যেভাবে মুক্তির মূল্য আমাদের রক্ষা করে
যেভাবে মুক্তির মূল্য আমাদের রক্ষা করে
“যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।”—যোহন ৩:৩৬.
১, ২. কোন একটা কারণে প্রথমে জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল?
“কোনো মনোযোগী বাইবেল ছাত্রই খ্রিস্টের মৃত্যুর যে-গুরুত্ব ছিল, তা উপলব্ধি না করে পারবে না,” ১৮৭৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত এই পত্রিকার চতুর্থ সংখ্যায় এভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই প্রবন্ধের উপসংহারে এই গুরুগম্ভীর মন্তব্য করা হয়েছিল: “আসুন আমরা এমন যেকোনোকিছুর ব্যাপারে সাবধান হই, যা যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুকে বলিদান ও পাপার্থক হিসেবে তুচ্ছ বা অগ্রাহ্য করে।”—পড়ুন ১ যোহন ২:১, ২.
২ একটা যে-কারণে ১৮৭৯ সালের জুলাই মাসে প্রথম জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেটা হল মুক্তির মূল্য সম্বন্ধীয় বাইবেলের শিক্ষাকে সমর্থন করা। সেই পত্রিকার কথাগুলো “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” জুগিয়েছিল কারণ ১৮০০ সালের শেষের দিকে বৃদ্ধিরত নামধারী খ্রিস্টানরা এই বিষয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল যে, কীভাবে যিশুর মৃত্যু আমাদের পাপের জন্য মুক্তির মূল্য স্বরূপ হতে পারে। (মথি ২৪:৪৫) সেই সময়ে, অনেকে বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, যে-ধারণটা এই সত্যের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে যে, মানুষ এক সিদ্ধ অবস্থা থেকে পতিত হয়েছে। বিবর্তনবাদীরা এই শিক্ষা দিয়েছিল যে, মানুষ নিজে নিজেই উন্নত হচ্ছে আর তাই মুক্তির মূল্যের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই, তীমথিয়কে দেওয়া প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শ বিশেষভাবে উপযুক্ত: “হে তীমথিয়, তোমার কাছে যাহা গচ্ছিত হইয়াছে, তাহা সাবধানে রাখ; যাহা অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত, তাহার ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী হইতে বিমুখ হও; সেই বিদ্যা অঙ্গীকার করিয়া কেহ কেহ বিশ্বাস সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে।”—১ তীম. ৬:২০, ২১.
৩. আমরা এখন কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
৩ কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি “বিশ্বাস সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট” না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। সেইজন্য এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উত্তম হবে: কেন আমার মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন? এর জন্য কোন মূল্য দিতে হয়েছিল? কীভাবে আমি এই মূল্যবান ব্যবস্থা থেকে উপকার লাভ করতে পারি, যা আমাকে ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা করতে পারে?
ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়া
৪, ৫. কী প্রমাণ দেয় যে, বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ওপর ঈশ্বরের ক্রোধ অবস্থিতি করে?
৪ বাইবেল এবং মানবজাতির ইতিহাস দেখায় যে, যখন থেকে আদম পাপে পতিত হয়েছে, তখন থেকে ঈশ্বরের ক্রোধ মানবজাতির ‘উপরে অবস্থিতি করেছে।’ (যোহন ৩:৩৬) এটা এই বিষয়টা থেকে স্পষ্ট হয় যে, কোনো মানুষই মৃত্যুর পরিণতি থেকে রেহাই পায় না। প্রতিদ্বন্দ্বী শয়তানের শাসন মানবজাতিকে ঘটে চলা বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং কোনো মনুষ্য সরকারই নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারেনি। (১ যোহন ৫:১৯) তাই, মানবজাতি ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহ, অপরাধ এবং দারিদ্রের শিকার হচ্ছে।
৫ তাই, স্পষ্টতই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ওপর যিহোবার আশীর্বাদ নেই। পৌল বলেছিলেন যে, ‘ঈশ্বরের ক্রোধ স্বর্গ হইতে সেই মনুষ্যদের ভক্তিহীনতার উপরে প্রকাশিত হইতেছে।’ (রোমীয় ১:১৮-২০) অতএব, যারা অনুতাপহীনভাবে ভক্তিহীন জীবনযাপন করে, তারা তাদের আচরণের পরিণতি থেকে রেহাই পাবে না। আজকে, ঈশ্বরের ক্রোধ বিচারের বার্তার মাধ্যমে জানানো হচ্ছে, যা শয়তানের জগতের ওপর আঘাতের মতো ঢালা হচ্ছে এবং এই ধরনের তথ্য আমাদের বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর মধ্যে পাওয়া যায়।—প্রকা. ১৬:১.
৬, ৭. অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কোন কাজের অগ্রভাগে রয়েছে এবং যারা শয়তানের জগতের অংশ, তাদের জন্য এখনও কোন সুযোগ খোলা রয়েছে?
৬ এর অর্থ কি এই যে, ব্যক্তি-বিশেষদের জন্য শয়তানের কর্তৃত্ব থেকে বের হয়ে আসার এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে? না, কারণ যিহোবার সঙ্গে পুনরায় সম্মিলিত হওয়ার দ্বার এখনও খোলা রয়েছে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, যারা “খ্রীষ্টের পক্ষে রাজ-দূতের কর্ম্ম” করছে, তারা জনসাধারণ্যের পরিচর্যার অগ্রভাগে রয়েছে, যার মাধ্যমে সমস্ত জাতির লোকেরা এই আমন্ত্রণ লাভ করছে: “তোমরা ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও।”—২ করি. ৫:২০, ২১.
৭ প্রেরিত পৌল আমাদের বলেন যে, যিশু “আগামী ক্রোধ হইতে আমাদের উদ্ধারকর্ত্তা।” (১ থিষল. ১:১০) যিহোবার ক্রোধের সেই চূড়ান্ত প্রকাশ অনুতাপহীন পাপীদের জন্য অনন্ত ধ্বংস নিয়ে আসবে। (২ থিষল. ১:৬-৯) কারা রেহাই পাবে? বাইবেল বলে: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।” (যোহন ৩:৩৬) হ্যাঁ, যারা বেঁচে আছে এবং যারা যিশু ও তাঁর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলে, তারা সকলে যখন এই বিধিব্যবস্থা শেষে গিয়ে পৌঁছাবে, তখন ঈশ্বরের চূড়ান্ত ক্রোধ থেকে রেহাই পাবে।
যেভাবে মুক্তির মূল্য কাজ করে
৮. (ক) আদম ও হবার জন্য কোন চমৎকার প্রত্যাশা ছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা এক নিখুঁত ন্যায়বিচারক ঈশ্বর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
৮ আদম ও হবাকে সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা যদি ঈশ্বরের বাধ্য থাকত, তাহলে এখন পৃথিবী তাদের আনন্দিত বংশধরদের দিয়ে পূর্ণ হতো, যারা তাদের সঙ্গে একত্রে বাস করতে পারত। কিন্তু, দুঃখের বিষয় যে, আমাদের প্রথম পিতামাতা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করেছিল। এর ফলে, তাদেরকে অনন্ত মৃত্যুর দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং আদি পরমদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। যে-সময়ে আদম ও হবার সন্তান হয়েছিল, সেই সময়ের মধ্যে পাপ মানবজাতিকে সংক্রামিত করে ফেলেছিল আর প্রথম মানব-মানবী শেষপর্যন্ত বৃদ্ধ হয়েছিল ও মারা গিয়েছিল। এটা প্রমাণ দেয় যে, যিহোবার কথা সত্য হয়। অধিকন্তু, তিনি হলেন এক নিখুঁত ন্যায়বিচারক ঈশ্বর। যিহোবা আদমকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে সে যদি নিষিদ্ধ গাছের ফল খায়, তাহলে মারা যাবে—আর ঠিক তা-ই হয়েছিল।
৯, ১০. (ক) কেন আদমের বংশধররা মারা যায়? (খ) কীভাবে আমরা অনন্ত মৃত্যু থেকে রেহাই পেতে পারি?
৯ আদমের বংশধর হিসেবে, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে এক অসিদ্ধ দেহ লাভ করেছি, যা সহজেই পাপ করে এবং অবশেষে মারা যায়। আদম যখন পাপ করেছিল, তখন আমরা রূপকভাবে বললে তার ঔরসে ছিলাম। সেই কারণে, আমরাও মৃত্যুর দণ্ডাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তাই, যিহোবা যদি মুক্তির মূল্য পরিশোধ না করেই মৃত্যুর প্রক্রিয়াকে বাতিল করে দিতেন, তাহলে তাঁর কথা অসত্য হয়ে যেত। বস্তুতপক্ষে, পৌল আমাদের সকলকেই বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমরা জানি, ব্যবস্থা আত্মিক, কিন্তু আমি মাংসময়, পাপের অধীনে বিক্রীত। দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?”—রোমীয় ৭:১৪, ২৪.
১০ একমাত্র যিহোবা ঈশ্বরই বৈধ ভিত্তি জোগাতে পারেন, যেটার মাধ্যমে তিনি ন্যায্যভাবে আমাদের পাপ ক্ষমা করতে এবং আমাদেরকে অনন্ত মৃত্যুর দণ্ডাদেশ থেকে মুক্ত করতে পারেন। তিনি তাঁর প্রিয় পুত্রকে এক সিদ্ধ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করার জন্য স্বর্গ থেকে পাঠিয়ে তা করেছিলেন, যিনি আমাদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে তাঁর জীবন দান করতে পারতেন। আদমের বিপরীতে, যিশু সিদ্ধতা বজায় রেখেছিলেন। বস্তুতপক্ষে, “তিনি পাপ করেন নাই।” (১ পিতর ২:২২) ফলে, যিশুর এক সিদ্ধ মানবজাতির পিতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এর পরিবর্তে, তিনি ঈশ্বরের শত্রুদের দ্বারা মৃত্যুদণ্ড ভোগ করেছিলেন, যাতে তিনি আদমের পাপী বংশধরদের দত্তক নিতে পারেন এবং যারা তাঁর ওপর বিশ্বাস দেখিয়ে চলে, তাদের জন্য অনন্তজীবন লাভ করা সম্ভবপর করতে পারেন। শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে: “একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মনুষ্য, খ্রীষ্ট যীশু, তিনি সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন।”—১ তীম. ২:৫, ৬.
১১. (ক) কীভাবে মুক্তির মূল্যের উপকারগুলো উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে? (খ) মুক্তির মূল্যের উপকারগুলো কতটা সুদূরপ্রসারী?
১১ মুক্তির মূল্য কীভাবে কাজ করে, তা সেই লোকেদের পরিস্থিতির দ্বারা তুলে ধরা যেতে পারে, যারা এক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাঙ্কে তাদের সমস্ত অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং এর ফলে ঋণে জড়িয়ে পড়েছে। ব্যাঙ্কের মালিকদের ন্যায্যভাবেই কয়েক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু, সেই নির্দোষ ভুক্তভোগীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? সবকিছু খুইয়ে দরিদ্র হয়ে যাওয়ার পর, তাদের পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার আর কোনো উপায়ই থাকে না, যদি না একজন সদয় ও ধনী ব্যক্তি ব্যাঙ্কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সমস্ত ভুক্তভোগীকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে তাদেরকে ঋণমুক্ত করেন। একইভাবে, যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর প্রিয় পুত্র আদমের বংশধরদের ক্রয় করেছেন এবং যিশুর পাতিত রক্তের ভিত্তিতে তাদেরকে পাপের ঋণ থেকে মুক্ত করেছেন। এই কারণে, যোহন বাপ্তাইজক যিশু সম্বন্ধে বলতে পেরেছিলেন: “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” (যোহন ১:২৯) যে-মানবজাতির জগৎকে পাপ থেকে মুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে শুধু জীবিতরাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে মৃতেরাও রয়েছে।
মুক্তির মূল্যের জন্য যে-মূল্য দিতে হয়
১২, ১৩. ইস্হাককে উৎসর্গ করার বিষয়ে অব্রাহামের ইচ্ছুক মনোভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১২ আমাদের পক্ষে এটা বোঝা অসম্ভব যে, মুক্তির মূল্য প্রদান করার জন্য আমাদের স্বর্গীয় পিতা ও তাঁর প্রিয় পুত্রকে ঠিক কতখানি মূল্য প্রদান করতে হয়েছে। কিন্তু, বাইবেলে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে এই বিষয়টা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা করুন যে, সেই সময় অব্রাহামের কেমন লেগেছিল, যখন তিনি ঈশ্বরের এই আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে তিন দিনের পথ যাত্রা করে মোরিয়া দেশে গিয়েছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্ত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং তথাকার যে এক পর্ব্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।”—আদি. ২২:২-৪.
১৩ অবশেষে, অব্রাহাম নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেছিলেন। একটু চিন্তা করুন যে, ইস্হাকের হাত-পা বেঁধে অব্রাহামের নিজের তৈরি বেদির ওপর তাকে শুইয়ে দেওয়া অব্রাহামের জন্য কতটা হৃদয়বিদারক ছিল। অব্রাহামের জন্য এটা কতই না বেদনাদায়ক ছিল, যখন তিনি খড়্গ তুলে তার পুত্রকে হত্যা করতে যাচ্ছিলেন! এ ছাড়া, ইস্হাকের অনুভূতির কথাও কল্পনা করুন, যখন তিনি বেদির ওপর শুয়ে নিদারুণ ও তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। যিহোবার দূত একেবারে ঠিক সময়ে অব্রাহামকে থামিয়েছিলেন। সেই সময়ে অব্রাহাম ও ইস্হাক যা করেছিল, তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, যিহোবাকে কতটা মূল্য দিতে হয়েছিল, যখন তিনি তাঁর পুত্রকে শয়তানের প্রতিনিধিদের দ্বারা হত হতে দিয়েছিলেন। অব্রাহামের সঙ্গে ইস্হাকের সহযোগিতা করার বিষয়টা, আমাদের জন্য কষ্টভোগ করা এবং মারা যাওয়ার ব্যাপারে যিশুর ইচ্ছুক মনোভাবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।—ইব্রীয় ১১:১৭-১৯.
১৪. যাকোবের জীবনের কোন ঘটনা আমাদেরকে মুক্তির মূল্যের জন্য যে-মূল্য দিতে হয়েছে, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে?
১৪ মুক্তির মূল্যের জন্য যে-মূল্য দিতে হয়েছে, তা যাকোবের জীবনের একটা ঘটনার মাধ্যমেও তুলে ধরা যেতে পারে। তার সমস্ত পুত্রের মধ্যে যাকে যাকোব সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, তিনি ছিলেন যোষেফ। দুঃখের বিষয় হল, যোষেফের ভাইয়েরা তাকে হিংসা ও ঘৃণা করত। তা সত্ত্বেও, তার পিতা যখন তার ভাইদের খবরাখবর নেওয়ার জন্য তাকে পাঠাতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি ইচ্ছুক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। সেই সময় তারা তাদের বাড়ি হিব্রোণ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে যাকোবের মেষপাল চরাচ্ছিল। কল্পনা করে দেখুন যে, সেই সময় যাকোবের কেমন লেগেছিল, যখন তার পুত্ররা যোষেফের রক্তমাখা বস্ত্র নিয়ে ফিরে এসেছিল! “এ ত আমার পুত্ত্রেরই বস্ত্র,” তিনি আর্তনাদ করে বলেছিলেন। “কোন হিংস্র জন্তু তাহাকে খাইয়া ফেলিয়াছে, যোষেফ অবশ্য খণ্ড খণ্ড হইয়াছে।” এই সমস্তকিছু যাকোবকে এতটাই আঘাত দিয়েছিল যে, তিনি অনেক দিন পর্যন্ত যোষেফের জন্য শোক করেছিলেন। (আদি. ৩৭:৩৩, ৩৪) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যিহোবা অসিদ্ধ মানুষের মতো একই প্রতিক্রিয়া দেখান না। তবে, যাকোবের জীবনের এই ঘটনা নিয়ে ধ্যান করা হয়তো কিছুটা হলেও আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, সেই সময় যিহোবার কেমন লেগেছিল, যখন পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে থাকাকালীন তাঁর প্রিয় পুত্রের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছিল এবং নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তির মূল্য থেকে উপকার লাভ করা
১৫, ১৬. (ক) কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে, তিনি মুক্তির মূল্য গ্রহণ করেছেন? (খ) কীভাবে আপনি মুক্তির মূল্য থেকে উপকৃত হয়েছেন?
১৫ যিহোবা ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত পুত্রকে এক গৌরবান্বিত আত্মিক দেহে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (১ পিতর ৩:১৮) পুনরুত্থিত যিশু ৪০ দিন ধরে তাঁর শিষ্যদের কাছে দেখা দিয়েছিলেন, তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিলেন এবং তাদেরকে সম্মুখস্থ বিরাট সুসমাচার প্রচার কাজের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। এরপর তিনি স্বর্গারোহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁর পাতিত রক্তের মূল্য প্রদান করেছিলেন, যেন তা তাঁর সেই প্রকৃত অনুসারীদের জন্য ব্যবহার করা যায়, যারা তাঁর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলে। যিহোবা ঈশ্বর যে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য গ্রহণ করেছিলেন, তা তিনি যিশুকে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে সমবেত তাঁর শিষ্যদের ওপর পবিত্র আত্মা সেচন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২:৩৩.
১৬ খ্রিস্টের এই অভিষিক্ত অনুসারীরা অবিলম্বে তাদের সহমানবদেরকে তাদের পাপের ক্ষমা লাভের জন্য যিশু খ্রিস্টের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রেহাই পাওয়ার জোরালো পরামর্শ দিতে শুরু করেছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ২:৩৮-৪০.) সেই ঐতিহাসিক দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সমস্ত জাতি থেকে আসা লক্ষ লক্ষ লোক যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। (যোহন ৬:৪৪) আলোচনার এই পর্যায়ে, আমাদের আরও দুটো প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে: আমাদের মধ্যে কাউকে কি নিজেদের উত্তম কাজগুলোর জন্য অনন্তজীবনের প্রত্যাশা দেওয়া হয়েছিল? একবার এই অপূর্ব প্রত্যাশা লাভ করার পর, আমাদের কি তা হারানোর সম্ভাবনা থাকতে পারে?
১৭. ঈশ্বরের বন্ধু হওয়ার অপূর্ব আশীর্বাদকে আপনার কীভাবে দেখা উচিত?
১৭ মুক্তির মূল্য পুরোপুরিভাবে অযাচিত এক দান। কিন্তু, এর প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চলার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ লোক এখন ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠেছে, যাদের এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা রয়েছে। তবে, যিহোবার বন্ধু হয়ে ওঠা এই আশ্বাস দেয় না যে, আমরা তাঁর সঙ্গে এইরকম এক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারব। ঈশ্বরের ভাবী ক্রোধের দিন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই ‘খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তির’ বা মুক্তির মূল্যের প্রতি গভীর উপলব্ধি দেখিয়ে যেতে হবে।—রোমীয় ৩:২৪; পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১২.
মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলুন
১৮. মুক্তির মূল্যের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চলার অন্তর্ভুক্ত কী?
১৮ এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ যোহন ৩:৩৬ পদ দেখায় যে, প্রভু যিশু খ্রিস্টে বিশ্বাস দেখিয়ে চলার সঙ্গে তাঁর বাধ্য হওয়া অন্তর্ভুক্ত। মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধিবোধ যেন আমাদেরকে নৈতিকতা সম্বন্ধীয় যিশুর শিক্ষাগুলোসহ অন্যান্য শিক্ষার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে অনুপ্রাণিত করে। (মার্ক ৭:২১-২৩) “ঈশ্বরের ক্রোধ” সেই সমস্ত ব্যক্তির ওপর “বর্ত্তে,” যারা অনুতাপহীনভাবে এই কাজগুলো করে চলে যেমন, ব্যভিচার, শ্লেষোক্তি বা নোংরা রসিকতা এবং ‘সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতা,’ যার অন্তর্ভুক্ত ক্রমাগত পর্নোগ্রাফি দেখা।—ইফি. ৫:৩-৬.
১৯. কোন কোন ইতিবাচক উপায়ে আমরা মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাস দেখাতে পারি?
১৯ মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধিবোধের কারণে যেন আমরা ‘ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে’ ব্যস্ত থাকি। (২ পিতর ৩:১১, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) আসুন আমরা নিয়মিত ও আন্তরিক প্রার্থনা, ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, সভায় উপস্থিতি, পারিবারিক উপাসনা এবং উদ্যোগী রাজ্যের প্রচার কাজের জন্য যথেষ্ট সময় আলাদা করে রাখি। আর আমরা যেন ‘উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিয়া না যাই, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।’—ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬.
২০. যারা মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলে, তারা সকলে কোন ভাবী আশীর্বাদগুলোর জন্য প্রত্যাশা করতে পারে?
২০ এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ওপর যখন ঈশ্বরের ক্রোধ আসবে, তখন এই কারণে আমরা কতই না আনন্দিত হব যে, আমরা মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস এবং এর প্রতি ক্রমাগত উপলব্ধি দেখিয়ে চলেছি! আর ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে এই অপূর্ব ব্যবস্থার জন্য আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব, যা আমাদেরকে ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা করেছে।—পড়ুন, যোহন ৩:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০, ১৩, ১৪.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কেন আমাদের মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন?
• মুক্তির মূল্যের জন্য কোন মূল্য দিতে হয়েছিল?
• মুক্তির মূল্য থেকে কোন উপকারগুলো লাভ করা যায়?
• কীভাবে আমরা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস দেখিয়ে চলি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সঙ্গে পুনরায় সম্মিলিত হওয়ার দ্বার খোলা রয়েছে
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের ঘটনা নিয়ে ধ্যান করা, মুক্তির মূল্যের জন্য যে-চরম মূল্য দিতে হয়েছে, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখাতে আমাদের সাহায্য করতে পারে