সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর”

“এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর”

“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে”

“এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর”

 দুটো প্রতিদ্বন্দ্বী সৈন্যদল একটা উপত্যকার দুই পাশে একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। ৪০ দিন ধরে ইস্রায়েলের লোকেরা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে এবং পলেষ্টীয় বীর গলিয়াতের অপমানের কারণে ক্রমাগত নাজেহাল হচ্ছে।—১ শমূয়েল ১৭:১-৪, ১৬.

গলিয়াৎ চিৎকার করে এই কথা বলে ইস্রায়েলীয়দের টিটকারী দেন: “তোমরা আপনাদের জন্য এক জনকে মনোনীত কর; সে আমার নিকটে নামিয়া আইসুক। সে যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া জয়ী হয়, আমাকে বধ করে, তবে আমরা তোমাদের দাস হইব; কিন্তু যদি আমি তাহাকে পরাজয় করিয়া বধ করিতে পারি, তবে তোমরা আমাদের দাস হইবে, আমাদের দাস্যকর্ম্ম করিবে। . . . অদ্য আমি ইস্রায়েলের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছি; তোমরা এক জনকে দেও, আমরা পরস্পর যুদ্ধ করি।”—১ শমূয়েল ১৭:৮-১০.

প্রাচীনকালে, বীরদের জন্য মুখোমুখি লড়াইয়ে নিজেদের সৈন্যদলের প্রতিনিধিত্ব করা অসাধারণ কোনো ব্যাপার ছিল না। সেই মুখোমুখি লড়াইয়ে যে-বীর জয়লাভ করতেন, তার দলকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হতো। কিন্তু, ইস্রায়েলের এই প্রতিদ্বন্দ্বী কেবলমাত্র একজন সাধারণ সৈন্য ছিলেন না। তিনি একজন দৈত্যাকৃতির ব্যক্তি—একজন ভয়ংকর এবং আতঙ্ক সৃষ্টিকারী শত্রু। যাই হোক, যিহোবার লোকেদের এই সৈন্যদলকে বিদ্রূপ করে গলিয়াৎ নিজেই নিজের পরিণতি ধার্য করেছেন।

এটা শুধুমাত্র সৈন্যদলের একটা প্রতিযোগিতা নয়। এটা যিহোবা এবং পলেষ্টীয়দের দেবতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। ইস্রায়েলের রাজা শৌল ঈশ্বরের শত্রুদের বিরুদ্ধে তার সৈন্যদলকে সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবর্তে ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।—১ শমূয়েল ১৭:১১.

একজন যুবক যিহোবাতে নির্ভর করেন

এই অচলাবস্থা চলাকালীন একজন যুবক, যাকে ইতিমধ্যেই ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করা হয়েছে, শৌলের সৈন্যদলে থাকা তার ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তার নাম দায়ূদ। গলিয়াতের কথা শুনে তিনি জিজ্ঞেস করেন: “এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয়টা কে যে, জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিয়াছে?” (১ শমূয়েল ১৭:২৬) দায়ূদের দৃষ্টিতে, গলিয়াৎ পলেষ্টীয়দের ও তাদের দেবতাদের উভয়কেই প্রতিনিধিত্ব করেন। ন্যায়সংগতভাবেই ক্রুদ্ধ হয়ে দায়ূদ যিহোবা ও ইস্রায়েলের পক্ষ নিতে এবং সেই দৈত্যাকৃতি পৌত্তলিক ব্যক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, রাজা শৌল বলেন: “তুমি ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে গিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবে না, কেননা তুমি বালক।”—১ শমূয়েল ১৭:৩৩.

শৌল এবং দায়ূদের দৃষ্টিভঙ্গি কতই না আলাদা! শৌলের দৃষ্টিতে, এক বালক মেষপালক একজন নির্মম দৈত্যাকৃতির ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কিন্তু, দায়ূদের দৃষ্টিতে গলিয়াৎ কেবলমাত্র একজন মানুষ, যিনি সার্বভৌম প্রভু যিহোবার বিরোধিতা করছেন। দায়ূদের সাহস তার এই দৃঢ়প্রত্যয়ের ওপর ভিত্তি করে যে, যারা ঈশ্বরের নামের ও তাঁর লোকেদের বিদ্রূপ করে তাদেরকে তিনি শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেবেন না। গলিয়াৎ তার নিজের শক্তি নিয়ে দম্ভ করেন কিন্তু দায়ূদ যিহোবাতে আস্থা রেখে এই পরিস্থিতিকে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মূল্যায়ন করেন।

‘আমি সদাপ্রভুর নামে তোমার নিকটে আসিতেছি’

দায়ূদের বিশ্বাসের দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে। তিনি স্মরণ করেন যে, একটা ভাল্লুক এবং একটা সিংহের কাছ থেকে তার মেষকে উদ্ধার করতে ঈশ্বর তাকে সাহায্য করেছিলেন। এই অল্পবয়সি মেষপালক নিশ্চিত যে, যিহোবা এখন এই দুর্দান্ত পলেষ্টীয় প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে তাকে সাহায্য করবেন। (১ শমূয়েল ১৭:৩৪-৩৭) দায়ূদ একটা সাধারণ ফিঙে বা গুলতি ও পাঁচটা চিক্কণ বা মসৃণ পাথর নিয়ে গলিয়াতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যান।

যিহোবার জোগানো শক্তিতে যুবক দায়ূদ, আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেন। তিনি সাহসের সঙ্গে সেই পলেষ্টীয়কে বলেন: “তুমি খড়্গ, বড়শা ও শল্য লইয়া আমার কাছে আসিতেছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁহাকে টিট্‌কারি দিয়াছ তাঁহারই নামে, তোমার নিকটে আসিতেছি। অদ্য সদাপ্রভু তোমাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিবেন . . . তাহাতে ইস্রায়েলে এক ঈশ্বর আছেন, ইহা সমস্ত পৃথিবী জানিতে পারিবে। আর সদাপ্রভু খড়্গ ও বড়শা দ্বারা নিস্তার করেন না, ইহাও এই সমস্ত সমাজ জানিবে; কেননা এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর।”—১ শমূয়েল ১৭:৪৫-৪৭.

ফলাফল কী ঘটে? অনুপ্রাণিত বিবরণ বলে: “দায়ূদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়া ঐ পলেষ্টীয়কে পরাজয় করিলেন, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন; কিন্তু দায়ূদের হস্তে খড়্গ ছিল না।” (১ শমূয়েল ১৭:৫০) যদিও তার হাতে কোনো খড়্গ ছিল না কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরের শক্তিশালী সমর্থন ছিল। *

সেই প্রতিযোগিতায় যিহোবাতে দায়ূদের বিশ্বাস রাখা কতই না সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল! আমাদেরকে যখন লোকভয় এবং যিহোবার রক্ষা করার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করা, এই দুটোর মধ্যে বেছে নিতে হয়, তখন বাছাইয়ের বিষয়টা স্পষ্ট: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) অধিকন্তু, আমরা যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতিগুলোকে যিহোবা ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তখন এমনকি কঠিন সমস্যাগুলোকেও আমরা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সক্ষম হই।

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৬ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি), মে/জুন দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

গলিয়াৎ কতটা বিশাল ছিলেন?

প্রথম শমূয়েল ১৭:৪-৭ পদের বিবরণ আমাদের জানায় যে, গলিয়াৎ ছয় হাতের চেয়েও বেশি—নয় ফুটের ওপরে—লম্বা ছিলেন। তার পিতলের বর্মই এই পলেষ্টীয়ের আকার ও শক্তিকে নির্দেশ করে। এটার ওজন ছিল ৫৭ কিলোগ্রাম! তার বর্শার দণ্ড একটা কাঠের মোটা বীমের মতো ছিল এবং এর লোহার ফলার ওজনই ছিল ৭ কিলোগ্রাম। খুব সম্ভবত, গলিয়াতের যুদ্ধসজ্জা দায়ুদের নিজের ওজনের চেয়েও ভারী ছিল!