আপনি কি যিহোবার জানা লোক?
আপনি কি যিহোবার জানা লোক?
“প্রভু [ঈশ্বর] জানেন, কে কে তাঁহার।”—২ তীম. ২:১৯.
১, ২. (ক) যিশু কোন বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন? (খ) আমাদের কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত?
একদিন, একজন ফরীশী যিশুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ব্যবস্থার মধ্যে কোন আজ্ঞা মহৎ?” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৫-৩৭) তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি যিশুর গভীর প্রেম ছিল আর নিশ্চিতভাবেই তিনি সেই কথা অনুযায়ী জীবনযাপন করেছিলেন। এ ছাড়া, যিশু যিহোবার সামনে নিজের অবস্থান নিয়েও চিন্তিত ছিলেন আর এটা তিনি তাঁর বিশ্বস্ত জীবনধারার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। তাই, তাঁর মৃত্যুর কিছু সময় আগে তিনি বলতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বর তাঁকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে জানেন, যিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করেন। এভাবে, যিশু যিহোবার প্রেমে অবস্থিতি করেছিলেন।—যোহন ১৫:১০.
২ বর্তমানে, অনেকে ঈশ্বরকে ভালোবাসে বলে দাবি করে থাকে। আর কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরাও নিজেদেরকে সেই সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করি। কিন্তু, যে-গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে, সেগুলো হল: ‘আমি কি ঈশ্বরের জানা লোক? যিহোবা আমাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন? আমি কি তাঁর লোক হিসেবে পরিচিত?’ (২ তীম. ২:১৯) নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমের সঙ্গে এইরকম এক নিকট সম্পর্ক নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে চিন্তা করা কতই না বিশেষ এক সুযোগ!
৩. কেন কিছু লোক এই বিষয়ে সন্দেহ করে যে, তারা ঈশ্বরের লোক কি না আর কী এই ধরনের চিন্তাভাবনা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে?
৩ তা সত্ত্বেও, যিহোবার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা রয়েছে এমন কারো কারো পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, তাদের প্রতি ঈশ্বরের এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিছু লোক নিজেদেরকে অযোগ্য বলে মনে করে আর তাই তারা যিহোবার লোক কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ করে। কিন্তু, আমরা কতই না আনন্দিত হতে পারি যে, ঈশ্বর আমাদেরকে এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন! (১ শমূ. ১৬:৭) প্রেরিত পৌল সহখ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সেই তাঁহার জানা লোক।” (১ করি. ৮:৩) ঈশ্বরের জানা লোক হওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হচ্ছে, ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেম। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করুন: কেন আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন? কেন আপনি আপনার সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে যিহোবার সেবা করার জন্য জোর প্রচেষ্টা করছেন? আপনি যদি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে থাকেন এবং বাপ্তাইজিত হয়ে থাকেন, তাহলে কী আপনাকে এই পদক্ষেপগুলো নিতে পরিচালিত করেছিল? বাইবেল ব্যাখ্যা করে যে, যিহোবা, যিনি হৃদয় পরীক্ষা করেন, তিনি মনোরঞ্জন পাত্রদেরকে আকর্ষণ করেন। (পড়ুন, হগয় ২:৭; যোহন ৬:৪৪.) তাই, আপনি এই উপসংহারে আসতে পারেন যে, যিহোবা আপনাকে আকর্ষণ করেছে বলে আপনি তাঁর সেবা করছেন। যে-ব্যক্তিদেরকে তিনি আকৃষ্ট করেছেন, তারা যদি বিশ্বস্ত থাকে, তাহলে তিনি কখনো তাদেরকে পরিত্যাগ করবেন না। ঈশ্বর তাদেরকে অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেন এবং তাদেরকে খুবই ভালোবাসেন।—গীত. ৯৪:১৪.
৪. আমরা যেন ঈশ্বরের জানা লোক হিসেবে থাকি, সেই বিষয়ে কেন আমাদের সবসময় গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত?
৪ যিহোবা আমাদেরকে আকৃষ্ট করার পর, তাঁর প্রেমে অবস্থিতি করার ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করা উচিত। (পড়ুন, যিহূদা ২০, ২১.) মনে রাখবেন, বাইবেল দেখায় যে, এইরকম সম্ভাবনাও রয়েছে, আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে ভেসে চলে যেতে অথবা সরে পড়তে পারি। (ইব্রীয় ২:১; ৩:১২, ১৩.) উদাহরণস্বরূপ, ২ তীমথিয় ২:১৯ পদে প্রাপ্ত কথাগুলোর ঠিক আগে, প্রেরিত পৌল হুমিনায় ও ফিলীতের কথা উল্লেখ করেছেন। এই দুজন ব্যক্তি স্পষ্টতই একটা সময়ে যিহোবার লোক ছিল কিন্তু পরে তারা সত্য থেকে বিপথগামী হয়েছিল। (২ তীম. ২:১৬-১৮) এ ছাড়া, স্মরণ করে দেখুন যে, গালাতীয় মণ্ডলীর মধ্যেও এমন কিছু লোক ছিল, যারা ঈশ্বরের জানা লোক কিন্তু তারা সেই আধ্যাত্মিক আলোতে থাকেনি, যেটা একসময় তারা উপভোগ করেছিল। (গালা. ৪:৯) আমরা যেন কখনো ঈশ্বরের সামনে আমাদের মূল্যবান অবস্থানকে হালকাভাবে না নিই।
৫. (ক) কিছু গুণ কী, যেগুলোকে ঈশ্বর মূল্যবান বলে গণ্য করেন? (খ) আমরা কোন উদাহরণগুলো বিবেচনা করব?
৫ এমন কিছু গুণ রয়েছে, যেগুলোকে যিহোবা খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করেন। (গীত. ১৫:১-৫; ১ পিতর ৩:৪) বিশ্বাস ও নম্রতা কিছু ব্যক্তিকে ঈশ্বরের জানা লোক হিসেবে স্বতন্ত্র করে তুলেছিল। কীভাবে এই গুণগুলো দুজন ব্যক্তিকে যিহোবার কাছে প্রিয়পাত্র করে তুলেছিল, তা দেখার জন্য আসুন আমরা তাদের উদাহরণ পরীক্ষা করে দেখি। এ ছাড়া, আমরা এমন একজন ব্যক্তির উদাহরণও দেখব, যিনি মনে করেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের জানা লোক কিন্তু তিনি গর্বিত মনোভাবাপন্ন কাজ করা বেছে নিয়েছিলেন আর এর ফলে যিহোবা তাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা বিভিন্ন মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারি।
যারা বিশ্বাস করে, তাদের পিতা
৬. (ক) যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি অব্রাহাম কী ধরনের বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে অব্রাহাম যিহোবার জানা লোক ছিলেন?
৬ অব্রাহাম ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ‘সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিয়াছিলেন।’ বস্তুতপক্ষে, অব্রাহামকে সেই “সকলের পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, “যাহারা বিশ্বাস করে।” (আদি. ১৫:৬; রোমীয় ৪:১১) বিশ্বাস দেখিয়ে অব্রাহাম দূর দেশে যাওয়ার জন্য তার বাড়িঘর, বন্ধুবান্ধব এবং সহায়সম্পদ পরিত্যাগ করেছিলেন। (আদি. ১২:১-৪; ইব্রীয় ১১:৮-১০) অনেক বছর পরও অব্রাহামের বিশ্বাস আগের মতোই দৃঢ় ছিল। এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল, যখন তিনি যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হয়ে তার পুত্র “ইস্হাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন [“উৎসর্গ করতে নিয়ে গিয়েছিলেন,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]।” (ইব্রীয় ১১:১৭-১৯) অব্রাহাম যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন আর তাই ঈশ্বর তাকে বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করেছিলেন; তিনি সত্যিই অব্রাহামকে জানতেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১৮:১৯.) যিহোবা কেবল অব্রাহাম সম্বন্ধে জানতেনই না; তিনি অব্রাহামকে তাঁর বন্ধু হিসেবেও মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন।—যাকোব ২:২২, ২৩.
৭. যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়টা কী আর এটা অব্রাহামের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?
৭ এটা লক্ষণীয় বিষয় যে, অব্রাহাম তার জীবনকালে সেই দেশ অধিকার করতে পারেননি, যে-দেশ সম্বন্ধে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল। এ ছাড়া, তিনি তার বংশকে “সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায়” হতেও দেখেননি। (আদি. ২২:১৭, ১৮) যদিও এই প্রতিজ্ঞাগুলো অব্রাহামের জীবনকালে পরিপূর্ণ হয়নি, তবুও তিনি যিহোবার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন। তিনি জানতেন যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সবসময় পরিপূর্ণ হয় আর তিনি তার জীবনধারার মাধ্যমে এই বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১৩.) যিহোবা কি আমাদেরকেও এমন লোক হিসেবে জানেন, যাদের অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রয়েছে?
যিহোবাতে অপেক্ষা করা বিশ্বাসের এক চিহ্ন
৮. কেউ কেউ কোন উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ হোক বলে প্রতীক্ষা করে থাকে?
৮ আমাদের হয়তো এমন সব আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, যেগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য আমরা প্রতীক্ষা করে থাকি। বিয়ে, সন্তান এবং সুস্বাস্থ্য, এগুলো সবই স্বাভাবিক ও উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষা। তবে, অনেকের এইরকম এক বা একাধিক আকাঙ্ক্ষা হয়তো অপূর্ণই থেকে যায়। আমাদের বেলায় যদি এমনটা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা যেভাবে মোকাবিলা করি, সেটা আমাদের বিশ্বাসের মাপকাঠি হতে পারে।
৯, ১০. (ক) কেউ কেউ কীভাবে তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে? (খ) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?
৯ এই আকাঙ্ক্ষাগুলো ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার বিপরীত কোনো উপায়ে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করা কতই না মূর্খতাপূর্ণ কাজ। এটা একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতার পক্ষে ক্ষতিকর। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ এমন চিকিৎসা পদ্ধতি বাছাই করেছে, যা যিহোবার পরামর্শের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। আবার, অন্যেরা এমন চাকরি বেছে নিয়েছে, যেটার জন্য তাদেরকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয় অথবা যেটার জন্য তারা মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগদান করতে পারে না। কিংবা কোনো অবিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়েই বা কী বলা যায়? একজন খ্রিস্টান যদি এইরকম এক পথ অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে তিনি কি সত্যিই যিহোবার জানা লোক হওয়ার চেষ্টা করছেন? অব্রাহাম যদি তার কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে অধৈর্য হয়ে পড়তেন, তাহলে যিহোবার কেমন লাগত? আর অব্রাহাম যদি যিহোবাতে অপেক্ষা করার পরিবর্তে বরং স্থায়ীভাবে বসতবাটি গড়ে তুলতেন এবং নিজের নামকে বিখ্যাত করার জন্য নিজেই সমস্তকিছু করতেন, তাহলে? (তুলনা করুন, আদিপুস্তক ১১:৪.) যিহোবা কি তখনও তাকে তাঁর প্রিয় জানা লোক হিসেবে গণ্য করতেন?
১০ আপনি কোন আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ হোক বলে প্রতীক্ষা করেন? আপনার কি যিহোবাতে অপেক্ষা করার মতো দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে, যিনি আপনার উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ করার প্রতিজ্ঞা করেন? (গীত. ১৪৫:১৬) অব্রাহামের মতো, আমাদের বেলায়ও হয়তো কিছু ঐশিক প্রতিজ্ঞা আমরা যত তাড়াতাড়ি পরিপূর্ণ হোক বলে চাই, তত তাড়াতাড়ি না-ও হতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি এমন উপায়ে জীবনযাপন করি, যা দেখায় যে, আমাদেরও অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রয়েছে, তাহলে যিহোবা আমাদেরকে ভুলে যাবেন না। তিনি আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।—ইব্রীয় ১১:৬.
নম্রতা ও গর্বের মধ্যে পার্থক্য
১১. কোরহ হয়তো কোন বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করেছিলেন আর তা স্পষ্টতই ঈশ্বরের প্রতি তার মনোভাব সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়?
১১ যিহোবার ব্যবস্থা এবং তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়ে মোশি ও কোরহের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। তাদের বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল যে, যিহোবা তাদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছেন। কোরহ একজন কহাতীয় লেবীয় ছিলেন এবং তিনি বিভিন্ন বিশেষ সুযোগ উপভোগ করেছিলেন আর সম্ভবত সেগুলোর মধ্যে ছিল, সেই জাতিকে সূফসাগর থেকে উদ্ধার লাভ করতে দেখা, সীনয় পর্বতে অবাধ্য ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার সমর্থন করা এবং নিয়মসিন্দুক বহন সংক্রান্ত কাজে ভূমিকা পালন করা। (যাত্রা. ৩২:২৬-২৯; গণনা. ৩:৩০, ৩১) স্পষ্টতই, তিনি বহু বছর ধরে যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন আর সেই কারণে ইস্রায়েল শিবিরের অনেকে তাকে সম্মানের চোখে দেখত।
১২. আটাশ পৃষ্ঠার ছবিতে যেমনটা তুলে ধরা হয়েছে, কোরহ যে যিহোবার জানা লোক ছিলেন, সেটাকে গর্ব কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল?
১২ যাই হোক, ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার পথে ছিল, তখন কোরহ এমনটা ধরে নিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা রয়েছে। এরপর, সেই জাতির আরও ২৫০ জন নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি, বিভিন্ন পরিবর্তন করার চেষ্টায় কোরহের পক্ষ নিয়েছিল। কোরহ এবং অন্যেরা নিশ্চয়ই যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে নিরাপদ বোধ করেছিল। তারা মোশি ও হারোণকে বলেছিল: “তোমরা বড়ই অভিমানী; কেননা সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যেক জনই পবিত্র, এবং সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যবর্ত্তী।” (গণনা. ১৬:১-৩) কতই না চরম আত্মবিশ্বাসী এবং গর্বিত মনোভাব! মোশি তাদেরকে বলেছিলেন: ‘কে সদাপ্রভুর লোক, তাহা সদাপ্রভু জানাইবেন।’ (পড়ুন, গণনাপুস্তক ১৬:৫.) পরের দিন বেলা শেষে কোরহ ও তার পক্ষ নেওয়া সমস্ত বিদ্রোহী মারা গিয়েছিল।—গণনা. ১৬:৩১-৩৫.
১৩, ১৪. কোন কোন উপায়ে মোশি নম্রতা দেখিয়েছিলেন?
১৩ এর বৈসাদৃশ্যে, মোশি ছিলেন “ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা . . . অতিশয় মৃদুশীল।” (গণনা. ১২:৩) যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে তিনি মৃদুতা ও নম্রতা দেখিয়েছিলেন। (যাত্রা. ৭:৬; ৪০:১৬) এইরকম কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, মোশি প্রায় সময়ই যিহোবার কাজের ধরন সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন কিংবা যিহোবার নির্ধারিত পন্থা অনুসরণ করতে হয়েছে বলে বিরক্ত হয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা আবাস নির্মাণ সম্বন্ধে যেমন, যবনিকার সুতোর রং এবং ঘুন্টিঘরার সংখ্যা সম্বন্ধে খুঁটিনাটি সমস্ত আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (যাত্রা. ২৬:১-৬) যদি ঈশ্বরের সংগঠনের মধ্যে কোনো মানব অধ্যক্ষ আপনাকে এমনভাবে নির্দেশনা দেন, যেগুলোকে আপনার কাছে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বলে মনে হয়, তাহলে আপনি হয়তো কখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু, যিহোবা হলেন সর্বোৎকৃষ্ট অধ্যক্ষ, যিনি উদারভাবে দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং তাঁর দাসদের ওপর নির্ভর করেন। তিনি যখন খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু জানান, তখন তা উত্তম কারণেই জানান। কিন্তু, লক্ষ করুন, যিহোবা এইরকম খুঁটিনাটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে মোশি অসন্তুষ্ট হয়ে যাননি, এমনটা মনে করেননি যে, যিহোবা তাকে ছোটো করছেন অথবা তার সৃজনশীল ক্ষমতায় বা স্বাধীনতায় বাধা দিচ্ছেন। এর পরিবর্তে, মোশি এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যে, কর্মীরা ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণ করে ‘সমস্ত কর্ম্ম করিয়াছে।’ (যাত্রা. ৩৯:৩২) কতই না নম্রতার কাজ! মোশি উপলব্ধি করেছিলেন যে, এটা যিহোবার কাজ এবং সেই কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তিনি হলেন কেবল এক মাধ্যম।
১৪ এ ছাড়া, সেই সময়ও মোশির নম্রতা স্পষ্ট দেখা যায়, যখন তিনি এমন নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা ব্যক্তিগতভাবে তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল। একবার, মোশি অভিযোগকারী লোকেদের সঙ্গে আচরণ করার সময় মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং ঈশ্বরকে পবিত্র বলে মান্য করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফল স্বরূপ, যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন যে, মোশি লোকেদেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যেতে পারবেন না। (গণনা. ২০:২-১২) তিনি এবং তার ভাই হারোণ বছরের পর বছর ধরে সেই ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন অভিযোগ সহ্য করেছিলেন। কিন্তু, ওই ঘটনায় মোশি ভুল করেছিলেন বলে তিনি আর সেই বিষয়টা লাভ করতে পারবেন না, যেটার জন্য তিনি দীর্ঘসময় ধরে প্রতীক্ষা করে ছিলেন! মোশি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? যদিও মোশি স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছিলেন কিন্তু নম্রতা সহকারে যিহোবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে, যিহোবা হলেন একজন ধার্মিক ঈশ্বর, যাঁর মধ্যে কোনো অন্যায় নেই। (দ্বিতীয়. ৩:২৫-২৭; ৩২:৪) আপনি যখন মোশি সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তখন তাকে কি আপনি এমন ব্যক্তি হিসেবে দেখেন না, যিনি যিহোবার জানা লোক?—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩৩:১২, ১৩.
যিহোবার বশীভূত হওয়ার জন্য নম্রতা প্রয়োজন
১৫. কোরহের গর্বিত মনোভাবাপন্ন কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোতে যে-ব্যক্তিরা নেতৃত্ব দেয়, তারা যখন বিভিন্ন রদবদল করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেটার প্রতি আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, তা যিহোবার জানা লোক হিসেবে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। কোরহ এবং তার সঙ্গীরা তাদের চরম আত্মবিশ্বাস, গর্ব এবং বিশ্বাসের অভাবের কারণে যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যদিও কোরহের দৃষ্টিতে বৃদ্ধ মোশিই রোজকার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, কিন্তু আসলে যিহোবাই সেই জাতিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। কোরহ সেই সত্যটা থেকে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং ফল স্বরূপ সেই ব্যক্তিদের প্রতি আনুগত্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যাদেরকে যিহোবা ব্যবহার করছিলেন। কোরহ যদি আরও স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভের অথবা সত্যিকার অর্থেই প্রয়োজনীয় রদবদলগুলো করার জন্য যিহোবাতে অপেক্ষা করতেন, তাহলে সেটা কত বিজ্ঞতার কাজই না হতো। তা না করে, শেষপর্যন্ত কোরহ তার গর্বিত মনোভাবাপন্ন কাজগুলোর দ্বারা তার বিশ্বস্ত সেবার নথি নষ্ট করে ফেলেছিলেন!
১৬. কীভাবে মোশির নম্রতার উদাহরণ অনুসরণ করা যিহোবার জানা লোক হিসেবে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?
১৬ এই বিবরণ বর্তমানে মণ্ডলীর প্রাচীন ও অন্যান্য ব্যক্তির জন্য এক গুরুতর সাবধানবাণী হিসেবে কাজ করে। যিহোবাতে অপেক্ষা করার এবং নেতৃত্বদানকারী নিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য নম্রতা প্রয়োজন। আমরা কি দেখাই যে, আমরাও মোশির মতো নম্র ও মৃদুশীল? আমরা কি আমাদেরকে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের অবস্থানকে স্বীকার করি এবং যে-নির্দেশনাগুলো লাভ করি, সেগুলো মেনে নিই? আমরা কি সেই সময় আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যখন আমরা হতাশার মুখোমুখি হই? যদি এই সমস্তই করি, তাহলে আমরাও যিহোবার প্রিয় জানা লোক হতে পারব। আমাদের নম্রতা এবং বশীভূত হওয়ার মনোভাব, তাঁর কাছে আমাদেরকে প্রিয়পাত্র করে তুলবে।
যিহোবা জানেন যে, কে তাঁর লোক
১৭, ১৮. কী আমাদেরকে সবসময় যিহোবার লোক হিসেবে পরিচিত হতে সাহায্য করতে পারে?
১৭ যিহোবা যাদেরকে আকর্ষণ করেন এবং প্রিয়পাত্র হিসেবে জানেন, তাদের সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করা উপকারজনক। আমাদের মতো অব্রাহাম এবং মোশিও অসিদ্ধ ছিলেন আর তাদের দোষত্রুটি ছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদেরকে এমন ব্যক্তি হিসেবে জানতেন, যারা তাঁর লোক। কিন্তু, কোরহের উদাহরণ দেখায় যে, আমরা যিহোবার কাছ থেকে সরে পড়তে পারি এবং এভাবে আমরা আর তাঁর অনুমোদনপ্রাপ্ত জানা লোক হিসেবে না-ও থাকতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘যিহোবা আমাকে কীভাবে দেখেন? বাইবেলের এই উদাহরণগুলো থেকে আমি কী শিখতে পারি?’
১৮ আপনি এটা জেনে প্রচুর সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন যে, যিহোবা সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরকে তাঁর লোক হিসেবে দেখেন, যাদেরকে তিনি আকর্ষণ করেছেন। ক্রমাগত বিশ্বাস, নম্রতা এবং অন্যান্য গুণ গড়ে তুলুন, যা আপনাকে আমাদের ঈশ্বরের কাছে আরও প্রিয় করে তুলবে। যিহোবার জানা লোক হওয়া নিশ্চিতভাবেই এক অমূল্য সুযোগ, যা এখনই আমাদের জীবনের জন্য পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে আর ভবিষ্যতে অপূর্ব আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।—গীত. ৩৭:১৮.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• যিহোবার সামনে আপনি কোন মূল্যবান অবস্থান উপভোগ করতে পারেন?
• কীভাবে আপনি অব্রাহামের বিশ্বাসকে অনুকরণ করতে পারেন?
• কোরহ এবং মোশির কাছ থেকে কোন শিক্ষাগুলো আমরা লাভ করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
অব্রাহামের মতো আমাদেরও কি এই বিশ্বাস রয়েছে যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ করবেনই?
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোরহ নম্রভাবে নির্দেশনা মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন না
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা কি আপনাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে জানেন, যিনি নম্রভাবে নির্দেশনাগুলো মেনে নেন?