সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা

কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে? (২য় ভাগ)

কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে? (২য় ভাগ)

উল্লেখিত আলোচনাটা হল এক সাধারণ কথোপকথন, যা একজন যিহোবার সাক্ষি এবং এক প্রতিবেশীর মধ্যে হতে পারে। কল্পনা করুন, মাইকেল নামে একজন সাক্ষি, জন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আবারও এসেছেন।

নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্ন—এক সংক্ষিপ্ত পুনরালোচনা

মাইকেল: আপনার সঙ্গে আবারও দেখা করতে পেরে ভালো লাগছে। প্রত্যেক সপ্তাহে একসঙ্গে বাইবেল নিয়ে আলোচনা করতে আমার খুব ভালো লাগে। * আপনি কেমন আছেন?

জন: আমি ভালো আছি।

মাইকেল: শুনে ভালো লাগল। গতবার আমরা আলোচনা করেছিলাম, কেন যিহোবার সাক্ষিরা বলে যে, ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সালে শাসন করতে শুরু করেছে। * আমরা দেখেছিলাম, বাইবেলের দানিয়েল বইয়ের ৪ অধ্যায়ে একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এক জোরালো প্রমাণ রয়েছে। আপনার কি মনে পড়ে, সেখানে কী লেখা রয়েছে?

জন: হ্যাঁ, ওখানে একটা প্রকাণ্ড বৃক্ষ সম্বন্ধে রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্নের বিষয়ে লেখা রয়েছে।

মাইকেল: ঠিক। নবূখদ্‌নিৎসর স্বপ্নে এক প্রকাণ্ড বৃক্ষ দেখেছিলেন, যা আকাশ পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। তিনি ঈশ্বরের একজন স্বর্গদূতের রব শুনতে পেয়েছিলেন, যিনি আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেন বৃক্ষটা কেটে ফেলা হয়, কিন্তু এটার মূলের কাণ্ড ভূমিতে রেখে দেওয়া হয়। “সাত কাল” পরে সেই বৃক্ষ আবারও বৃদ্ধি পাবে। * আমরা এটাও দেখেছিলাম যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর দুটো পরিপূর্ণতা রয়েছে। আপনার কি মনে পড়ে, প্রথম পরিপূর্ণতা কী ছিল?

জন: প্রথম পরিপূর্ণতা নবূখদ্‌নিৎসরের নিজের প্রতি ঘটেছিল, তাই না? তিনি সাত বছরের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।

মাইকেল: একেবারে ঠিক। নবূখদ্‌নিৎসর কিছু সময়ের জন্য তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন আর তাই, তার শাসন ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর বৃহত্তর পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের শাসন এক অর্থে সাত কালের জন্য ব্যাহত হবে। আমরা দেখেছিলাম, খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার সময় সাত কাল শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকে ঈশ্বরের লোকেদের উপর শাসন করার জন্য পৃথিবীর কোনো রাজা যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করতেন না। কিন্তু, সেই সাত কালের শেষে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের উপর শাসন করার জন্য একজন নতুন শাসককে নিযুক্ত করবেন—তবে এবার স্বর্গে। অন্যভাবে বললে, সাত কালের শেষই ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের শাসনের শুরুকে নির্দেশ করবে। আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি, সাত কাল কবে শুরু হয়েছিল। তাহলে, আমরা যদি নির্ধারণ করতে পারি যে, সেই সাত কাল কত দীর্ঘ ছিল, তবে আমরা জানতে পারব, ঈশ্বরের রাজ্য কখন শাসন করতে শুরু করেছিল। আপনি কি এই পর্যন্ত বুঝেছেন?

জন: হ্যাঁ, এবার আমি অনেকটা মনে করতে পেরেছি।

মাইকেল: খুব ভালো। আসুন আমরা গবেষণা করি এবং দেখি যে, এই সাত কাল কতটা দীর্ঘ। আমি সবেমাত্র এই বিষয়ে নিজে পড়েছি, যাতে আমি মূল বিষয়গুলো মনে রাখতে পারি। আমি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।

জন: ঠিক আছে।

সাত কাল শেষ হয়—শেষকাল শুরু হয়

মাইকেল: নবূখদ্‌নিৎসরের সময়ে এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রথম পরিপূর্ণতায় সাত কাল ছিল সাত বছর। কিন্তু, ঈশ্বরের রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বৃহত্তর পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে এই সাত কাল নিশ্চয়ই সাত বছরের চেয়েও বেশি সময়কে নির্দেশ করেছিল।

জন: কীভাবে আমরা তা বলতে পারি?

মাইকেল: মনে করে দেখুন, খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭সালে যিরূশালেমের ধ্বংসের সময় সেই সাত কাল শুরু হয়েছিল। আমরা যদি সেই বছর থেকে সাত বছর গোনা শুরু করি, তাহলে আমরা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালে পৌঁছাব। কিন্তু, সেই বছরে গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু ঘটেনি, যা ঈশ্বরের শাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তা ছাড়া, আমরা আগে যেমন আলোচনা করেছি কয়েক-শো বছর পরে যিশু যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সাত কাল তখনও শেষ হয়নি।

জন: ওহ্‌, হ্যাঁ। এবার মনে পড়েছে।

মাইকেল: তাই, সেই সাত কাল নিশ্চয়ই আক্ষরিক সাত বছরের চেয়ে আরও দীর্ঘ সময়কে নির্দেশ করে।

জন: কতটা দীর্ঘ?

মাইকেল: দানিয়েল বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বই আমাদের এই সাত কালের দীর্ঘতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এটা জানায়, সাড়ে তিন কাল হল ১,২৬০ দিন। * তাহলে সাত কাল অর্থাৎ সাড়ে তিন কালের দ্বিগুণ হবে ২,৫২০ দিন। আপনি কি এই পর্যন্ত বুঝতে পেরেছেন?

জন: হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি এখনও বুঝতে পারছি না, কীভাবে এটা দেখায় যে, ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সালে শাসন করতে শুরু করেছে।

মাইকেল: তাহলে, আসুন এবার আমরা সম্পর্কটা বোঝার চেষ্টা করি। বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে কখনো কখনো এক দিন একটা বছরকে চিত্রিত করে। * আমরা যদি এক দিনকে এক বছর হিসেবে ধরি, তাহলে সাত কাল ২,৫২০ বছরকে বোঝাবে। খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সাল থেকে ২,৫২০ বছর গোনা শুরু করলে আমরা ১৯১৪ সালে এসে পৌঁছাই। * এভাবে আমরা বুঝতে পারি, ১৯১৪ সালে সাত কাল শেষ হয়েছিল এবং ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশু শাসন করতে শুরু করেছিলেন। আর লক্ষ করার মতো বিষয় হল, ১৯১৪ সাল থেকে পৃথিবীতে বড়ো বড়ো ঘটনাগুলো ঘটছে, যেগুলো বাইবেলে শেষকালের চিহ্ন হিসেবে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল।

জন: কী ধরনের ঘটনা?

মাইকেল: আসুন আমরা দেখি, যিশু মথি ২৪:৭ পদে কী বলেছিলেন। তিনি যখন স্বর্গে শাসন করতে শুরু করবেন, সেই সময় সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে, এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে।” লক্ষ করুন, যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, সেই সময় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে। গত এক-শো বছরে আমরা এইরকম অনেক দুঃখকষ্ট দেখেছি, তাই নয় কি?

জন: ঠিক।

মাইকেল: এই পদে যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে তাঁর উপস্থিতির সময় যুদ্ধ হবে। আর বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বই কোনো ছোটোখাটো যুদ্ধ নয়, কিন্তু এমন যুদ্ধগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল, যেগুলো শেষকালে পুরো পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে। * আপনার কি মনে পড়ে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কখন শুরু হয়েছিল?

জন: ১৯১৪ সালে, ঠিক সেই বছরই যখন যিশু শাসন করতে শুরু করেছেন বলে আপনি বলছিলেন! আমি কখনো এভাবে চিন্তা করিনি।

মাইকেল: আমরা যখন সব কিছু অর্থাৎ সাত কাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী এবং শেষকাল সম্বন্ধে অন্যান্য ভবিষ্যদ্‌বাণী একসঙ্গে বিবেচনা করি, তখন বিষয়টা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। যিহোবার সাক্ষিরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা যিশু ১৯১৪ সালে শাসন করতে শুরু করেছেন এবং সেই বছরেই শেষকাল শুরু হয়েছে। *

জন: আমি এখনও বোঝার চেষ্টা করছি।

মাইকেল: আমি বুঝতে পারছি। আমি আগেও যেমন বলেছি, এগুলো পুরোপুরি বুঝতে আমারও কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু, অন্ততপক্ষে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, বাইবেলে যদিও নির্দিষ্টভাবে ১৯১৪ সাল উল্লেখ করা নেই, তবুও এই বছরের বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বাসের ভিত্তি হল বাইবেল।

জন: হ্যাঁ। আপনাদের এই বিষয়টা আমার ভালো লাগে যে, আপনারা সবসময় বাইবেলের উপর ভিত্তি করে কথা বলেন। আপনারা নিজেদের মতামত দেন না। তবে আমি ভাবছি, কেন এগুলো এতটা জটিল। কেন ঈশ্বর বাইবেলে সরাসরি বলেননি, ১৯১৪ সালে যিশু স্বর্গে শাসন করতে শুরু করবেন?

মাইকেল: এটা খুব ভালো প্রশ্ন। বাইবেলে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো সরাসরি বলা হয়নি। তাহলে প্রশ্ন হল, কেন ঈশ্বর এমনভাবে বাইবেল লিখিয়েছেন, যাতে তা বোঝার জন্য লোকেদের প্রচেষ্টা করতে হয়? আমরা পরের বার এই বিষয়ে কথা বলতে পারি।

জন: খুব ভালো হবে। ▪ (w১৪-E ১১/০১)

বাইবেলের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আপনারও কি নির্দিষ্ট কোনো প্রশ্ন আছে? আপনি কি যিহোবার সাক্ষিদের কোনো বিশ্বাস অথবা ধর্মীয় রীতিনীতি সম্বন্ধে জানতে চান? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় একজন যিহোবার সাক্ষিকে সেই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। তিনি এই ধরনের বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে পেরে আনন্দিত হবেন।

^ অনু. 5 বিনা মূল্যে বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থার মাধ্যমে, যিহোবার সাক্ষিরা প্রায়ই তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাইবেলের বিষয়বস্তু নিয়ে সুসংগঠিতভাবে আলোচনা করে থাকে।

^ অনু. 7 ২০১৫ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার জানুয়ারি-মার্চ সংখ্যার “একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা—কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে?—১ম ভাগ” প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 9 দানিয়েল ৪:২৩-২৫ পদ দেখুন।

^ অনু. 24 গণনাপুস্তক ১৪:৩৪ ও যিহিষ্কেল ৪:৬ পদ দেখুন।

^ অনু. 24 “বৃক্ষ সম্বন্ধে নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্ন” শিরোনামের তালিকা দেখুন।

^ অনু. 30 যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ৯ অধ্যায় দেখুন। এই বইটা www.jw.org ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে।