পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
যিশু যখন নীকদীমকে বলেছিলেন: “স্বর্গে কেহ উঠে নাই; কেবল যিনি স্বর্গ হইতে নামিয়াছেন, সেই মনুষ্যপুত্ত্র, যিনি স্বর্গে থাকেন,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?—যোহন ৩:১৩.
এই কথাগুলো বলার সময় যিশু পৃথিবীতে ছিলেন আর তাই তখনও পর্যন্ত তিনি স্বর্গে ওঠেননি বা ফিরে যাননি। কিন্তু, যিশুর সম্বন্ধে আমরা যা জানি তা এবং তাঁর কথাগুলোর প্রসঙ্গ আমাদেরকে তাঁর এই কথার অর্থ বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
যিশু এই অর্থে “স্বর্গ হইতে নামিয়াছেন” যে, তিনি পূর্বে তাঁর পিতার সঙ্গে স্বর্গে থাকতেন কিন্তু নিরূপিত সময়ে পুত্রের জীবন মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ও এর ফলে মানুষ হিসেবে যিশুর জন্ম হয়েছিল। (লূক ১:৩০-৩৫; গালাতীয় ৪:৪; ইব্রীয় ২:৯, ১৪, ১৭) তাঁর মৃত্যুর পর, যিশু একজন আত্মিক প্রাণী হিসেবে পুনরুত্থিত হবেন এবং যিহোবার সঙ্গে থাকার জন্য স্বর্গে ফিরে যাবেন। তাই, তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অল্প কিছু সময় আগে যিশু প্রার্থনা করতে পেরেছিলেন: “হে পিতঃ, জগৎ হইবার পূর্ব্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় তোমার নিজের কাছে আমাকে মহিমান্বিত কর।”—যোহন ১৭:৫; রোমীয় ৬:৪, ৯; ইব্রীয় ৯:২৪; ১ পিতর ৩:১৮.
যিশু যখন একজন ফরীশী ও ইস্রায়েলের শিক্ষক নীকদীমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখনও পর্যন্ত যিশু স্বর্গে ফিরে যাননি। অবশ্য, কোনো মানুষই তখনও পর্যন্ত মারা গিয়ে আত্মিক রাজ্য অর্থাৎ স্বর্গে ওঠেনি। যিশু নিজে উল্লেখ করেছিলেন যে, যোহন বাপ্তাইজক ঈশ্বরের একজন ভাববাদী হিসেবে অতুলনীয় ছিলেন, তবুও “স্বর্গ-রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র যে ব্যক্তি, সে তাঁহা হইতে মহান্।” (মথি ১১:১১) আর প্রেরিত পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, এমনকি বিশ্বস্ত রাজা দায়ূদ মারা গিয়েছিলেন এবং তখনও পর্যন্ত কবরেই ছিলেন; দায়ূদ স্বর্গে ওঠেননি। (প্রেরিত ২:২৯, ৩৪) যারা যিশুর আগে মারা গিয়েছিল যেমন দায়ূদ, যোহন বাপ্তাইজক এবং অন্যান্য বিশ্বাসী ব্যক্তি কেন স্বর্গে যায়নি, তার পিছনে একটা কারণ ছিল। মানুষ যাতে স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হতে পারে, যিশু সেই পথ বা সম্ভাবনা খুলে দেওয়ার আগেই তারা মারা গিয়েছিল। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, যিশু একজন অগ্রগামী বা অগ্রদূতের মতো স্বর্গে যাওয়ার জন্য “একটা নতুন ও জীবন্ত পথ খুলে দিয়েছেন।”—ইব্রীয় ৬:১৯, ২০; ৯:২৪; ১০:১৯, ২০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।
যেহেতু যিশু তখনও মারা যাননি ও পুনরুত্থিত হননি, তা হলে “স্বর্গে কেহ উঠে নাই; কেবল যিনি স্বর্গ হইতে নামিয়াছেন, সেই মনুষ্যপুত্ত্র, যিনি স্বর্গে থাকেন,” নীকদীমকে এই কথা বলার দ্বারা তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? (যোহন ৩:১৩) প্রসঙ্গটি অথবা যিশু নীকদীমের সঙ্গে যে-বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তা বিবেচনা করুন।
রাতের অন্ধকারে সেই যিহুদি শাসক যখন যিশুর কাছে এসেছিলেন, তখন যিশু তাকে বলেছিলেন: “সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না।” (যোহন ৩:৩) উত্তরে নীকদীম জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘তাহা কেমন করিয়া হইতে পারে? মনুষ্য কেমন করিয়া দ্বিতীয় বার জন্মিতে পারে?’ তিনি ঈশ্বরের রাজ্যে থাকার বিষয়ে এই ঐশিক শিক্ষাটি বুঝে উঠতে পারেননি। এমন কোনো পথ কি ছিল, যেটার মাধ্যমে তিনি তা জানতে পারতেন? মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে তো নয়ই; কোনো মানুষই তাকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারত না কারণ কেউই স্বর্গে যায়নি আর এর ফলে কেউই রাজ্যে প্রবেশ করার বিষয়ে কোনোকিছুই ব্যাখ্যা করার অবস্থায় ছিল না। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন যিশু। তিনি নীকদীমকে এবং অন্যদের শিক্ষা দিতে পারতেন কারণ তিনি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন এবং এই ধরনের বিষয়গুলো সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য ছিলেন।
তাই এই পাঠ্যাংশে দেওয়া প্রশ্নটি, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার বিষয়ে এক মূল্যবান শিক্ষাকে তুলে ধরে। কোনো শাস্ত্রপদ পড়ে সেটিকে বোঝা কঠিন বলে মনে হলেই তা নিয়ে সন্দেহ করা যুক্তিযুক্ত নয়। বাইবেলের একটি শাস্ত্রপদে যা বলা হয়েছে সেটিকে অন্যান্য শাস্ত্রপদের আলোকে দেখতে হবে এবং সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থটা বুঝতে হবে। অধিকন্তু, প্রায়ই প্রসঙ্গ—পরিস্থিতি অথবা আলোচনার বিষয় কী ছিল তা—আমাদের একটি জটিল পদের যুক্তিসংগত অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।