যিশুর নম্রতা এবং কোমলতা অনুকরণ করুন
“খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” —১ পিতর ২:২১.
১. যিশুকে অনুকরণ করলে কেন আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হব?
আমরা সাধারণত এমন লোকেদের অনুকরণ করার চেষ্টা করি, যাদেরকে আমরা সম্মান করি। সমস্ত মানুষের মধ্যে যিশু খ্রিস্টই হলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি, যাঁকে আমরা অনুকরণ করতে পারি। কেন? যিশু একবার বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) এর কারণ হল যিশু তাঁর পিতার ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছেন। তাই, আমরা যখন যিশুর বিষয়ে শিখি, তখন আসলে যিহোবা সম্বন্ধে শিখি। আর আমরা যখন যিশুকে অনুকরণ করি, তখন নিখিলবিশ্বের সর্বমহান ব্যক্তি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই। কত বড়ো এক সম্মান!
২, ৩. (ক) কেন যিহোবা আমাদেরকে যিশুর জীবনী সম্বন্ধে বিস্তারিত জানিয়েছেন আর ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? (খ) এই প্রবন্ধে এবং পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
২ বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের যিশুর জীবনী সম্বন্ধে বিস্তারিত জানিয়েছেন। কেন? কারণ আমাদের ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর পুত্র সম্বন্ধে জেনে তাঁকে যতটা সম্ভব অনুকরণ করতে পারি। (পড়ুন, ১ পিতর ২:২১.) বাইবেলে যিশু আমাদের জন্য যে-উদাহরণ রেখে গিয়েছেন, সেটাকে পদচিহ্নের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এর অর্থ কী? যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর পুত্রের পদচিহ্ন অনুসরণ করি অর্থাৎ তিনি যা-কিছু করেছেন, সেগুলো অনুকরণ করি। অবশ্য, যিশু ছিলেন সিদ্ধ ব্যক্তি, তাই যিহোবা আমাদের কাছ থেকে এইরকমটা আশা করেন না যে, আমরা তাঁর পুত্রকে একেবারে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারব। এর পরিবর্তে, ঈশ্বর চান যেন আমরা যিশুকে অনুকরণ করার জন্য সর্বোত্তমটা করি।
৩ আসুন আমরা যিশুর কিছু অপূর্ব গুণ পরীক্ষা করে দেখি। এই প্রবন্ধে আমরা তাঁর নম্রতা এবং কোমলতা নিয়ে আলোচনা করব। পরের প্রবন্ধে আমরা তাঁর সাহস এবং বিচক্ষণতা নিয়ে আলোচনা করব। প্রতিটা গুণ সম্বন্ধে আমরা তিনটে প্রশ্নের উত্তর দেব: এর অর্থ কী? কীভাবে যিশু এই গুণ দেখিয়েছেন? কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?
যিশু হলেন একজন নম্র ব্যক্তি
৪. নম্র হওয়ার অর্থ কী?
৪ নম্রতা কী? গর্বিতমনা অনেক ব্যক্তি মনে করে, নম্রতা হল দুর্বলতার অথবা আস্থাহীনতার এক চিহ্ন। কিন্তু, সত্যিই কি তা-ই? আসলে, নম্র হওয়ার জন্য আমাদের দৃঢ় এবং সাহসী হতে হবে। নম্রতা হল অহংকার ও উদ্ধত মনোভাবের বিপরীত। নম্র হতে হলে, প্রথমে আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে সঠিক মনোভাব বজায় রাখতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, একটা বাইবেল অভিধান বলে: “ঈশ্বরের সামনে আমরা আসলে কতটা নগণ্য, তা বুঝতে পারাই হল নম্রতা।” এ ছাড়া, আমরা যদি নম্র হয়ে থাকি, তাহলে কখনো এইরকম মনে করব না, আমরা অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ। (রোমীয় ১২:৩; ফিলি. ২:৩) অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে এই গুণ দেখানো সহজ নয়। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার মহত্ত্ব নিয়ে ধ্যান করি এবং যিশুকে অনুকরণ করি, তাহলে নম্র হতে শিখব।
৫, ৬. (ক) প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল কে? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে মীখায়েল এক নম্র মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
৫ কীভাবে যিশু নম্রতা দেখিয়েছেন? ঈশ্বরের পুত্র সবসময়ই নম্রতা দেখিয়েছেন, হোক তা স্বর্গে শক্তিশালী এক স্বর্গদূত হিসেবে অথবা পৃথিবীতে একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে। আসুন আমরা কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করি।
৬ তাঁর মনোভাব। পৃথিবীতে আসার আগে যিশুর যে-জীবন ছিল, সেই সম্বন্ধে আমরা যিহূদা বই থেকে জানতে পারি। (পড়ুন, যিহূদা ৯.) প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল অর্থাৎ যিশু “মোশির দেহের বিষয়ে দিয়াবলের সহিত বাদানুবাদ করিলেন।” মোশি মারা যাওয়ার পর, যিহোবা তার দেহ এমন জায়গায় রেখেছিলেন, যাতে কোনো মানুষ তা খুঁজে না পায়। (দ্বিতীয়. ৩৪:৫, ৬) দিয়াবল হয়তো মিথ্যা উপাসনার জন্য মোশির দেহ ব্যবহার করার ব্যাপারে ইস্রায়েলীয়দের প্রলোভন দেখাতে চেয়েছিল। দিয়াবল যে-মন্দ বিষয় করার চেষ্টাই করুক না কেন, মীখায়েল সাহসের সঙ্গে তাকে বাধা দিয়েছিলেন। একটা তথ্যগ্রন্থ বলে, “বাদানুবাদ” শব্দটাকে “এক বৈধ বাদানুবাদ” হিসেবেও বর্ণনা করা যেতে পারে। এ ছাড়া, এই শব্দ এও নির্দেশ করতে পারে যে, “মোশির দেহ নিয়ে যাওয়ার ‘অধিকার দিয়াবলের আছে কি না,’ সেই ব্যাপারে মীখায়েল ‘প্রশ্ন তুলেছিলেন।’” তবে, প্রধান স্বর্গদূত জানতেন, তাঁর ক্ষমতা সীমিত। তাই তিনি সর্বমহান বিচারক যিহোবার কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন, একমাত্র যাঁরই শয়তানকে বিচার করার অধিকার রয়েছে। যিশু কী এক নম্র মনোভাবই-না দেখিয়েছিলেন!
৭. কীভাবে যিশু তাঁর কথা এবং কাজের মাধ্যমে নম্রতা দেখিয়েছেন?
৭ যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখনও তিনি তাঁর কথা এবং কাজের মাধ্যমে নম্রতা দেখিয়েছেন। তাঁর কথাবার্তা। যিশু কখনো অন্যদের কাছ থেকে অযথা মনোযোগ পেতে চাইতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি চাইতেন যেন তাঁর পিতা সমস্ত গৌরব লাভ করেন। (মার্ক ১০:১৭, ১৮; যোহন ৭:১৬) যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে কখনো এমনভাবে কথা বলতেন না, যার ফলে তারা নিজেদের নির্বোধ অথবা ছোটো বলে মনে করত। বরং, তিনি তাদের প্রতি সম্মান দেখাতেন এবং তাদের উত্তম গুণাবলির প্রশংসা করার মাধ্যমে তাদের প্রতি আস্থা দেখাতেন। (লূক ২২:৩১, ৩২; যোহন ১:৪৭) তাঁর কাজ। যিশু এক সাদাসিধে জীবন বেছে নিয়েছিলেন বলে তাঁর বেশি বস্তুগত বিষয় ছিল না। (মথি ৮:২০) তিনি এমন নম্র কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যা অন্যেরা করতে ইচ্ছুক ছিল না। (যোহন ১৩:৩-১৫) এ ছাড়া, বাধ্যতা দেখানোর মাধ্যমেও তিনি নম্রতার এক নিখুঁত উদাহরণস্থাপন করেছেন। (ফিলি. ২:৫-৮) গর্বিত লোকেরা সাধারণত অন্যদের বাধ্য হতে পছন্দ করে না। কিন্তু এর বিপরীতে যিশু যিহোবার সমস্ত কথা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন, এমনকী “মৃত্যু পর্য্যন্ত” বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন। এটা স্পষ্ট, মনুষ্যপুত্র যিশু “নম্রচিত্ত” ছিলেন।—মথি ১১:২৯.
যিশুর নম্রতা অনুকরণ করুন
৮, ৯. কীভাবে আমরা নম্রতা দেখাতে পারি?
৮ কীভাবে আমরা যিশুর নম্রতা অনুকরণ করতে পারি? আমাদের মনোভাব। আমরা যখন নম্র মনোভাব বজায় রাখি, তখন আমরা বুঝতে পারি, আমাদের ক্ষমতা সীমিত। তাই, আমরা জানি, অন্যদের বিচার করার অধিকার আমাদের নেই। আমরা তাদের সমালোচনা করব না অথবা তাদের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ করব না। (লূক ৬:৩৭; যাকোব ৪:১২) নম্রতা আমাদের “অতি ধার্ম্মিক” না হতে সাহায্য করে। এর অর্থ হল, আমরা এইরকমটা মনে করব না, আমরা সেই ব্যক্তিদের থেকে আরও শ্রেষ্ঠ, যাদের আমাদের মতো একই দক্ষতা অথবা সুযোগ নেই। (উপ. ৭:১৬) নম্র প্রাচীনরা কখনো মনে করে না, তারা তাদের ভাই-বোনদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বরং, এই প্রেমময় পালকরা ‘অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে’ অর্থাৎ তারা অন্যদেরকে নিজেদের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।—ফিলি. ২:৩; লূক ৯:৪৮.
৯ ভাই, ডব্লিউ. জে. থর্নের কথা বিবেচনা করুন, যিনি ১৮৯৪ সাল থেকে একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করে চলেছিলেন। অনেক বছর পর, তাকে নিউ ইয়র্কের দূরবর্তী একটা খামারে মুরগি পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যখনই তিনি মনে করতেন, তার আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করা উচিত, তখন ভাই থর্ন মনে মনে বলতেন: “তুমি নগণ্য ধূলিমাত্র। গর্ব করার মতো তোমার কী-ই-বা আছে?” (পড়ুন, যিশাইয় ৪০:১২-১৫.) কী এক নম্র মনোভাব!
১০. কীভাবে আমরা আমাদের কথায় ও কাজে নম্রতা দেখাতে পারি?
১০ আমাদের কথাবার্তা। আমরা যদি সত্যিই নম্র হয়ে থাকি, তাহলে তা অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রকাশ পাবে। (লূক ৬:৪৫) আমরা যখন তাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন নিজেদের বিশেষ সুযোগগুলোর প্রতি এবং আমরা যা-কিছু করেছি, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করাব না। (হিতো. ২৭:২) এর পরিবর্তে, আমরা আমাদের ভাই ও বোনদের ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করব এবং তাদের উত্তম গুণ ও দক্ষতার প্রতি মনোযোগ দেব। (হিতো. ১৫:২৩) আমাদের কাজ। নম্র খ্রিস্টানরা এই জগতে বিখ্যাত অথবা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করে না। এর বিপরীতে, তারা এক সাদাসিধে জীবনযাপন বেছে নেয়, এমনকী নম্র কাজ করে, যাতে তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যিহোবাকে সেবা করতে পারে। (১ তীম. ৬:৬, ৮) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা নম্রতা দেখাতে পারি। মণ্ডলীতে “নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী” হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই নম্র হতে হবে এবং যিহোবার সংগঠনের নির্দেশনা মেনে নিতে ও তা অনুসরণ করতে হবে।—ইব্রীয় ১৩:১৭.
যিশু হলেন একজন কোমল ব্যক্তি
১১. কোমলতা কী?
১১ কোমলতা কী? “কোমলতা” শব্দটা মৃদু এবং যত্নশীল অনুভূতিকে বোঝায়। কোমলতা হচ্ছে প্রেমের এক প্রকাশ আর এটা সমবেদনা ও করুণার সমরূপ। (২ করি. ১:৩; ফিলি. ১:৮) বাইবেলের একটা তথ্যগ্রন্থ বলে, কোমলতা দেখানো বলতে যাদের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের জন্য দুঃখ বোধ করার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এটা বলে, কোমল অনুভূতির অর্থ হল, আমরা তাদের জন্য “এতটা চিন্তিত যে,” কোনো কিছু করার মাধ্যমে আমরা তাদের “সাহায্য করি,” যাতে তাদের জীবন আরও উন্নত হয়। কোমলতা হচ্ছে এমন একটা গুণ, যা একজন ব্যক্তিকে অন্যদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে অনুপ্রাণিত করে।
১২. কী দেখায় যে, যিশু অন্যদের জন্য কোমল সমবেদনা অনুভব করেছিলেন আর তাঁর কোমলতা তাঁকে কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল?
১২ কীভাবে যিশু কোমলতা দেখিয়েছিলেন? তাঁর কোমল অনুভূতি ও কাজ। যিশু অন্যদের জন্য কোমল সমবেদনা অনুভব করেছিলেন। লাসার মারা যাওয়ার কারণে তিনি যখন মরিয়ম ও অন্যদের কাঁদতে দেখেছিলেন, তখন তাদের সঙ্গে যিশুও কেঁদেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১১:৩২-৩৫.) এরপর, তিনি সেই একই সমবেদনা দেখিয়ে লাসারকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, যে-সমবেদনার কারণে তিনি একজন বিধবার ছেলেকে পুনরুত্থিত করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। (লূক ৭:১১-১৫; যোহন ১১:৩৮-৪৪) এই কোমল কাজ হয়তো লাসারকে স্বর্গে জীবন লাভের এক সুযোগ দিয়েছিল। এর আগে, যিশু তাঁর কাছে আসা বিস্তর লোকের প্রতি “কোমল স্নেহ অনুভব করেছিলেন।” তাঁর কোমল সমবেদনার কারণে তিনি ‘তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিয়াছিলেন।’ (মার্ক ৬:৩৪; কিংডম ইন্টারলিনিয়ার) এই বিষয়টা এমন অনেকের জীবনকে পরিবর্তিত করে দিয়েছিল, যারা যিশুর শিক্ষাগুলো কাজে লাগিয়েছিল! যিশুর কোমলতা কেবল এক অনুভূতির চেয়ে আরও বেশি কিছু। তাঁর কোমলতা তাঁকে যাদের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্যও অনুপ্রাণিত করেছিল।—মথি ১৫:৩২-৩৮; ২০:২৯-৩৪; মার্ক ১:৪০-৪২.
১৩. কীভাবে যিশু অন্যদের সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলতেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৩ তাঁর কোমল কথাবার্তা। যিশুর সমবেদনা তাঁকে অন্যদের সঙ্গে, বিশেষভাবে নিপীড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রেরিত মথি, যিশাইয় বই থেকে উদ্ধৃত করে যিশু সম্বন্ধে বলেছিলেন। যিশাইয় এই কথা বলেছিলেন: “তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না; সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না।” (যিশা. ৪২:৩; মথি ১২:২০) এর অর্থ কী? যিশু লোকেদের সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলতেন না অথবা খারাপ আচরণ করতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি এমনভাবে কথা বলতেন, যা তাদেরকে সতেজ করত। তিনি “ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের” কাছে আশার বার্তা প্রচার করতেন। (যিশা. ৬১:১) তিনি “পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত” লোকেদের তাঁর কাছে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যাতে তারা “বিশ্রাম” বা সতেজতা পেতে পারে। (মথি ১১:২৮-৩০) তিনি তাঁর শিষ্যদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁর সমস্ত উপাসকের প্রতি ঈশ্বরের কোমল চিন্তা রয়েছে, যাদের অন্তর্ভুক্ত এমন ‘ক্ষুদ্রগণ’ অথবা সেই ব্যক্তিরা, যাদেরকে জগৎ তুচ্ছ বলে মনে করত।—মথি ১৮:১২-১৪; লূক ১২:৬, ৭.
যিশুর কোমলতা অনুকরণ করুন
১৪. কীভাবে আমরা অন্যদের প্রতি কোমল অনুভূতি দেখাতে পারি?
১৪ কীভাবে আমরা যিশুর কোমলতা অনুকরণ করতে পারি? আমাদের কোমল অনুভূতি। বাইবেল আমাদের কোমল সমবেদনা দেখানোর ওপর কাজ করতে বলে, এমনকী তা যদি আমাদের বৈশিষ্ট্য না-ও হয়ে থাকে। এই অনুভূতিগুলো ‘নূতন মনুষ্য’ বা ব্যক্তিত্বের অংশ, যা সমস্ত খ্রিস্টান পরিধান করুক বলে যিহোবা চান। (পড়ুন, কলসীয় ৩:৯, ১০, ১২.) কীভাবে আপনি কোমল অনুভূতি দেখাতে পারেন? বাইবেল বলে: “তোমরা প্রশস্ত হও।” (২ করি. ৬:১১-১৩) একজন ব্যক্তি যখন আপনার কাছে তার অনুভূতির কথা এবং উদ্বিগ্নতার বিষয়ে বলেন, তখন তা মন দিয়ে শুনুন। (যাকোব ১:১৯) আপনার কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যদি তার পরিস্থিতিতে থাকতাম, তাহলে আমার কেমন লাগত? আমার কীসের প্রয়োজন হতো?’—১ পিতর ৩:৮.
১৫. সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি, যারা হয়তো শোকার্ত অথবা দুর্দশাগ্রস্ত?
১৫ আমাদের কোমল কাজ। কোমলতা আমাদেরকে অন্যদের, বিশেষভাবে শোকার্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করবে। কীভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি? রোমীয় ১২:১৫ পদ বলে: “যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর।” বেশিরভাগ সময়ই লোকেদের সমাধানের চেয়ে বরং সান্ত্বনার প্রয়োজন। তাদের এমন একজন বন্ধু প্রয়োজন, যিনি তাদের প্রতি আগ্রহী এবং তাদের কথা মন দিয়ে শোনেন। একজন বোন, যিনি তার মেয়ে মারা যাওয়ার পর ভাই-বোনদের কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করেন, তিনি বলেন, “ভাই-বোনেরা যখন আমাকে দেখতে এসেছিল এবং কোনো কথা না বলে আমার সঙ্গে কেবল কেঁদেছিল, তখন আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম।” অন্যদের সাহায্য করার জন্য ব্যাবহারিক কাজ করার মাধ্যমেও আমরা কোমলতা দেখাতে পারি। হতে পারে এমন কোনো বিধবা রয়েছেন, যার হয়তো বাড়ি মেরামত করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। কিংবা এমন কোনো বয়স্ক খ্রিস্টান থাকতে পারেন, যার সভাতে, প্রচারে অথবা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। দয়া দেখিয়ে করা এমনকী এক সামান্য কাজও একজন ব্যক্তির জীবনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। (১ যোহন ৩:১৭, ১৮) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যতটা সম্ভব সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে আমরা অন্যদের প্রতি কোমলতা দেখাতে পারি। আন্তরিক লোকেদের জীবনে প্রভাব ফেলার জন্য এটা হল সর্বোত্তম উপায়!
১৬. বিষণ্ণ ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা কী বলতে পারি?
১৬ আমাদের কোমল কথাবার্তা। আমাদের কোমল অনুভূতি আমাদেরকে ‘ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা করিতে [‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলতে,’ NW]’ অনুপ্রাণিত করে। (১ থিষল. ৫:১৪) তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা কী বলতে পারি? আমরা তাদের বলতে পারি, তাদের সম্বন্ধে আমরা কতটা চিন্তা করি। আমরা তাদের প্রশংসা করতে এবং তাদের ইতিবাচক গুণ ও দক্ষতা খুঁজে বের করার জন্য সাহায্য করতে পারি। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে পারি, যেহেতু যিহোবা তাদেরকে সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন, তাই তারা অবশ্যই তাঁর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। (যোহন ৬:৪৪) আমরা তাদের আশ্বাস দিতে পারি, যিহোবা তাঁর সেই দাসদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন, যারা ‘ভগ্নচিত্ত’ অথবা ‘চূর্ণমনা।’ (গীত. ৩৪:১৮) আমাদের কোমল কথাবার্তা সত্যিই সেই ব্যক্তিদের সতেজ করতে পারে, যাদের সান্ত্বনার প্রয়োজন।—হিতো. ১৬:২৪.
১৭, ১৮. (ক) প্রাচীনরা তাঁর মেষদের প্রতি কেমন আচরণ করুক বলে যিহোবা চান? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব?
১৭ প্রাচীন ভাইয়েরা, যিহোবা চান যেন আপনারা তাঁর মেষদের সঙ্গে কোমল আচরণ করেন। (প্রেরিত ২০:২৮, ২৯) মনে রাখবেন, তাঁর মেষদের শিক্ষা দেওয়ার, উৎসাহিত করার এবং সতেজতা প্রদান করার দায়িত্ব আপনাদের। (যিশা. ৩২:১, ২; ১ পিতর ৫:২-৪) তাই, একজন কোমল সমবেদনাময় প্রাচীন তার ভাই-বোনদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন না অর্থাৎ তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত করার ব্যাপারে চাপ দেওয়ার জন্য তিনি নিয়ম তৈরি করবেন না এবং তাদেরকে দোষী বোধ করতেও পরিচালিত করবেন না। এর পরিবর্তে, একজন প্রাচীন চান যেন তার ভাই ও বোনেরা প্রকৃতই সুখী হয় আর সেইসঙ্গে তিনি এও বিশ্বাস করেন, যিহোবার প্রতি প্রেম ঈশ্বরকে সর্বোত্তমটা দেওয়ার জন্য তাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।—মথি ২২:৩৭.
১৮ আমরা যখন যিশুর নম্রতা এবং কোমলতা নিয়ে ধ্যান করব, তখন আমরা তাঁকে অনুকরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত হব। পরের প্রবন্ধে, আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আমরা যিশুর সাহস ও বিচক্ষণতা অনুকরণ করতে পারি।