সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রচ্ছদ বিষয় | প্রার্থনা করলে কি কোনো উপকার পাওয়া যায়?

প্রার্থনা—এটা আপনার জন্য যা করতে পারে

প্রার্থনা—এটা আপনার জন্য যা করতে পারে

কোনো কাজ শুরু করার আগে আপনি হয়তো চিন্তা করেন, ‘এতে আমার কী লাভ হবে?’ কিন্তু, প্রার্থনার বিষয়ে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা কি দেখাবে যে, আপনি স্বার্থপর? না, সবসময় তা নয়। স্বাভাবিক কারণেই আমরা জানতে চাই, প্রার্থনা করলে কোনো উপকার পাওয়া যাবে কি না।

প্রার্থনা যে শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রথা বা কোনো ধরনের মানসিক চিকিৎসার চেয়ে আরও বেশি কিছু, সেটার প্রমাণ আমরা আগের প্রবন্ধগুলোতে বিবেচনা করেছি। সত্য ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শোনেন। আমরা যদি সঠিক উপায়ে এবং উপযুক্ত বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করি, তা হলে তিনি অবশ্যই সেগুলো শুনবেন। তিনি এমনকী আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। (যাকোব ৪:৮) তাই, আমরা যদি নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করি, তা হলে কী আশা করতে পারি? আসুন আমরা এর কয়েকটা উপকার নিয়ে আলোচনা করি।

মনের শান্তি প্রদান করতে পারে।

আপনার জীবনে যখন সমস্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়, তখন আপনি কি দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েন? বাইবেল এইরকম সময়ে আমাদেরকে ‘অবিরত প্রার্থনা করিতে’ এবং ‘যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত করিতে’ উৎসাহ দেয়। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭; ফিলিপীয় ৪:৬) বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়, আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তা হলে “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা [আমাদের] হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৭) আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে উদ্‌বেগগুলো খুলে বলার দ্বারা আমরা মনের শান্তি লাভ করতে পারি। সত্যি বলতে কী, তিনি আমাদেরকে তা করার জন্য উৎসাহিত করেন। গীতসংহিতা ৫৫:২২ পদ বলে, “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন।”

“তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন।” —গীতসংহিতা ৫৫:২২

পৃথিবীব্যাপী অগণিত ব্যক্তি এইরকম মনের শান্তি লাভ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হি রান বলেন: “আমার জীবনে অনেক গুরুতর সমস্যা রয়েছে কিন্তু প্রার্থনা করার পর আমার নিজেকে হালকা মনে হয়। আর আমার এও মনে হয় আমি সহ্য করার শক্তি লাভ করেছি।” ফিলিপিনসের সেসিলিয়া বলেন: “একজন মা হিসেবে, আমার মেয়েদের জন্য দুশ্চিন্তা হয়। এ ছাড়া, আমার মায়ের জন্যও খুব দুশ্চিন্তা হয় কারণ বয়স ও অসুস্থতার জন্য তিনি এখন আমাকে আর চিনতে পারেন না। কিন্তু, প্রার্থনা করার ফলে আমি অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি। আমি জানি, যিহোবা আমাকে এদের যত্ন নিতে সাহায্য করবেন।”

সমস্যার মোকাবিলা করার সময় সান্ত্বনা ও শক্তি জোগাতে পারে।

আপনি কি প্রচণ্ড চাপ, হতে পারে কোনো মারাত্মক অথবা দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন? ‘সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ কাছে প্রার্থনা করা অনেক স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। বাইবেল বলে, তিনি “আমাদের সমস্ত ক্লেশের” বা সমস্যার “মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।” (২ করিন্থীয় ১:৩, ৪) উদাহরণ স্বরূপ, একবার যিশু যখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন, তখন তিনি “জানু পাতিয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেন।” এর ফলাফল কী হয়েছিল? “স্বর্গ হইতে এক দূত দেখা দিয়া তাঁহাকে সবল করিলেন।” (লূক ২২:৪১, ৪৩) নহিমিয় নামে আরেকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে ঈশ্বরের কাজ করা থেকে বাধা দেওয়ার জন্য কয়েক জন দুষ্ট লোক হুমকি দিয়েছিল। সেই সময় তিনি এভাবে প্রার্থনা করেছিলেন: “এখন, [হে ঈশ্বর,] তুমি আমার হস্ত সবল কর।” পরবর্তী ঘটনাগুলো দেখায়, ঈশ্বর সত্যিই তাকে ভয় কাটিয়ে ওঠার এবং তার কাজে সফল হওয়ার জন্য সাহায্য করেছিলেন। (নহিমিয় ৬:৯-১৬) ঘানায় বসবাসরত রেজানাল্ড প্রার্থনার বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে এভাবে বলেন: “বিশেষ করে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আমি যখন প্রার্থনা করি, তখন আমার মনে হয় যেন আমি আমার সমস্যা এমন কাউকে বলছি, যিনি আমাকে সাহায্য করতে সমর্থ এবং যিনি আমাকে আশ্বাস দেন যে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” হ্যাঁ, আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন ঈশ্বর আমাদের সান্ত্বনা দিতে পারেন।

ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা জোগাতে পারে।

আমাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের ও আমাদের প্রিয়জনদের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, কীভাবে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারি? বাইবেল বলে: “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয় [বিশেষ করে দুঃসময়ে], তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে।” (যাকোব ১:৫) বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা যদি প্রজ্ঞা চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তা হলে তিনি পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে আমাদের নির্দেশনা দেবেন। সত্যি বলতে কী, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করতে পারি, কারণ যিশু আমাদেরকে এই আশ্বাস দেন, “স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১৩.

“সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্দেশনা চেয়ে আমি বার বার যিহোবার  কাছে প্রার্থনা করতাম।”—কোয়াবেনা, ঘানা

এমনকী যিশুও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁর পিতার কাছে সাহায্য চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। বাইবেল আমাদের জানায়, ১২ জন ব্যক্তিকে তাঁর প্রেরিত হওয়ার জন্য বেছে নেওয়ার আগে “তিনি . . . ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিতে করিতে সমস্ত রাত্রি যাপন করিলেন।”—লূক ৬:১২.

বর্তমানে অনেকে যিশুর মতো একই আশ্বাস লাভ করেছে, কারণ তারা দেখেছে যে, বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করার পর ঈশ্বর তাদের উত্তর দিয়েছেন। ফিলিপিনসের রেজিনা বলেন, তাকেও বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করতে হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে তার পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে হয়েছে, তার চাকরি চলে গিয়েছে এবং সন্তানদের বড়ো করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কোন বিষয়টা তাকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে? তিনি বলেন, “প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমি যিহোবার সাহায্যের উপর নির্ভর করি।” ঘানায় বসবাসরত কোয়াবেনা জানান তিনি কেন ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি একজন নির্মাণ কর্মী ছিলাম এবং ভালো আয় করতাম। কিন্তু, একসময় সেই চাকরি চলে যায়।” এরপর তিনি কী করেছিলেন, সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে কোয়াবেনা জানান, “সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্দেশনা চেয়ে আমি বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম।” তিনি আরও বলেন, “এখন আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, যিহোবা সেইসময় আমাকে এমন একটা কাজ বেছে নিতে সাহায্য করেছিলেন, যেটা আমাকে আমার আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করেছিল।” ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, এমন যেকোনো বিষয়ে প্রার্থনা করার দ্বারা আপনিও ঈশ্বরের নির্দেশনা লাভ করতে পারেন।

প্রার্থনা আপনার জন্য যা-কিছু করতে পারে, সেগুলোর মাত্র কয়েকটা বিষয় আমরা উল্লেখ করেছি। (আরও জানার জন্য “ প্রার্থনার বিভিন্ন উপকারিতা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) কিন্তু, আপনি যদি এই উপকারিতাগুলো লাভ করতে চান, তা হলে প্রথমে আপনাকে ঈশ্বর ও তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে জানতে হবে। আপনি যদি তা-ই করতে চান, তা হলে আমরা আপনাকে যিহোবার সাক্ষিদের কাছে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য উৎসাহিত করছি। a ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ নিকটবর্তী হওয়ার জন্য এটাই আপনার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।—গীতসংহিতা ৬৫:২. ▪ (w১৫-E ১০/০১)

a আরও তথ্যের জন্য স্থানীয় যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অথবা আমাদের ওয়েবসাইট www.jw.org দেখুন।