অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১০
গান ৩১ যিহোবার সঙ্গে চলা
যিহোবা ও যিশুর মতো মনোভাব রাখুন
“খ্রিস্ট যেহেতু কষ্ট ভোগ করেছিলেন, তাই তোমরাও তাঁর মতো একই মনোভাব বজায় রাখার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো।”—১ পিতর ৪:১.
আমরা কী শিখব?
যিশুর মনোভাব থেকে প্রেরিত পিতর কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছিলেন আর এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১-২. (ক) যিহোবাকে ভালোবাসার মানে কী? (খ) যিশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সমস্ত মন দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসেন?
যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, মোশির নিয়মে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা কী। তিনি বলেছিলেন: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন এবং তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাসবে।” (মার্ক ১২:৩০) লক্ষ করুন, আমাদের যিহোবাকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হবে অর্থাৎ আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও অনুভূতি দিয়ে তা করতে হবে। আমাদের সমস্ত প্রাণ দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসতে হবে অর্থাৎ আমাদের পুরো শক্তি দিয়ে তাঁর সেবা করতে হবে। কিন্তু, আমাদের সমস্ত মন দিয়েও যিহোবাকে ভালোবাসতে হবে। এর মানে হল, আমরা যেভাবে চিন্তা করি, সেটার মাধ্যমেও দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি। এটা ঠিক যে, আমরা কখনো যিহোবার চিন্তাভাবনা বা মনোভাব পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারব না। কিন্তু, আমরা যদি ‘খ্রিস্টের মনোভাব’ বোঝার চেষ্টা করি, তা হলে আমরা যিহোবার মনোভাবও ভালোভাবে বুঝতে পারব। কারণ যিশু একেবারে তাঁর পিতার মতো চিন্তা করেন।—১ করি. ২:১৬.
২ যিশু সমস্ত মন দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসতেন। তিনি জানতেন, তাঁর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী এবং সেটা পূরণ করার জন্য তাঁকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপরও, তিনি তা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পূরণ করার উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিলেন। আর এটা করার ক্ষেত্রে তিনি কোনো কিছুকেই বাধা হতে দেননি।
৩. পিতর যিশুর কাছ থেকে কী শিখেছিলেন আর তিনি অন্যান্য খ্রিস্টানদের কী করতে উৎসাহিত করেছিলেন? (১ পিতর ৪:১)
৩ পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতেরা যিশুর সঙ্গে এক ভালো সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিল এবং তারা শিখতে পেরেছিল যে, তিনি কীভাবে চিন্তা করেন। পিতর যখন ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় তার প্রথম চিঠিটা লিখেছিলেন, তখন তিনি খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন, তারা যেন খ্রিস্টের মতো মনোভাব বজায় রাখার জন্য প্রস্তুত থাকে। (পড়ুন, ১ পিতর ৪:১.) যে-গ্রিক শব্দকে “প্রস্তুত হও” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা এমন এক সৈনিকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত, যে তার অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাই, একজন খ্রিস্টান যদি খ্রিস্টের মতো মনোভাব রাখে, তা হলে সেটা এমন হবে যেন সে অস্ত্র নিয়ে নিজের পাপপূর্ণ স্বভাব এবং এই জগতের শাসক শয়তানের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।—২ করি. ১০:৩-৫; ইফি. ৬:১২.
৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
৪ এই প্রবন্ধে আমরা যিশুর মনোভাব নিয়ে আলোচনা করব এবং দেখব যে, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি। এ ছাড়া, আমরা এও শিখব: (১) কীভাবে আমরা যিহোবার মতো মনোভাব রাখতে পারি, যাতে আমাদের সবার মনোভাব একইরকম হয়? (২) কীভাবে আমরা নম্র হতে পারি? আর (৩) যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হতে পারি?
যিহোবার মতো মনোভাব রাখুন
৫. একবার পিতর কীভাবে যিহোবার মতো মনোভাব রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?
৫ একবার পিতর কীভাবে যিহোবার মতো মনোভাব রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, আসুন তা লক্ষ করি। যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন যে, তাঁকে জেরুসালেমে যেতে হবে, যেখানে তাঁকে গ্রেফতার করে ধর্মীয় গুরুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তাঁর উপর নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করা হবে এবং এরপর তাঁকে হত্যা করা হবে। (মথি ১৬:২১) কিন্তু, পিতরের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা হয়তো কঠিন ছিল যে, যিহোবা যিশুকে এভাবে মারা যেতে দেবেন। কারণ তিনি জানতেন, যিশুই হলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ, যিনি ঈশ্বরের লোকদের উদ্ধার করবেন। (মথি ১৬:১৬) তাই, পিতর যিশুকে একপাশে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন: “প্রভু, নিজের প্রতি সদয় হোন; আপনার প্রতি কখনোই এমনটা ঘটবে না।” (মথি ১৬:২২) এই ক্ষেত্রে পিতরের মনোভাব যিহোবার মতো ছিল না, তাই যিশু তাকে সমর্থন করেননি।
৬. যিশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি একেবারে যিহোবার মতো মনোভাব রাখেন?
৬ কিন্তু, যিশু একেবারে তাঁর পিতার মতো মনোভাব রাখতেন। তাই তিনি পিতরকে বলেছিলেন: “আমার সামনে থেকে সরে যাও, শয়তান! তুমি আমার জন্য বাধাস্বরূপ, কারণ তুমি ঈশ্বরের মতো করে নয়, বরং মানুষের মতো করে চিন্তা করছ।” (মথি ১৬:২৩) পিতরের উদ্দেশ্য হয়তো ভালো ছিল, কিন্তু যিশু তার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন যে, তাঁকে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য দুঃখভোগ করতে হবে এবং মারা যেতে হবে। এখান থেকে পিতর একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছিলেন যে, তাকে যিহোবার মতো মনোভাব রাখতে হবে। এটা আমাদের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা!
৭. পরবর্তী সময়ে পিতর কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যিহোবার মতো একই মনোভাব রাখতে চান? ( ছবিটা দেখুন।)
৭ পরবর্তী সময়ে পিতর দেখিয়েছিলেন যে, তিনি একেবারে যিহোবার মতো মনোভাব রাখতে চান। লক্ষ করুন, সেইসময় কী ঘটেছিল, যখন যিহোবা অছিন্নত্বক ন-যিহুদিদের তাঁর উপাসক হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। পিতরকে কর্ণীলিয় নামে একজন ন-যিহুদির কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কর্ণীলিয় প্রথম ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ন-যিহুদিদের মধ্য থেকে যিহোবার উপাসক হতেন। কিন্তু, যিহুদিরা সাধারণত ন-যিহুদিদের সঙ্গে মেলামেশা করত না। তাই, কর্ণীলিয়ের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পিতরকে নিজের মনোভাব পরিবর্তন করতে হত। আর যখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ন-যিহুদিদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তখন তিনি তার মনোভাব পরিবর্তন করেছিলেন। এরপর যখন কর্ণীলিয় পিতরকে তার বাড়িতে ডেকেছিলেন, তখন তিনি “কোনো আপত্তি না করেই” তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১০:২৮, ২৯) তিনি কর্ণীলিয় এবং তার পুরো পরিবারের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আর তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল।—প্রেরিত ১০:২১-২৩, ৩৪, ৩৫, ৪৪-৪৮.
পিতর কর্ণীলিয়ের বাড়িতে এসেছেন (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৮. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবার মতো মনোভাব রাখি? (১ পিতর ৩:৮, পাদটীকা)
৮ অনেক বছর পর পিতর খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা “সকলে চিন্তাভাবনায় এক” হয়। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮, পাদটীকা) আমাদের খ্রিস্টান ভাই-বোনদের মনোভাব বা চিন্তাভাবনা তখনই এক হবে, যখন আমরা যিহোবার মতো মনোভাব রাখব, যা আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু আমাদের উৎসাহিত করেছিলেন আমরা যেন ঈশ্বরের রাজ্যকে জীবনে প্রথম স্থান দিই। (মথি ৬:৩৩) হতে পারে, এই কথাটা মাথায় রেখে একজন ভাই অথবা বোন পূর্ণসময়ের সেবা করার জন্য চিন্তা করছেন। এই ক্ষেত্রে আমরা তাকে এমন কিছু বলব না, যাতে তার সংকল্প দুর্বল হয়ে যায় বরং তাকে উৎসাহিত করব এবং তাকে সাহায্য করব।
নম্র হোন
৯-১০. যিশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি নম্র?
৯ যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে পিতর ও তাঁর অন্যান্য প্রেরিতদের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের শিখিয়েছিলেন যে, তাদের নম্র হতে হবে। তিনি শেষ বারের মতো নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে যাচ্ছেন। তাই, তিনি পিতর ও যোহনকে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পাঠিয়েছিলেন। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তারা নিশ্চয়ই একটা পাত্র ও একটা গামছা জোগাড় করেছিলেন কারণ সেই সময়ে সাধারণত খাবারের আগে অতিথিদের পা ধুইয়ে দেওয়া হত। কিন্তু, যখন সময় এসেছিল, তখন কে নম্র হয়ে এই ছোটো কাজটা করেছিলেন?
১০ যিশু এগিয়ে গিয়ে তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেন। তিনি তাঁর চাদরটা খোলেন আর গামছা নিয়ে নিজের কোমরে বাঁধেন। এরপর তিনি পাত্রে জল ভরেন এবং শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেন। (যোহন ১৩:৪, ৫) তাঁর ১২ জন প্রেরিতের পা ধুইয়ে দেওয়ার জন্য যিশুর হয়তো অনেক সময় লেগেছিল। এই প্রেরিতদের মধ্যে যিহূদাও ছিলেন, যিনি যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে যাচ্ছিলেন। যিশু কতই-না অসাধারণ নম্রতা দেখিয়েছিলেন! যিশুকে দেখে প্রেরিতেরা নিশ্চয়ই অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিল কারণ পা ধুইয়ে দেওয়ার কাজ সাধারণত দাসেরা করত। এরপর যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেন: “আমি তোমাদের প্রতি কী করলাম, তা কি তোমরা বুঝতে পারলে? তোমরা আমাকে ‘গুরু’ ও ‘প্রভু’ বলে ডাক আর তা সঠিক, কারণ আমি তা-ই। তাই, আমি প্রভু ও গুরু হয়েও যদি তোমাদের পা ধুইয়ে দিই, তা হলে তোমাদেরও একে অন্যের পা ধুইয়ে দেওয়া উচিত।”—যোহন ১৩:১২-১৪.
একজন ব্যক্তি সত্যিই নম্র কি না, সেটা তার মনোভাব থেকেও বোঝা যায়
১১. পিতর কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি নম্র হতে শিখেছিলেন? (১ পিতর ৫:৫ এবং পাদটীকা) (ছবিও দেখুন।)
১১ পিতর যিশুর কাছ থেকে নম্র হওয়ার বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছিলেন। যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর পিতর এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেন, যিনি জন্ম থেকেই খোঁড়া ছিলেন। (প্রেরিত ১:৮, ৯; ৩:২, ৬-৮) এই অলৌকিক ঘটনা দেখে লোকেরা পিতরের চার পাশে জড়ো হয়ে যায়। (প্রেরিত ৩:১১) তারা হয়তো পিতরের প্রশংসা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু, পিতর কী করেছিলেন? তিনি তার সময়কার যিহুদিদের মতো ছিলেন না, যারা নাম, খ্যাতি ও পদকে বেশি গুরুত্ব দিত। পিতর নম্র ছিলেন, তাই তিনি নিজে প্রশংসা পাওয়ার পরিবর্তে সেই অলৌকিক কাজের সমস্ত কৃতিত্ব যিহোবা ও যিশুকে দিয়েছিলেন। পিতর বলেছিলেন: “আমরা . . . তাঁর [যিশুর] নামের প্রতি আমাদের বিশ্বাসের কারণে, এই যে ব্যক্তিকে তোমরা দেখছ এবং জান, তাকে সবল করা হয়েছে।” (প্রেরিত ৩:১২-১৬) এ ছাড়া, পিতর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে যে-চিঠি লিখেছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন, তারা যেন নম্রতাকে কাপড়ের মতো পরিধান করে। তার এই কথা থেকে আমাদের সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়, যখন যিশু তাঁর কোমরে গামছা বেঁধে শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।—পড়ুন, ১ পিতর ৫:৫, পাদটীকা।
পিতর নম্র ছিলেন, তাই তিনি অলৌকিক কাজের সমস্ত কৃতিত্ব যিহোবা ও যিশুকে দিয়েছিলেন। আমরাও যদি নম্র হই, তা হলে আমরা সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে লোকদের সাহায্য করব; লোকদের চোখে পড়ার কিংবা তাদের কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য কিছু করব না (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১২. কীভাবে আমরা পিতরের মতো নম্র হওয়া শিখতে পারি?
১২ আমরাও পিতরের মতো নম্র হওয়া শিখতে পারি। একজন ব্যক্তি নম্র কি না, সেটা আমরা কিছুটা হলেও তার কথাবার্তা থেকে বুঝতে পারি। কিন্তু, পিতর নম্রতার জন্য যে-শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনার মাধ্যমেও নম্রতা প্রকাশ পায়, যেমন তিনি নিজের সম্বন্ধে এবং অন্যদের সম্বন্ধে কীভাবে চিন্তা করেন। আমরা অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার জন্য তাদের সাহায্য করি না। এর পরিবর্তে, আমরা যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসি বলে তাদের সাহায্য করি। কেউ আমাদের প্রচেষ্টা লক্ষ করুক অথবা না-ই করুক, আমরা যদি নিজেদের ইচ্ছায় এবং আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করি আর ভাই-বোনদের সাহায্য করি, তা হলে এর থেকে বোঝা যাবে যে, আমরা সত্যিই নম্র।—মথি ৬:১-৪.
“উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন” হোন
১৩. “উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন” হওয়ার মানে কী? (বুঝিয়ে বলুন।)
১৩ “উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন” হওয়ার মানে কী? (১ পিতর ৪:৭) একজন খ্রিস্টান যখন উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হন, তখন তিনি যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেই বিষয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা কী, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। যিহোবার সঙ্গে তার যে-সম্পর্ক রয়েছে, সেটাকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি নিজের সম্বন্ধে সঠিক মনোভাব বজায় রাখেন এবং এইরকম চিন্তা করেন না যে, তিনি সব কিছু জানেন। এর পরিবর্তে, তিনি সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করেন এবং প্রার্থনায় তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চান।
১৪. একসময় পিতর কীভাবে যিহোবার উপর নির্ভর করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?
১৪ মৃত্যুর আগের রাতে যিশু তাঁর শিষ্যদের সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আজ রাতে আমার প্রতি যা ঘটবে, তাতে কিছু সময়ের জন্য তোমরা সকলে বিশ্বাস হারাবে।” কিন্তু, পিতর সম্পূর্ণ আস্থা সহকারে বলেছিলেন: “আপনার প্রতি যা ঘটবে, তাতে অন্য সকলে কিছু সময়ের জন্য বিশ্বাস হারালেও আমি কখনোই হারাব না!” সেই রাতে যিশু তাঁর কিছু শিষ্যকে বলেছিলেন: “জেগে থাকো এবং ক্রমাগত প্রার্থনা করো।” (মথি ২৬:৩১, ৩৩, ৪১) পিতর যদি যিশুর এই পরামর্শ মেনে চলতেন, তা হলে তিনি সাহসের সঙ্গে এই কথা বলতে পারতেন যে, তিনি যিশুর শিষ্য। কিন্তু, পিতর তার গুরু যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন, যে-কারণে তিনি পরে আপশোস করেছিলেন।—মথি ২৬:৬৯-৭৫.
১৫. মারা যাওয়ার আগের রাতে যিশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি?
১৫ যিশু সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করতেন। তিনি নিখুঁত ছিলেন, তা সত্ত্বেও মারা যাওয়ার আগের রাতে তিনি বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। এই কারণে তিনি সাহস লাভ করতে এবং যিহোবার ইচ্ছা পালন করতে পেরেছিলেন। (মথি ২৬:৩৯, ৪২, ৪৪; যোহন ১৮:৪, ৫) পিতর নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে, কীভাবে যিশু প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিলেন। আর এই বিষয়টা তিনি হয়তো কখনোই ভোলেননি।
১৬. কীভাবে পিতর দেখিয়েছিলেন যে, তিনি উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হতে শিখেছিলেন? (১ পিতর ৪:৭)
১৬ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিতর আরও বেশি করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে এবং তাঁর উপর নির্ভর করতে শুরু করেছিলেন। যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর পিতর এবং অন্যান্য শিষ্যদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তারা পবিত্র শক্তি লাভ করবে, যা তাদের সুসমাচার প্রচার করে চলতে সাহায্য করবে। যিশু তাদের এটাও বলেছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের জেরুসালেমে অপেক্ষা করতে হবে। (লূক ২৪:৪৯; প্রেরিত ১:৪, ৫) যিশুর জন্য অপেক্ষা করার সময় পিতর কী করেছিলেন? পিতর এবং অন্য শিষ্যেরা ‘ক্রমাগত প্রার্থনা’ করেছিলেন। (প্রেরিত ১:১৩, ১৪) পরে তিনি তার প্রথম চিঠিতেও খ্রিস্টানদের উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হতে, প্রার্থনা করতে এবং যিহোবার উপর নির্ভর করতে উৎসাহিত করেছিলেন। (পড়ুন ১ পিতর ৪:৭.) এই বিষয়গুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, পিতর যিহোবার উপর নির্ভর করতে শিখেছিলেন এবং তিনি মণ্ডলীর জন্য স্তম্ভ হয়েছিলেন।—গালা. ২:৯.
১৭. আমাদের যতই দক্ষতা থাকুক না কেন, আমাদের কী করা উচিত? (ছবিও দেখুন।)
১৭ উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিতভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই এটা বুঝতে হবে যে, আমাদের যতই দক্ষতা থাকুক না কেন, আমাদের যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের যিহোবার কাছে আরও বেশি করে প্রার্থনা করতে হবে এবং সাহায্য চাইতে হবে। আর এই আস্থা রাখতে হবে যে, আমাদের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো, তিনি তা জানেন।
পিতর যিহোবার উপর নির্ভর করতে শেখেন এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করে চলেন। আমাদের যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আমাদেরও সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। এভাবে আমরাও উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হতে পারব (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) a
১৮. যিহোবার মতো মনোভাব রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৮ আমরা যিহোবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা তাঁর গুণগুলো দেখাতে পারি। (আদি. ১:২৬) এটা ঠিক যে, আমরা পুরোপুরি যিহোবার মতো হতে পারি না। (যিশা. ৫৫:৯) কিন্তু, পিতরের মতো আমরাও যিহোবার মতো মনোভাব রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে পারি। তাই আসুন, আমরা সবসময় যিহোবার মতো মনোভাব রাখার প্রচেষ্টা করি, নম্র হতে শিখি এবং উত্তম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হই।
গান ৩০ যিহোবা আমার পিতা, ঈশ্বর ও বন্ধু
a ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন বোন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। তিনি ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে মনে মনে প্রার্থনা করছেন।