গ্র্যাজুয়েশন ডে —এক চমৎকার দিন
গ্র্যাজুয়েশন ডে —এক চমৎকার দিন
“আমাদের এক চমৎকার দিন দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে। ঝলমলে রোদ। নীল আকাশ। সবুজ ঘাস। পাখির কলকাকলি। এক চমৎকার দিনের সমস্ত পরিবেশই আমাদের ছিল আর আমরা হতাশ হতেও যাচ্ছি না। যিহোবা হতাশার কোনো ঈশ্বর নন। তিনি হলেন আশীর্বাদদানকারী ঈশ্বর।”
যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর একজন সদস্য ভাই স্যামুয়েল হার্ডের এই মন্তব্য দিয়ে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড এর ১১৭তম ক্লাসের গ্র্যাজুয়েশন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। সেই উত্তম কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল, গঠনমূলক বাইবেলভিত্তিক পরামর্শ ও সেইসঙ্গে স্থানীয় এবং মিশনারি ক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, নিউ ইয়র্ক প্যাটারসনের ওয়াচটাওয়ার শিক্ষাকেন্দ্র এবং অডিও ও ভিডিওর দ্বারা সংযুক্ত ব্রুকলিনের ভবনগুলোতে উপস্থিত মোট ৬,৯৭৪ জনের জন্য এটা ছিল এক চমৎকার দিন।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য উৎসাহমূলক বাক্য
যুক্তরাষ্ট্রের শাখা কমিটির একজন সদস্য জন কিকট, তার বক্তৃতায় উৎসাহমূলক বাক্য বলেছিলেন, যেটার মূলভাব ছিল, “মিশনারি হিসেবে আনন্দ বজায় রাখুন।” তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, গিলিয়েড ছাত্রছাত্রীরা তাদের আনন্দের জন্য পরিচিত, যা এই গ্র্যাজুয়েশনের সময় স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। স্কুল চলাকালে শাস্ত্র থেকে নির্দেশনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে আর তাই তারাও এখন অন্যদের একই আনন্দ পেতে সাহায্য করার জন্য প্রশিক্ষিত হয়েছে। কীভাবে? মিশনারি হিসেবে তাদের পরিচর্যায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে। যিশু বলেছিলেন: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য [“সুখী,” NW] হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) নতুন মিশনারিরা যখন ‘পরম ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বর’ যিহোবাকে অনুকরণ করে, যিনি অন্যদের সত্য জানার সুযোগ দিয়েছেন, তখন তারা তাদের নিজেদের আনন্দ বজায় রাখতে সমর্থ হবে।—১ তীমথিয় ১:১১.
কার্যক্রমের পরবর্তী বক্তা ছিলেন পরিচালক গোষ্ঠীর আরেকজন সদস্য ডেভিড স্প্ল্যান, যার বক্তৃতার মূলভাব ছিল, “কীভাবে আপনি মানিয়ে চলবেন?” নিঃসন্দেহে, ঐক্যে বাস করা উত্তম এবং মনোহর যদিও এর জন্য “সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ” হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। (১ করিন্থীয় ৯:২২; গীতসংহিতা ১৩৩:১) ভাই স্প্ল্যান উল্লেখ করেন যে, মিশনারি কাজের সময় গ্র্যাজুয়েটিং ছাত্রছাত্রীরা অনেক লোকের সঙ্গে মিশবে—ক্ষেত্রের বিভিন্ন লোক, সহমিশনারি, তাদের নতুন মণ্ডলীর ভাইবোন এবং শাখা অফিসের সেই লোকেদের সঙ্গে যারা প্রচার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজে নির্দেশনা দেয়। একে অপরের সঙ্গে কীভাবে যতদূর সম্ভব মনোরম সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেই বিষয়ে তিনি এই ব্যবহারিক পরামর্শগুলো দেন: স্থানীয় ভাষা শিখুন, স্থানীয় রীতিনীতিগুলোর ব্যাপারে সংবেদনশীল হোন, সহমিশনারিদের একান্ত বিষয়গুলোর প্রতি সম্মান দেখান এবং যারা নেতৃত্ব দেয় তাদের বাধ্য থাকুন।—ইব্রীয় ১৩:১৭.
এর পরে, গিলিয়েড নির্দেশক লরেন্স বোয়েন জিজ্ঞেস করেন, “আপনাদের কী যোহন ৭:২৪) অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে, সকলকে ‘মনুষ্যের ভাবনার’ বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং এর পরিবর্তে ‘ঈশ্বরের ভাবনা’ ভাবতে হবে। (মথি ১৬:২২, ২৩) এমনকি আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদেরও ক্রমাগত তাদের চিন্তাভাবনাকে সমন্বয় করতে হবে। সমুদ্রের জাহাজের মতো, এখন সমন্বয় করার মানে হতে পারে হয় লক্ষ্যে পৌঁছানো নতুবা আধ্যাত্মিক জাহাজভগ্নের শিকার হওয়া। নিয়মিত বাইবেলের বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করা আমাদের ‘ঈশ্বরের ভাবনা’ ভাবতে সাহায্য করে।
মনে হয়?” তিনি ছাত্রছাত্রীদের মনে করিয়ে দেন যে, যারা ‘দৃশ্য মতে বিচার করিয়াছিল,’ তারা যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করেনি। (গিলিয়ড স্কুল এর আরেকজন নির্দেশক ওয়ালেস লিভারেন্স, কার্যক্রমের এই অংশটি শেষ করেন। যিশাইয় ৫৫:১ পদের ওপর ভিত্তি করে, তার মূলভাব ছিল “আপনি কী ক্রয় করবেন?” তিনি ছাত্রছাত্রীদেরকে সতেজতা, আনন্দ এবং আমাদের দিনের জন্য ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বার্তা থেকে আসা পুষ্টি “ক্রয়” করার জন্য উৎসাহ দেন। যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বরের এই বাক্যকে জল, দ্রাক্ষারস এবং দুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছে। কীভাবে তা “বিনা রৌপ্যে, বিনা মূল্যে” ক্রয় করা যেতে পারে? ভাই লিভারেন্স ব্যাখ্যা করেন যে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিয়ে এবং অশাস্ত্রীয় চিন্তাভাবনা ও পথের পরিবর্তে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা ও পথ গ্রহণ করে। (যিশাইয় ৫৫:২, ৩, ৬, ৭) তা করার মাধ্যমে নতুন মিশনারিরা বিদেশের কার্যভারে টিকে থাকতে পারবে। অসিদ্ধ মানুষেরা প্রায়ই চিন্তা করে যে, বস্তুগত আরাম-আয়েশের পিছনে ছোটার ওপর সুখ নির্ভর করে। “সেটা ক্রয় করবেন না,” বক্তা জোরালো পরামর্শ দেন। “সেই চিন্তাভাবনা ক্রয় করবেন না। ঈশ্বরের ভাববাণীমূলক বাক্য নিয়ে গঠনমূলক অধ্যয়ন করার জন্য সময় আলাদা করে রাখুন। এটা আপনাকে সতেজ করতে, শক্তিশালী করতে এবং আপনার মিশনারি কার্যভারে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে।”
ছাত্রছাত্রীদের আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা এবং সাক্ষাৎকার
ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করেছিল। গিলিয়েডের আরেকজন নির্দেশক মার্ক নুমারের আলোচনায়, ক্লাসের কয়েক জন সেই অভিজ্ঞতাগুলো পুনরায় অভিনয় করে দেখিয়েছিল, যা “সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি,” এই মূলভাবটি তুলে ধরেছিল। (রোমীয় ১:১৬) এই অভিজ্ঞ পরিচারকরা কীভাবে ঘরে ঘরে, রাস্তায় রাস্তায় এবং বিপণী কেন্দ্রগুলোতে সাক্ষ্য দিয়েছে, তা শোনা দর্শকরা উপভোগ করেছে। যে-ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য ভাষা জানে, তারা তাদের মণ্ডলীর এলাকায় সেই ভাষাগুলোতে কথা বলে এমন লোকেদের কাছে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। অন্যেরা যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি উত্তমভাবে ব্যবহার করেছিল, পুনর্সাক্ষাতে এবং গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার জন্য সেগুলো ব্যবহার করেছিল। তারা সুসমাচার প্রচার করার জন্য “লজ্জিত” ছিল ‘না।’
ভাই উইলিয়াম ননকিস, যিনি পরিচর্যা বিভাগে নিযুক্ত রয়েছেন, তিনি বুরকিনা ফাসো, লাটভিয়া এবং রাশিয়ার অভিজ্ঞ মিশনারিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। “বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের যিহোবা প্রেমের সঙ্গে পুরস্কার প্রদান করেন,” এই মূলভাবের ওপর তারা ব্যবহারিক পরামর্শ দিয়েছিল। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন ভাই ছাত্রছাত্রীদের গিদিয়োনের ৩০০ জন সৈন্যের বিষয়ে স্মরণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। প্রত্যেক সৈন্যের নির্দিষ্ট একটা কার্যভার ছিল, যা গিদিয়োনের অভিযানে সফল হতে সাহায্য করেছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৭:১৯-২১) একইভাবে, যে-মিশনারিরা তাদের কার্যভারে রত থাকে, তারা পুরস্কৃত হয়।
এর পরে, প্যাটারসনের একজন নির্দেশক স্যামুয়েল রবারসনের দ্বারা পরিচালিত সাক্ষাৎকারগুলোতে ‘সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হোন’ মূলভাবের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেনেগাল, গুয়াম, লাইবেরিয়া এবং মাদাগাস্কার থেকে আসা শাখা কমিটির চার জন সদস্যের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এই দেশগুলোতে মোট ১৭০ জন মিশনারি সেবা করছে। গ্র্যাজুয়েটিং ছাত্রছাত্রীরা মন্তব্যগুলো থেকে শিখেছে যে, শাখা কমিটিগুলো কীভাবে নতুন মিশনারিদের তাদের কার্যভারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। বেশির ভাগ সময়ই এর অর্থ হল, সেই রীতিনীতিগুলো সম্বন্ধে জানা, যা পাশ্চাত্যের মানগুলোর কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে লোকেদের এমনকি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতেও বন্ধু হিসেবে একে অন্যের হাত ধরে হাঁটতে দেখা খুবই সাধারণ বিষয়। গুয়াম শাখার অধীনে কিছু জায়গায় অস্বাভাবিক খাবার পরিবেশন করা হয়। কিন্তু, অন্যেরা এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে এবং নতুন মিশনারিরাও তা করতে পারে।
পরিচালক গোষ্ঠীর একজন সদস্য গায় পিয়ার্স “‘আমাদের প্রভুর রাজ্যের’ প্রতি অনুগত থাকুন,” নামক বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন। তিনি দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “যিহোবা উদ্দেশ্য সহকারে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সৃষ্টির পিছনে এক উদ্দেশ্য ছিল। এই পৃথিবীর বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়নি। এটা অদম্যভাবে এর পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলেছে। কোনোকিছুই এটাকে পরিবর্তিত করতে পারবে না।” (আদিপুস্তক ১:২৮) ভাই পিয়ার্স প্রথম মানব আদমের পাপের কারণে যে-সমস্যাগুলো এসেছে, সেগুলো সত্ত্বেও ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রতি অনুগতভাবে বশীভূত থাকতে সকলকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। “আমরা বিচারের সময়ে বাস করছি। সৎহৃদয়ের লোকেদের সত্য জানতে সাহায্য করার জন্য তাদের কাছে যেতে আমাদের হাতে অল্প সময় রয়েছে। রাজ্যের সুসমাচার নিয়ে অন্যদের কাছে পৌঁছানোর জন্য উত্তমভাবে সময়কে কাজে লাগান,” ভাই পিয়ার্স জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। যারা সদয় বা অনুগতভাবে ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে, তারা তাঁর সমর্থন সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারে।—গীতসংহিতা ১৮:২৫.
শেষ অংশে সভাপতি সারা পৃথিবীর শাখাগুলো থেকে আসা অভিবাদন এবং শুভেচ্ছার অভিব্যক্তি পড়ে শোনান। এরপর তিনি সেই গ্র্যাজুয়েটিং ছাত্রছাত্রীদের উপাধিপত্র দেন, যাদের মধ্যে একজন ক্লাসের পক্ষ থেকে একটা চিঠি পড়ে শোনান, যেটার মধ্যে তারা যে-প্রশিক্ষণ পেয়েছে, সেটার প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করা হয়েছিল। সবচেয়ে চমৎকার একটা দিনের জন্য এটা ছিল এক উত্তম উপসংহার, যা উপস্থিত সকলে দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
[২৩ পৃষ্ঠার বাক্স]
ক্লাসের পরিসংখ্যান
যতগুলো দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা এসেছে: ১১
যতগুলো দেশে তাদের পাঠানো হয়েছে: ২২
মোট ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা: ৪৮
গড় বয়স: ৩৪.৮
সত্যে থাকার গড় বছর: ১৮.৩
পূর্ণসময়ের পরিচর্যার গড় বছর: ১৩.৪
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড এর ১১৭তম গ্র্যাজুয়েটিং ক্লাস
নিচের তালিকাতে সামনে থেকে পিছনে সারিগুলোকে সংখ্যান্বিত করা হয়েছে এবং প্রত্যেক সারিতে বাম দিক থেকে ডান দিকে নামগুলো তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে।
(১) থম্পসন, ই.; নরভেল, জি.; পাওয়েল, টি.; কোজা, এম.; ম্যাকিনটাইর, টি. (২) রাইলি, এ.; ক্ল্যাটন, সি.; আ্যলেন, জে.; ব্লাংকো, এ.; মুনিয়স, এল.; রাস্টাড, এন. (৩) গেরিরো, জেড.; গারসিয়া, কে; ম্যাকারলি, ডি.; ইশিকাওয়া, টি.; ব্লাংকো, জি. (৪) ম্যাকিনটাইর, এস.; ক্রুজ, ই.; গেরিরো, জে.; রিচি, ও.; আবেইয়ানাদা, এল.; গারসিয়া, আর. (৫) পাওয়েল, জি; ফিসকা, এইচ.; মুনিয়স, ভি.; বাউমান, ডি.; শ. এস.; ব্রাউন, কে.; ব্রাউন এল. (৬) শ. সি.; রাইলি এ.; পিলোকুইন, সি.; মিউয়েন্খ্, এন.; ম্যাকারলি, ডি.; ইশিকাওয়া, কে. (৭) মিউয়েন্খ্, এম.; পিলোকুইন, জে.; কোজা, টি.; আবেইয়ানাদা, এম.; আ্যলেন, কে.; রিচি, ই.; নরভেল, টি. (৮) ক্রুজ, জে.; বাউমান, এইচ.; ক্ল্যাটন, জেড.; ফিসকা, ই.; থম্পসন, এম.; রাস্টাড, জে.