সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কোনটা সফল হবে, তা তো আপনি জানেন না!

কোনটা সফল হবে, তা তো আপনি জানেন না!

কোনটা সফল হবে, তা তো আপনি জানেন না!

“তুমি প্রাতঃকালে আপন বীজ বপন কর, এবং সায়ংকালেও হস্ত নিবৃত্ত করিও না। কেননা . . . কোন্‌টা সফল হইবে, . . . তাহা তুমি জান না।”—উপ. ১১:৬.

১. কেন একটা চারাগাছের বৃদ্ধির প্রক্রিয়া দেখা একইসঙ্গে বিস্ময়কর ও নম্রতার কাজ?

 একজন কৃষকের ধৈর্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। (যাকোব ৫:৭) বীজ বপন করার পর, তাকে তা অঙ্কুরিত হওয়ার ও বৃদ্ধি লাভ করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। পরিস্থিতি যখন অনুকূলে থাকে, তখন অঙ্কুরগুলো মাটি ভেদ করে ধীরে ধীরে দেখা দিতে শুরু করে। এরপর তা বৃদ্ধি পেয়ে চারাগাছে পরিণত হয়, যা শস্য উৎপাদন করে। অবশেষে, কৃষকের ক্ষেত্র শস্যচ্ছেদনের জন্য তৈরি হয়ে ওঠে। এই অলৌকিক বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া কতই না বিস্ময়কর! এ ছাড়া, এই বৃদ্ধির উৎস কে, তা স্বীকার করাও নম্রতার কাজ। আমরা একটা বীজের যত্ন নিতে পারি। আমরা জল সেচনের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারি। কিন্তু, কেবল ঈশ্বরই বৃদ্ধি দিতে পারেন।—তুলনা করুন, ১ করিন্থীয় ৩:৬.

২. আগের প্রবন্ধে বিবেচিত দৃষ্টান্তগুলোতে আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি সম্বন্ধে যিশু কোন বিষয়গুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন?

আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যিশু রাজ্যের প্রচার কাজকে একজন কৃষকের বীজ বপনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিভিন্ন ধরনের ভূমির দৃষ্টান্তে যিশু জোর দিয়েছিলেন যে, যদিও কৃষক ভাল বীজ বপন করেন কিন্তু ব্যক্তি বিশেষদের হৃদয়ের অবস্থাই নির্ধারণ করে যে, সেই বীজ পরিপক্বতার দিকে বৃদ্ধি পাবে কি না। (মার্ক ৪:৩-৯) নিদ্রা যায় এমন একজন বীজবাপকের দৃষ্টান্তে যিশু তুলে ধরেছিলেন যে, একজন কৃষক বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি বুঝতে পারেন না। এর কারণ হল, সেই বৃদ্ধি ঈশ্বরের শক্তির ফলে ঘটে থাকে, মানুষের প্রচেষ্টায় নয়। (মার্ক ৪:২৬-২৯) আসুন আমরা এখন যিশুর আরও তিনটি দৃষ্টান্ত—সরিষা দানা, তাড়ি ও টানা জালের দৃষ্টান্ত—বিবেচনা করি। *

সরিষা দানার দৃষ্টান্ত

৩, ৪. সরিষা দানার দৃষ্টান্ত রাজ্যের বার্তা সম্বন্ধে কোন দিকগুলো তুলে ধরে?

সরিষা দানার দৃষ্টান্ত, যা মার্ক ৪ অধ্যায়েও লিপিবদ্ধ রয়েছে, তা দুটো বিষয় তুলে ধরে: প্রথমটা হল, রাজ্যের বার্তার বিস্ময়কর বৃদ্ধি; দ্বিতীয়টা হল, যারা বার্তা গ্রহণ করে তাদেরকে প্রদত্ত সুরক্ষা। যিশু বলেছিলেন: “আমরা কিসের সহিত ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করিব? কোন্‌ দৃষ্টান্ত দ্বারাই বা তাহা ব্যক্ত করিব? তাহা একটী সরিষা-দানার তুল্য; সেই বীজ ভূমিতে বুনিবার সময়ে ভূমির সকল বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র বটে, কিন্তু বুনা হইলে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া সকল শাক হইতে বড় হইয়া উঠে, এবং বড় বড় ডাল ফেলে; তাহাতে আকাশের পক্ষিগণ তাহার ছায়ার নীচে বাস করিতে পারে।”—মার্ক ৪:৩০-৩২.

এখানে আমরা “ঈশ্বরের রাজ্যের” বৃদ্ধি সম্বন্ধে বর্ণনা দেখতে পাই, যার প্রমাণ সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর থেকে রাজ্যের বার্তার প্রসার ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বৃদ্ধি থেকে পাওয়া যায়। একটা সরিষা দানা অতি ক্ষুদ্র একটা বীজ, যা খুবই ছোট কিছুকে চিত্রিত করতে পারে। (তুলনা করুন, লূক ১৭:৬.) কিন্তু, অবশেষে একটা সরিষা গাছ হয়তো ৩-৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং এর শক্ত শাখাপ্রশাখা হয় আর এভাবে বলতে গেলে প্রায় একটা বৃক্ষের মতো হয়ে ওঠে।—মথি ১৩:৩১, ৩২.

৫. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কোন বৃদ্ধি ঘটেছিল?

সাধারণ কাল ৩৩ সালে যখন প্রায় ১২০ জন শিষ্য পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল, তখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বৃদ্ধি ছোটো আকারে শুরু হয়েছিল। তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যে শিষ্যদের এই ক্ষুদ্র মণ্ডলীতে হাজার হাজার বিশ্বাসী যুক্ত হয়েছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ২:৪১; ৪:৪; ৫:২৮; ৬:৭; ১২:২৪; ১৯:২০.) তিন দশকের মধ্যে শস্যচ্ছেদনের কর্মীদের সংখ্যা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, প্রেরিত পৌল কলসীর মণ্ডলীকে বলতে পেরেছিলেন, সুসমাচার ইতিমধ্যেই “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত” হয়েছে। (কল. ১:২৩) কতই না চমৎকার বৃদ্ধি!

৬, ৭. (ক) ১৯১৪ সাল থেকে কোন প্রসার ঘটেছে? (খ) আরও কোন বৃদ্ধি ঘটবে?

উনিশশো চৌদ্দ সালে স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে সরিষা ‘বৃক্ষের’ শাখাপ্রশাখা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রসার লাভ করে। ঈশ্বরের লোকেরা যিশাইয়ের দ্বারা লিপিবদ্ধ এই ভবিষ্যদ্বাণীর আক্ষরিক পরিপূর্ণতা দেখতে পেয়েছে: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে।” (যিশা. ৬০:২২) বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রচার কাজে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের যে-ছোট্ট দল অংশগ্রহণ করত, তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে, ২০০৮ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ লক্ষ সাক্ষি দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টারও বেশি জায়গায় এই কাজে রত থাকবে। যিশুর দৃষ্টান্তের সরিষা দানার সঙ্গে তুলনা করার মতো সত্যিই এক বিস্ময়কর বৃদ্ধি!

কিন্তু, সেই বৃদ্ধি কি সেখানেই থেমে গিয়েছে? না। পুরো পৃথিবী অবশেষে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজাদের দিয়ে পূর্ণ হবে। সমস্ত বিরোধীদের দূর করে দেওয়া হবে। এটা মানুষের প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ঘটবে না, বরং পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে সার্বভৌম প্রভু যিহোবার হস্তক্ষেপের ফলে ঘটবে। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৩৪, ৩৫.) সেই সময় আমরা যিশাইয়ের দ্বারা লিপিবদ্ধ আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণীর চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা দেখতে পাব: “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশা. ১১:৯.

৮. (ক) যিশুর দৃষ্টান্তে পাখিরা কাদের চিত্রিত করে? (খ) এমনকি এখনই আমরা কোন বিষয়গুলো থেকে সুরক্ষিত?

যিশু বলেন যে, আকাশের পাখিরা এই রাজ্যের ছায়ার নীচে বাস করতে পারে। এই পাখিরা রাজ্যের সেই শত্রুদের চিত্রিত করে না, যারা ভাল বীজ খেয়ে ফেলার চেষ্টা করে, যেমনটা সেই ব্যক্তির দৃষ্টান্তের পাখিদের বেলায় সত্য ছিল, যিনি বিভিন্ন ধরনের ভূমিতে বীজ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। (মার্ক ৪:৪) এর পরিবর্তে, এই দৃষ্টান্তে পাখিরা সঠিক হৃদয়ের লোকেদের চিত্রিত করে, যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে সুরক্ষা খোঁজে। এমনকি এখনই এই ব্যক্তিরা এই দুষ্ট জগতের আধ্যাত্মিকভাবে কলুষিত অভ্যাস ও অশুচি কাজগুলো থেকে সুরক্ষিত। (তুলনা করুন, যিশাইয় ৩২:১, ২.) যিহোবাও মশীহ রাজ্যকে একটা বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে বলেছেন: “ইস্রায়েলের উচ্চতার পর্ব্বতে তাহা রোপণ করিব; তাহাতে তাহা বহুশাখাযুক্ত ও ফলবান হইয়া বিশাল এরস বৃক্ষ হইয়া উঠিবে; তাহার তলে সর্ব্বজাতীয় সকল বাসা করিবে, তাহার শাখার ছায়াতেই বাসা করিবে।”—যিহি. ১৭:২৩.

তাড়ির দৃষ্টান্ত

৯, ১০. (ক) তাড়ির দৃষ্টান্তে যিশু কোন বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিলেন? (খ) বাইবেলে তাড়ি প্রায়ই কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে আর তাড়ির বিষয়ে যিশুর উল্লেখ সম্বন্ধে আমরা কোন প্রশ্নটা বিবেচনা করব?

বৃদ্ধি মানুষের চোখে সবসময় দৃশ্যমান নয়। যিশু তাঁর পরবর্তী দৃষ্টান্তে এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন: “স্বর্গ-রাজ্য এমন তাড়ীর তুল্য, যাহা কোন স্ত্রীলোক লইয়া তিন মাণ ময়দার মধ্যে ঢাকিয়া রাখিল, শেষে সমস্তই তাড়ীময় হইয়া উঠিল।” (মথি ১৩:৩৩) এই তাড়ি কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে আর কীভাবে তা রাজ্যের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১০ বাইবেলে তাড়ি প্রায়ই পাপকে চিত্রিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। প্রেরিত পৌল যখন প্রাচীন করিন্থ মণ্ডলীতে একজন পাপীর কলুষিত প্রভাব সম্বন্ধে বলছিলেন, তখন এভাবেই তাড়ির বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। (১ করি. ৫:৬-৮) যিশু কি তখন নেতিবাচক কোনোকিছুর বৃদ্ধিকে চিত্রিত করার জন্য তাড়ির বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন?

১১. প্রাচীনকালের ইস্রায়েলে কীভাবে তাড়ি ব্যবহার করা হতো?

১১ সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমাদের তিনটে মৌলিক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। প্রথমত, যদিও যিহোবা নিস্তারপর্বের উৎসবের সময় তাড়ি ব্যবহার করার অনুমতি দেননি কিন্তু অন্যান্য সময় তিনি তাড়িযুক্ত বলিগুলো গ্রহণ করতেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপনার্থ সেই মঙ্গলার্থক বলিতে তাড়ি ব্যবহার করা হতো, যেখানে উৎসর্গকারী ব্যক্তি যিহোবার অনেক আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞতার মনোভাব নিয়ে স্বেচ্ছায় তার উপহার প্রদান করত। এই ভোজ অংশগ্রহণকারীদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসত।—লেবীয়. ৭:১১-১৫.

১২. বাইবেলে যেভাবে শব্দের মাধ্যমে বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ দ্বিতীয়ত, যদিও শাস্ত্রে একটা উপাদান হয়তো কোনো এক জায়গায় নেতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু অন্য জায়গায় সেই একই উপাদানকে হয়তো ইতিবাচক কিছুকে চিত্রিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ১ পিতর ৫:৮ পদে শয়তানকে এমন একটা সিংহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা তার বিপদজনক ও হিংস্র স্বভাবকে তুলে ধরে। কিন্তু, প্রকাশিত বাক্য ৫:৫ পদে যিশুকে এমন একটা সিংহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, “যিনি যিহূদাবংশীয় সিংহ।” এই ক্ষেত্রে সিংহকে সাহসী ন্যায়বিচারের এক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

১৩. তাড়ি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির বিষয়ে কী দেখায়?

১৩ তৃতীয়ত, তাঁর দৃষ্টান্তে যিশু বলেননি যে, তাড়ি পুরো ময়দাকে কলুষিত করে ফেলার ফলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। তিনি কেবল রুটি বানানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। গৃহকর্ত্রী ইচ্ছা করেই তাড়ি যুক্ত করেছিলেন আর ফলাফল ইতিবাচক হয়েছিল। সেই তাড়ি ময়দার মধ্যে ঢাকা বা গুপ্ত ছিল। এভাবে, তাড়ি মিশ্রিত হওয়ার প্রক্রিয়া গৃহকর্ত্রীর দৃষ্টিতে গুপ্ত ছিল। এটা আমাদের সেই ব্যক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি বীজ বপন করে রাতে নিদ্রা যান। যিশু বলেছিলেন যে, “ঐ বীজ অঙ্কুরিত হইয়া বাড়িয়া উঠে, কিরূপে, তাহা [সেই ব্যক্তি] জানে না।” (মার্ক ৪:২৭) আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির অদৃশ্যমান অগ্রগতি তুলে ধরার কী এক সাধারণ উপায়! প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা হয়তো বৃদ্ধি দেখতে পাই না কিন্তু অবশেষে এর ফলাফল স্পষ্ট দেখা যায়।

১৪. তাড়ি সমস্ত ময়দাকেই যে তাড়িময় করে, এই বিষয়টার দ্বারা প্রচার কাজের কোন দিকটা তুলে ধরা হয়েছে?

১৪ মানুষের চোখে এই বৃদ্ধি কেবল অদৃশ্যমানই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পরিব্যাপকও বটে। এটা হল আরেকটা দিক, যে-সম্বন্ধে তাড়ির দৃষ্টান্তে জোর দেওয়া হয়েছে। তাড়ি সমস্তই অর্থাৎ পুরো ‘তিন মাণ ময়দাকেই’ তাড়িময় করে। (লূক ১৩:২১) তাড়ির মতো রাজ্যের প্রচার কাজ, যা এই আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, তা এতদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে যে, সেই রাজ্য সম্বন্ধে এখন “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” প্রচারিত হচ্ছে। (প্রেরিত ১:৮; মথি ২৪:১৪) রাজ্যের কাজের এই বিস্ময়কর প্রসারে অংশ নিতে পারা কতই না অপূর্ব এক সুযোগ!

টানা জাল

১৫, ১৬. (ক) টানা জালের দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে বলুন। (খ) টানা জাল কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে এবং এই দৃষ্টান্ত রাজ্যের বৃদ্ধির কোন দিকটা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে?

১৫ যারা যিশু খ্রিস্টের শিষ্য বলে দাবি করে, তাদের সংখ্যার চেয়ে শিষ্যদের গুণাবলি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের বৃদ্ধির এই দিকটা যিশু পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি আরেকটা দৃষ্টান্ত অর্থাৎ টানা জাল সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আবার স্বর্গ-রাজ্য এমন এক টানা জালের তুল্য, যাহা সমুদ্রে ফেলিয়া দেওয়া হইলে সর্ব্বপ্রকার মাছ সংগ্রহ করিল।”—মথি ১৩:৪৭.

১৬ টানা জাল, যা রাজ্যের প্রচার কাজকে চিত্রিত করে, তা সমস্ত প্রকারের মাছ সংগ্রহ করে। যিশু আরও বলেন: “জালটা পরিপূর্ণ হইলে লোকে কূলে টানিয়া তুলিল, আর বসিয়া বসিয়া ভালগুলি সংগ্রহ করিয়া পাত্রে রাখিল, এবং মন্দগুলি ফেলিয়া দিল। এইরূপ যুগান্তে হইবে; দূতগণ আসিয়া ধার্ম্মিকদের মধ্য হইতে দুষ্টদিগকে পৃথক্‌ করিবেন, এবং তাহাদিগকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলিয়া দিবেন; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে।”—মথি ১৩:৪৮-৫০.

১৭. টানা জালের দৃষ্টান্তে উল্লেখিত পৃথকীকরণ কোন সময়কালকে নির্দেশ করে?

১৭ পৃথকীকরণের এই কাজ কি ছাগ ও মেষের চূড়ান্ত বিচারকে নির্দেশ করে, যা যিশু যখন তাঁর প্রতাপে উপস্থিত হবেন, তখন ঘটবে বলে তিনি বলেছিলেন? (মথি ২৫:৩১-৩৩) না। সেই চূড়ান্ত বিচার মহাক্লেশের সময় যিশুর আগমনের সময় ঘটবে। এর বিপরীতে, টানা জালের দৃষ্টান্তে উল্লেখিত পৃথকীকরণ “যুগান্তে” বা বিধিব্যবস্থার শেষকালে ঘটবে। * আমরা এখন সেই সময়েই বাস করছি—যে-সময় মহাক্লেশে গিয়ে পৌঁছাবে। তাহলে, কীভাবে এখন পৃথকীকরণের এক কাজ চলছে?

১৮, ১৯. (ক) কীভাবে এখন পৃথকীকরণের এক কাজ হচ্ছে? (খ) সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের অবশ্যই কোন পদক্ষেপ নিতে হবে? (এ ছাড়া, ২১ পৃষ্ঠার পাদটীকা দেখুন।)

১৮ আক্ষরিকভাবে, মানবসমুদ্র থেকে লক্ষ লক্ষ রূপক মাছ আধুনিক সময়ে যিহোবার মণ্ডলীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হয়, অন্যেরা আমাদের সভাগুলোতে আসে, আবার কিছু ব্যক্তি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়। কিন্তু, তারা সকলেই কি অকৃত্রিম খ্রিস্টান হিসেবে প্রমাণ দেয়? তাদেরকে হয়তো ‘কূলে টানিয়া তোলা হইতে’ পারে কিন্তু যিশু আমাদের বলেন যে, একমাত্র “ভালগুলি” সেই পাত্রে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোকে চিত্রিত করে। মন্দগুলোকে ফেলে দেওয়া হয়, যেগুলোকে অবশেষে রূপক অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে, যা ভবিষ্যৎ ধ্বংসকে নির্দেশ করে।

১৯ মন্দ মাছের মতো, অনেকে যারা যিহোবার লোকেদের সঙ্গে একসময় বাইবেল অধ্যয়ন করত, তারা অধ্যয়ন করা বন্ধ করে দিয়েছে। কেউ কেউ খ্রিস্টান বাবামার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে কিন্তু আসলে কখনো যিশুর পদচিহ্নের অনুসরণকারী হতে চায়নি। তারা যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক অথবা কিছু সময় তাঁকে সেবা করার পর তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। * (যিহি. ৩৩:৩২, ৩৩) কিন্তু, চূড়ান্ত বিচার দিনের আগে সমস্ত সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের পাত্রতুল্য মণ্ডলীতে নিজেদের একত্রিত করা এবং এক নিরাপদ স্থানে থাকা আবশ্যক।

২০, ২১. (ক) বৃদ্ধি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তগুলোর পুনরালোচনা থেকে আমরা কী শিখেছি? (খ) আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২০ তাহলে, বৃদ্ধি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তগুলোর সংক্ষিপ্ত পুনরালোচনা থেকে আমরা কী শিখেছি? প্রথমত, সরিষা দানার বৃদ্ধির মতো এই পৃথিবীতে রাজ্যের বিষয়গুলোর অসাধারণ বৃদ্ধি ঘটছে। কোনোকিছুই যিহোবার কাজের প্রসারকে থামাতে পারে না! (যিশা. ৫৪:১৭) অধিকন্তু, যারা “[বৃক্ষের] ছায়ার নীচে বাস” করতে চায়, তাদের জন্য আধ্যাত্মিক সুরক্ষা জোগানো হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরই বৃদ্ধি দান করেন। ঠিক যেমন গুপ্ত তাড়ি সমস্ত ময়দাতে ছড়িয়ে যায়, তেমনই এই বৃদ্ধি সবসময় সহজেই নির্ণয়সাধ্য অথবা বোধ্যগম্য নয় কিন্তু এর প্রসার ঘটে থাকে! তৃতীয়ত, যারা সাড়া দেয় তারা সকলেই নিজেদের ভাল বলে প্রমাণ দেয় না। কেউ কেউ যিশুর দৃষ্টান্তের সেই মন্দ মাছের মতো।

২১ কিন্তু, এটা দেখা কতই না উৎসাহজনক যে, অনেক ভাল ব্যক্তি যিহোবার দ্বারা আকর্ষিত হচ্ছে! (যোহন ৬:৪৪) এর ফলে একটার পর একটা দেশে চমৎকার বৃদ্ধি ঘটছে। এই বৃদ্ধির জন্য সমস্ত প্রশংসা যিহোবা ঈশ্বরেরই প্রাপ্য। তা দেখে আমাদের প্রত্যেকের শত শত বছর আগে লিখিত এই উপদেশের বাধ্য হতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত: “তুমি প্রাতঃকালে আপন বীজ বপন কর, . . . কেননা ইহা কিম্বা উহা, কোন্‌টা সফল হইবে, কিম্বা উভয় সমভাবে উৎকৃষ্ট হইবে, তাহা তুমি জান না।”—উপ. ১১:৬.

[পাদটীকাগুলো]

^ পরবর্তী ব্যাখ্যাগুলো ১৯৯২ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯-২৪ পৃষ্ঠায় এবং ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৫৮৯-৬০৮ পৃষ্ঠায় আগে যে-ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর রদবদলস্বরূপ তুলে ধরা হচ্ছে।

^ যদিও মথি ১৩:৩৯-৪৩ পদ রাজ্যের প্রচার কাজের ভিন্ন একটা দিককে নির্দেশ করে কিন্তু এর পরিপূর্ণতার সময়কাল, টানা জালের পরিপূর্ণতার সময়কালের সমরূপ, যা মূলত ‘যুগান্ত’ বা বিধিব্যবস্থার শেষকাল। রূপক মাছের পৃথকীকরণের কাজ এক চলমান প্রক্রিয়া ঠিক যেমন বীজ বপন ও শস্যচ্ছেদনের কাজ এই সময়কালে ক্রমাগত এক প্রক্রিয়া।—২০০০ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৫-২৬ পৃষ্ঠা; একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করুন বইয়ের পৃষ্ঠা ১৭৮-১৮১, অনুচ্ছেদ ৮-১১.

^ এর অর্থ কি এই যে, যারা যিহোবার লোকেদের সঙ্গে অধ্যয়ন অথবা মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের সকলকে স্বর্গদূত মন্দ বলে ফেলে দিয়েছে? না! কেউ যদি আন্তরিকভাবে যিহোবার কাছে ফিরে আসতে চায়, তাহলে তাকে তিনি সাদরে গ্রহণ করবেন।—মালাখি ৩:৭.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সরিষা দানার বিষয়ে যিশুর দৃষ্টান্ত আমাদেরকে রাজ্যের বৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক সুরক্ষা সম্বন্ধে কী শেখায়?

• যিশুর দৃষ্টান্তে বলা তাড়ি কোন বিষয়কে চিত্রিত করে আর রাজ্যের বৃদ্ধি সম্বন্ধে কোন সত্য যিশু তুলে ধরেছিলেন?

• টানা জালের দৃষ্টান্তে রাজ্যের বৃদ্ধির কোন দিকটা তুলে ধরা হয়েছে?

• কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছি, যাদেরকে ‘পাত্রে সংগ্রহ’ করা হয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সরিষা দানার দৃষ্টান্ত আমাদেরকে রাজ্যের বৃদ্ধি সম্বন্ধে কী শেখায়?

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

তাড়ির দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখি?

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

মন্দ মাছ থেকে ভাল মাছ পৃথক করার দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়েছে?