বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে
বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে
কী একজন মহিলাকে এক সৎ কর্মী হতে উদ্দীপিত করেছিল, যিনি হিরে চোরাচালান করতেন এবং তার নিয়োগকর্তার জিনিস চুরি করতেন? কী একজন মহিলাকে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল, যিনি দু-বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন? কীভাবে মদ ও মাদকদ্রব্যের একজন অপব্যবহারকারী তার ধ্বংসাত্মক আসক্তিগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শক্তি লাভ করেছিলেন? তারা যা বলেছে, তা বিবেচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত জীবনকথা
নাম: মারগ্রেট ডেবার্ন
বয়স: ৪৫ বছর
দেশ: বটসোয়ানা
পূর্বে আমি একজন চোরাচালানকারী এবং চোর ছিলাম
আমার অতীত: আমার বাবা ছিলেন আসলে জার্মানির কিন্তু তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার (এখন নামিবিয়া) একজন নাগরিক হয়েছিলেন। আমার মা ছিলেন বটসোয়ানার আর তিনি ম্যাংগোলোগা উপজাতির ছিলেন। নামিবিয়ার গোবাবিসে আমার জন্ম হয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ১৯৭০-এর দশকে নামিবিয়ার ওপর যথেষ্ট কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে আর সমস্ত শহর ও গ্রামের সব জায়গায় বর্ণবৈষম্যের আইন জোরালোভাবে কার্যকর করে। আমার বাবা-মা ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিয়ে করেছিল বলে তাদেরকে আলাদা হওয়ার জন্য জোর করা হয়েছিল। তাই, আমার মা আমার ভাইবোনদের ও আমাকে নিয়ে বটসোয়ানার গানসিতে বাস করার জন্য চলে আসেন।
১৯৭৯ সালে, আমি বটসোয়ানার লোবাতসে শহরে চলে যাই এবং পালক বাবা-মার কাছে থেকে আমার পড়াশোনা শেষ করি। পরে, আমি একটা গ্যারেজে একজন ক্লার্ক হিসেবে কাজ খুঁজে পাই। আমি এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছিলাম যে, ঈশ্বর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয় জোগান না, তাই নিজের ও আপনার পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয় জোগানোর জন্য আপনাকে যা-কিছুই করতে হোক না কেন—ভাল বা মন্দ—তা-ই আপনার করা উচিত।
কাজের জায়গায় আমার এক দায়িত্বপূর্ণ পদ থাকায় আমি নিয়োগকর্তার গ্যারেজ থেকে গাড়ির ছোটোখাটো পার্টস চুরি করার সুযোগ নিতাম। রাতে শহরের মধ্য দিয়ে যখনই কোনো ট্রেন যেত, তখন আমার সঙ্গীরা ও আমি সেটাতে চড়তাম এবং আমাদের হাতের কাছে যা পেতাম, তা-ই চুরি করতাম। এ ছাড়া, আমি হিরে, সোনা এবং বোঞ্জ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ি। আমি মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার করা শুরু করি, খুবই হিংস্র হয়ে উঠি আর আমার অনেক ছেলেবন্ধু ছিল।
এরপর ১৯৯৩ সালে, শেষপর্যন্ত আমি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ি এবং আমার চাকরি হারাই। আমার “বন্ধুরা” এই ভয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায় যে, তারাও ধরা পড়ে যাবে। তাদের এই আচরণ আমাকে কষ্ট দেয় এবং আমি আর কাউকেই বিশ্বাস করব না বলে সিদ্ধান্ত নিই।
বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে: ১৯৯৪ সালে, টিম ও ভার্জিনিয়া নামে দুজন যিহোবার সাক্ষির সঙ্গে
আমার সাক্ষাৎ হয়, যারা মিশনারি ছিল। তারা আমার নতুন কাজের জায়গায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং আমার দুপুরের বিরতির সময় বাইবেল সম্বন্ধে শিখতে আমাকে সাহায্য করে। পরে, আমি যখন বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি তাদের বিশ্বাস করতে পারি, তখন আমি তাদেরকে আমার সঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য আমার ঘরে আসার অনুমতি দিই।শীঘ্র আমি উপলব্ধি করি যে, আমি যদি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই, তাহলে আমার জীবনধারায় আমাকে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০ পদ থেকে আমি এটা শিখেছি যে, “যাহারা ব্যভিচারী কি . . . চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” এক এক করে আমি আমার মন্দ অভ্যাসগুলো ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি চুরি করা বন্ধ করেছিলাম। আমি সেইসব দুর্বৃত্ত লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করেছিলাম, যাদের সঙ্গে আমি বড় হয়ে উঠেছি। এরপর, যিহোবার শক্তিতে, আমি আমার জীবন থেকে ছেলেবন্ধুদের দূর করতে পেরেছিলাম।
আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি: আপ্রাণ চেষ্টা করে, আমি আমার রাগকে দমন করতে এবং যখন কোনো ভুল হয়, তখন আমার সন্তানদের সঙ্গে চিৎকার করে কথা না বলতে শিখেছি। (ইফিষীয় ৪:৩১) আমি শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি। এভাবে ভাববিনিময় করা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসে এবং একটা পরিবার হিসেবে আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করে।
আমার আগের বন্ধুবান্ধব আর এমনকী আমার প্রতিবেশীরা বুঝতে পেরেছে যে, তারা আমাকে বিশ্বাস করতে পারে। আমি এমন একজন সৎ, নির্ভরযোগ্য কর্মী হয়ে উঠেছি, যে কিনা বিভিন্ন জিনিসের সরবরাহ ও টাকাপয়সার লেনদেন বিবেকবুদ্ধিপূর্বকভাবে দেখাশোনা করতে পারে। এভাবে, আমি আমার বেশিরভাগ সময় অন্যদেরকে বাইবেল সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভরণপোষণও জুগিয়ে থাকি। আমি হিতোপদেশ ১০:২২ পদের এই কথাগুলোর সঙ্গে পূর্ণহৃদয়ে একমত: “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।”
সংক্ষিপ্ত জীবনকথা
নাম: গ্লোরিয়া এলিসারারাস ডে চোপেরেনা
বয়স: ৩৭ বছর
দেশ: মেক্সিকো
পূর্বে আমি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম
আমার অতীত: আমি মেক্সিকোর এক সমৃদ্ধশালী এলাকা নকালপ্যানে বড় হয়েছিলাম। ছোটোবেলা থেকেই আমি বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন ছিলাম এবং আনন্দফুর্তি করতে ভালোবাসতাম। আমি ১২ বছর বয়সে ধূমপান, ১৪ বছর বয়সে মদ খাওয়া এবং ১৬ বছর বয়সে মাদকদ্রব্য সেবন করতে শুরু করেছিলাম। এর কয়েক বছর পর আমি ঘর ত্যাগ করেছিলাম। আমার অধিকাংশ বন্ধুবান্ধব অস্বাভাবিক পরিবারগুলো থেকে এসেছিল, যাদেরকে হয় মারধর করা বা গালিগালাজ করা হতো। জীবন আমার কাছে এতটাই হতাশাজনক হয়ে উঠেছিল যে, আমি দু-বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম।
আমার বয়স যখন ১৯ বছর, তখন আমি একজন মডেল হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিলাম। এভাবে আমি রাজনৈতিক এবং বিনোদন জগতের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিলাম। অবশেষে আমি বিয়ে করি ও আমার ছেলে-মেয়ে হয় কিন্তু আমাদের পরিবারে সমস্ত সিদ্ধান্ত আমিই নিতাম। এ ছাড়া, আমি ধূমপান করা ও মদ খাওয়া অব্যাহত রেখেছিলাম আর আমার সামাজিক জীবন নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। আমি অনেক অশ্লীল কথাবার্তা বলতাম আর নোংরা রসিকতা করতে পছন্দ করতাম। আমি অনেক বদমেজাজি ছিলাম।
যাদের সঙ্গে আমি মেলামেশা করতে পছন্দ করতাম, তাদের অধিকাংশের জীবনধারা একইরকম ছিল। তাদের মনে হতো যেন আমার কোনো কিছুরই অভাব নেই। কিন্তু, আমার সবসময় মনে হতো আমার জীবন শূন্য, এর কোনো উদ্দেশ্যই নেই।
বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে: আমি ১৯৯৮ সালে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করি। বাইবেল আমাকে শিখিয়েছে যে, জীবনের এক উদ্দেশ্য রয়েছে। আমি শিখেছিলাম যে, যিহোবা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল তিনি পৃথিবীতে পরমদেশতুল্য পরিস্থিতি পুনর্স্থাপন করবেন, মৃতদের পুনরুত্থিত করবেন এবং আমি সেই ভবিষ্যতের অংশী হতে পারি।
এ ছাড়া, আমি শিখেছিলাম যে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম প্রকাশের উপায় হচ্ছে তাঁর বাধ্য হওয়া। (১ যোহন ৫:৩) প্রথমে এটা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল কারণ আমি কখনোই কারো কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করিনি। কিন্তু, শেষপর্যন্ত আমি স্বীকার করেছিলাম যে, আমি নিজেই আমার জীবনকে ক্রমাগত পরিচালিত করতে পারব না। (যিরমিয় ১০:২৩) আমি যিহোবার নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম। আমার জীবনকে তাঁর মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চালানোর এবং আমার সন্তানদেরকে আমি যেভাবে জীবনযাপন করতাম, তার থেকে ভিন্ন জীবনধারা অনুযায়ী চলতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যিহোবার সাহায্য চেয়েছিলাম।
আমার পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করা খুবই কঠিন ছিল কিন্তু আমি ইফিষীয় ৪:২২-২৪ পদে পাওয়া এই পরামর্শকে কাজে লাগাতে শুরু করেছিলাম: “তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর, . . . এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” আমার ক্ষেত্রে, নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্বকে পরিধান করার অর্থ ছিল কলুষিত অভ্যাসগুলো যেমন, ধূমপান ত্যাগ করা আর আমাকে অশ্লীল কোনো কথাবার্তা ছাড়াই নতুনভাবে কথা বলা শিখতে হয়েছিল। আমি যাতে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিতে পারি, সেইজন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে আমার প্রায় তিন বছর সময় লেগেছিল।
এ ছাড়া, একজন স্ত্রী ও মা হিসেবে আমি আমার দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করেছিলাম। আমি ১ পিতর ৩:১, ২ পদের এই পরামর্শকে কাজে লাগাতে শুরু করেছিলাম: “হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।”
আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি: আমি যিহোবার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ কারণ আমি এখন জানি যে, জীবনের অর্থ রয়েছে। আমি মনে করি যে, আমি আগের চেয়ে এখন আরও ভালো ব্যক্তি হয়ে উঠেছি এবং আমার সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করে তুলতে সমর্থ হয়েছি। মাঝে মাঝে, আমার হৃদয় আমার অতীত কাজগুলোর জন্য আমাকে দোষী করে কিন্তু যিহোবা আমার হৃদয় জানেন। (১ যোহন ৩:১৯, ২০) নিঃসন্দেহে, বাইবেলের মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করা আমাকে ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করেছে এবং মনের শান্তি এনে দিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত জীবনকথা
নাম: জেলসন করেয়া ডি ওলিভেরা
বয়স: ৩৩ বছর
দেশ: ব্রাজিল
পূর্বে আমি একজন মদের ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারকারী ছিলাম
আমার অতীত: আমি ব্রাজিল ও উরুগুয়ের সীমান্তের মাঝামাঝিতে অবস্থিত ব্রাজিলের বাঝা শহরে জন্মগ্রহণ করি, যেখানে প্রায় ১,০০,০০০ লোক বাস করে। কৃষিকাজ এবং গবাদি পশুপালন করা সেখানকার অন্যতম পেশা ছিল। আমি একটা অনুন্নত জেলায় বড় হয়ে উঠেছিলাম, যেখানে দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোকেরা দৌরাত্ম্যমূলক কাজ করত এবং অল্পবয়সিদের মধ্যে মদ ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার খুবই সাধারণ বিষয় ছিল।
স্কুল ছাড়ার পর, আমি মদ খেতে, মারিজুয়ানা ব্যবহার করতে এবং হেভি মেটাল মিউজিক শুনতে শুরু করি। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম না। আমার মনে হতো যে, জগতের সমস্ত দুঃখকষ্ট এবং বিশৃঙ্খলাই প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বর নেই।
আমি গিটার বাজাতাম এবং গান লিখতাম আর আমি প্রায়ই বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বই থেকে এই বিষয়ে উদ্দীপনা লাভ করতাম। আমার ব্যান্ড দলটা প্রত্যাশামতো সফল হয়নি বলে আমি
আরও ঘন ঘন কড়া মাদকদ্রব্য নিতে শুরু করি। এগুলো বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে আমি যে মারা যেতে পারি, আমি তার পরোয়া করতাম না। যেসব গায়ক-গায়িকাদের আমি উপাসনার স্থানে রেখেছিলাম, তাদের অনেকে এভাবেই নিজেদের জীবনকে শেষ করে দিয়েছে।আমি আমার মাদকাসক্তির জন্য টাকাপয়সা আমার দিদিমার কাছ থেকে নিতাম, যিনি আমাকে মানুষ করে তুলেছিলেন। তিনি যদি জিজ্ঞেস করতেন সেই টাকা দিয়ে আমি কী করব, তখন আমি মিথ্যা বলতাম। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন আমি প্রেতচর্চার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আমি এই মনে করে ডাকিনীবিদ্যার প্রতি কৌতূহলী হয়ে পড়ি যে, এটা আমাকে আরও ভাল গান লিখতে সাহায্য করবে।
বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে: বাইবেল অধ্যয়ন এবং যিহোবার সাক্ষিদের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করার পর আমার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে আমি বেঁচে থাকার এবং সুখী হওয়ার এক আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলি। আমার মনের নতুন অবস্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমার লম্বা চুল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। আমি আমার অসন্তোষ ও বিদ্রোহের এক চিহ্ন হিসেবে চুল বড় করেছিলাম। পরে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি আমি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চাই, তাহলে আমাকে অতিরিক্ত মদ খাওয়া পরিত্যাগ করতে হবে, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ত্যাগ করতে হবে এবং ধূমপান করা বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, আমি যেধরনের মিউজিক পছন্দ করতাম, সেটাও পরিবর্তন করার দরকার মনে করেছিলাম।
প্রথম বার আমি যখন যিহোবার সাক্ষিদের একটা সভাতে উপস্থিত হই, তখন আমি একটা দেওয়ালে টাঙানো একটি শাস্ত্রপদ লক্ষ করেছিলাম। এটি হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ থেকে ছিল আর সেখানে লেখা রয়েছে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” সেই শাস্ত্র নিয়ে চিন্তা করা আমাকে এই আশ্বাস দিয়েছিল যে, আমি যদি যিহোবাকে সুযোগ দিই, তাহলে তিনি আমার জীবনকে পালটে আরও ভাল করার জন্য সাহায্য করবেন।
তবুও, দৃঢ়ভাবে গেঁথে যাওয়া আমার জীবনধারা পরিবর্তন করা এবং মাদকাসক্তি যার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ, সেগুলো ছেড়ে দেওয়াটা আমার হাত কেটে ফেলে দেওয়ার মতোই কঠিন ছিল। (মথি ১৮:৮, ৯) আমি এই ধরনের পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে করিনি। আমি জানতাম যে, সেই পদ্ধতি আমার ক্ষেত্রে কাজ করবে না। তাই, আমি আমার খারাপ অভ্যাসগুলো একবারেই ত্যাগ করেছিলাম। এ ছাড়া, আমি সেইসমস্ত জায়গা এবং লোকেদের পরিহার করেছিলাম, যা আমাকে হয়তো আমার পুরোনো, ধ্বংসাত্মক জীবনধারায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাতে পারত।
নিরুৎসাহের মুহূর্তগুলোর প্রতি মনোযোগ না দিয়ে আমি প্রতিদিন যা-কিছু সম্পাদন করতাম, সেগুলোতে আনন্দ পেতে শুরু করেছিলাম। আমি অনুভব করেছিলাম যে, শারীরিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে শুচি হওয়া যিহোবার দৃষ্টিতে মর্যাদাপূর্ণ হবে। আমি আমার পুরোনো জীবনধারায় ফিরে না যাওয়ার ও সামনের দিকে দৃষ্টি রাখার জন্য যিহোবার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম এবং সাহায্য পেয়েছিলাম। কখনো কখনো আমি পূর্বের অভ্যাসে পুনরায় লিপ্ত হয়েছিলাম। কিন্তু, তারপরও আমি জোর করে আমার শিক্ষকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন করে গিয়েছি, যদিও মাঝে মাঝে হয়তো অতিরিক্ত মদ খাওয়ার কারণে আমাকে শারীরিক সমস্যা ভোগ করতে হতো।
বাইবেল থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য—তিনি আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করেন, তিনি মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করবেন এবং তিনি এখন পৃথিবীব্যাপী এক প্রচার কাজকে সমর্থন করছেন—জানা আমার কাছে অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল। (মথি ৭:২১-২৩; ২৪:১৪; ১ পিতর ৫:৬, ৭) এই সমস্ত তথ্য একটা পাজেলের বিভিন্ন টুকরোর মতো, যেগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে মিলে যায়। অবশেষে, আমি আমার জীবনকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তিনি আমার জন্য যা-কিছু করেছেন, তার জন্য আমি আমার কৃতজ্ঞতা দেখাতে চেয়েছিলাম।
আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি: আমি এখন মনে করি যে, আমার জীবনের উদ্দেশ্য ও অর্থ রয়েছে। (উপদেশক ১২:১৩) আর আমার পরিবারের কাছ থেকে কিছু নেওয়ার পরিবর্তে, আমি বরং তাদেরকে কিছু দিতে পেরেছি। বাইবেল থেকে আমি যে-উত্তম বিষয়গুলো শিখেছি, সেগুলো আমি আমার দিদিমাকে জানিয়েছি আর তিনি নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছেন। আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং আমার ব্যান্ড দলের প্রাক্তন একজন সদস্যও একই বিষয় করেছে।
আমি বিয়ে করেছি এবং আমি ও আমার স্ত্রী আমাদের বেশিরভাগ সময় অন্যদেরকে বাইবেল সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করার জন্য ব্যয় করে থাকি। আমি প্রচুররূপে পুরস্কৃত হয়েছি বলে মনে করি, কারণ আমি ‘আমার সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিতে’ শিখেছি। (w০৯ ২/১)
[২১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“ধীরে ধীরে আমি বেঁচে থাকার এবং সুখী হওয়ার এক আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলি”