প্রস্তুত থাকুন!
প্রস্তুত থাকুন!
“তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” —মথি ২৪:৪৪.
১, ২. (ক) বাইবেলে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত কোন ঘটনাগুলোকে একটা বাঘের আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? (খ) আসন্ন আক্রমণ আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
অনেক বছর ধরে, সার্কাসের একজন বিখ্যাত শিল্পী তার প্রশিক্ষিত বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে খেলা দেখিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “একটা পশু যখন আপনার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে, তখন আপনার মনে হবে যে, আপনি জগতের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার লাভ করেছেন।” কিন্তু, ২০০৩ সালের ৩ অক্টোবর সেই নির্ভরতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই, তার পশুগুলোর মধ্যে ১৭২ কিলোগ্রাম (৩৮০ পাউন্ড) ওজনের একটা সাদা বাঘ তাকে আক্রমণ করেছিল। সেই আক্রমণ একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল আর সেই প্রশিক্ষক এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।
২ এই বিষয়টা লক্ষ করা আগ্রহজনক যে, বাইবেল একটা ‘পশুর’ আক্রমণ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে আর আমাদের এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৫-১৮.) এই পশু কাকে আক্রমণ করে? ঘটনাটা হঠাৎ করেই ভিন্ন দিকে মোড় নেয়, দিয়াবলের জগৎ নিজেই এর বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সিন্দূরবর্ণ ঐ পশু রাষ্ট্রসংঘকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং “ঐ দশ শৃঙ্গ” সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটা বেশ্যাতুল্য মহতী বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যকে আক্রমণ করবে এবং তাকে নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করবে। কখন সেই ঘটনা ঘটবে? আমরা এর দিনক্ষণ জানি না। (মথি ২৪:৩৬) আমরা যা জানি, তা হল এটা এমন সময়ে ঘটবে, যখন আমরা তা ঘটার আশা করব না এবং সেই আক্রমণ আসার আগে যে-সময় বাকি রয়েছে, তা সংকুচিত করা হয়েছে। (মথি ২৪:৪৪; ১ করি. ৭:২৯) তাই, নিজেদের আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে যখন এই আক্রমণ ঘটবে এবং খ্রিস্ট ঘাতক হিসেবে আসবেন, তখন তিনি একইসঙ্গে আমাদের উদ্ধারকর্তা হিসেবেও প্রমাণিত হন! (লূক ২১:২৮) এই প্রস্তুত থাকার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য আমরা ঈশ্বরের সেই বিশ্বস্ত দাসদের কাছ থেকে শিখতে পারি, যারা নিজেদের প্রস্তুত বলে প্রমাণ করেছিল আর এভাবে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার চাক্ষুষ সাক্ষি হয়ে উঠেছিল। আমরা কি এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেব?
প্রস্তুত থাকুন—নোহের মতো
৩. কোন পরিস্থিতি নোহের জন্য বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ করে তুলেছিল?
৩ যদিও নোহের জীবনকালে পৃথিবীতে জঘন্য পরিস্থিতি বিরাজ করছিল কিন্তু তিনি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দেখার জন্য প্রস্তুত থেকেছিলেন। বিদ্রোহী স্বর্গদূতেরা যখন মানুষের রূপ ধারণ করে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে সহবাস করেছিল, তখন নোহকে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেই বিষয়ে একটু কল্পনা করুন! এই অস্বাভাবিক মিলনের ফলে এমন অতিমানবিক বংশধরদের অর্থাৎ ‘বীরগণের’ জন্ম হয়েছিল, যারা অন্যদের আঘাত করার ও ভয় দেখানোর জন্য তাদের অসাধারণ শক্তিকে ব্যবহার করেছিল। (আদি. ৬:৪) সেই দৌরাত্ম্য সম্বন্ধে একটু চিন্তা করুন, যে-দৌরাত্ম্যকে এই দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিরা যেখানেই গিয়েছিল, সেখানেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে উসকে দিয়েছিল। এর ফল স্বরূপ, দুষ্টতা ছেয়ে গিয়েছিল এবং মানুষের চিন্তাভাবনা ও আচরণ দিনান্তপর সম্পূর্ণরূপে কলুষিত হয়ে পড়েছিল। আর সার্বভৌম প্রভু যিহোবা একটা সময় নির্ধারণ করেছিলেন, যখন সেই দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করা হবে।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৬:৩, ৫, ১১, ১২. *
৪, ৫. কোন কোন উপায়ে আমাদের দিনের পরিস্থিতি নোহের দিনের মতোই?
৪ যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আমাদের দিনের পরিস্থিতি নোহের দিনের মতোই হবে। (মথি ২৪:৩৭) উদাহরণস্বরূপ, আমরাও দুষ্ট আত্মারা যে হস্তক্ষেপ করে, সেটার প্রত্যক্ষদর্শী। (প্রকা. ১২:৭-৯, ১২) এই মন্দদূতেরা নোহের দিনে মানুষের রূপ ধারণ করেছিল। যদিও এখন তাদের মানুষের রূপ ধারণ করার ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। লোকেদের অজান্তে, এই বিকৃত যৌন আচরণকারীরা পৃথিবীর সেই ব্যক্তিদের মন্দ ও অধঃপতিত কাজগুলো থেকে আনন্দ লাভ করে, যাদেরকে তারা কলুষিত করতে পারে।—ইফি. ৬:১১, ১২.
৫ ঈশ্বরের বাক্য দিয়াবলকে “নরঘাতক” হিসেবে বর্ণনা করে এবং বলে যে, সে “মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট।” (যোহন ৮:৪৪; ইব্রীয় ২:১৪) এর মানে এই নয় যে, তার হত্যা করার অসীম ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু, সে লোকেদের এমন কাজ করার জন্য বাধ্য করতে পারে, যার ফলে তারা কষ্ট ভোগ করে ও মারা যায়। এ ছাড়া, সে অন্যদের ঘৃণা করার জন্য ও অন্যদের হত্যা করার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য লোকেদের মনকে প্ররোচিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে যে-শিশুদের জন্ম হয়, তাদের মধ্যে প্রতি ১৪২টি শিশুর মধ্যে ১ জন হত্যার শিকার হবে। আপনি কি মনে করেন, অনর্থক দৌরাত্ম্য যে এতটা ছেয়ে গিয়েছে, সেই বিষয়টাকে যিহোবা নোহের দিনের চেয়ে বর্তমানে কোনো অংশে কম লক্ষ করবেন? তিনি কি পদক্ষেপ নেবেন না?
৬, ৭. কীভাবে নোহ ও তার পরিবার বিশ্বাস এবং ঈশ্বরীয় ভয় প্রদর্শন করেছিল?
৬ পরবর্তী সময়ে, নোহকে পৃথিবীতে জলপ্লাবন আনার দ্বারা সমস্ত প্রাণীকে বিনষ্ট করার বিষয়ে ঈশ্বরের সিদ্ধান্তটা জানানো হয়েছিল। (আদি. ৬:১৩, ১৭) যিহোবা নোহকে এমন একটা জাহাজ তৈরি করতে বলেছিলেন, যেটার আকার একটা বিরাট বাক্সের মতো। নোহ ও তার পরিবার কাজ করতে শুরু করেছিল। যখন ঈশ্বরের বিচার এসেছিল, তখন কোন বিষয়টা তাদের বাধ্য হতে এবং প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করেছিল?
৭ গভীর বিশ্বাস এবং ঈশ্বরীয় ভয় নোহ ও তার পরিবারকে ঈশ্বরের আজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। (আদি. ৬:২২; ইব্রীয় ১১:৭) পরিবারের মস্তক হিসেবে নোহ আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক ছিলেন এবং সেই প্রাচীন জগতের কলুষতা এড়িয়ে চলেছিলেন। (আদি. ৬:৯) তিনি জানতেন যে, তার পরিবারকে চারপাশের লোকেদের মতো দৌরাত্ম্যপূর্ণ আচরণ এবং অবাধ্যতার মনোভাব গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। জীবনের রোজকার বিষয়গুলোতে মগ্ন না হয়ে পড়া তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঈশ্বর তাদেরকে একটা কাজ করতে দিয়েছিলেন এবং পুরো পরিবারের জন্য সেই কাজের ওপর তাদের জীবনকে কেন্দ্রীভূত রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৬:১৪, ১৮.
নোহ ও তার পরিবার প্রস্তুত ছিল
৮. কী ইঙ্গিত দেয় যে, নোহের পরিবারের সদস্যরা ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখিয়েছিল?
৮ যদিও বাইবেলের বিবরণ সেই পরিবারের মস্তক নোহের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে কিন্তু নোহের স্ত্রী ও তার ছেলেরা এবং তাদের স্ত্রীরাও যিহোবার উপাসক ছিল। ভাববাদী যিহিষ্কেল এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, নোহ যদি যিহিষ্কেলের সময়ে বাস করতেন, তাহলে তার সন্তানরা তাদের বাবার ধার্মিকতার ওপর ভিত্তি করে উদ্ধার পেত না। তারা বাধ্য থাকবে কি থাকবে না, সেই বিষয়টা বাছাই করার মতো যথেষ্ট বয়স তাদের হয়েছিল। তাই, তারা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের প্রতি ও তাঁর পথের বিষয়ে তাদের ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছিল। (যিহি. ১৪:১৯, ২০) নোহের পরিবার তার নির্দেশনা মেনে নিয়েছিল, তার মতো একই বিশ্বাস দেখিয়েছিল ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর প্রদত্ত কাজের ক্ষেত্রে অন্যদের প্রভাবকে বাধা হওয়ার সুযোগ দেয়নি।
৯. আধুনিক দিনের নোহতুল্য বিশ্বাসের কোন উদাহরণগুলো সম্বন্ধে আমরা উল্লেখ করতে পারি?
৯ বিশ্বব্যাপী আমাদের ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে পরিবারের সেই মস্তকদের দেখা কতই না উৎসাহজনক, যারা নোহকে অনুকরণ করার জন্য যথাসাধ্য করে থাকে! তারা এটা উপলব্ধি করে যে, তাদের পরিবারের জন্য কেবল খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট নয়। তাদেরকে নিজ নিজ পরিবারের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোরও যত্ন নিতে হবে। তা করার মাধ্যমে তারা যিহোবা শীঘ্র যা করতে যাচ্ছেন, সেটার জন্য প্রস্তুত থাকছে।
১০, ১১. (ক) জাহাজের ভিতরে থাকার সময় নোহ ও তার পরিবার নিঃসন্দেহে কেমন বোধ করেছিল? (খ) নিজেদের কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত?
১০ নোহ, তার স্ত্রী, তার ছেলেরা ও তাদের স্ত্রীরা হয়তো প্রায় ৫০ বছর ধরে এই জাহাজ তৈরি করার জন্য কাজ করেছিল। জাহাজ তৈরি করার সময় তাদেরকে নিশ্চয়ই শত শত বার এর ভিতরে যেতে এবং বাইরে আসতে হয়েছিল। তারা এটাকে জলনিরোধক করেছিল, এর মধ্যে খাবার মজুত করেছিল এবং পশুপাখি নিয়ে এসেছিল। দৃশ্যটা কল্পনা করুন। অবশেষে সেই রোমাঞ্চকর দিনটা আসে। এটা হল সা.কা.পূ. ২৩৭০ সালের দ্বিতীয় মাসের ১৭তম দিন আর তারা সেই দিন জাহাজে প্রবেশ করে। যিহোবা দরজা বন্ধ করে দেন এবং বৃষ্টি শুরু হয়। এটা কোনো সাধারণ ভারী বৃষ্টিপাত ছিল না। মহাজলধির উনুই বা আকাশের বাতায়ন উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং প্রবল বর্ষণ সেই জাহাজকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। (আদি. ৭:১১, ১৬) জাহাজের বাইরের লোকেরা মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে যারা ভিতরে রয়েছে, তারা রক্ষা পাচ্ছে। নোহের পরিবার হয়তো কেমন বোধ করেছিল? তারা ঈশ্বরের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা বোধ করেছিল। কিন্তু, নিঃসন্দেহে তারা চিন্তা করেছিল, ‘আমরা কতই না আনন্দিত যে, আমরা সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছি এবং প্রস্তুত থেকেছি!’ (আদি. ৬:৯) আপনি কি নিজেকে আরমাগিদোনের পর একইরকম কৃতজ্ঞতাপূর্ণ হৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান?
১১ কোনো কিছুই সর্বশক্তিমানকে শয়তানের এই বিধিব্যবস্থার শেষ আনার জন্য তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করা থেকে থামাতে পারবে না। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার কি এই বিষয়ে পুরোপুরি আস্থা রয়েছে যে, ঈশ্বরের কোনো প্রতিজ্ঞাই, এমনকী এগুলোর এক বিন্দুও ব্যর্থ হবে না এবং তাঁর নিরূপিত সময়ে সেগুলোর সমস্তই পরিপূর্ণ হবে?’ যদি সেই আস্থা থাকে, তাহলে দ্রুত আসন্ন “ঈশ্বরের সেই দিনের” বিষয় মনে রেখে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।—২ পিতর ৩:১২.
মোশি সতর্ক ছিলেন
১২. কোন বিষয়টা মোশির আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে অস্পষ্ট করে দিতে পারত?
১২ আসুন আমরা আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করি। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, মোশি মিশরীয় জগতে দারুণ সুবিধাজনক এক অবস্থানে ছিলেন বলে মনে হয়েছিল। ফরৌণের মেয়ের পালক পুত্র হিসেবে, সম্ভবত তাকে উচ্চ সম্মান দেওয়া হতো এবং তিনি সবচেয়ে ভালো খাবারদাবার খেতেন, সবচেয়ে উত্তম পোশাক-আশাক পরতেন ও সবচেয়ে বিলাসিতাপূর্ণ পরিবেশ উপভোগ করতেন। তিনি বিস্তর শিক্ষা লাভ করেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৭:২০-২২.) তিনি হয়তো বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারতেন।
১৩. কীভাবে মোশি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন?
১৩ স্পষ্টতই, ছোটোবেলায় বাবা-মার কাছ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ মোশিকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, মিশরীয়রা যে-প্রতিমাপূজা করত, তা মূর্খতাপূর্ণ কাজ ছিল। (যাত্রা. ৩২:৮) মিশরের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাজগৃহের বস্তুগত ঐশ্বর্য মোশিকে সত্য উপাসনা পরিত্যাগ করার ব্যাপারে পরিচালিত করতে পারেনি। তিনি নিশ্চয়ই তার পূর্বপুরুষদের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন এবং ঐশিক ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। কারণ মোশি ইস্রায়েল সন্তানদের বলেছিলেন: “যিহোবা [সদাপ্রভু], . . . অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের নিকটে আমাকে পাঠাইয়াছেন।”—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩:১৫-১৭.
১৪. কীভাবে মোশির বিশ্বাস ও সাহস পরীক্ষিত হয়েছিল?
১৪ মিশরের নিষ্প্রাণ দেব-দেবীদের প্রতিনিধিত্ব করত এমন সব প্রতিমার বিপরীতে, সত্য ঈশ্বর যিহোবা মোশির কাছে বাস্তব ছিলেন। তিনি এমনভাবে জীবনযাপন করেছিলেন যেন “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে” তিনি দেখতে পাচ্ছেন। মোশির এই বিশ্বাস ছিল যে, ঈশ্বরের লোকেরা মুক্ত হবে কিন্তু তিনি জানতেন না যে, কখন তা হবে। (ইব্রীয় ১১:২৪, ২৫, ২৭) ইব্রীয়দের মুক্ত হতে দেখার জন্য তার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা একজন ইস্রায়েলীয় দাসকে রক্ষা করার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল, যে-দাস অন্যায় আচরণের শিকার হয়েছিল। (যাত্রা. ২:১১, ১২) কিন্তু, সেটা যেহেতু যিহোবার নির্ধারিত সময় ছিল না, তাই মোশিকে একজন পলাতক ব্যক্তি হিসেবে দূরদেশে জীবনযাপন করতে হয়েছিল। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, মিশরীয় রাজপ্রাসাদের আরামদায়ক পরিবেশ উপভোগ করা ছেড়ে দিয়ে প্রান্তরে বাস করতে যাওয়া তার পক্ষে কঠিন ছিল। তার পরও, মোশি তাকে দেওয়া যিহোবার প্রতিটা নির্দেশনার প্রতি সজাগ থেকে প্রস্তুত ছিলেন। তাই, তিনি মিদিয়নে ৪০ বছর কাটানোর পর, তার ভাইদের মুক্ত করে নিয়ে আসার জন্য ঈশ্বর তাকে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। ঈশ্বরের নির্দেশের প্রতি বাধ্য হয়ে মোশি মিশরে ফিরে গিয়েছিলেন। এক ঐশিক কার্যভার পালন করার এবং ঈশ্বর যেভাবে চান, সেই উপায়ে তাঁর কাজ করার জন্য মোশির সময় উপস্থিত হয়েছিল। (যাত্রা. ৩:২, ৭, ৮, ১০) মিশরে ফিরে গিয়ে ফরৌণের সামনে যাওয়ার জন্য “অতিশয় মৃদুশীল” ব্যক্তি মোশির বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন ছিল। (গণনা. ১২:৩) কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন, তবে শুধুমাত্র একবার নয় বরং একটার পর একটা আঘাত চলাকালীন বার বার গিয়েছিলেন এবং তিনি জানতেন না যে, একটা আঘাত থেকে পরবর্তী আঘাত পর্যন্ত কত বার তাকে ফরৌণের সামনে যেতে হবে।
১৫. কোন বিষয়টা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও মোশিকে তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে সম্মান করার বিভিন্ন সুযোগ খোঁজার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল?
১৫ এর পরের ৪০ বছর অর্থাৎ সা.কা.পূ. ১৫১৩ থেকে সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সাল পর্যন্ত মোশি বিভিন্ন হতাশার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি যিহোবাকে সম্মান করার বিভিন্ন সুযোগ খুঁজেছিলেন এবং সহইস্রায়েলীয়দেরকেও তা করার জন্য সর্বান্তঃকরণে উৎসাহিত করেছিলেন। (দ্বিতীয়. ৩১:১-৮) কেন? কারণ তিনি নিজ নামের চেয়ে যিহোবার নাম ও সার্বভৌমত্বকে আরও বেশি ভালোবাসতেন। (যাত্রা. ৩২:১০-১৩; গণনা. ১৪:১১-১৬) বিভিন্ন হতাশা ও বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও, আমাদেরও এই আস্থা রেখে ক্রমাগত ঈশ্বরের শাসনকে সমর্থন করতে হবে যে, বিভিন্ন বিষয় সম্পাদন করার জন্য তাঁর উপায়ই আরও বেশি বিজ্ঞতাপূর্ণ, আরও বেশি ন্যায্য এবং যেকোনো কিছুর চেয়ে আরও ভালো। (যিশা. ৫৫:৮-১১; যির. ১০:২৩) আপনি কি এইরকমই মনে করেন?
জেগে থাকুন!
১৬, ১৭. কেন মার্ক ১৩:৩৫-৩৭ পদ আপনার জন্য গভীর অর্থ রাখে?
১৬ “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও; কেননা সে সময় কবে হইবে, তাহা জান না।” (মার্ক ১৩:৩৩) যিশু সেই চিহ্ন নিয়ে আলোচনা করার সময় এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, যা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষকে চিহ্নিত করবে। মার্কের দ্বারা লিপিবদ্ধ যিশুর মহান ভবিষ্যদ্বাণীর শেষের বাক্যগুলো বিবেচনা করুন: “তোমরা জাগিয়া থাকিও, কেননা গৃহের কর্ত্তা কখন আসিবেন, কি সন্ধ্যাকালে, কি দুই প্রহর রাত্রিতে, কি কুকুড়া ডাকের সময়ে, কি প্রাতঃকালে, তোমরা তাহা জান না; তিনি হঠাৎ আসিয়া যেন তোমাদিগকে নিদ্রিত না দেখিতে পান। আর আমি তোমাদিগকে যাহা বলিতেছি, তাহাই সকলকে বলি, জাগিয়া থাকিও।”—মার্ক ১৩:৩৫-৩৭.
১৭ যিশুর এই পরামর্শ ভাবিয়ে তোলার মতো। তিনি রাতের চারটে ভিন্ন প্রহরের কথা উল্লেখ করেছেন। শেষ প্রহরটা জেগে থাকার জন্য এক কঠিন সময় বলে প্রমাণিত হবে কারণ এটার স্থায়িত্ব প্রায় ভোর ৩টা থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। যুদ্ধ পরিচালনায় দক্ষ ব্যক্তিরা এই সময়টাকে শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য সবচেয়ে কার্যকারী সময় বলে মনে করে থাকে, যা শত্রুদেরকে “নিদ্রিত” অবস্থায় পাওয়ার সর্বোত্তম সুযোগ দেয়। একইভাবে এখন অর্থাৎ জগৎ যে-সময়ে আধ্যাত্মিক অর্থে গভীরভাবে নিদ্রিত, তখন আমাদেরও হয়তো জেগে থাকার জন্য চরম প্রচেষ্টা করতে হয়। আমাদের কি এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ আছে যে, ভবিষ্যদ্বাণীকৃত শেষ আসার ও উদ্ধার লাভ করার জন্য আমাদেরকে “জাগিয়া” ও “সাবধান” থাকতে হবে?
১৮. যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমাদের কোন অমূল্য সুযোগ রয়েছে?
১৮ শুরুতে উল্লেখিত সেই পশু প্রশিক্ষক বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে, মিথ্যা ধর্ম কিংবা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বাকি অংশ আসন্ন ধ্বংস থেকে রেহাই পাবে না। (প্রকা. ১৮:৪-৮) যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ঈশ্বরের সমস্ত দাস যেন যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকার ব্যাপারে যথাসাধ্য করার গুরুত্ব বুঝতে পারে, যেমনটা নোহ ও তার পরিবার বুঝতে পেরেছিল। ঈশ্বরকে অসম্মান করে এমন এক জগতে আমরা বাস করছি, যেখানে মিথ্যা ধর্ম ও সেইসঙ্গে অজ্ঞেয়বাদী এবং নাস্তিক ব্যক্তিরা তাদের কথার দ্বারা সৃষ্টিকর্তাকে উপহাস করে। কিন্তু, আমরা এগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই, আসুন আমরা যে-উদাহরণগুলো বিবেচনা করেছি, সেগুলোতে মনোযোগ দিই এবং “ঈশ্বরগণের ঈশ্বর,” হ্যাঁ, “মহান্, বীর্য্যবান্ ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর” হিসেবে যিহোবার পক্ষসমর্থন এবং তাঁকে সম্মান করার সুযোগ খুঁজে নেওয়ার জন্য সতর্ক থাকি।—দ্বিতীয়. ১০:১৭.
[পাদটীকা]
^ আদিপুস্তক ৬:৩ পদে উল্লেখিত “এক শত বিংশতি বৎসর” সম্বন্ধে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কেন নোহকে তার পরিবারের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছিল?
• কীভাবে আমাদের সময় লক্ষণীয়ভাবে নোহের দিনের মতোই?
• কেন মোশি বিভিন্ন হতাশা সত্ত্বেও যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর তার দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রেখেছিলেন?
• বাইবেলের কোন ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আপনাকে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে অনুপ্রাণিত করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
নোহ ও তার পরিবার যিহোবার কাজের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিল
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের নিশ্চিত প্রতিজ্ঞাগুলো মোশিকে সতর্ক থাকতে সাহায্য করেছিল