পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিদের মৃত্যু কীভাবে “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুমূল্য”?
▪ একজন গীতরচক অনুপ্রাণিত হয়ে এই গান গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুমূল্য তাঁহার সাধুগণের [“অনুগত ব্যক্তিদের,” NW] মৃত্যু।” (গীত. ১১৬:১৫) যিহোবার কাছে তাঁর প্রত্যেক সত্য উপাসকের জীবন অনেক মূল্যবান। কিন্তু, সবেমাত্র গীতসংহিতার ১১৬ গীত থেকে যে-বাক্যটি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি-বিশেষের মৃত্যুর চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝানো হয়েছে।
একজন খ্রিস্টানের স্মরনার্থে কোনো বক্তৃতা তুলে ধরার সময়, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে গীতসংহিতা ১১৬:১৫ পদ প্রয়োগ করা উপযুক্ত নয়, এমনকী যদিও তিনি যিহোবার একজন অনুগত দাস হিসেবেই মারা গিয়েছেন। কেন? কারণ গীতরচকের উক্তির এক ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বর তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ দলের মৃত্যুকে এত মূল্যবান বলে গণ্য করেন যে, তিনি সেটা ঘটতে দেন না।—দেখুন, গীত. ৭২:১৪; ১১৬:৮.
গীতসংহিতা ১১৬:১৫ পদ আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা তাঁর অনুগত ব্যক্তিদেরকে একটা দল হিসেবে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিনষ্ট হতে দেবেন না। বস্তুতপক্ষে, আমাদের আধুনিক দিনের ইতিহাস, চরম পরীক্ষা ও তাড়নার মধ্যে আমাদের ধৈর্যের নথি তুলে ধরে আর এভাবে স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বর কখনোই আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে দেবেন না।
যেহেতু যিহোবার অসীম শক্তি এবং অব্যর্থ উদ্দেশ্য রয়েছে, তাই তিনি আমাদেরকে একটা দল হিসেবে অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে দেবেন না। ঈশ্বর যদি সেটা ঘটতে দেন, তাহলে এমনটা মনে হবে যে, তাঁর শত্রুরা তাঁর চেয়ে শক্তিশালী—যা একেবারেই অসম্ভব! আর এই পৃথিবী তাঁর অনুগত লোকদের দ্বারা পরিপূর্ণ হবে বলে যিহোবার যে-উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা অপূর্ণ থেকে যাবে—এটারও কোনো সম্ভাবনা নেই। (যিশা. ৪৫:১৮; ৫৫:১০, ১১) এমনকী পৃথিবীতে যিহোবার উদ্দেশে পবিত্র সেবা প্রদান করাও বন্ধ হয়ে যাবে, যদি তাঁর মহান আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে তাঁর উপাসনা করার জন্য কোনো মানুষই না থাকে! ‘নতুন পৃথিবীর’—‘নতুন আকাশের’ অধীনে আমাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা ধার্মিক মানব সমাজের—কোনো ভিত্তিই থাকবে না। (প্রকা. ২১:১) আর কোনো পার্থিব প্রজা ছাড়া খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বও বাস্তবায়িত হবে না।—প্রকা. ২০:৪, ৫.
ঈশ্বরের পদমর্যাদা ও সুনাম নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যদি তিনি তাঁর শত্রুদের দ্বারা পৃথিবীতে তাঁর লোকেদের পুরো দলকে নির্মূল হয়ে যেতে দেন। এই ধরনের ঘটনা নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম হিসেবে যিহোবার পদমর্যাদাকে কলঙ্কিত করবে। অধিকন্তু, নিজের এবং নিজের পবিত্র নামের প্রতি সম্মানের কারণে যিহোবা একটা দল হিসেবে তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের মৃত্যু ঘটতে দেবেন না। আর এটাও বিবেচনা করুন: যেহেতু ঈশ্বরের মধ্যে “অন্যায় নাই,” তাই তিনি তাঁর সেই মানবদলকে রক্ষা করতে কখনোই ব্যর্থ হবেন না, যারা তাঁকে অনুগতভাবে সেবা করে এসেছে। (দ্বিতীয়. ৩২:৪; আদি. ১৮:২৫) এ ছাড়া, একটা দল হিসেবে তাঁর দাসদের সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা ঈশ্বরের এই বাক্যের বিপরীত হবে: “সদাপ্রভু আপন মহানামের গুণে আপন প্রজাদিগকে ত্যাগ করিবেন না।” (১ শমূ. ১২:২২) বস্তুতপক্ষে, “সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে দূর করিবেন না, আপন অধিকার পরিত্যাগ করিবেন না।”—গীত. ৯৪:১৪.
এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবার লোকেরা পৃথিবী থেকে কখনোই উচ্ছিন্ন হয়ে যাবে না! তাই, যেভাবেই হোক, আসুন আমরা সবসময় ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ দিই, তাঁর এই প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করি: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে। সদাপ্রভুর দাসদের এই অধিকার, এবং আমা হইতে তাহাদের এই ধার্ম্মিকতা লাভ হয়, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”—যিশা. ৫৪:১৭.
[২২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
ঈশ্বর কখনোই তাঁর লোকেদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে দেবেন না