মন্দ কাজগুলো শেষ হবেই!
মন্দ কাজগুলো শেষ হবেই!
ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য দিয়েছেন, যেটি কেন লোকেরা খারাপ কাজগুলো করে থাকে তার কারণগুলো ব্যাখ্যা করে। এ ছাড়া, তিনি আমাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা ও আত্মসংযম করার ক্ষমতাও দিয়েছেন, যা আমাদের জন্য খারাপ কাজগুলো না করা বেছে নেওয়াকে সম্ভবপর করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫, ১৬, ১৯) এই ক্ষমতাগুলো থাকার কারণে, আমরা আমাদের মধ্যে থাকতে পারে এমন যেকোনো খারাপ প্রবণতাকে শনাক্ত করতে এবং সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে পারি। পরিশেষে, খারাপ কাজগুলো থেকে আমাদের বিরত থাকা, আমাদের ও আমাদের চারপাশে যারা রয়েছে তাদের, উভয়ের জন্য ‘সুখ’ নিয়ে আসবে।—গীতসংহিতা ১:১, NW.
তা সত্ত্বেও, খারাপ কাজগুলো করা প্রতিরোধ করার জন্য আমরা ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে যত কঠোর প্রচেষ্টাই করি না ২ তীমথিয় ৩:১-৫.
কেন, এই জগৎ সহমানবদের দ্বারা করা মন্দ কাজগুলোতে জর্জরিত হতে থাকবে। বাইবেল সতর্ক করে: “ইহা জানিও, শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে।” যে-বিষয়গুলো এই কাল বা সময়কে “বিষম” করে তুলেছে তা দেখাতে গিয়ে এটি আরও বলে: “মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে; তুমি এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও।”—সম্ভবত আপনি ওপরে উদ্ধৃত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিবরণে ‘শেষ কাল’ অভিব্যক্তিটি লক্ষ করেছেন। আপনার কাছে সেটি কী অর্থ রাখে? অধিকাংশ লোকই ‘শেষ কাল’ বলতে বুঝবে যে, কোনো কিছুর শেষ আসতে চলেছে। সেটা কী হতে পারে? ঈশ্বর তাঁর বাক্যে যে-প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন সেগুলো লক্ষ করুন।
দুষ্ট লোকেরা পুরোপুরিভাবে দূরীভূত হবে।
“ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই। কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” —গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১.
“যাহারা সদাপ্রভুকে প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন, কিন্তু তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন।” —গীতসংহিতা ১৪৫:২০.
অত্যাচার আর থাকবে না।
“তিনি আর্ত্তনাদকারী দরিদ্রকে, এবং দুঃখী ও নিঃসহায়কে উদ্ধার করিবেন। তিনি চাতুরী [“অত্যাচার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও দৌরাত্ম্য হইতে তাহাদের প্রাণ মুক্ত করিবেন।” —গীতসংহিতা ৭২:১২, ১৪.
“সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” —রোমীয় ৮:২১.
লোকেদের বস্তুগত চাহিদাগুলোকে পূরণ করা হবে।
“প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” —মীখা ৪:৪.
“লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না; বস্তুতঃ আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে, এবং আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে।” —যিশাইয় ৬৫:২১, ২২.
ন্যায়বিচার বিরাজ করবে।
“তবে ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন না, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে . . . ? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তিনি শীঘ্রই তাহাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করিবেন।”—লূক ১৮:৭, ৮.
“সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে পরিত্যাগ করেন না; তাহারা চিরকাল রক্ষিত হয়।” —গীতসংহিতা ৩৭:২৮.
স্বার্থপরতার জায়গায় ধার্মিকতা বিরাজ করবে।
“জগন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে।”—যিশাইয় ২৬:৯.
“তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” —লোকেরা পরিবর্তিত হচ্ছে—এমনকী এখনই
নিঃসন্দেহে, আমরা সকলেই এই ধরনের প্রতিজ্ঞাগুলোতে আনন্দিত হব। কিন্তু সেগুলো যে পরিপূর্ণতা লাভ করবে সেই বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা রয়েছে? সত্যি বলতে কী, এখনই আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবে। সেই প্রমাণটি কী? এটাই হল সেই প্রমাণ যে, আজকে পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোক ইতিমধ্যেই স্বার্থপর, অনৈতিক বা দৌরাত্মমূলক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করায় সফল হয়েছে এবং সৎ, শান্তিপ্রবণ এবং সদয় ব্যক্তি হতে শিখেছে। আজকে, সত্তর লক্ষেরও বেশি লোক নিয়ে গঠিত যিহোবার সাক্ষিরা হল এক আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ, যারা সেই জাতিগত, উপজাতিগত, জাতীয়তাবাদী, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভেদগুলোকে কাটিয়ে উঠেছে, যেগুলো ইতিহাসজুড়ে ঘৃণা, দৌরাত্ম্য ও রক্তপাত ঘটিয়েছে। * আজকে এই যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা এটা বিশ্বাস করার এক দৃঢ় ভিত্তি জোগায় যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো ব্যাপক আকারে পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
কিন্তু, কোন বিষয়টা এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসে? উত্তরটা ভাববাদী যিশাইয়ের দ্বারা লিপিবদ্ধ বাইবেলের আরেকটা প্রতিজ্ঞাতে রয়েছে। তিনি লিখেছিলেন:
“কেন্দুয়াব্যাঘ্র মেষশাবকের সহিত একত্র বাস করিবে; চিতাব্যাঘ্র ছাগবৎসের সহিত শয়ন করিবে; গোবৎস, যুবসিংহ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু একত্র থাকিবে; এবং ক্ষুদ্র বালক তাহাদিগকে চালাইবে। . . . সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে। আর স্তন্যপায়ী শিশু কেউটিয়া সর্পের গর্ত্তের উপরে খেলা করিবে, ত্যক্তস্তন্য বালক কৃষ্ণসর্পের বিবরের উপরে হস্ত রাখিবে। সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশাইয় ১১:৬-৯.
এই ভবিষ্যদ্বাণী কি কেবল এমন এক সময় সম্বন্ধে ভাববাণী করছে যখন পশুরা মানুষের সঙ্গে একত্রে বাস
করবে? না, এটিতে আরও কিছু রয়েছে। শাস্ত্রপদগুলোর শেষ অংশটি লক্ষ করুন যেটি এই পরিবর্তনের কারণকে নির্দেশ করে: “পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” ঈশ্বর-বিষয়ক জ্ঞান কি পশুর স্বভাবকে পরিবর্তন করে? না, তা করে না। কিন্তু, তা লোকেদের পরিবর্তন করতে পারে এবং করে! এই ভবিষ্যদ্বাণীটি জানায় যে, যাদের হয়তো পাশবিক প্রবণতাগুলো রয়েছে, তারা বাইবেল যা শিক্ষা দেয় তা শেখার ও প্রয়োগ করার কারণে সেই প্রবণতাগুলোকে ত্যাগ করবে এবং খ্রিস্টতুল্য ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলবে।উদাহরণস্বরূপ, পেড্রোর কথাই ধরুন। * তিনি মনে করতেন যে, তিনি যখন একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করছিলেন। প্রশিক্ষণ লাভ করার পর, তাকে পুলিশদের বাসভবনগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তা করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পেড্রো ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন, যেখানে তিনি তার ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে, পেড্রোর স্ত্রী যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর, পেড্রোও বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন আর যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে তিনি যা শিখেছিলেন তা তাকে তার আচরণে এবং জীবন সম্বন্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে বিরাট পরিবর্তন করতে পরিচালিত করেছিল। “যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই যে, সন্ত্রাসবাদী হিসেবে আমি প্রকৃতপক্ষে কাউকে হত্যা করিনি,” পেড্রো বলেন। “এখন আমি লোকেদের প্রকৃত শান্তি ও ন্যায়বিচারের বার্তা—ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য, ঈশ্বরের আত্মার খড়্গ বাইবেল ব্যবহার করি।” পেড্রো শান্তিপূর্ণ ও দৌরাত্ম্যহীন এক জগৎ সম্বন্ধীয় বার্তা জানানোর জন্য এমনকী সেই বাসভবনগুলোকে পরিদর্শন করেছিলেন, যেগুলোকে তিনি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
ঈশ্বরের বাক্য লোকেদের ওপর যে-শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে, তা মন্দ কাজগুলো যে শেষ হবেই এই বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখার যথেষ্ট কারণ জোগায়। হ্যাঁ, লোকেরা চিরকাল ধরে খারাপ কাজগুলো করে চলবে না বরং ভালো লোক হয়ে উঠবে। শীঘ্র যিহোবা মন্দ কাজগুলোর উৎস, শয়তান দিয়াবলকে দূর করবেন, যে অদৃশ্যভাবে জগতের বিষয়গুলোকে কাজে লাগাচ্ছে। বাইবেল বলে: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে” বা শয়তান দিয়াবলের অধীনে “শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) কিন্তু শীঘ্র তাকে দূর করা হবে। এ ছাড়া, যারা একগুঁয়েভাবে তাদের মন্দ পথ পরিত্যাগ করতে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকেও দূর করা হবে। এইরকম এক আশীর্বাদপ্রাপ্ত সময়ে বেঁচে থাকা কতই না চমৎকার!
এইরকম এক ভবিষ্যতের বিষয়ে নিশ্চিত হতে একজনকে অবশ্যই কী করতে হবে? স্মরণ করুন যে, ‘সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানই’ আজকে লোকেদের মধ্যে এই পরিবর্তন নিয়ে আসছে আর নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবীব্যাপী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বাইবেল সম্বন্ধীয় সঠিক জ্ঞান অর্জন করার এবং তা কাজে লাগানোর দ্বারা—যেমনটা পেড্রো করেছিলেন—আপনিও এমন এক জগতে বাস করার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করতে পারেন যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) তাই আমরা আপনাকে ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে জানতে বা জ্ঞান নিতে, যা এখনও পাওয়া যাচ্ছে, জোরালো পরামর্শ দিই কারণ আপনার জন্য এর অর্থ হতে পারে অনন্তজীবন।—যোহন ১৭:৩. (w১০-E ০৯/০১)
[পাদটীকাগুলো]
^ আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যিহোবার সাক্ষিরা—তারা কারা? তারা কী বিশ্বাস করে? নামক ব্রোশারটি দেখুন।
^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
আপনিও এমন এক জগতে বাস করার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করতে পারেন যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।”—২ পিতর ৩:১৩