বয়স্ক ব্যক্তিরা অবহেলিত ও দুর্ব্যবহারের শিকার
বয়স্ক ব্যক্তিরা অবহেলিত ও দুর্ব্যবহারের শিকার
একজন নৈশপ্রহরী তার নিয়মিত টহলের সময় যে-ভয়ংকর দৃশ্যটা দেখেছিলেন, সেটার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। একটা বিলাসবহুল আবাসিক ভবনের ঠিক বাইরে, তিনি দুটো নিষ্প্রাণ দেহ—এক বিবাহিত বয়স্ক দম্পতি, যারা তাদের নয় তলা ভবনের জানালা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল—দেখতে পেয়েছিলেন। যদিও তাদের এই আত্মহত্যা খুবই দুঃখজনক ছিল কিন্তু এর কারণ আরও বেশি দুঃখজনক। স্বামীর পকেটে একটা নোট পাওয়া গিয়েছিল, যেটাতে লেখা ছিল: “আমাদের ছেলে ও বউমার কাছ থেকে সবসময় দুর্ব্যবহার ও যন্ত্রণার কারণে আমরা আমাদের জীবন শেষ করে দিচ্ছি।”
এই কাহিনীর বিস্তারিত বর্ণনা হয়তো অদ্ভুত হতে পারে কিন্তু আসল বিষয়টা হচ্ছে, তা আশঙ্কাজনকভাবে সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। সত্যিই, বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা বলতে গেলে পৃথিবীর প্রতিটা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। নীচের উদাহরণগুলো বিবেচনা করুন:
• একটা গবেষণা রিপোর্ট করে যে, কানাডার ৪ শতাংশ বয়স্ক ব্যক্তি, দুর্ব্যবহারের শিকার বা অন্যদের স্বীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে আর তা সাধারণত পরিবারেরই কোনো সদস্যের দ্বারা। কিন্তু, অনেক বয়স্ক ব্যক্তিই তাদের দুঃখজনক অবস্থা সম্বন্ধে কথা বলতে অত্যন্ত লজ্জিত হয় অথবা খুবই ভয় পায়। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলে যে, সত্যিকারের সংখ্যা হয়তো ১০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে।
• “ভারতীয় জাতি এর দৃঢ় পারিবারিক বন্ধনের মুখোশের আড়ালে, বয়স্ক লোকেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন দুর্বল হয়ে পড়ছে, যে-বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের কাছে অবাঞ্ছিত,” ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকা রিপোর্ট করে।
• প্রাপ্তিসাধ্য সবচেয়ে ভাল হিসেব অনুসারে, “১০ থেকে ২০ লক্ষ আমেরিকাবাসী যাদের বয়স ৬৫ বছর অথবা তার চেয়ে বেশি, তারা এমন কারো দ্বারা আহত, স্বীয় স্বার্থে ব্যবহৃত অথবা অন্য কোনোভাবে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছে, যার ওপর তারা যত্ন অথবা সুরক্ষা পাওয়ার জন্য নির্ভর করেছিল,” ন্যাশনাল সেন্টার অন এল্ডার আ্যবিউজ বলে। কালিফোর্ণিয়ার সান দিয়েগোর একজন ডেপুটি ডিসট্রিক্ট আ্যটর্নি, বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাকে “সবচেয়ে গুরুতর বিষয়গুলোর মধ্যে একটা” বলে অভিহিত করেন, “যেটাকে বর্তমানে আইন প্রয়োগের দ্বারা মোকাবিলা করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন: “আমি বুঝতে পারছি যে, সমস্যাটা আগামী কয়েক বছরে আরও বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।”
• নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরিতে, দিন দিন চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে যে, বয়স্ক ব্যক্তিরা পরিবারের সদস্যদের—বিশেষ করে পরিবারের সেই সদস্যদের, যাদের নেশাকর ওষুধ এবং মদ্যজাতীয় পানীয় অথবা জুয়াখেলা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো রয়েছে, তাদের—লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে। ক্যান্টারবেরি শহরে বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের যে-রিপোর্টগুলো করা হয়েছিল সেগুলোর সংখ্যা ২০০২ সালে ৬৫ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২০০৩ সালে ১০৭-এ পৌঁছেছিল। এই ধরনের দুর্ব্যবহারকে প্রতিরোধ করার জন্য স্থাপিত একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বলেন যে, প্রকৃতপক্ষে যে-বিরাট সংখ্যক লোকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে তার তুলনায় এই সংখ্যা খুবই কম।
• জাপান ফেডারেশন অভ্ বার এসোসিয়েশনস্ পরামর্শ দিয়েছিল যে, “শিশুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার অথবা ঘরোয়া যুদ্ধের শিকার ব্যক্তিদের চেয়ে, বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন,” দ্যা জাপান টাইমস রিপোর্ট করে। কেন? টাইমস পত্রিকা বলে যে, একটা কারণ হচ্ছে, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের অথবা বিবাহসঙ্গীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের তুলনায়, বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার স্পষ্ট হয়ে উঠছে, কারণ তাদের সন্তানরা ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি করলে বয়স্ক ব্যক্তিরা এরজন্য নিজেদেরকেই দায়ী বলে মনে করে আর সেইসঙ্গে দেখা যায় যে, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসকরাও এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকারী উপায় খুঁজে পায়নি।”
সারা পৃথিবীতে যা ঘটে চলেছে, সেই সম্বন্ধে এই কয়েকটা উদাহরণ আমাদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পরিচালিত করে: কেন এত এত বয়স্ক ব্যক্তি অবহেলিত ও দুর্ব্যবহারের শিকার? এই বিষয়ে উন্নতির কি কোনো আশা রয়েছে? বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কোন সান্ত্বনা রয়েছে?