মণ্ডলীর ইতিবাচক মনোভাব রক্ষা করুন
মণ্ডলীর ইতিবাচক মনোভাব রক্ষা করুন
“প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক।”—ফিলি. ৪:২৩.
কীভাবে আমরা মণ্ডলীর মধ্যে এক গঠনমূলক মনোভাব গড়ে তুলতে পারি . . .
আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করার সময়?
ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের উদ্যোগের মাধ্যমে?
গুরুতর অন্যায় সম্বন্ধে জানানোর মাধ্যমে?
১. কোন কারণে ফিলিপী এবং থুয়াতীরা মণ্ডলীকে প্রশংসা করা হয়েছিল?
প্রথম শতাব্দীতে ফিলিপী মণ্ডলীর খ্রিস্টানরা বস্তুগতভাবে দরিদ্র ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা উদার ছিল এবং তাদের সহবিশ্বাসীদের প্রতি লক্ষণীয় প্রেম দেখিয়েছিল। (ফিলি. ১:৩-৫, ৯; ৪:১৫, ১৬) তাদের প্রতি তার অনুপ্রাণিত চিঠির শেষে, প্রেরিত পৌল তাই লিখতে পেরেছিলেন: “প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক।” (ফিলি. ৪:২৩) থুয়াতীরার খ্রিস্টানরাও একই আত্মা দেখিয়েছিল বলে, গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্ট তাদেরকে বলেছিলেন: “আমি জানি তোমার কর্ম্ম সকল ও তোমার প্রেম ও বিশ্বাস ও পরিচর্য্যা ও ধৈর্য্য, আর তোমার প্রথম কর্ম্ম অপেক্ষা প্রচুরতর শেষ কর্ম্ম আমি জানি।”—প্রকা. ২:১৯.
২. আমাদের মণ্ডলী যে-মনোভাব দেখিয়ে থাকে, তা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ক্ষেত্রে আমরা কোন ভূমিকা পালন করি?
২ একইভাবে, বর্তমানেও যিহোবার সাক্ষিদের প্রতিটা মণ্ডলী একটা নির্দিষ্ট আত্মা অথবা প্রভাববিস্তারকারী মনোভাব প্রকাশ করে থাকে। কিছু মণ্ডলী এক উষ্ণ ও প্রেমময় মনোভাব দেখানোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আবার অন্যান্য মণ্ডলী রাজ্যের প্রচার কাজে তাদের উদ্যোগী সমর্থন এবং পূর্ণসময়ের পরিচর্যার প্রতি উচ্চসম্মান দেখানোর জন্য উল্লেখযোগ্য। আমরা যখন ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে এক ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা মণ্ডলীর একতায় অবদান রাখি এবং সাধারণত এর আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে বৃদ্ধি করি। (১ করি. ১:১০) অন্যদিকে, আমরা যদি এক নেতিবাচক মনোভাব দেখাই, তাহলে তা আধ্যাত্মিক তদ্রাচ্ছন্নতার, এক কদুষ্ণ মনোভাবের এবং এমনকী মণ্ডলীতে অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। (১ করি. ৫:১; প্রকা. ৩:১৫, ১৬) আপনার মণ্ডলীর মনোভাব কী? কীভাবে আপনি ব্যক্তিগতভাবে মণ্ডলীতে এক ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন?
এক ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন
৩, ৪. কীভাবে আমরা “মহাসমাজের মধ্যে [সদাপ্রভুর] স্তব” করতে পারি?
৩ গীতরচক গেয়েছিলেন: “আমি মহাসমাজের মধ্যে তোমার [সদাপ্রভুর] স্তব করিব, বলবান জাতির মধ্যে তোমার প্রশংসা করিব।” (গীত. ৩৫:১৮) গীতরচক সেই সময়ও যিহোবার প্রশংসা করা থেকে বিরত হননি, যখন তিনি ঈশ্বরের অন্যান্য দাসের সঙ্গে ছিলেন। প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নসহ সাপ্তাহিক মণ্ডলীর সভাগুলো সেই সময়ে আমাদেরকে এক উদ্যোগী মনোভাব প্রদর্শন করার বিভিন্ন চমৎকার সুযোগ করে দেয়, যখন আমরা মন্তব্য করি এবং বিশ্বাসের অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। আমাদের সকলের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি সভাগুলোতে অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগকে পূর্ণরূপে ব্যবহার করছি? আমি কি এগুলোর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই এবং অর্থপূর্ণ মন্তব্য করি? পরিবারের একজন মস্তক হিসেবে, আমি কি আমার সন্তানদেরকে আগে থেকেই মন্তব্য প্রস্তুত করার জন্য সাহায্য করি এবং তাদেরকে নিজের ভাষায় উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষা দিই?’
৪ গীতরচক দায়ূদ আমাদের হৃদয়ের সুস্থির অবস্থাকে আমাদের গানের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। “আমার চিত্ত সুস্থির, হে ঈশ্বর,” তিনি বলেছিলেন, “আমার চিত্ত সুস্থির; আমি গান করিব, আমি স্তব করিব।” (গীত. ৫৭:৭) খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যে-গানগুলো ব্যবহার করা হয়, তা আমাদেরকে সুস্থির হৃদয়ে যিহোবার উদ্দেশে ‘গান করিবার ও স্তব করিবার’ এক চমৎকার সুযোগ করে দেয়। আমরা যদি কিছু গানের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত না থাকি, তাহলে পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় সেগুলো গেয়ে অনুশীলন করি না কেন? আসুন আমরা যেন ‘যাবজ্জীবন সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করিববার, যতকাল বাঁচিয়া থাকি, আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা গান করিববার’ বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—গীত. ১০৪:৩৩.
৫, ৬. কীভাবে আমরা অন্যদের প্রতি অতিথিপরায়ণ ও উদার হতে পারি আর তা করা মণ্ডলীর মধ্যে কী উৎপন্ন করে?
৫ আমাদের ভাই ও বোনদের প্রতি আতিথেয়তা দেখানো হচ্ছে, মণ্ডলীর মধ্যে এক প্রেমময় মনোভাব উৎপন্ন করার আরেকটা উপায়। ইব্রীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠির শেষ অধ্যায়ে পৌল এই জোরালো পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন: “ভ্রাতৃপ্রেম স্থির থাকুক। তোমরা অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না।” (ইব্রীয় ১৩:১) ভ্রমণ অধ্যক্ষ ও তাদের স্ত্রীদের জন্য অথবা মণ্ডলীর পূর্ণসময়ের দাসদের জন্য একবেলার খাবার জোগানো আতিথেয়তা দেখানোর এক চমৎকার উপায়। এ ছাড়া, বিধবা, একক বাবা অথবা মা রয়েছে এমন পরিবারগুলো অথবা অন্য যে-ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে একবেলার খাবারে বা আমাদের পারিবারিক উপাসনায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে উপকার লাভ করতে পারে, তাদের কথা চিন্তা করুন।
৬ পৌল তীমথিয়কে অন্যদেরকে এই উপদেশ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যেন তারা ‘পরের উপকার করে, সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্ হয়, দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়; এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করে, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।’ (১ তীম. ৬:১৭-১৯) পৌল সুপারিশ করেছিলেন যেন তার সহউপাসকরা উদারতার মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে। এমনকী কঠিন অর্থনৈতিক সময়েও আমরা উদারতার এক মনোভাব বৃদ্ধি করতে পারি। এটা করার এক চমৎকার উপায় হচ্ছে, যাদের প্রয়োজন, তাদের জন্য ক্ষেত্রের পরিচর্যায় এবং সভাতে যাওয়া-আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে। আর যারা এই ধরনের প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজ থেকে উপকার লাভ করে, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তারা মণ্ডলীতে এক ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে, যদি তারা উপলব্ধি দেখায়, হতে পারে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা জ্বালানি খরচ তারা যতটুকু পারে, ততটুকু ব্যয় বহন করতে সাহায্য করার মাধ্যমে। অধিকন্তু, আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা তাদেরকে কি এইরকম বোধ করতে পরিচালিত করবে না যে, তাদের প্রয়োজন রয়েছে এবং আমরা তাদেরকে ভালোবাসি? আমরা যখন “বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাসবাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি” প্রচুর পরিমাণে উত্তম কাজ করি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সময় ও সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকি, তখন তাদের প্রতি আমরা কেবল আমাদের প্রেমকেই বৃদ্ধি করি না কিন্তু সেইসঙ্গে মণ্ডলীর মধ্যে এক উষ্ণ ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতেও সাহায্য করি।—গালা. ৬:১০.
৭. কীভাবে অন্যদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে গোপন রাখা, মণ্ডলীতে এক উত্তম মনোভাব রক্ষা করতে সাহায্য করে?
৭ অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনা করুন, যেগুলো আমাদের সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে প্রেমের বন্ধনকে শক্তিশালী করে: বন্ধুত্ব এবং গোপনীয়তা। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৮:২৪.) প্রকৃত বন্ধুরা ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে গোপন রাখে। আমাদের ভাইবোনেরা যখন আমাদের কাছে তাদের অন্তরের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে এবং নিশ্চিত থাকে যে, এগুলো অন্যেরা জানবে না, তখন ইতিমধ্যেই প্রেমের যে-বন্ধন রয়েছে, সেটা আরও মজবুত হয়। আমরা যেন এমন এক নির্ভরযোগ্য বন্ধু হওয়ার মাধ্যমে মণ্ডলীতে এক প্রেমময়, পরিবারসুলভ মনোভাব বৃদ্ধি করি, যিনি কিনা বিভিন্ন বিষয় গোপন রাখতে পারেন।—হিতো. ২০:১৯.
পরিচর্যায় উদ্যোগী হোন
৮. লায়দিকেয়ার লোকেরা কোন পরামর্শ লাভ করেছিল আর কেন?
৮ লায়দিকেয়াস্থ মণ্ডলীর উদ্দেশে যিশু বলেছিলেন: “আমি জানি তোমার কার্য্য সকল, তুমি না শীতল না তপ্ত; তুমি হয় শীতল হইলে, নয় তপ্ত হইলে ভাল হইত। এইরূপে তুমি কদুষ্ণ, না তপ্ত না শীতল, এই জন্য আমি নিজ মুখ হইতে তোমাকে বমন করিতে উদ্যত হইয়াছি।” (প্রকা. ৩:১৫, ১৬) লায়দিকেয়ার লোকেদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যার জন্য উদ্যোগের অভাব ছিল। এই ধরনের এক মনোভাব সম্ভবত তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককেও প্রভাবিত করেছিল। তাই, যিশু তাদেরকে প্রেমের সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমি যত লোককে ভালবাসি, সেই সকলকে অনুযোগ করি ও শাসন করি; অতএব উদ্যোগী হও, ও মন ফিরাও।”—প্রকা. ৩:১৯.
৯. কীভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যার প্রতি আমাদের মনোভাব, মণ্ডলীর মনোভাবকে প্রভাবিত করে?
৯ মণ্ডলীতে এক গঠনমূলক, ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি করার জন্য, ক্ষেত্রের পরিচর্যার প্রতি আমাদের উদ্যোগের ওপর মনোযোগ দিতে হবে। ক্ষেত্রে মেষতুল্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার এবং তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে মণ্ডলী সংগঠিত করা হয়েছে। তাই, আমাদের উদ্যম সহকারে শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিতে হবে, যেমনটা যিশু নিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০; লূক ৪:৪৩) পরিচর্যার জন্য আমাদের উদ্যোগ যত বেশি থাকবে, ততই আমরা “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী” হিসেবে একতাবদ্ধ হব। (১ করি. ৩:৯) আমরা যখন ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অন্যদেরকে তাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করতে এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য উপলব্ধি প্রকাশ করতে দেখব, তখন আমরা তাদেরকে আরও বেশি ভালোবাসতে এবং সম্মান করতে পরিচালিত হব। এ ছাড়া, পরিচর্যায় “একযোগে” সেবা করা মণ্ডলীতে এক একতাবদ্ধ মনোভাব উৎপন্ন করে।—পড়ুন, সফনিয় ৩:৯.
১০. আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার গুণগত মানকে উন্নত করার বিষয়টা মণ্ডলীর অন্যদের মনোভাবের ওপর কোন প্রভাব ফেলে?
১০ আমাদের পরিচর্যার গুণগত মানকে উন্নত করার প্রচেষ্টা করা, অন্যদের ওপরও এক উত্তম প্রভাব ফেলে। যে-লোকেদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তাদের প্রতি আমরা যখন আরও বেশি চিন্তা দেখিয়ে থাকি এবং আমাদের শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর ব্যাপারে আমাদের কার্যকারিতাকে উন্নত করার প্রচেষ্টা করি, তখন পরিচর্যার প্রতি আমাদের উদ্যম বৃদ্ধি পায়। (মথি ৯:৩৬, ৩৭) উদ্যম আমাদের সহযোগীদের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে একা একা না পাঠিয়ে বরং দুজন দুজন করে পাঠিয়েছিলেন। (লূক ১০:১) এটা কেবল উৎসাহ এবং প্রশিক্ষণই প্রদান করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে পরিচর্যার জন্য তাদের উদ্যোগকেও বৃদ্ধি করেছিল। আমরা কি উদ্যোগী প্রকাশকদের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি না? তাদের উদ্যমী মনোভাব আমাদেরকে উৎসাহিত করে এবং আমাদেরকে প্রচার কাজে প্রেরণা দেয়।—রোমীয় ১:১২.
বচসা এবং অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন
১১. মোশির দিনের কিছু ইস্রায়েলীয় কোন ধরনের মনোভাব গড়ে তুলেছিল আর এটা তাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?
১১ এক নতুন জাতি হিসেবে অস্তিত্বে আসার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইস্রায়েলীয়রা অসন্তুষ্টির এবং বচসা করার মনোভাব গড়ে তুলেছিল। এটা যিহোবা এবং তাঁর প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পরিচালিত করেছিল। (যাত্রা. ১৬:১, ২) যারা মিশর ত্যাগ করেছিল, তাদের মধ্যে মাত্র অল্পসংখ্যক ইস্রায়েলীয় প্রতিজ্ঞাত দেশ দেখার জন্য বেঁচে ছিল। ইস্রায়েল মণ্ডলীর মন্দ মনোভাবের প্রতি তার প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য এমনকী মোশিকেও সেই দেশে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি! (দ্বিতীয়. ৩২:৪৮-৫২) বর্তমানে আমরা এক নেতিবাচক মনোভাবের ফাঁদে পড়া এড়িয়ে চলার জন্য কী করতে পারি?
১২. কীভাবে আমরা অভিযোগ করার মনোভাব গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে পারি?
১২ আমাদেরকে বচসা করার এক মনোভাব গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও কর্তৃপক্ষের প্রতি নম্রতা এবং সম্মান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা আমাদেরকে সাহায্য করবে, তবুও আমাদেরকে সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধেও চিন্তা করতে হবে, যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি। নিম্নমানের আমোদপ্রমোদ বাছাই করা অথবা ধার্মিক নীতিগুলোর প্রতি কোনো সম্মানই নেই এমন সহকর্মী অথবা স্কুলের সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে খুব বেশি সময় কাটানো আমাদের ওপর খারাপ প্রভাব নিয়ে আসবে। সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে সীমা আরোপ করা বিজ্ঞতার কাজ, যাদের মনোভাব নেতিবাচক এবং যারা এক স্বাধীনচেতা মনোভাব বৃদ্ধি করে।—হিতো. ১৩:২০.
১৩. বচসা করার কলুষিত প্রভাব, একটা মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকর এমন কোন বিষয়গুলো ঘটাতে পারে?
১৩ বচসা করার কলুষিত প্রভাব অন্যদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকর বিষয়গুলোর দিকে পরিচালিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বচসা করা একটা মণ্ডলীর শান্তি ও একতাকে বিঘ্নিত করতে পারে। অধিকন্তু, সহবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা শুধুমাত্র তাদেরকে যে কষ্টই দিতে পারে এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “কর্ণেজপ [“নিন্দা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” এবং কটুভাষা বলার মতো পাপ কাজের দিকেও পরিচালিত করতে পারে। (লেবীয়. ১৯:১৬; ১ করি. ৫:১১) প্রথম শতাব্দীতে, মণ্ডলীর কয়েক জন বচসাকারী, ‘প্রভুত্ব অগ্রাহ্য করিয়াছিল, এবং যাহারা গৌরবের পাত্র, তাহাদের নিন্দা করিয়াছিল।’ (যিহূদা ৮, ১৬) মণ্ডলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরুষদের বিরুদ্ধে এইরকম বচসার প্রতি নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের অনুমোদন ছিল না।
১৪, ১৫. (ক) অন্যায় কাজকে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলতে দেওয়া পুরো মণ্ডলীর ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে? (খ) আমরা যদি জানতে পারি যে, একজন ব্যক্তি গোপন কোনো পাপ করার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
১৪ কী হবে, যদি আমরা জানতে পারি যে, একজন ব্যক্তি গোপন কোনো পাপ করার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, হতে পারে মদের অপব্যবহার, পর্নোগ্রাফি দেখা অথবা এক অনৈতিক জীবনযাপন করা? (ইফি. ৫:১১, ১২) গুরুতর অন্যায় কাজ দেখেও আমরা যদি না দেখার ভান করি, তাহলে তা যিহোবার পবিত্র আত্মাকে স্বচ্ছন্দে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে এবং পুরো মণ্ডলীর শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। (গালা. ৫:১৯-২৩) ঠিক যেমন করিন্থের প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মন্দতা দূর করতে হয়েছিল, তেমনই বর্তমানেও মণ্ডলীর উত্তম ও ইতিবাচক মনোভাব রক্ষা করার জন্য যেকোনো কলুষিত প্রভাব মণ্ডলী থেকে অবশ্যই দূরে রাখতে হবে। মণ্ডলীর শান্তিতে অবদান রাখার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
১৫ আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু কিছু বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষভাবে সেই সময়ে, যখন অন্যেরা আমাদেরকে তাদের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বলে থাকে। কারো গোপন তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া কতই না অন্যায় এবং আঘাতদায়ক! তা সত্ত্বেও, যখন কোনো গুরুতর পাপ করা হয়, তখন বিষয়টা পরিচালনা করার জন্য যারা শাস্ত্রীয়ভাবে বাধ্য—মণ্ডলীর প্রাচীনরা—তাদেরকে বিষয়টা জানানো উচিত। (পড়ুন, লেবীয় পুস্তক ৫:১.) তাই, আমরা যদি জানতে পারি যে, কোনো ভাই অথবা বোন এইরকম এক অন্যায় কাজ করেছেন, তখন সেই ভাই বা বোনকে প্রাচীনদের কাছে যাওয়ার এবং তাদের সাহায্য চাওয়ার জন্য আমাদের উৎসাহিত করা উচিত। (যাকোব ৫:১৩-১৫) কিন্তু, সেই ভাই বা বোন যদি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা না করেন, তাহলে আমাদের সেই অন্যায় কাজ সম্বন্ধে জানানো উচিত।
১৬. কীভাবে গুরুতর অন্যায় সম্বন্ধে জানানো মণ্ডলীর মনোভাব রক্ষা করতে সাহায্য করে?
১৬ খ্রিস্টীয় মণ্ডলী হল এক আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল আর গুরুতর অন্যায় সম্বন্ধে জানানোর মাধ্যমে আমাদের এটাকে সুরক্ষা করতে হবে। প্রাচীনরা যদি সেই অন্যায়কারীকে চেতনা ফিরে পেতে সাহায্য করে এবং তিনি অনুতাপ সহকারে অনুযোগ ও সংশোধন মেনে নেন, তাহলে তিনি মণ্ডলীর মনোভাবকে আর বিপদের মধ্যে ফেলেন না। কিন্তু, গুরুতর পাপ করেই চলেন এমন একজন ব্যক্তি যদি অনুতপ্ত না হন এবং প্রাচীনদের প্রেমময় পরামর্শের প্রতি সাড়া না দেন, তাহলে? তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়ার ফল হবে, আমাদের মধ্যে যে-কলুষিত বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর ‘বিনাশ’ অথবা দূরীকরণ আর এতে মণ্ডলীর মনোভাব রক্ষা পাবে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৫:৫.) হ্যাঁ, মণ্ডলীর মনোভাব রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া, প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং সহবিশ্বাসীদের মঙ্গলকে সুরক্ষা করা প্রয়োজন।
“আত্মার ঐক্য” গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন
১৭, ১৮. কী আমাদেরকে ‘আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে’ সাহায্য করবে?
১৭ “প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায় . . . নিবিষ্ট” থাকার মাধ্যমে যিশুর প্রাথমিক অনুসারীরা মণ্ডলীর মধ্যে এক ঐক্যবদ্ধ মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। (প্রেরিত ২:৪২) তারা প্রাচীনবর্গের কাছ থেকে প্রাপ্ত শাস্ত্রীয় পরামর্শ এবং নির্দেশনাকে মূল্যবান বলে গণ্য করত। যেহেতু, বর্তমান দিনের প্রাচীনরা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাই মণ্ডলীর সকলে একতাবদ্ধ থাকতে উৎসাহিত হয় এবং এতে সহযোগিতা করে। (১ করি. ১:১০) আমরা যখন যিহোবার সংগঠন থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার প্রতি বশীভূত হই এবং প্রাচীনদের নির্দেশনা অনুসরণ করি, তখন আমরা প্রমাণ দিই যে, আমরা “শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্।”—ইফি. ৪:৩.
১৮ তাহলে আসুন, যেকোনোভাবেই হোক আমরা মণ্ডলীতে এক গঠনমূলক ও ইতিবাচক মনোভাব রক্ষা করার জন্য কাজ করি। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমাদেরকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, ‘প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ আমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হইবে।’—ফিলি. ৪:২৩.
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
অর্থপূর্ণ মন্তব্য প্রস্তুত করার মাধ্যমে আপনি কি এক ইতিবাচক মনোভাবে অবদান রাখেন?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমাদের গানগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে এক ইতিবাচক মনোভাবে অবদান রাখুন