‘ঈশ্বরের পরিচয় পাইবার’ পর—এখন কী করবেন?
‘ঈশ্বরের পরিচয় পাইবার’ পর—এখন কী করবেন?
“তোমরা . . . ঈশ্বরের পরিচয় পাইয়াছ।”—গালা. ৪:৮, ৯.
আপনি কী উত্তর দেবেন?
কেন সময়ে সময়ে আধ্যাত্মিক চেকলিস্ট পরীক্ষা করা উপকারজনক?
কেন একজন পরিপক্ক খ্রিস্টানের ক্রমাগত আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করা উচিত?
কেন আমাদের বিশ্বাস ও যিহোবার প্রতি আমাদের উৎর্গীকরণের বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত?
১. উড্ডয়নের আগে একজন পাইলট কেন একটা চেকলিস্ট পরীক্ষা করেন?
যে-পাইলটরা সবচেয়ে সেরা বিমান চালায়, তারা উড্ডয়নের আগে এমন একটা চেকলিস্ট পরীক্ষা করে, যেটার মধ্যে ৩০-টারও বেশি বিষয় রয়েছে। প্রতি বার উড্ডয়নের আগে তারা যদি সতর্কতার সঙ্গে সেই চেকলিস্ট অনুসরণ না করে, তাহলে পাইলটরা মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়। আপনি কি জানেন যে, বিশেষভাবে কোন ধরনের পাইলটদের প্রতি বার চেকলিস্ট অনুসরণ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়? সবচেয়ে অভিজ্ঞ পাইলটদের! একজন দক্ষ পাইলট সহজেই আত্মতুষ্টির মনোভাব গড়ে তুলতে পারেন আর এর ফলে উড্ডয়নের আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হতে পারেন।
২. খ্রিস্টানদেরকে কোন চেকলিস্টের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে?
২ একজন সতর্ক পাইলটের মতো আপনিও এক ধরনের চেকলিস্ট ব্যবহার করতে পারেন এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য যে, আপনার বিশ্বাস যেন সেই সময় দুর্বল হয়ে না পড়ে, যখন এটা আপনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আপনি নতুন বাপ্তাইজিত হয়েছেন অথবা অনেক বছর ধরে ঈশ্বরের সেবা করছেন, যা-ই হোক না কেন, নিয়মিতভাবে আপনার বিশ্বাসের গভীরতা এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভক্তি পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। আপনি যদি নিয়মিতভাবে এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে সেটা পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তা আপনাকে আধ্যাত্মিক ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করতে পারে। বাইবেল আমাদের এই সাবধানবাণী প্রদান করে: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।”—১ করি. ১০:১২.
৩. গালাতিয়ার খ্রিস্টানদের কী করার প্রয়োজন ছিল?
৩ গালাতিয়ার খ্রিস্টানদের, তাদের বিশ্বাসের গভীরতা পরীক্ষা করার এবং তাদের আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করার প্রয়োজন ছিল। যিশু তাঁর বলিদানের মাধ্যমে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এমন ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে অসাধারণ এক উপায়ে ঈশ্বরের পরিচয় পাওয়ার বা তাঁকে জানার পথ খুলে দিয়েছিলেন আর তা হল, তারা ঈশ্বরের পুত্র হতে পারে! (গালা. ৪:৯) সবচেয়ে আশীর্বাদপূর্ণ সেই সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য গালাতীয়দের সেই যিহুদিবাদীদের শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করতে হতো, যারা দাবি করেছিল যে, তারা মোশির ব্যবস্থা পালন করে। কিন্তু, মণ্ডলীতে যে-অচ্ছিন্নত্বক্ পরজাতীয়রা ছিল, তারা তো কখনো সেই ব্যবস্থার অধীনেই ছিল না! যিহুদি এবং একইসঙ্গে পরজাতীয় ব্যক্তিদেরও আধ্যাত্মিক উন্নতি করার প্রয়োজন ছিল। এর অন্তর্ভুক্ত হল, এই বিষয়টাও স্বীকার করা যে, তারা মোশির ব্যবস্থার দ্বারা নিজেদের ধার্মিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না।
ঈশ্বরকে জানার প্রাথমিক ধাপগুলো
৪, ৫. গালাতীয়দেরকে পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন আর কীভাবে তা আমাদের জন্যও উপযুক্ত?
৪ গালাতীয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের পরামর্শ একটা উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল: যেকোনো সময়ের সত্য খ্রিস্টানরা যেন বাইবেলের সত্যের প্রাচুর্য থেকে সরে না পড়ে এবং পিছনে ফেলে আসা বিষয়গুলোর দিকে ফিরে না যায়। যিহোবা এই প্রেরিতকে কেবল গালাতীয় মণ্ডলীর লোকেদেরকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর সমস্ত উপাসককেও সুস্থির থাকার জন্য উৎসাহিত করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
৫ আমরা কীভাবে আধ্যাত্মিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়েছি এবং একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছি, তা আমাদের সকলের স্মরণ করে দেখা উচিত। এটা করার জন্য এই দুটো প্রশ্ন বিবেচনা করুন: আপনি কি সেই ধাপগুলো স্মরণ করতে পারেন, যেগুলো একজন বাপ্তিস্মপ্রার্থী হিসেবে যোগ্য হওয়ার জন্য আপনি গ্রহণ করেছিলেন? আপনার কি মনে আছে, কীভাবে আপনি ঈশ্বরকে জানতে পেরেছিলেন এবং ঈশ্বরের জানা লোক হয়েছিলেন আর এভাবে প্রকৃত আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার অনুভূতি লাভ করেছিলেন?
৬. আমরা কোন চেকলিস্ট বিবেচনা করব?
৬ আমরা প্রত্যেকেই মূলত নয়টা ধাপ গ্রহণ করেছি। এই ধাপগুলো আধ্যাত্মিক চেকলিস্টের মতো, যেগুলো “যে-ধাপগুলো বাপ্তিস্ম এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি লাভ করার দিকে পরিচালিত করে” নামক বাক্সে তুলে ধরা হয়েছে। নিয়মিতভাবে এই নয়টা ধাপ স্মরণ করা, আমাদেরকে জগতের বিষয়গুলোর দিকে ফিরে যাওয়ার বিষয়টাকে প্রতিরোধ করতে শক্তিশালী করবে। একজন অভিজ্ঞ ও সেইসঙ্গে সতর্ক পাইলট যেমন উড্ডয়নের আগে চেকলিস্ট পরীক্ষা করার মাধ্যমে সবসময় নিরাপদে বিমান চালান, তেমনই আপনিও আধ্যাত্মিক চেকলিস্ট পরীক্ষা করার মাধ্যমে বিশ্বস্ত সেবায় অটল থাকতে পারবেন।
ঈশ্বরের জানা লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি লাভ করে
৭. আমাদের কোন আদর্শ অনুসরণ করতে হবে এবং কেন?
৭ একজন পাইলটের চেকলিস্ট তাকে মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতি বার উড্ডয়নের আগে তাকে সতর্কতার সঙ্গে একটা তালিকা অনুসরণ করতে হবে। আমাদেরও নিয়মিতভাবে নিজেদের ও সেইসঙ্গে বাপ্তিস্মের সময় থেকে আমরা যে-তালিকা অনুসরণ করে আসছি, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তীমথিয়কে পৌল লিখেছিলেন: “তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারণ কর।” (২ তীম. ১:১৩) সেই ‘নিরাময় বাক্য সমূহ’ ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া যায়। (১ তীম. ৬:৩) ঠিক যেমন একজন শিল্পীর স্কেচ আমাদেরকে ছবি সম্বন্ধে এক সাধারণ ধারণা দেয়, তেমনই ‘সত্যের আদর্শ’ সেই বিষয়গুলো বোঝার ও পালন করার জন্য এক সাধারণ ধারণা প্রদান করে, যেগুলো যিহোবা আমাদের কাছ থেকে চান। তাই, সত্যের আদর্শ আমরা কতটা ভালোভাবে অনুসরণ করছি, তা পরীক্ষা করার জন্য আসুন এখন আমরা সেই ধাপগুলো দেখি, যেগুলো আমাদেরকে বাপ্তিস্মের দিকে পরিচালিত করেছিল।
৮, ৯. (ক) জ্ঞান এবং বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমাদের কী করতে হবে? (খ) আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির মূল্য ও সেইসঙ্গে কেন তা এক চলমান প্রক্রিয়া, তা উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরুন।
৮ আমাদের চেকলিস্টের প্রথমে যে-বিষয়টা রয়েছে, তা হল জ্ঞান নেওয়া। এরপর আমরা বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি। কিন্তু, উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের ক্রমাগত বৃদ্ধি লাভ করা উচিত। (২ থিষল. ১:৩) বৃদ্ধির সঙ্গে উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টা জড়িত। “বৃদ্ধি লাভ করার” অর্থ হল, বেড়ে ওঠা এবং প্রসারিত হওয়া। তাই, বাপ্তিস্মের পর আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে আমাদের বৃদ্ধি থেমে না থাকে।
৯ আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিকে একটা গাছের আক্ষরিক বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করতে পারি। একটা গাছ হয়তো বিশাল আকৃতি ধারণ করতে পারে, বিশেষভাবে যখন এর শিকড় অনেক গভীরে থাকে বা চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, লেবাননের একটা চমৎকার এরস বৃক্ষ উচ্চতায় ১২তলা দালানের সমান বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর শিকড় অত্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে ও অনেক গভীরে যেতে পারে আর এর কাণ্ড ৪০ ফুট (১২ মিটার) পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। (পরম. ৫:১৫) এই ধরনের গাছের দ্রুতহারে ঘটা প্রাথমিক বৃদ্ধি বন্ধ হওয়ার পরও বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। বছরের পর বছর ধরে এর কাণ্ড প্রসারিত হয় ও শিকড় আরও গভীরে যায় এবং আরও ছড়িয়ে পড়ে আর এভাবে এক সুদৃঢ় গাছে পরিণত হয়। খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি সম্বন্ধেও একই কথা বলা যেতে পারে। বাইবেল অধ্যয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা হয়তো আধ্যাত্মিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করি এবং বাপ্তিস্ম নিই। মণ্ডলীর ভাইবোনেরা আনন্দের সঙ্গে আমাদের উন্নতি লক্ষ করে। আমরা হয়তো এমনকী একজন অগ্রগামী হিসেবে যোগ্য হয়ে উঠি অথবা অন্যান্য বিশেষ সুযোগ লাভ করি। পরবর্তী বছরগুলোতে, আমাদের ক্রমাগত আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি হয়তো পরিলক্ষিত হয় না। তা সত্ত্বেও, আমাদের বিশ্বাসে ও জ্ঞানে “সিদ্ধ পুরুষের [“পূর্ণবয়স্ক,” NW] অবস্থা পর্য্যন্ত, খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্য্যন্ত” বৃদ্ধি পেতে হবে। (ইফি. ৪:১৩) এভাবে, আমরা উন্নতি লাভ করি, রূপকভাবে বললে একটা ছোটো অঙ্কুর থেকে পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠি, এক সুদৃঢ় ও সুস্থসবল গাছ হয়ে উঠি।
১০. কেন এমনকী পরিপক্ব খ্রিস্টানদেরও বৃদ্ধি লাভ করা অপরিহার্য?
১০ কিন্তু, আমাদের বৃদ্ধি সেখানেই থেমে থাকা উচিত নয়। আমাদের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত এবং আমাদের বিশ্বাসকে আরও গভীর করতে হবে। এভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্যের ভূমিতে আরও বেশি সুদৃঢ় হই। (হিতো. ১২:৩) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অনেক ভাই ও বোন তা-ই করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাচীনের দায়িত্ব পালন করছেন এমন একজন ভাই বলেছেন যে, তিনি এখনও আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করছেন। তিনি বলেন: “বাইবেলের প্রতি আমার উপলব্ধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি সবসময়ই বিভিন্ন উপায়ে বাইবেলের নীতি ও আইনগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন সুযোগ খুঁজে থাকি। পরিচর্যার প্রতিও আমার উপলব্ধি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি লাভ করুন
১১. কীভাবে আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও ভালোভাবে যিহোবাকে জানতে পারি?
১১ আমাদের বৃদ্ধি লাভের সঙ্গে, আমাদের বন্ধু ও পিতা হিসেবে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়াও জড়িত। তিনি চান যেন আমরা বুঝতে পারি যে, তাঁর কাছে আমরা গ্রহণযোগ্য। তিনি চান যেন আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং আমরা নিরাপদে রয়েছি, ঠিক যেমন কোনো সন্তান যখন তার যত্নশীল বাবা অথবা মায়ের কোলে থাকে, তখন এইরকম ভালোবাসা এবং নিরাপত্তা বোধ করে অথবা আমরা যখন কোনো প্রকৃত ও অনুগত বন্ধুর সঙ্গে থাকি, তখন আমরাও একইরকম অনুভব করি। কিন্তু, আপনি জানেন যে, যিহোবার সঙ্গে এই ধরনের অন্তরঙ্গতা এক রাতের মধ্যেই গড়ে ওঠে না। তাঁকে জানার ও ভালোবাসার জন্য আমাদের অবশ্যই সময়ের প্রয়োজন। তাই, যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য প্রতিদিন তাঁর বাক্য পড়ার ব্যাপারে সময় আলাদা করে রাখার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। এ ছাড়া, প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকার প্রতিটা সংখ্যা ও সেইসঙ্গে বাইবেলভিত্তিক অন্যান্য প্রকাশনা পাঠ করুন।
১২. যিহোবার জানা লোক হওয়ার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন?
১২ ঈশ্বরের বন্ধুরা তাদের আন্তরিক প্রার্থনা এবং উত্তম মেলামেশার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করে। (পড়ুন, মালাখি ৩:১৬.) “তাহাদের বিনতির প্রতি” যিহোবার “কর্ণ আছে।” (১ পিতর ৩:১২) একজন প্রেমময় বাবার মতো, যিহোবা সাহায্যের জন্য করা আমাদের প্রার্থনাপূর্ণ আর্তনাদের প্রতি মনোযোগ দেন। তাই, আমাদের ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিতে’ হবে। (রোমীয় ১২:১২) ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া, আমরা পরিপক্ব খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের অবস্থান বজায় রাখতে পারব না। আমাদের একার পক্ষে এই বিধিব্যবস্থার প্রচণ্ড চাপের সঙ্গে লড়াই করা ও সেগুলো কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব। আমরা যদি প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকা বন্ধ করে দিই, তাহলে আমরা সেই শক্তির ক্রমাগত উৎস থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলি, যা ঈশ্বর জোগাতে ইচ্ছুক এবং সমর্থ। আপনি কি আপনার প্রার্থনার গুণগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট, নাকি এই ক্ষেত্রে আপনার আরও উন্নতি করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?—যির. ১৬:১৯.
১৩. আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করা কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
১৩ যিহোবা এমন সকলের ব্যাপারে সন্তুষ্ট, যারা “তাঁহার শরণ লয়”; তাই, এমনকী ঈশ্বরকে জানার পরও আমরা নিয়মিতভাবে মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা অব্যাহত রাখতে চাই, যারা তাঁকে জানে। (নহূম ১:৭) নিরুৎসাহিতায় পরিপূর্ণ এক জগতে, উৎসাহ প্রদান করে এমন ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করা আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ। এর উপকারগুলো কী? আপনি মণ্ডলীতে এমন ব্যক্তিদের খুঁজে পাবেন, যারা “প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে” আপনাকে উদ্দীপিত করবে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) ইব্রীয়দের কাছে পৌল যে-পারস্পরিক প্রেম সম্বন্ধে লিখেছিলেন, সেটার জন্য এক ভ্রাতৃসমাজ, সমমনা উপাসকদের এক সমাজ, একটা মণ্ডলী প্রয়োজন। এই ধরনের প্রেম প্রদর্শন করার সঙ্গে অন্যান্য খ্রিস্টানের সঙ্গে মেলামেশা করা জড়িত। আপনার চেকলিস্টের মধ্যে সভায় উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণ করার বিষয়টাতে নিয়মিতভাবে টিক চিহ্ন দিন।
১৪. কীভাবে অনুতপ্ত হওয়া এবং ফিরে আসা এক চলমান প্রক্রিয়া?
১৪ খ্রিস্টান হওয়ার আগে প্রথমে আমাদেরকে অনুতপ্ত হতে এবং পাপ থেকে ফিরে আসতে অথবা সরে আসতে হয়েছিল। কিন্তু, অনুতপ্ত হওয়া এক চলমান প্রক্রিয়া। অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে পাপ আমাদের মধ্যে এখনও একটা কুণ্ডলী পাকানো সাপের মতো ছোবল মারার জন্য ওত পেতে রয়েছে। (রোমীয় ৩:৯, ১০; ৬:১২-১৪) আসুন আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বজায় রাখি, আমাদের ত্রুটিগুলোকে উপেক্ষা না করি। আনন্দের বিষয় হল, আমরা যখন আমাদের দুর্বলতাগুলোর সঙ্গে লড়াই করার জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করি এবং প্রয়োজনীয় রদবদল করি, তখন যিহোবা আমাদের প্রতি ধৈর্য দেখান। (ফিলি. ২:১২; ২ পিতর ৩:৯) এর জন্য একটা বড়ো সাহায্য হল, সময় এবং সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, স্বার্থপর অনুধাবনগুলো থেকে সরে আসা। একজন বোন লেখেন: “যদিও আমি সত্যে মানুষ হয়েছিলাম কিন্তু যিহোবা সম্বন্ধে অধিকাংশ ব্যক্তির চেয়ে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছিলাম। আমার এইরকম মনে হতো যে, তাঁকে অনেক ভয় পেতে হবে আর তাই আমি কখনো তাঁকে খুশি করতে পারব না।” পরে, এই বোন কয়েকটা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে “আধ্যাত্মিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত” হয়ে পড়েছিলেন। “এর কারণ এই ছিল না যে, আমি যিহোবাকে ভালোবাসতাম না,” তিনি বলে চলেন, “বরং কারণটা ছিল, আমি সত্যিকারভাবে তাঁকে জানতে পারিনি। কিন্তু, অনেক আন্তরিক প্রার্থনার পর, আমি পুরোপুরি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছিলাম।” তিনি আরও বলেন: “আমার মনে হয়েছিল, যিহোবা আমাকে একজন সন্তানের মতো করে পরিচালনা দিচ্ছেন, একটা একটা করে বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করছেন, আরও বেশি কোমলভাবে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, আমাকে কী করতে হবে।”
১৫. যিশু এবং তাঁর পিতা কী লক্ষ করেন?
১৫ সুসমাচার সম্বন্ধে ‘লোকদিগকে বলুন।’ পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিত অলৌকিকভাবে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর, ঈশ্বরের দূত তাদেরকে এই কথাগুলো বলেছিলেন। (প্রেরিত ৫:১৯-২১) হ্যাঁ, প্রতি সপ্তাহে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করা হল আমাদের চেকলিস্টের আরেকটা বিষয়। যিশু ও তাঁর পিতা আমাদের বিশ্বাস এবং আমাদের পরিচর্যা, উভয়ই লক্ষ করেন। (প্রকা. ২:১৯) আগের একটা অনুচ্ছেদে উল্লেখিত প্রাচীন ভাই বলেন: “ক্ষেত্রের পরিচর্যাই আমাদের প্রধান কাজ।”
১৬. কেন যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উত্তম?
১৬ আপনার উৎসর্গীকরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। সবচেয়ে মূল্যবান যে-সম্পদ আমাদের রয়েছে, তা হল যিহোবার সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তিনি জানেন যে, কারা তাঁর অধিকারভুক্ত লোক। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৪:৫.) তাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্কের গুণগত মান এবং গভীরতা প্রার্থনাপূর্বক পরীক্ষা করুন। এ ছাড়া, আপনার বাপ্তিস্মের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ মনে রাখুন। বাপ্তিস্ম আপনাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে যে, আপনি জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ধৈর্যপূর্বক যিহোবার নিকটে থাকুন
১৭. যিহোবার নিকটে থাকার জন্য কেন আমাদের ধৈর্য প্রয়োজন?
১৭ গালাতীয়দের কাছে লেখার সময় পৌল ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। (গালা. ৬:৯) এটা বর্তমানেও একজন খ্রিস্টানের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন কিন্তু যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন। পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করে চলুন। যিহোবা যখন দুঃখের পরিবর্তে আনন্দ এবং কষ্টের পরিবর্তে শান্তি প্রদান করবেন, তখন আপনি স্বস্তি লাভ করবেন। (মথি ৭:৭-১১) এই বিষয়টা ভেবে দেখুন: যিহোবা যদি পাখিদের জন্য চিন্তা করেন, তাহলে আপনি তাঁকে ভালোবাসেন এবং তাঁর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন বলে তিনি কি আপনার জন্য আরও বেশি চিন্তা করবেন না? (মথি ১০:২৯-৩১) আপনার সামনে যে-চাপগুলোই আসুক না কেন, কখনো পিছু হটে যাবেন না, কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না। যিহোবার জানা লোক হওয়ায় আমরা কত অপূর্ব আশীর্বাদই না লাভ করি!
১৮. ‘ঈশ্বরের পরিচয় পাইবার’ বা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার পর, এখন আপনি কী করতে চান?
১৮ তাই, আপনি যদি সম্প্রতি ঈশ্বর সম্বন্ধে জেনে থাকেন এবং বাপ্তাইজিত হন, তাহলে এখন কী করবেন? যিহোবাকে ক্রমাগত আরও ভালোভাবে জানুন, আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার দিকে বৃদ্ধি লাভ করে চলুন। আর আপনি যদি অনেক বছর ধরে বাপ্তাইজিত হয়ে থাকেন, তাহলে এখন কী করবেন? আপনারও যিহোবা সম্বন্ধে আপনার জ্ঞানকে ক্রমাগত আরও গভীর এবং প্রসারিত করতে হবে। আমরা যেন কখনো তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আত্মতুষ্টির মনোভাব গড়ে না তুলি। এর পরিবর্তে, আমরা ক্রমাগত আমাদের প্রেমময় পিতা, বন্ধু ও ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি করে চলছি কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য সময়ে সময়ে আমাদের প্রত্যেকের আধ্যাত্মিক চেকলিস্ট পুনরালোচনা করে দেখা উচিত।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১৩:৫, ৬.
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
একটা গাছ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টানদেরও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া উচিত
[১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
বাপ্তিস্ম নেওয়ার এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি লাভ করে চলার ধাপগুলো
১ প্রথমে আমরা যিহোবা ও তাঁর পুত্র যিশুকে ‘জানি’ বা তাদের সম্বন্ধে জ্ঞান নিই।—যোহন ১৭:৩
২ আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।—যোহন ৩:১৬
৩ আমরা প্রার্থনায় নিয়মিতভাবে যিহোবাকে ডাকি।—প্রেরিত ২:২১
৪ আমরা একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মেলামেশা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫
৫ আমরা আমাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হই।—প্রেরিত ১৭:৩০
৬ আমরা মন্দ অভ্যাসগুলো প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে ফিরে আসি।—প্রেরিত ৩:১৯
৭ আমাদের বিশ্বাস আমাদেরকে অন্যদের কাছে বলতে পরিচালিত করে।—২ করি. ৪:১৩
৮ যিশুর উদাহরণের সঙ্গে মিল রেখে আমরা নিজেদেরকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করি।—১ পিতর ৪:২
৯ উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে আমরা জলে বাপ্তিস্ম নিই।—১ পিতর ৩:২১