পাঠ ৪৯
স্বামী ও স্ত্রী কীভাবে সুখী হতে পারে?
বিয়ের দিন বর ও কনে খুবই খুশি থাকে আর তারা আশা করে যে, সারাজীবন এভাবেই খুশি থাকবে। কিন্তু, তাদের এই ইচ্ছা কি পূরণ হতে পারে? অবশ্যই হতে পারে। এমন অনেক খ্রিস্টান রয়েছে, যাদের বিয়ের পর অনেক বছর কেটে গিয়েছে আর তারা প্রত্যেকটা পরিস্থিতিতে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছে। তারা এই বিষয়টার জীবন্ত প্রমাণ যে, স্বামী-স্ত্রীরা একে অন্যের সঙ্গে সুখে থাকতে পারে।
১. বাইবেলে স্বামীদের জন্য কোন পরামর্শ দেওয়া রয়েছে?
যিহোবা স্বামীদের পরিবারের মস্তক বা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:২৩.) যিহোবা স্বামীদের কাছ থেকে আশা করেন যে, তারা যেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরিবারের জন্য উপকার নিয়ে আসে। বাইবেল স্বামীদের পরামর্শ দেয়, “তোমরা সবসময় তোমাদের স্ত্রীদের ভালোবেসো।” (ইফিষীয় ৫:২৫) এর অর্থ হল, একজন স্বামী সবসময় তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণ করবেন, সেটা হতে পারে তারা একা থাকার সময় অথবা অন্যদের সামনে। তিনি তার স্ত্রীকে সুরক্ষা দেবেন, তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন, তার কথা শুনবেন এবং তার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করবেন। (১ তীমথিয় ৫:৮) আর সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, তিনি তার স্ত্রীকে যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করবেন। (মথি ৪:৪) যেমন, তিনি তার সাথে একসঙ্গে প্রার্থনা করবেন এবং বাইবেল পড়বেন। এভাবে, একজন স্বামী যখন প্রেমের সঙ্গে তার স্ত্রীর যত্ন নেবেন, তখন তিনি নিজেও যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে পারবেন।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৭.
২. বাইবেলে স্ত্রীদের জন্য কোন পরামর্শ দেওয়া রয়েছে?
ঈশ্বরের বাক্য একজন স্ত্রীকে বলে, “যেন সে তার স্বামীকে গভীর সম্মান করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) কীভাবে একজন স্ত্রী তা করতে পারেন? তিনি তার স্বামীর ভালো গুণগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন। সেইসঙ্গে তিনি এটাও লক্ষ করবেন যে, তার স্বামী তার এবং বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার জন্য কতটা পরিশ্রম করছেন। এ ছাড়া, তার স্বামী যে-সিদ্ধান্তগুলো নেন, তিনি সেগুলো সমর্থন করার চেষ্টা করবেন এবং তার সঙ্গে প্রেমময় আচরণ করবেন আর তার পিছনে তার সম্বন্ধে কোনো খারাপ কথা বলবেন না, তা তার স্বামী যিহোবাকে সেবা করুক অথবা না করুক।
৩. স্বামী-স্ত্রীরা কীভাবে তাদের সম্পর্ক দৃঢ় করতে পারে?
বাইবেল স্বামী-স্ত্রীদের বলে, “তারা দু-জন একাঙ্গ হবে।” (মথি ১৯:৫) এর অর্থ হল, যেকোনো পরিস্থিতি আসুক না কেন, তারা তাদের সম্পর্কে কোনো চির ধরতে দেবে না। তারা নিজেদের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য কী করতে পারে? তারা প্রতিদিন একে অন্যের জন্য সময় বের করবে, প্রেমের সঙ্গে কথা বলবে আর একে অন্যের সঙ্গে মন খুলে তাদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি প্রকাশ করবে। যিহোবা ছাড়া কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো বিষয়কে তারা তাদের জীবনসঙ্গীর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে না। বিশেষ করে, তারা এটা খেয়াল রাখবে, তারা যেন নিজের জীবনসঙ্গী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে না তোলে।
গভীরভাবে গবেষণা করুন
বাইবেলের কোন নীতিগুলো কাজে লাগিয়ে স্বামী-স্ত্রীরা তাদের সম্পর্ক দৃঢ় করতে পারে? আসুন তা জানি।
৪. আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসুন এবং তার ভালোভাবে যত্ন নিন
বাইবেল স্বামীদের বলে, “তাদের স্ত্রীদের নিজেদের দেহের মতো ভালোবাসা উচিত।” (ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯) এর অর্থ কী? তা জানার জন্য ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন।
-
কোন কোন উপায়ে একজন স্বামী দেখাতে পারেন যে, তিনি তার স্ত্রীকে ভালোবাসেন এবং তার জন্য চিন্তা করেন?
কলসীয় ৩:১২ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
-
কীভাবে একজন স্বামী এই শাস্ত্রপদে দেওয়া গুণগুলো দেখাতে পারেন?
৫. আপনার স্বামীকে ভালোবাসুন এবং তাকে সম্মান করুন
বাইবেল স্ত্রীদের উৎসাহিত করে, তারা যেন তাদের স্বামীকে সম্মান করে, তা তারা যিহোবাকে সেবা করুক অথবা না করুক। ১ পিতর ৩:১, ২ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
-
আপনার স্বামী যদি যিহোবাকে সেবা না করেন, তা হলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন কোনো একদিন তিনি যেন যিহোবাকে সেবা করেন। কিন্তু, কীভাবে আপনি তার হৃদয়ে যিহোবার জন্য ভালোবাসা গড়ে তুলতে পারেন বলে আপনার মনে হয়— সবসময় তার কাছে প্রচার করে, না কি তার সঙ্গে ভালো আচরণ করে এবং তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে? কেন আপনি তা মনে করেন?
স্বামী-স্ত্রীরা একসঙ্গে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু, যখন স্ত্রীর চিন্তাভাবনা স্বামীর চেয়ে আলাদা হয়, ১ পিতর ৩:৩-৫ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
সেই ক্ষেত্রে কী বলা যায়? এক্ষেত্রে একজন স্ত্রী হয়তো শান্তভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে তার চিন্তাভাবনা তার স্বামীকে জানাতে পারেন। কিন্তু, তাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, যিহোবা স্বামীকে পরিবারের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছেন আর স্বামী যা সিদ্ধান্ত নেবেন, স্ত্রী হিসেবে তিনি তা পুরোপুরিভাবে সমর্থন করার চেষ্টা করবেন। স্ত্রী যখন তা করবেন, তখন পরিবারের মধ্যে আনন্দ বৃদ্ধি পাবে।-
একজন স্ত্রী যখন তার স্বামীকে গভীরভাবে সম্মান করেন, তখন তা দেখে যিহোবার কেমন লাগে?
৬. স্বামী-স্ত্রীরা তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে
প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সমস্যা দেখা দেয়। তাই, তাদের একসঙ্গে মিলে সমস্যাগুলো সমাধান করা উচিত। ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
-
এখানে কোন বিষয়টা থেকে বোঝা যায় যে, স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল?
-
তারা তাদের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল?
১ করিন্থীয় ১০:২৪ এবং কলসীয় ৩:১৩ পদ পড়ুন। প্রতিটা শাস্ত্রপদ পড়ার পর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
-
কীভাবে এই পরামর্শ কাজে লাগিয়ে স্বামী ও স্ত্রী তাদের সম্পর্ক দৃঢ় করতে পারে?
বাইবেল বলে, আমাদের একে অন্যকে সমাদর করা উচিত। কাউকে সমাদর করার অর্থ হল, তার সাথে প্রেমের সঙ্গে আচরণ করা এবং কোনোভাবে তাকে ছোটো না করা। রোমীয় ১২:১০ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
-
এইরকম কি চিন্তা করা ঠিক হবে, আমার সঙ্গী যখন আমাকে সমাদর করবে, তখনই আমি তাকে সমাদর করব? কেন আপনি তা মনে করেন?
কেউ কেউ বলে থাকে: “একই ছাদের নীচে থেকেও আমরা একে অন্যকে ভালোভাবে জানি না।”
-
আপনি কীভাবে তাকে বলবেন যে, বাইবেল তাদের সাহায্য করতে পারে?
সারাংশ
স্বামী-স্ত্রীরা তখনই সুখী হতে পারবে, যখন তারা একে অন্যকে ভালোবাসবে, একে অন্যকে সমাদর করবে এবং বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাবে।
পুনরালোচনা
-
বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার জন্য একজন স্বামী কী করতে পারেন?
-
বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার জন্য একজন স্ত্রী কী করতে পারেন?
-
আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে বাইবেলের কোন নীতি আপনার সম্পর্ককে দৃঢ় করতে পারে?
আরও জানুন
কিছু পরামর্শ লক্ষ করুন, যেগুলো কাজে লাগিয়ে আপনার পরিবার সুখী হতে পারে।
এই মিউজিক ভিডিওতে দেখুন, স্বামী-স্ত্রীরা ঈশ্বরের পরামর্শ কাজে লাগালে কোন উপকার পেতে পারে।
ঈশ্বর স্বামীকে পরিবারের মস্তক বা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। একজন স্ত্রীর জন্য মস্তকের অধীনে থাকা বলতে কী বোঝায়? আসুন তা জানি।
“নারীরা, কেন আপনারা মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হবেন?” (প্রহরীদুর্গ, মে ১৫, ২০১০)
এক দম্পতি কীভাবে বিবাহবিচ্ছেদ সহ তাদের গুরুতর দাম্পত্য সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল? আসুন তা দেখি।
ঈশ্বরই আমাদের বিয়েকে পুনরায় গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন (৫:১৪)