‘যিহোবার উপদেশ’ শোনার জন্য জাতিগণকে প্রস্তুত করা
“দেশাধ্যক্ষ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] উপদেশে চমৎকৃত হইয়া বিশ্বাস করিলেন।”—প্রেরিত ১৩:১২.
১-৩. কেন যিশুর শিষ্যদের জন্য “সর্ব্ব জাতির” কাছে সুসমাচার প্রচার করা সহজ ছিল না?
যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের অনেক কাজ করতে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ আদেশ দিয়েছিলেন। “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত” তাদেরকে ‘রাজ্যের সুসমাচার সমুদয় জগতে’ প্রচার করতে হয়েছিল।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯.
২ যিশু এবং সুসমাচারের প্রতি শিষ্যদের ভালোবাসা ছিল। কিন্তু, সম্ভবত তারা ভেবেছিলেন, ‘কীভাবে আমরা যিশুর এই আজ্ঞা পালন করব?’ এইরকম চিন্তা করার পিছনে প্রথম কারণ হল, তারা সংখ্যায় অল্প ছিলেন। এ ছাড়া, তারা লোকেদের এই শিক্ষা দিচ্ছিলেন, যিশু হলেন ঈশ্বরের পুত্র। অথচ লোকেরা জানত, যিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তা ছাড়া, অনেকে শিষ্যদের “অশিক্ষিত সামান্য লোক” বলে মনে করত। (প্রেরিত ৪:১৩) যিহুদি ধর্মীয় নেতারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু শিষ্যরা সেই ধরনের কোনো শিক্ষা লাভ করেননি। আর শিষ্যদের প্রচারিত বার্তার সঙ্গে যিহুদিদের সেই পরম্পরাগত রীতিনীতির কোনো মিল ছিল না, যেগুলো তাদের ধর্মীয় নেতারা শত শত বছর ধরে শিক্ষা দিয়ে এসেছেন। যেহেতু ইস্রায়েলে শিষ্যদের কেউ সম্মানের চোখে দেখত না, তাই তারা হয়তো এই বিষয়ে সন্দেহ করেছিলেন, ক্ষমতাশালী রোমীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে আদৌ কেউ তাদের কথা শুনবে কি না।
৩ যিশু তাঁর শিষ্যদের সাবধান করে বলেছিলেন, তারা ঘৃণিত ও তাড়িত হবেন এবং তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হত্যা করা হবে। (লূক ২১:১৬, ১৭) তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। এ ছাড়া, খ্রিস্টের শিষ্য বলে দাবি করে এমন কেউ কেউ মিথ্যা শিক্ষা দেবে। আর শিষ্যদেরকে এমন এলাকায় প্রচার করতে হবে, যা অপরাধ ও দৌরাত্ম্যে পূর্ণ। (মথি ২৪:১০-১২) তাহলে কীভাবে তারা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” প্রচার করবেন? (প্রেরিত ১:৮) এত সমস্যা সত্ত্বেও কীভাবে শিষ্যরা এই কাজ করবেন, তা নিয়ে তারা হয়তো চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।
৪. প্রচার কাজের ফলাফল কী হয়েছিল?
৪ শিষ্যরা যদিও জানতেন, এই কাজ সম্পন্ন করা সহজ হবে না, কিন্তু তারা যিশুর আজ্ঞার বাধ্য হয়েছিলেন এবং যিরূশালেম, শমরীয়া আর এমনকী অন্যান্য দেশেও প্রচার করেছিলেন। প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে, তারা এত বেশি জায়গায় ভ্রমণ করেছিলেন যে, প্রেরিত পৌল এটা বলতে পেরেছিলেন, তারা ‘আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচার’ করেছেন। আর এর ফলে অন্যান্য জাতির অনেক লোক শিষ্য হয়ে উঠেছিল। (কল. ১:৬, ২৩) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পৌল যখন কুপ্র দ্বীপে প্রচার করেছিলেন, তখন এমনকী একজন রোমীয় শাসক বা দেশাধ্যক্ষ শিষ্য হয়েছিলেন কারণ তিনি ‘যিহোবার উপদেশে চমৎকৃত হইয়াছিলেন।’—পড়ুন, প্রেরিত ১৩:৬-১২.
৫. (ক) যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) প্রথম শতাব্দীর বিষয়ে ইতিহাসের একটা বই কী বলে?
৫ শিষ্যরা যে নিজেদের চেষ্টায় সমস্ত পৃথিবীতে প্রচার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন না, সেটা তারা জানতেন। কিন্তু, তারা এটাও জানতেন, যিশু প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন এবং পবিত্র আত্মা তাদের সাহায্য করবে। (মথি ২৮:২০) এ ছাড়া, সেই সময়ের অন্যান্য পরিস্থিতিও হয়তো শিষ্যদের সাহায্য করেছিল। আসলে, ইতিহাসের একটা বই এভাবে ব্যাখ্যা করে, প্রচার শুরু করার জন্য সম্ভবত প্রথম শতাব্দীই ছিল সর্বোত্তম সময় এবং খ্রিস্টানরা পরে এটা বুঝতে পেরেছিল, ঈশ্বর তাদের জন্য পথ প্রস্তুত করেছেন।
৬. (ক) এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব?
৬ খ্রিস্টানরা যাতে প্রচার কাজ সম্পন্ন করতে পারে, সেইজন্য কি যিহোবা প্রথম শতাব্দীতে জগতের ঘটনাগুলো পরিবর্তন করেছিলেন? বাইবেল এই বিষয়ে কিছু বলে না। কিন্তু আমরা এটা জানি, যিহোবা চেয়েছিলেন যেন তাঁর লোকেরা সুসমাচার প্রচার করে। আর আমরা এও জানি, সেই কাজ থামানোর সাধ্য শয়তানের ছিল না। এই প্রবন্ধে আমরা প্রথম শতাব্দীর এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর কারণে শিষ্যদের জন্য প্রচার করা সহজ হয়ে উঠেছিল। আর পরের প্রবন্ধে আমরা বর্তমান সময়ের এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজে আমাদের সাহায্য করেছে।
রোমীয় শান্তি
৭. রোমীয় শান্তি বলতে কী বোঝায় আর কোন বিষয়টা এই সময়কালকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে আলাদা করে তুলেছিল?
৭ প্রথম শতাব্দীতে, রোমীয় সাম্রাজ্যে এক শান্তিপূর্ণ সময়কাল বিদ্যমান ছিল, যার ফলে শিষ্যদের জন্য প্রচার কাজ করা সহজ হয়ে উঠেছিল। এই সময়কালকে ল্যাটিন ভাষায় প্যাক্স রোমানা বলা হতো, যার অর্থ রোমীয় শান্তি। সেই সময়ে রোমীয় সরকার ছোটোখাটো যেকোনো বিদ্রোহ দমন করেছিল। তবে এটাও ঠিক, সেই সময়ে কোনো কোনো স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল, যেমনটা যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (মথি ২৪:৬) উদাহরণ স্বরূপ, ৭০ সালে রোমীয়রা যিরূশালেম ধবংস করেছিল আর তারা সাম্রাজ্যের সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে ছোটো ছোটো যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু, সাম্রাজ্যের অধিকাংশ জায়গাতেই শান্তি বিরাজ করেছিল আর এর ফলে শিষ্যরা সহজেই বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ ও প্রচার করতে পেরেছিলেন। এই শান্তিপূর্ণ সময়কাল প্রায় ২০০ বছর স্থায়ী ছিল। একটা বই এভাবে বলে, সমগ্র মানবইতিহাসে এমন দীর্ঘ শান্তিপূর্ণ সময়কাল আর কখনো দেখা যায়নি, যা অনেক লোকের ওপর প্রভাব ফেলেছিল।
৮. রোমীয় শান্তি কীভাবে শিষ্যদের সাহায্য করেছিল?
৮ খ্রিস্টের মৃত্যুর প্রায় ২৫০ বছর পর, ওরিজেন নামে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি এই শান্তিপূর্ণ সময়কাল সম্বন্ধে লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রোমীয়রা যেহেতু অনেক দেশের ওপর শাসন করছিল, তাই শিষ্যরা সহজেই সেই দেশগুলোতে প্রচার করেছিলেন। সেইসমস্ত দেশের লোকেরা তখন নিজেদের দেশকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করছিল না, বরং তারা গ্রামাঞ্চলে শান্তিতে বাস করছিল। তাই ওরিজেনের মনে হয়েছিল, এই কারণে অনেকে শিষ্যদের কাছ থেকে প্রেম ও শান্তির বার্তা শোনার সুযোগ পেয়েছিল। শিষ্যরা যদিও তাড়িত হয়েছিলেন, কিন্তু তারা সমস্ত জায়গায় সুসমাচার প্রচার করার জন্য সেই শান্তিপূর্ণ সময়কালের যথাসম্ভব সদ্ব্যবহার করেছিলেন।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১৮-২১.
যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ হয়ে উঠেছিল
৯, ১০. কিছু বিষয় কী, যেগুলোর কারণে শিষ্যদের জন্য ভ্রমণ করা আরও সহজ হয়ে উঠেছিল?
৯ রোমীয়রা ৮০,০০০ কিলোমিটারেরও (৫০,০০০ মাইলেরও) বেশি রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল, যেগুলো সাম্রাজ্যের প্রায় প্রতিটা অংশের সঙ্গে যুক্ত ছিল। শক্তিশালী রোমীয় সেনাবাহিনী তাদের এলাকা সুরক্ষা করার জন্য এবং লোকেদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসব রাস্তা দিয়ে দ্রুত যেকোনো জায়গায় যেতে পারত। বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করার জন্য খ্রিস্টানরা বনাঞ্চল, মরুভূমি ও পাহাড়পর্বতের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হওয়া এই রাস্তাগুলো দিয়ে যাতায়াত করত।
১০ রাস্তাঘাট ছাড়াও, রোমীয়রা জলপথে যাতায়াত করত। তারা পাল তোলা বড়ো বড়ো নৌকায় করে নদী, খাল ও সমুদ্রের ওপর দিয়ে যাত্রা করে সাম্রাজ্যজুড়ে শত শত বন্দরে যেত। আসলে, রোমীয়রা ৯০০-রও বেশি সমুদ্রপথ ব্যবহার করত। তাই, খ্রিস্টানরা সেইসমস্ত পথ ব্যবহার করে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করতে পারত। বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র যেমন, পাসপোর্ট প্রয়োজন ছিল না। এ ছাড়া, রাস্তাঘাটে ডাকাতের উপদ্রব কম ছিল কারণ তারা জানত, রোমীয়রা অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেয়। আর রোমীয় নৌবাহিনী যেহেতু সমুদ্রপথে পাহারা দিত, তাই ভ্রমণকারীদের জলদস্যুর আক্রমণের ভয় ছিল না। যদিও বাইবেল জানায়, পৌল নৌকাভঙ্গের শিকার হয়েছিলেন আর অন্যান্য সময়ে সমুদ্রপথে ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে বাইবেল জানায় না। তাই, স্থলপথ ও জলপথ, দুটোই সাধারণত নিরাপদ ছিল।—২ করি. ১১:২৫, ২৬.
গ্রিক ভাষা
১১. কেন শিষ্যরা গ্রিক ভাষা ব্যবহার করতেন?
১১ রোমীয়রা যে-সমস্ত জায়গায় শাসন করত, সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গ্রিক শাসক মহান আলেকজান্ডার বহুবছর আগে জয় করেছিলেন। তাই, সেইসমস্ত জায়গার লোকেরা সাধারণ গ্রিক ভাষা শিখেছিল, যেটা কইনে গ্রিক হিসেবে পরিচিত। ফল স্বরূপ, শিষ্যরা তাদের কাছে সেই ভাষায় প্রচার করতে পেরেছিলেন। আর শিষ্যরা এমনকী সেই লোকেদের কাছে ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করতে পারতেন, কারণ এই শাস্ত্র গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। সেপ্টুয়াজিন্ট বলে অভিহিত এই অনুবাদ সম্বন্ধে অনেকে জানতেন আর মিশরে বসবাসকারী যিহুদিরা এটি অনুবাদ করেছিল। বাইবেলের বাকি অংশ লেখার জন্য বাইবেল লেখকরা গ্রিক ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। গ্রিক ভাষায় বিশাল শব্দভাণ্ডার ছিল। তাই, বাইবেলের গভীর সত্যগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য এটা ছিল এক উপযুক্ত ভাষা। আর গ্রিক ভাষার কারণে মণ্ডলীগুলো পরস্পরের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে ও একতাবদ্ধ থাকতে পেরেছিল।
১২. (ক) কোডেক্স কী আর কেন গুটানো পুস্তকের চেয়ে কোডেক্স ব্যবহার করা আরও সহজ ছিল? (খ) কখন অধিকাংশ খ্রিস্টান বই ব্যবহার করতে শুরু করেছিল?
১২ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা বাইবেল থেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কী ব্যবহার করত? প্রথমদিকে তারা গুটানো পুস্তক ব্যবহার করত। কিন্তু, গুটানো পুস্তকগুলো ব্যবহার করা ও বহন করা সহজ ছিল না। একটা শাস্ত্রপদ খুঁজে বের করার জন্য খ্রিস্টানদের প্রতি বার সেই গুটানো পুস্তকটা খুলতে হতো আর পরে আবার সেটাকে গুটিয়ে রাখতে হতো। সাধারণত গুটানো পুস্তকগুলোর কেবল এক দিকে লেখা থাকত। শুধু মথির সুসমাচার লেখার জন্যই একটা পুরো গুটানো পুস্তক ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপর, লোকেরা কোডেক্স বা হাতে লেখা পুঁথি ব্যবহার করতে শুরু করেছিল, যা বর্তমান সময়ের বইয়ের আদিরূপ। ফলে একজন পাঠক একটা শাস্ত্রপদ খুঁজে বের করার জন্য খুব সহজেই বই খুলে পৃষ্ঠা উলটাতে পারতেন। ইতিহাসবিদরা বলেন, খ্রিস্টানরা দ্রুত বই ব্যবহার করতে শুরু করেছিল আর প্রথম শতাব্দীর পর তাদের মধ্যে অধিকাংশের কাছেই বই ছিল।
রোমীয় আইন
১৩, ১৪. (ক) একজন রোমীয় নাগরিক হওয়ায় পৌল কীভাবে সুরক্ষা লাভ করেছিলেন? (খ) কীভাবে খ্রিস্টানরা রোমীয় আইন থেকে উপকৃত হয়েছিল?
১৩ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা রোমীয় আইন থেকে উপকৃত হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পৌল একজন রোমীয় নাগরিক ছিলেন আর ভ্রমণ করার সময় সেই দেশের আইন প্রায়ই তার সুরক্ষা করেছিল। রোমীয় সৈন্যরা যখন পৌলকে যিরূশালেমে গ্রেপ্তার করেছিল এবং তাকে কোড়া মারতে যাচ্ছিল, তখন তিনি তাদের বলেছিলেন, তিনি একজন রোমীয় নাগরিক। তিনি শতপতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, উপযুক্ত বিচার করা না হলে একজন রোমীয় নাগরিককে কোড়া মারা যাবে না। তাই, “যাহারা তাঁহার পরীক্ষা করিতে উদ্যত ছিল, তাহারা তখনই তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল; আর [পৌল] যে রোমীয়, তাহা জানিয়া, ও তাঁহাকে বাঁধিয়াছিলেন বলিয়া, সহস্রপতিও ভীত হইলেন।”—প্রেরিত ২২:২৫-২৯.
১৪ পৌল একজন রোমীয় নাগরিক হওয়ায় ফিলিপীতে তার সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয়েছিল, সেটার উপর প্রভাব ফেলেছিল। (প্রেরিত ১৬:৩৫-৪০) আর ইফিষের এক উত্তেজিত জনতা যখন কয়েক জন খ্রিস্টানের ক্ষতি করতে চেয়েছিল, তখন একজন সরকারি কর্মকর্তা সেই জনতাকে শান্ত করেছিলেন এবং এই কথা বলে সতর্ক করেছিলেন, তারা রোমীয় আইন লঙ্ঘন করছে। (প্রেরিত ১৯:৩৫-৪১) পরবর্তী সময়ে, কৈসরিয়াতে থাকাকালীন পৌল রোমীয় সম্রাটের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিজের অধিকার দাবি করেছিলেন। সেখানে তিনি সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করেছিলেন। (প্রেরিত ২৫:৮-১২) তাই, খ্রিস্টানরা ‘সুসমাচারের পক্ষসমর্থন ও প্রতিপাদন’ অর্থাৎ তাদের প্রচার করার অধিকার রক্ষার জন্য রোমীয় আইন ব্যবহার করত।—ফিলি. ১:৭.
যিহুদিরা বিভিন্ন দেশে বাস করত
১৫. প্রথম শতাব্দীতে অনেক যিহুদি কোথায় বাস করত?
১৫ আরেকটা বিষয় হয়তো পুরো পৃথিবীতে প্রচার করার ব্যাপারে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সাহায্য করেছিল। সেই সময়ে যিহুদিরা কেবল ইস্রায়েলে নয় বরং বিভিন্ন দেশে বাস করত। কেন? কারণ শত শত বছর আগে, যিহুদিদের অশূর দেশে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর এর বেশ কয়েক বছর পর অন্যান্য যিহুদিকে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে, পারসিকরা বাবিলের উপর রাজত্ব করার সময় যিহুদিরা পারস্য সাম্রাজ্যের সমস্ত জায়গায় বসবাস করত। (ইষ্টের ৯:৩০) প্রথম শতাব্দীতে যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিহুদিরা রোমীয় সাম্রাজ্যের সর্বত্র যেমন, মিশর এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য জায়গায় আর সেইসঙ্গে গ্রিস, এশিয়া মাইনর (তুরস্ক) ও মেসোপটেমিয়ায় (ইরাক) বাস করত। মনে করা হয়, সেই সাম্রাজ্যে ছয় কোটি লোক বাস করত আর তাদের মধ্যে চল্লিশ লক্ষেরও বেশি যিহুদি ছিল। যিহুদিরা যদিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, কিন্তু তারা নিজেদের ধর্মই পালন করত।—মথি ২৩:১৫.
১৬, ১৭. (ক) যেহেতু যিহুদিরা অনেক দেশে বাস করত, তাই ন-যিহুদি ব্যক্তিরা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল? (খ) খ্রিস্টানরা কীভাবে যিহুদিদের উদাহরণ অনুসরণ করেছিল?
১৬ যেহেতু যিহুদিরা বিভিন্ন দেশে বাস করত, তাই অনেক ন-যিহুদি ব্যক্তি ইব্রীয় শাস্ত্র ও সেইসঙ্গে যিহুদিদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জানত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা এটা জানতে পেরেছিল যে, সত্য ঈশ্বর একজন আর যারা তাঁর সেবা করে, তাদেরকে অবশ্যই তাঁর আইনের বাধ্য হতে হবে। তারা জানতে পেরেছিল, ইব্রীয় শাস্ত্র ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে আর এর মধ্যে মশীহ সম্বন্ধে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। (লূক ২৪:৪৪) তাই, খ্রিস্টানরা যখন সুসমাচার প্রচার করেছিল, তখন যিহুদি ও ন-যিহুদি উভয় প্রকার লোকেদের খ্রিস্টানদের প্রচারিত বার্তা সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা ছিল। পৌল এমন লোকেদের খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন, যারা সুসমাচার শুনবে। তিনি প্রায়ই সমাজগৃহে অর্থাৎ যিহুদিদের উপাসনাস্থলে যেতেন আর তাদের সঙ্গে যুক্তি করার জন্য শাস্ত্র ব্যবহার করতেন।—পড়ুন, প্রেরিত ১৭:১, ২.
১৭ যিহুদিরা উপাসনা করার জন্য নিয়মিতভাবে সমাজগৃহে অথবা খোলা জায়গায় মিলিত হতো। তারা গান গাইত, প্রার্থনা করত এবং শাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করত। খ্রিস্টানরা তাদের উদাহরণ অনুসরণ করেছিল আর বর্তমানে আমাদের মণ্ডলীগুলোতে আমরাও একই বিষয় অনুসরণ করে থাকি।
যিহোবা তাদের প্রচার কাজে সাহায্য করেছিলেন
১৮, ১৯. (ক) কীভাবে প্রথম শতাব্দীর পরিস্থিতি খ্রিস্টানদেরকে তাদের কাজ করতে সাহায্য করেছিল? (খ) এই প্রবন্ধ পড়ে যিহোবা সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?
১৮ ইতিহাসে প্রথম শতাব্দী ছিল এক অদ্বিতীয় যুগ। সেইসময়ে রোমীয় সাম্রাজ্যে শান্তি ছিল, অনেক লোক একই ভাষায় কথা বলতে পারত আর দেশের আইন লোকেদের সুরক্ষা করত। এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা সহজ ছিল আর অনেক দেশের লোকেরা যিহুদিদের সম্বন্ধে এবং ইব্রীয় শাস্ত্র সম্বন্ধে জানত। এই বিষয়গুলো খ্রিস্টানদেরকে ক্রমাগত তাদের ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করেছিল।
১৯ যিশু পৃথিবীতে আসার প্রায় ৪০০ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো লিখেছিলেন, লোকেদের পক্ষে সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে জানা অনেক কঠিন আর তাই তাঁর সম্বন্ধে জগতের সবাইকে জানানো অসম্ভব। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন: “যাহা মনুষ্যের অসাধ্য, তাহা ঈশ্বরের সাধ্য।” (লূক ১৮:২৭) তাই এটা স্পষ্ট যে, যিহোবার সাহায্যের কারণেই প্রচার কাজ করা সম্ভবপর হয়েছিল। তিনি চান যেন ‘সমুদয় জাতির’ লোক সুসমাচার শুনতে পারে এবং তাঁর সম্বন্ধে জানতে পারে। (মথি ২৮:১৯) পরের প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করা হবে, কীভাবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে।