বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
যিহোবার বাক্য জীবন্ত
বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
যিহোবার নিজের লোকেরা যখন তাঁর কাছ থেকে সরে পড়ে এবং মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করতে শুরু করে, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান? তারা যদি বার বার অবাধ্য হয় আর কেবল দুর্দশার সময়েই সাহায্যের জন্য তাঁকে ডাকে, তা হলে কী? এমনকি তখনও কি যিহোবা তাদের জন্য রক্ষার পথ করে দেন? বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বইটি এই প্রশ্নগুলো এবং অন্যান্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়। সা.কা.পূ. প্রায় ১১০০ সালে ভাববাদী শমূয়েল এই বইটি লেখা শেষ করেন আর এটিতে প্রায় ৩৩০ বছরের—যিহোশূয়ের মৃত্যু থেকে ইস্রায়েলের প্রথম রাজার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় পর্যন্ত—বিভিন্ন ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঈশ্বরের শক্তিশালী বাক্য অথবা বার্তার এক অংশ হিসেবে, আমাদের কাছে বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বইটির অনেক মূল্য রয়েছে। (ইব্রীয় ৪:১২) এতে লিপিবদ্ধ রোমাঞ্চকর বিবরণগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এগুলো থেকে আমরা যে-শিক্ষণীয় বিষয়গুলো শিখি, তা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং “প্রকৃতরূপে জীবন” অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে অনন্তজীবন ধরে রাখতে আমাদের সাহায্য করে। (১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯; ২ পিতর ৩:১৩) যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য পরিত্রাণের যে-কাজগুলো সম্পাদন করেন, সেগুলো ভবিষ্যতে তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের দ্বারা মহত্তর মুক্তির এক পূর্বাভাস জোগায়।
কেন বিচারকদের দরকার হয়েছিল?
(বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১:১–৩:৬)
যিহোশূয়ের নেতৃত্বে কনান দেশের রাজারা পরাজিত হওয়ার পর, ইস্রায়েলের প্রত্যেক বংশ উত্তরাধিকারে পাওয়া তাদের জায়গাতে গিয়ে দেশ অধিকার করে। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়রা সেই দেশের অধিবাসীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা ইস্রায়েলীয়দের জন্য সত্যিকারের এক ফাঁদ বলে প্রমাণিত হয়।
যিহোশূয়ের সময়ের পর যে-বংশ আসে, তারা ‘সদাপ্রভুকে জানে না, এবং ইস্রায়েলের জন্য তাঁহার কৃত কার্য্য জ্ঞাত হয় না।’ (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১০) এ ছাড়া, লোকেরা কনানীয়দের সঙ্গে বিবাহ চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া এবং তাদের দেবতাদের সেবা করা শুরু করে। তাই, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে তাদের শত্রুদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু যখন উৎপীড়ন তীব্র হয়ে ওঠে, তখন ইস্রায়েল সন্তানরা সাহায্যের জন্য সত্য ঈশ্বরকে ডাকে। এই ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে, যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে তাদের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একের পর এক যে-বিচারকদের উৎপন্ন করেন তার বিবরণ প্রকাশিত হয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১:২, ৪—যিহূদাকে দেওয়া দেশের অংশটা অধিকার করার জন্য তাকে প্রথম বংশ হিসেবে কেন নির্বাচন করা হয়? সাধারণত, এই সুযোগটা যাকোবের প্রথমজাত রূবেণের বংশকে দেওয়ার কথা। কিন্তু যাকোব তার মৃত্যুশয্যায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, প্রথমজাত হিসেবে রূবেণ পাপ করার ফলে তার অধিকার হারানোর দরুণ শ্রেষ্ঠ হতে পারবেন না। শিমিয়োন ও লেবি, যারা প্রচণ্ডতার বা নিষ্ঠুরতার সঙ্গে কাজ করেছিল, তাদের ইস্রায়েলে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৪৯:৩-৫, ৭) তাই, এই সুযোগ লাভ করার জন্য পরবর্তী ব্যক্তিটি ছিলেন যাকোবের চতুর্থ পুত্র যিহূদা। শিমিয়োন, যিনি যিহূদার সঙ্গে গিয়েছিলেন, তিনি যিহুদার বিরাট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেশের ছোট ছোট এলাকা পেয়েছিলেন। *—যিহোশূয়ের পুস্তক ১৯:৯.
১:৬, ৭—কেন পরাজিত রাজাদের হস্তপদের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলা হয়েছিল? যে-ব্যক্তি তার হস্তপদের বৃদ্ধাঙ্গুলি বা হাত ও পায়ের বুড়োআঙুল হারিয়েছিলেন তিনি স্পষ্টতই যুদ্ধ করার জন্য অক্ষম ছিলেন। হাতের বুড়োআঙুল ছাড়া, কীভাবে একজন সৈনিক তলোয়ার অথবা বর্শা চালাতে পারতেন? আর পায়ের বুড়োআঙুল হারানোর ফলে একজন ব্যক্তি সঠিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ব্যর্থ হবেন।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
২:১০-১২. আমাদের অবশ্যই এক নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নের কার্যক্রম থাকতে হবে, যাতে ‘সদাপ্রভুর উপকার ভুলিয়া না যাই।’ (গীতসংহিতা ১০৩:২) বাবামাদের, তাদের সন্তানদের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যের সত্য গেঁথে দেওয়া দরকার।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৯.
২:১৪, ২১, ২২. যিহোবা কোনো উদ্দেশ্যে—তাদেরকে ভর্ৎসনা করার, বিশোধন করার এবং তাঁর কাছে ফিরে আসতে চালিত করার জন্য—তাঁর অবাধ্য লোকেদের প্রতি মন্দ বিষয়গুলো ঘটতে অনুমতি দেন।
যিহোবা বিচারকদের উৎপন্ন করেন
(বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৩:৭–১৬:৩১)
অৎনীয়েলের একজন মেসোপটেমীয় রাজার কাছে ইস্রায়েলের আট বছরের পরাধীনতার শেষ আনার দ্বারা বিচারকদের বিজয়ের রোমাঞ্চকর কাহিনী শুরু হয়। বিচারক এহূদ সাহসের সঙ্গে এক কৌশল ব্যবহার করে মোয়াবের স্থূলকায় বা মোটাসোটা রাজা ইগ্লোনকে হত্যা করেন। সাহসী শম্গর একাই একটা গোচারণের পাঁচনী ব্যবহার করে ৬০০ জন পলেষ্টীয়কে আঘাত করেন। দবোরা যিনি একজন ভাববাদিনী হিসেবে সেবা করেন, তার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে এবং যিহোবার সাহায্যে বারক এবং সামান্য সুসজ্জিত তার দশ হাজার লোকের সৈন্যবাহিনী সীষরার শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে। যিহোবা গিদিয়োনকে উৎপন্ন করেন এবং তাকে ও তার ৩০০ জন লোককে মিদিয়নীয়দের ওপর জয়লাভ করতে দেন।
যিপ্তহের মাধ্যমে, যিহোবা অম্মোনীয়দের থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করেন। ইস্রায়েলে বিচার করে এমন ১২ জনের মধ্যে তোলয়, যায়ীর, ইব্সন, এলোন এবং অব্দোনও রয়েছে। বিচারকদের সময়কাল শিম্শোনকে দিয়ে শেষ হয়, যিনি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৪:৮—কেন বারক ভাববাদিনী দবোরাকে তার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেছিলেন? স্পষ্টতই, বারক সীষরার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে একা যেতে নিজেকে অযোগ্য মনে করেছিলেন। তার সঙ্গে ভাববাদিনীর থাকা তাকে এবং তার লোকেদের পুনরায় আশ্বাস দেবে যে, তাদের প্রতি ঈশ্বরের নির্দেশনা রয়েছে আর এটা তাদের আস্থা জোগাবে। তাই, দবোরা তার সঙ্গে থাকুক বারকের এই জোরাজুরি দুর্বলতার এক লক্ষণ ছিল না, বরং দৃঢ় বিশ্বাসের এক লক্ষণ ছিল।
৫:২০—কীভাবে আকাশমণ্ডল থেকে তারাগণ বারকের হয়ে যুদ্ধ করেছিল? স্বর্গদূতেরা সাহায্য করেছিল নাকি উল্কাবৃষ্টি হয়েছিল যেটাকে সীষরার বিজ্ঞ লোকেরা অশুভ লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল কিংবা সম্ভবত সীষরার পক্ষে করা জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু বলে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে, এতে কোনো ধরনের ঐশিক হস্তক্ষেপ ছিল।
৭:১-৩; ৮:১০—কেন যিহোবা বলেছিলেন যে, ১,৩৫,০০০ জন শত্রুর বিরুদ্ধে গিদিয়োনের ৩২,০০০ জন লোক ছিল অনেক বেশি? কারণ যিহোবাই গিদিয়োন ও তার লোকেদেরকে জয়লাভ করতে দিয়েছিলেন। ঈশ্বর চাননি তারা এই মনে করুক যে, তারা তাদের নিজেদের শক্তিতে মিদিয়নীয়দের পরাজিত করেছে।
১১:৩০, ৩১—মানত করার সময় যিপ্তহ কি কোনো মনুষ্য বলিদানের কথা ভেবেছিলেন? এই ধরনের এক চিন্তা যিপ্তহের মনে একেবারেই ছিল না, কারণ ব্যবস্থায় উল্লেখ করা হয়েছিল: “তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, যে পুত্ত্র বা কন্যাকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করায়।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০) কিন্তু যিপ্তহ একজন ব্যক্তির কথাই ভেবেছিলেন, কোনো পশু নয়। বলিদানের উপযোগী পশু সম্ভবত ইস্রায়েলীয়দের বাড়িতে রাখা হতো না। আর একটা পশু বলিদান করা উল্লেখযোগ্য কিছু হতো না। যিপ্তহ অবগত ছিলেন যে, যে-ব্যক্তি তার বাড়ি থেকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসছে সে সম্ভবত তার মেয়ে হবে। তাকেই “হোমবলিরূপে উৎসর্গ” করা হবে যে কিনা মন্দির সম্পর্কিত যিহোবার একাগ্র সেবায় উৎসর্গীকৃত হবে।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৩:১০. আধ্যাত্মিক কাজকর্মে সাফল্য মানুষের প্রজ্ঞার ওপর নয় কিন্তু যিহোবার আত্মার ওপর নির্ভর করে।—গীতসংহিতা ১২৭:১.
৩:২১. এহূদ দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে খড়্গ ব্যবহার করেছিলেন। আমাদের অবশ্যই “আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য” ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর অর্থ হল যে, আমাদেরকে অবশ্যই সাহসের সঙ্গে আমাদের পরিচর্যায় শাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।—ইফিষীয় ৬:১৭; ২ তীমথিয় ২:১৫.
৬:১১-১৫; ৮:১-৩, ২২, ২৩. গিদিয়োনের বিনয়ী মনোভাব আমাদের তিনটে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় শেখায়: (১) যখন পরিচর্যার কোনো সুযোগ আমাদের জন্য প্রসারিত করা হয়, তখন সেটার মাধ্যমে যে-খ্যাতি বা মর্যাদা আমরা পেতে পারি, সেই বিষয়ে চিন্তা না করে, বরং আমাদের সেটার সঙ্গে জড়িত দায়িত্বের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত। (২) যাদের ঝগড়া করার মনোভাব রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময়, বিনয়ী মনোভাব প্রদর্শন করা বিজ্ঞতার কাজ। (৩) বিনয়ী মনোভাব আমাদেরকে পদমর্যাদা সম্বন্ধে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়া থেকে বিরত রাখে।
৬:১৭-২২, ৩৬-৪০. আমাদেরকেও অবশ্যই সতর্ক হতে এবং ‘সকল আত্মাকে বিশ্বাস না করিতে’ হবে। পরিবর্তে, আমাদের ‘আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখা’ দরকার যে, “তাহারা ঈশ্বর হইতে কি না।” (১ যোহন ৪:১) একজন নতুন খ্রিস্টান প্রাচীন যে-পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও অভিজ্ঞ একজন প্রাচীনের পরামর্শ নেওয়া তার জন্য বিজ্ঞের কাজ হবে।
৬:২৫-২৭. গিদিয়োন বিচক্ষণতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন, যাতে তার বিপক্ষদের অযথা রাগান্বিত না করেন। সুসমাচার প্রচার করার সময়, আমরা যেভাবে কথা বলি সেটার দ্বারা আমাদের অবশ্যই অন্যদেরকে অযথা অসন্তুষ্ট না করার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
৭:৬. যিহোবাকে সেবা করার ব্যাপারে আমাদের গিদিয়োনের ৩০০ জন লোকের মতো সজাগ ও সতর্ক হওয়া উচিত।
৯:৮-১৫. গর্বের সঙ্গে কাজ করা এবং পদমর্যাদা অথবা ক্ষমতার জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করা কতই না মূর্খতার কাজ!
১১:৩৫-৩৭. তার কন্যার মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস ও ত্যাগস্বীকারের এক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে যিপ্তহের উত্তম উদাহরণ নিঃসন্দেহে এক হাতিয়ারস্বরূপ ছিল। বাবামারা তাদের সন্তানদের জন্য এই ধরনের এক উদাহরণ স্থাপন করতে পারে।
১১:৪০. যে-ব্যক্তি যিহোবাকে সেবা করার এক ইচ্ছুক মনোভাব প্রদর্শন করেন, তার প্রশংসা করা সেই ব্যক্তিকে উৎসাহিত করে।
১৩:৮. সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার সময়, বাবামায়েদের যিহোবার পরিচালনার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করা এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।—২ তীমথিয় ৩:১৬.
১৪:১৬, ১৭; ১৬:১৬. কান্নাকাটি এবং ঘ্যানঘ্যানানি করে অন্য ব্যক্তির ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্পর্ককে নষ্ট করে।—হিতোপদেশ ১৯:১৩; ২১:১৯.
ইস্রায়েলের অন্যান্য অপরাধ
(বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৭:১–২১:২৫)
বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বইয়ের শেষ অংশে দুটো উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ রয়েছে। প্রথম ঘটনাটি মীখা নামে এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, যিনি তার বাড়িতে একটা প্রতিমা স্থাপন করেন এবং তার হয়ে যাজক হিসেবে সেবা করার জন্য একজন লেবীয়কে কাজ দেন। দানীয়রা লয়িশ বা লেশম নগর ধ্বংস করার পর, তাদের নিজস্ব নগর গড়ে তোলে এবং তার নাম রাখে দান। মীখার প্রতিমা ও তার যাজককে ব্যবহার করে, তারা দানে আরেক ধরনের উপাসনা প্রবর্তন করে। স্পষ্টতই, যিহোশূয়ের মৃত্যুর আগে লয়িশ দখল করা হয়।—যিহোশূয়ের পুস্তক ১৯:৪৭.
দ্বিতীয় ঘটনাটি যিহোশূয়ের মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরে ঘটে। বিন্যামীনীয় নগর গিবিয়াতে কয়েকজন লোকের করা ব্যাপক যৌন অপরাধ প্রায় সমগ্র বিন্যামীন বংশের ধ্বংস আনার দিকে পরিচালিত করে—মাত্র ৬০০ জন পুরুষ রক্ষা পায়। কিন্তু, এক বাস্তবধর্মী ব্যবস্থা তাদেরকে স্ত্রী খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দেয় আর তাই দায়ূদের শাসনকালের মধ্যে তাদের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬০,০০০ জন যোদ্ধায় পৌঁছায়।—১ বংশাবলি ৭:৬-১১.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১৭:৬; ২১:২৫—যদি “যাহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইত, সে তাহাই করিত,” তা হলে এটা কি অরাজকতাকে আরও বৃদ্ধি করত? অবশ্যই নয়, কারণ যিহোবা তাঁর লোকেদের পরিচালনা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি তাদেরকে তাঁর পথে চলতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা এবং যাজকবর্গকে দিয়েছিলেন। ঊরীম ও তুম্মীমের মাধ্যমে, মহাযাজক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারতেন। (যাত্রাপুস্তক ২৮:৩০) এ ছাড়া, প্রত্যেক নগরে প্রাচীনবর্গ ছিল, যারা উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ ছিল। একজন ইস্রায়েলীয় যখন এই ব্যবস্থাগুলোকে কাজে লাগাতেন, তখন তার বিবেককে চালিত করার এক উপযুক্ত নির্দেশক তার ছিল। এভাবে “যাহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইত” তা করা ভাল ফল নিয়ে আসত। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি যদি ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করতেন এবং আচারব্যবহার ও উপাসনার ক্ষেত্রে নিজের মতো সিদ্ধান্তগুলো নিতেন, তা হলে ফল খারাপ হতো।
২০:১৭-৪৮—অন্য বংশকে পরাজিত করতে কেন যিহোবা বিন্যামীনীয়দেরকে দুবার সুযোগ দিয়েছিলেন, যখন কিনা বিন্যামীনীয়দেরকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল? বিশ্বস্ত বংশদেরকে প্রথমে বিরাট ক্ষতি ভোগ করতে দিয়ে যিহোবা ইস্রায়েল থেকে মন্দতাকে সরাতে তাদের দৃঢ়সংকল্পকে পরীক্ষা করেছিলেন।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১৯:১৪, ১৫. আতিথেয়তা দেখানোর ব্যাপারে গিবিয়ার লোকেদের অনিচ্ছুক মনোভাব নৈতিক ত্রুটির এক ইঙ্গিত ছিল। খ্রিস্টানদের ‘অতিথি-সেবায় রত হওয়ার’ জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে।—রোমীয় ১২:১৩.
মুক্তি একেবারে সামনে
খুব শীঘ্রই, খ্রিস্ট যিশুর হাতে ঈশ্বরের রাজ্য দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করবে এবং সরল ও সিদ্ধ ব্যক্তিদের জন্য এক মহামুক্তি নিয়ে আসবে। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২; দানিয়েল ২:৪৪) ‘সদাপ্রভুর সর্ব্ব শত্রু বিনষ্ট হইবে, কিন্তু তাঁহার প্রেমকারিগণ সপ্রতাপে গমনকারী সূর্য্যের সদৃশ হইবে।’ (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:৩১) বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বই থেকে আমরা যা শিখেছি, তা প্রয়োগ করার দ্বারা আসুন আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা যিহোবার প্রেমকারীগণের মাঝে আছি।
বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণে যে-মৌলিক সত্যটি বার বার প্রকাশ করা হয়েছে সেটা হল: যিহোবার প্রতি বাধ্যতা প্রচুর আশীর্বাদ আর অবাধ্যতা চরম পরিণতিগুলো নিয়ে আসে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১১:২৬-২৮) তাই, আমাদের কাছে প্রকাশিত ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি ‘অন্তঃকরণের সহিত আজ্ঞাবহ’ হওয়া কতই না জরুরি!—রোমীয় ৬:১৭; ১ যোহন ২:১৭.
[পাদটীকা]
^ লেবীয়দের ইস্রায়েল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৪৮টা নগর ব্যতিরেকে প্রতিজ্ঞাত দেশে কোনো উত্তরাধিকার দেওয়া হয়নি।
[২৫ পৃষ্ঠার মানচিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
“সদাপ্রভু বিচারকর্ত্তৃগণকে উৎপন্ন করিতেন, আর তাঁহারা লুটকারিগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে নিস্তার করিতেন।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১৬
বিচারকরা
১. অৎনীয়েল (মনঃশির বংশ)
২. এহূদ (যিহূদার বংশ)
৩. শম্গর (যিহূদার বংশ)
৪. বারক (নপ্তালি বংশ)
৫. গিদিয়োন (ইষাখরের বংশ)
৬. তোলয় (মনঃশির বংশ)
৭. যায়ীর (মনঃশির বংশ)
৮. যিপ্তহ (গাদের বংশ)
৯. ইব্সন (আশেরের বংশ)
১০. এলোন (সবূলূনের বংশ)
১১. আব্দোন (ইফ্রয়িমের বংশ)
১২. শিম্শোন (যিহূদার বংশ)
দান
মনঃশি
নপ্তালি
আশের
সবূলূন
ইষাখর
মনঃশি
গাদ
ইফ্রয়িম
দান
বিন্যামীন
রূবেণ
যিহূদা
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
দবোরাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বারকের জোরাজুরি করা থেকে আপনি কোন শিক্ষণীয় বিষয় শিখেছেন?