাপী পরমদেশ নিয়ে আসবেন।—লূক ২৩:৪৩.
১৪, ১৫. (ক) কীভাবে যিহোবা “সকলই নূতন” করবেন? (খ) পরমদেশে জীবন কীরকম হবে এবং কোন দিকটা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি আবেদনময়?
১৪ কল্পনা করুন যে, আপনি সম্পূর্ণ পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত হতে দেখছেন! যিহোবা সেই সময় সম্বন্ধে বলেন: “দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৫) এর মানে কী হবে, তা বিবেচনা করুন। যিহোবা যখন এই দুষ্ট পুরনো বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর ধ্বংসাত্মক শক্তি ব্যবহার করা শেষ করবেন, তখন সেখানে ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’ অবশিষ্ট থাকবে। এর মানে হল, স্বর্গ থেকে এক নতুন সরকার এক নতুন পার্থিব সমাজের ওপর রাজত্ব করবে, যা যিহোবাকে যারা ভালবাসে ও তাঁর ইচ্ছা পালন করে তাদের নিয়ে গঠিত। (২ পিতর ৩:১৩) শয়তান ও সেইসঙ্গে তার মন্দ দূতেদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৩) হাজার বছরের মধ্যে এই প্রথম মানবজাতি সেই কলুষিত, ঘৃণ্য, ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত হবে। স্বস্তির অনুভূতি নিঃসন্দেহে মহৎ হবে।
১৫ শেষ পর্যন্ত, আমরা এই সুন্দর গ্রহের যত্ন নিতে পারব, যা আসলে আমাদেরই করার কথা ছিল। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পুনর্স্থাপনের শক্তি রয়েছে। দূষিত হ্রদ ও নদীগুলো নিজেদের পরিষ্কার করতে পারে, যদি দূষণের উৎস দূর হয়ে যায়; যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিগুলো পুনর্স্থাপিত হতে পারে, যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়। পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা, এটাকে এক বাগানে, অফুরন্ত বৈচিত্র্যের বিশ্বব্যাপী এদনে পরিণত করা কতই না আনন্দের হবে! পশুপাখি ও উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতিকে অবাধে ধ্বংস করার পরিবর্তে, মানুষ পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির সঙ্গে শান্তিতে থাকবে। এমনকি বাচ্চাদেরও বন্যজন্তুদের ভয় করার কোনো কারণ থাকবে না।—যিশাইয় ৯:৬, ৭; ১১:১-৯.
১৬. পরমদেশে কোন পুনর্স্থাপন প্রতিটা বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করবে?
১৬ এ ছাড়াও, আমরা ব্যক্তিগতভাবে পুনর্স্থাপনের অভিজ্ঞতা লাভ করব। হর্মাগিদোনের পর, রক্ষাপ্রাপ্তরা বিশ্বব্যাপী অলৌকিক আরোগ্যগুলো দেখবে। যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন যেমন করেছিলেন, তেমনই ঈশ্বরের দেওয়া শক্তিকে ব্যবহার করে তিনি অন্ধদের দৃষ্টি, বধিরদের শোনার ক্ষমতা, খোঁড়া ও দুর্বলদের সুস্থ শরীর ফিরিয়ে দেবেন। (মথি ১৫:৩০) বৃদ্ধরা নতুন করে পাওয়া তারুণ্যের শক্তি, স্বাস্থ্য ও প্রাণবন্ততায় আনন্দ করবে। (ইয়োব ৩৩:২৫) বলিরেখা মিলিয়ে যাবে, হাত পা বলিষ্ঠ হবে এবং নবশক্তির দ্বারা মাংস পেশীগুলো টানটান হবে। সমস্ত বিশ্বস্ত মানবজাতি অনুভব করবে যে, পাপ ও অসিদ্ধতার প্রভাবগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে। যিহোবা ঈশ্বরের অলৌকিক পুনর্স্থাপনের শক্তির জন্য আমরা তাঁকে কতই না ধন্যবাদ জানাব! এখন আসুন আমরা পুনর্স্থাপনের এই রোমাঞ্চকর সময়ের বিশেষভাবে হৃদয়গ্রাহী একটা দিকের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি।
মৃতদের জীবনে পুনর্স্থাপন করা
১৭, ১৮. (ক) যিশু কেন সদ্দূকীদের তিরস্কার করেছিলেন? (খ) কোন পরিস্থিতিগুলো এলিয়কে একটি পুনরুত্থান ঘটানোর জন্য যিহোবাকে অনুরোধ করতে পরিচালিত করেছিল?
১৭ সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে, সদ্দূকী নামে কিছু ধর্মীয় নেতা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না। যিশু তাদের এই বলে তিরস্কার করেছিলেন: “তোমরা ভ্রান্ত হইতেছ, কারণ তোমরা না জান শাস্ত্র, না জান ঈশ্বরের পরাক্রম।” (মথি ২২:২৯) হ্যাঁ, শাস্ত্র প্রকাশ করে যে যিহোবার এইরকম পুনর্স্থাপনের শক্তি রয়েছে। কীভাবে?
১৮ এলিয়ের দিনে কী হয়েছিল, তা কল্পনা করুন। একজন বিধবা তার একমাত্র সন্তানের নিষ্প্রাণ দেহটি তার বাহুতে ধরে রেখেছিলেন। ছেলেটা মারা গিয়েছিল। ভাববাদী এলিয়, যিনি কিছুদিনের জন্য বিধবার অতিথি হয়েছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই বিস্ময়ে হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে, তিনি এই সন্তানকে ক্ষুধায় মরে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করেছিলেন। এলিয় হয়তো এই ছোট্ট ছেলেটিকে স্নেহ করতে শুরু করেছিলেন। মায়ের মন দুঃখে ভেঙে পড়েছিল। এই ছেলেটিই ছিল তার মৃত স্বামীর একমাত্র জীবন্ত স্মৃতিচিহ্ন। তিনি হয়তো আশা করেছিলেন যে, তার ছেলে তার বৃদ্ধ বয়সে তাকে দেখাশোনা করবে। শোকে বিহ্বল হয়ে, এই বিধবা ভয় পেয়েছিলেন যে তিনি হয়তো তার অতীতে করা কোনো ভুলের জন্য শাস্তি পাচ্ছেন। এলিয় এই দুঃখজনক ঘটনাকে আরও বেশি দুঃখজনক হয়ে উঠতে দেখা সহ্য করতে পারেননি। তিনি মায়ের কোল থেকে আলতোভাবে মৃতদেহটাকে তুলে নিয়ে তার কামরায় গিয়েছিলেন এবং সেই সন্তানের প্রাণ বা জীবন পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যিহোবা ঈশ্বরকে অনুরোধ করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৭:৮-২১.
১৯, ২০. (ক) অব্রাহাম কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার পুনর্স্থাপনের শক্তিতে তার বিশ্বাস আছে এবং এইরকম বিশ্বাসের ভিত্তি কী ছিল? (খ) যিহোবা কীভাবে এলিয়ের বিশ্বাসকে পুরস্কৃত করেছিলেন?
১৯ পুনরুত্থানে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে এলিয়ই প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না। শত শত বছর আগে, অব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যে যিহোবার এইরকম পুনর্স্থাপনের শক্তি রয়েছে—আর তা করার উপযুক্ত কারণও ছিল। অব্রাহামের বয়স যখন ১০০ এবং সারার বয়স ৯০, তখন যিহোবা তাদের জন্মদানের মৃত শক্তিকে পুনর্স্থাপিত করেছিলেন, অলৌকিকভাবে সারাকে পুত্র ধারণ করতে সমর্থ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৭:১৭; ২১:২, ৩) পরে, সেই পুত্র যখন বড় হয়েছিল, তখন যিহোবা অব্রাহামকে তার পুত্রকে বলি দিতে বলেছিলেন। অব্রাহাম বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন এই আস্থা নিয়ে যে, যিহোবা তার প্রিয় পুত্র ইস্হাকের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন। (ইব্রীয় ১১:১৭-১৯) এইরকম গভীর বিশ্বাস হয়তো ব্যাখ্যা করে যে কেন অব্রাহাম তার পুত্রকে বলি দেওয়ার জন্য পাহাড়ে ওঠার আগে তার দাসদের বলেছিলেন যে, তিনি ও ইস্হাক একসঙ্গে ফিরে আসবেন।—আদিপুস্তক ২২:৫.
২০ যিহোবা ইস্হাককে রক্ষা করেছিলেন, তাই সেই সময় কোনো পুনরুত্থানের দরকার হয়নি। কিন্তু, এলিয়ের ঘটনায় বিধবার ছেলে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছিল—তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। যিহোবা ছেলেটিকে পুনরুত্থিত করে ভাববাদীর বিশ্বাসকে পুরস্কৃত করেছিলেন! এরপর এলিয় ছেলেটিকে তার মায়ের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এই অবিস্মরণীয় কথাগুলো বলে: “দেখ, তোমার পুত্ত্র জীবিত”!—১ রাজাবলি ১৭:২২-২৪.
২১, ২২. (ক) শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ পুনরুত্থানগুলোর উদ্দেশ্য কী ছিল? (খ) পরমদেশে পুনরুত্থান কতটা ব্যাপক হবে এবং কে এটা করবেন?
২১ এভাবে বাইবেলের নথিতে প্রথমবারের মতো, আমরা যিহোবাকে একটি মানব জীবন পুনর্স্থাপনে তাঁর শক্তি ব্যবহার করতে দেখি। পরে, ইলীশায়, যিশু, পৌল ও পিতরকেও যিহোবা মৃতদের জীবন পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার শক্তি দিয়েছিলেন। অবশ্য, যারা পুনরুত্থিত হয়েছিল তারা পরে আবার মারা গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, বাইবেলের এই বিবরণগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এক চমৎকার পূর্বাভাস দেয়।
২২ পরমদেশে, যিশু “পুনরুত্থান ও জীবন” হিসেবে তাঁর ভূমিকা পরিপূর্ণ করবেন। (যোহন ১১:২৫) তিনি অগণিত লক্ষ লক্ষ লোককে পুনরুত্থিত করবেন, তাদের পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার বিশেষ সুযোগ দেবেন। (যোহন ৫:২৮, ২৯) মৃত্যুর কারণে দীর্ঘদিন পৃথক থাকা প্রিয় বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের পুনর্মিলন, আনন্দে অত্যন্ত রোমাঞ্চিত হয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার বিষয়টা কল্পনা করুন! সমস্ত মানবজাতি পুনর্স্থাপনের শক্তির জন্য যিহোবার প্রশংসা করবে।
২৩. যিহোবার শক্তির সমস্ত প্রদর্শনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল কোনটি এবং এটা কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আশার নিশ্চয়তা দেয়?
২৩ যিহোবা দৃঢ় নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, এইরকম আশা নিশ্চিত। তাঁর শক্তির সমস্ত প্রদর্শনের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল, যিহোবা তাঁর পুত্র যিশুকে এক শক্তিশালী আত্মিক প্রাণী হিসেবে পুনরুত্থিত করেছিলেন, তাঁকে তিনি তাঁর পরের স্থানটি দিয়েছিলেন। পুনরুত্থিত যিশু শত শত চাক্ষুষ সাক্ষিকে দেখা দিয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৫, ৬) এমনকি সন্দেহবাদীদের জন্য, এই ধরনের প্রমাণ যথেষ্ট হওয়া উচিত। জীবন পুনর্স্থাপন করার শক্তি যিহোবার রয়েছে।
২৪. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা মৃতদের পুনরুত্থিত করবেন এবং আমরা প্রত্যেকে কোন আশা মনে পোষণ করতে পারি?
২৪ যিহোবার শুধু মৃতদের পুনর্স্থাপন করার শক্তিই নয় সেইসঙ্গে তা করার ইচ্ছাও তাঁর রয়েছে। বিশ্বস্ত পুরুষ ইয়োব বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে, যিহোবা আসলে মৃতদের ফিরিয়ে আনার জন্য আকাঙ্ক্ষী। (ইয়োব ১৪:১৫, NW) আপনি কি আমাদের ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট হন না, যিনি তাঁর পুনর্স্থাপনের শক্তি এইরকম প্রেমপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করতে উৎসুক? তবে, মনে রাখবেন যে, যিহোবা সামনে যে-মহান পুনর্স্থাপনের কাজগুলো করবেন, সেগুলোর মধ্যে পুনরুত্থান হল মাত্র একটা দিক। আপনি যতই তাঁর নিকটবর্তী হন, সবসময় এই মূল্যবান আশা মনের মধ্যে পোষণ করুন যে, যিহোবা ‘সকলই নূতন করিতেছেন,’ তা দেখার জন্য আপনি সেখানে থাকবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৫.
a “সমস্ত বিষয়ের পুনঃস্থাপনের কাল” তখন শুরু হয়েছিল, যখন বিশ্বস্ত রাজা দায়ূদের একজন উত্তরাধিকারীর সিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়ার দ্বারা মশীহ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যিহোবা দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার একজন উত্তরাধিকারী চিরকাল শাসন করবেন। (গীতসংহিতা ৮৯:৩৫-৩৭) কিন্তু সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিল যিরূশালেম ধ্বংস করার পর, দায়ূদের কোনো মানব বংশধর ঈশ্বরের সিংহাসনে বসেনি। যিশু, যিনি পৃথিবীতে দায়ূদের একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি স্বর্গে সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ-প্রতিজ্ঞাত রাজা হয়েছেন।
b উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোশি, যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল, হোশেয়, যোয়েল, আমোষ, ওবদিয়, মীখা এবং সফনিয় সকলে এই বিষয়বস্তুই লিখেছিলেন।