সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি ঈশ্বরকে আনন্দিত করতে পারেন

আপনি ঈশ্বরকে আনন্দিত করতে পারেন

আপনি ঈশ্বরকে আনন্দিত করতে পারেন

 আমরা কি আসলেই ঈশ্বরের অনুভূতিতে প্রভাব ফেলতে পারি? ঈশ্বরের কি আনন্দিত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে? একটি অভিধান “ঈশ্বর” শব্দটিকে “সর্বোচ্চ অথবা সর্বমহান বাস্তব সত্তা” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। সেই বিস্ময়কর বাস্তব সত্তা যদি কেবলমাত্র শক্তিই হয়, তা হলে কী? আমরা কি এমনটা আশা করতে পারি যে, এক নৈর্ব্যক্তিক শক্তি আনন্দিত হতে পারে? কখনোই না। কিন্তু, ঈশ্বর সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে তা বিবেচনা করুন।

“ঈশ্বর আত্মা,” যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন। (যোহন ৪:২৪) আত্মা হল জীবনের এমন এক অবস্থা, যা মানুষদের চেয়ে আলাদা। মানুষের চোখে অদৃশ্য হলেও, আত্মার একটা দেহ রয়েছে—‘আত্মিক দেহ।’ (১ করিন্থীয় ১৫:৪৪; যোহন ১:১৮) ভাষালঙ্কার ব্যবহার করে, বাইবেল এমনকি ঈশ্বরের চোখ, কান, হাত এবং আরও অন্যান্য অঙ্গ থাকার বিষয়ে বলে। * এ ছাড়া, ঈশ্বরের একটি নাম রয়েছে, যা হল যিহোবা। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) তা হলে, বাইবেলের ঈশ্বর হচ্ছেন এক আত্মিক ব্যক্তি। “তিনিই জীবন্ত ঈশ্বর ও অনন্তকালস্থায়ী রাজা।”—যিরমিয় ১০:১০.

একজন বাস্তব জীবন্ত ব্যক্তি হিসেবে যিহোবা চিন্তা ও কাজ করতে সমর্থ। তিনি বিভিন্ন গুণ ও অনুভূতি, পছন্দ ও অপছন্দ প্রকাশ করেন। বাস্তবিকই, বাইবেল সেই সমস্ত অভিব্যক্তিতে পূর্ণ, যা প্রকাশ করে যে কোন বিষয়গুলো তাঁকে খুশি করে ও কোনগুলো তাঁকে অখুশি করে। মনুষ্য-নির্মিত দেবতা ও প্রতিমাগুলো যেখানে কেবলমাত্র তাদের মনুষ্য উদ্ভাবকদের স্বভাব বা গুণগুলো প্রতিফলিত করে, সেখানে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা হলেন স্বয়ং আবেগের উৎস, যিনি মানুষের মধ্যে সেগুলো গেঁথে দিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১:২৭; যিশাইয় ৪৪:৭-১১.

নিঃসন্দেহে যিহোবা হলেন ‘ধন্য ঈশ্বর’ বা সুখী ঈশ্বর। (১ তীমথিয় ১:১১) তিনি কেবলমাত্র তাঁর সৃষ্টির কাজেই আনন্দ করেন না কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনেও আনন্দিত হন। ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা ঘোষণা করেন: “আমি আপনার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিব . . . আমি বলিয়াছি, আর আমি সফল করিব; আমি কল্পনা করিয়াছি, আর আমি সিদ্ধ করিব।” (যিশাইয় ৪৬:৯-১১) গীতরচক গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু আপন কার্য্য সকলে আনন্দ করুন।” (গীতসংহিতা ১০৪:৩১) কিন্তু ঈশ্বরের আনন্দের আরেকটা উৎস রয়েছে। তিনি বলেন: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) চিন্তা করে দেখুন যে, আমরা ঈশ্বরকে আনন্দিত করতে পারি, এটা বলতে আসলে কী বোঝায়!

আমরা ঈশ্বরের হৃদয়কে যেভাবে আনন্দিত করতে পারি

পরিবারের মস্তক নোহ কীভাবে যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। নোহ “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইলেন” কারণ “নোহ তাৎকালিক লোকদের মধ্যে ধার্ম্মিক ও সিদ্ধ লোক ছিলেন।” সেই সময়কার দুষ্ট লোকেদের বৈসাদৃশ্যে, নোহের বিশ্বাস ও বাধ্যতা ঈশ্বরকে এতটাই খুশি করেছিল যে, তার সম্বন্ধে এইরকম বলা যেতে পারে, “নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” (আদিপুস্তক ৬:৬, ৮, ৯, ২২) “বিশ্বাসে নোহ . . . ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৭) যিহোবা নোহের ব্যবহারে খুশি হয়েছিলেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে মানব ইতিহাসের সেই অশান্ত সময়ের মধ্যে দিয়ে রক্ষা করে আশীর্বাদ করেছিলেন।

কুলপতি অব্রাহামও যিহোবার অনুভূতি সম্বন্ধে পুরোপুরিভাবে অবগত ছিলেন। ঈশ্বরের চিন্তাধারা সম্বন্ধে তার গভীর জ্ঞান স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছিল যখন যিহোবা তাকে জানিয়েছিলেন যে, সদোম ও ঘমোরা সেখানকার অধিবাসীদের ভ্রষ্টতার কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। অব্রাহাম যিহোবাকে ভালভাবে জানতেন, তাই তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, ঈশ্বর দুষ্ট লোকের সঙ্গে ধার্মিকেরও মৃত্যুদণ্ড দেবেন, তা চিন্তাই করা যায় না। (আদিপুস্তক ১৮:১৭-৩৩) বেশ কয়েক বছর পর, ঈশ্বরের পরিচালনার বাধ্য হয়ে অব্রাহাম “ইস্‌হাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন,” কারণ “তিনি মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও উত্থাপন করিতে সমর্থ।” (ইব্রীয় ১১:১৭-১৯; আদিপুস্তক ২২:১-১৮) অব্রাহাম ঈশ্বরের অনুভূতিকে এতটাই অনুভব করেছিলেন এবং দৃঢ়বিশ্বাস ও বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন যে, “তিনি ‘ঈশ্বরের বন্ধু’ এই নাম পাইলেন।”—যাকোব ২:২৩.

আরেক জন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরের হৃদয়কে আনন্দিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন, তিনি হলেন প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ। তার সম্বন্ধে যিহোবা বলেছিলেন: “‘আমি যিশয়ের পুত্ত্র দায়ূদকে পাইয়াছি, সে আমার মনের মত লোক, সে আমার সমস্ত ইচ্ছা পালন করিবে’।” (প্রেরিত ১৩:২২) দৈত্যাকৃতি গলিয়াতের মুখোমুখি হওয়ার আগে, দায়ূদ ঈশ্বরের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করেছিলেন এবং ইস্রায়েলীয় রাজা শৌলকে বলেছিলেন: “যে সদাপ্রভু সিংহের থাবা ও ভল্লুকের থাবা হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তিনি এই পলেষ্টীয়ের হস্ত হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন।” যিহোবা তাঁর ওপর দায়ূদের আস্থা রাখাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, গলিয়াৎকে হত্যা করার জন্য তাকে সাহায্য করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৭:৩৭, ৪৫-৫৪) দায়ূদ চেয়েছিলেন যাতে শুধুমাত্র তার কাজগুলোই নয় কিন্তু ‘তাহার মুখের বাক্য ও তাহার চিত্তের ধ্যান সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হয়।’—গীতসংহিতা ১৯:১৪.

আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? কীভাবে আমরা যিহোবাকে খুশি করতে পারি? ঈশ্বরের অনুভূতির প্রতি আমরা যত বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হব, ততই আমরা ঈশ্বরের হৃদয়কে আনন্দিত করার জন্য যা করতে পারি, সেই সম্বন্ধে অবগত হব। তাই, আমরা যখন বাইবেল পড়ি, তখন ঈশ্বরের অনুভূতিগুলো শেখার প্রচেষ্টা করা অত্যাবশ্যক, যাতে আমরা ‘সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হই, আর তদ্দ্বারা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ করি।’ (কলসীয় ১:৯, ১০) ফলস্বরূপ, জ্ঞান আমাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ “বিনা বিশ্বাসে [ঈশ্বরের] প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়।” (ইব্রীয় ১১:৬) হ্যাঁ, দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ করে এবং যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে সংগতি রেখে আমাদের জীবনকে পরিচালিত করে, আমরা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারি। একই সময়ে, আমাদের সাবধান হতে হবে, যাতে যিহোবার হৃদয়ে আমরা ব্যথা না দিই।

ঈশ্বরকে কষ্ট দেবেন না

যিহোবাকে যে পীড়া বা কষ্ট দেওয়া যায়, তার একটা উদাহরণ নোহের দিনের বিবরণ থেকে পাওয়া যায়। সেই সময় “পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল। আর ঈশ্বর পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সে ভ্রষ্ট হইয়াছে, কেননা পৃথিবীস্থ সমুদয় প্রাণী ভ্রষ্টাচারী হইয়াছিল।” যিহোবা যখন সেই ভ্রষ্টতা ও দৌরাত্ম্যকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তখন তাঁর কেমন লেগেছিল? “সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন,” বাইবেল বলে, “ও মনঃপীড়া পাইলেন।” (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬, ১১, ১২) ঈশ্বর যে-অর্থে অনুশোচনা করেছিলেন তা হল, মানুষের আচরণ এতটা মন্দ হয়ে গিয়েছিল যে, জলপ্লাবনের পূর্ববর্তী দুষ্ট বংশ সম্বন্ধে তাঁর মনোভাব তিনি পালটেছিলেন। তাদের দুষ্টতার কারণে তাদের ওপর অখুশি হওয়ায়, ঈশ্বর মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার মনোভাব পরিবর্তন করে তাদের ধ্বংসকারীতে পরিণত হয়েছিলেন।

এ ছাড়া, যিহোবা কষ্ট পেয়েছিলেন যখন তাঁর নিজের লোক, প্রাচীন ইস্রায়েল জাতি ক্রমাগতভাবে তাঁর অনুভূতিকে এবং তাঁর প্রেমময় নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করেছিল। গীতরচক দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন: “তাহারা প্রান্তরে কতবার তাঁহার বিরুদ্ধে দ্রোহ করিল, মরুভূমিতে কতবার তাঁহাকে মনঃপীড়া দিল। তাহারা ফিরিয়া ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিল।” তা সত্ত্বেও, “তিনি স্নেহময়, তাই অপরাধ ক্ষমা করিলেন, ধ্বংস করিলেন না, অনেকবার আপন ক্রোধ সম্বরণ করিলেন, আপনার সমস্ত কোপ উদ্দীপিত করিলেন না।” (গীতসংহিতা ৭৮:৩৮-৪১) এমনকি যদিও বিদ্রোহী ইস্রায়েলীয়রা তাদের নিজস্ব পাপপূর্ণ আচরণের ন্যায্য পরিণতিগুলো ভোগ করেছিল, তবুও বাইবেল আমাদের বলে যে “তাহাদের সকল দুঃখে [ঈশ্বর] দুঃখিত হইতেন।”—যিশাইয় ৬৩:৯.

তাদের প্রতি ঈশ্বরের কোমল অনুভূতির প্রচুর প্রমাণ সত্ত্বেও, ইস্রায়েলের লোকেরা “ঈশ্বরের দূতদিগকে পরিহাস করিত, তাঁহার বাক্য তুচ্ছ করিত, ও তাঁহার ভাববাদিগণকে বিদ্রূপ করিত; তন্নিমিত্ত শেষে আপন প্রজাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ উত্থিত হইল, অবশেষে আর প্রতীকারের উপায় রহিল না।” (২ বংশাবলি ৩৬:১৬) শেষ পর্যন্ত, তাদের বিদ্রোহের শক্তগ্রীব নমুনা এতটাই ‘তাঁহার পবিত্র আত্মাকে শোকাকুল করিয়াছিল’ যে, তারা যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়েছিল। (যিশাইয় ৬৩:১০) ফল কী হয়েছিল? ঈশ্বর ন্যায্যভাবেই তাঁর সুরক্ষা উঠিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাদের ওপর দুর্দশা এসে পড়েছিল যখন বাবিলীয়রা যিহূদা জয় করেছিল আর যিরূশালেমকে ধ্বংস করেছিল। (২ বংশাবলি ৩৬:১৭-২১) লোকেরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে অসন্তুষ্ট করার ও কষ্ট দেওয়ার মতো এক পাপপূর্ণ জীবনের পথ বেছে নেওয়ায় তা কতই না দুঃখজনক ছিল!

বাইবেল আমাদের জন্য সন্দেহের কোনো অবকাশই রাখে না যে, ঈশ্বর অধার্মিক আচরণের দ্বারা গভীরভাবে দুঃখ পান। (গীতসংহিতা ৭৮:৪১) যে-বিষয়গুলো ঈশ্বরের কাছে অসন্তোষজনক—এমনকি ঘৃণিত—সেগুলো হল গর্ব করা, মিথ্যা বলা, হত্যা করা, জাদুবিদ্যা চর্চা, ভবিষ্যৎ গণনা, পূর্বপুরুষদের উপাসনা করা, লম্পটতা, সমকামিতা, সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়া, অজাচার এবং দরিদ্রদের প্রতি অত্যাচার করা।—লেবীয় পুস্তক ১৮:৯-২৯; ১৯:২৯; দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৯-১২; হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯; যিরমিয় ৭:৫-৭; মালাখি ২:১৪-১৬.

প্রতিমাপূজা সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেন? যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫ পদ বলে: “তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না।” কেন? কারণ প্রতিমা “সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২৫, ২৬) প্রেরিত যোহন সাবধান করে দিয়েছিলেন: “বৎসেরা, তোমরা প্রতিমাগণ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (১ যোহন ৫:২১) আর প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “হে আমার প্রিয়েরা, প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন কর।”—১ করিন্থীয় ১০:১৪.

ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার চেষ্টা করুন

“সরলগণের সহিত [ঈশ্বরের] গূঢ় মন্ত্রণা।” যারা “আপন পথে সিদ্ধ, তাহারা তাঁহার সন্তোষের পাত্র।” (হিতোপদেশ ৩:৩২; ১১:২০) অন্যদিকে, যারা তাঁর ধার্মিক অনুভূতিগুলোকে একগুঁয়েভাবে অবজ্ঞা করে বা তুচ্ছ করে ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে চলে তারা শীঘ্রই তাঁর অসন্তোষের কারণ হবে। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-১০) বাস্তবিকই, তিনি শীঘ্রই সমস্ত দুষ্টতার শেষ নিয়ে আসবেন, যা আজকে এত পরিব্যাপ্ত।—গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১; সফনিয় ২:২, ৩.

কিন্তু, বাইবেল যিহোবা সম্বন্ধে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় যে, “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) যারা সংশোধন করতে অনিচ্ছুক, তাদের প্রতি তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করার চেয়ে বরং তিনি ধার্মিক লোকেদের প্রতি তাঁর স্নেহ প্রদর্শন করাকেই বেছে নেবেন। “দুষ্ট লোকের মরণে” যিহোবার সন্তোষ ‘নাই; বরং দুষ্ট লোক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, [ইহাতেই তাঁহার সন্তোষ]।’—যিহিষ্কেল ৩৩:১১.

তাই, কারোই যিহোবার ক্রোধের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার দরকার নেই। “প্রভু [“যিহোবা,” NW] স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ৫:১১) ঈশ্বরের অনুভূতির ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে আপনি ‘আপনার সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দিন; কেননা তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৭) নিশ্চিত থাকুন যে, যারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে, তাদের তাঁর অনুমোদন পাওয়ার ও বন্ধুত্ব উপভোগ করার চমৎকার প্রত্যাশা রয়েছে। তাই, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ‘প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা করা’ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।—ইফিষীয় ৫:১০.

এটা কতই না চমৎকার যে, ঈশ্বর তাঁর অযাচিত দয়ার গুণে তাঁর মহিমান্বিত গুণ ও অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন! আর তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করার ক্ষমতা আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। আপনি যদি তা করার ইচ্ছা রাখেন, তা হলে আমরা আপনাকে আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি। তারা আপনাকে সেই বিষয়টা দেখাতে পেরে আনন্দিত হবে, যেটা ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য তাদের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ও নাগালের মধ্যে রয়েছে।

[পাদটীকা]

^ “কেন বাইবেল মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা ঈশ্বরকে বর্ণনা করে?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

কেন বাইবেল মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা ঈশ্বরকে বর্ণনা করে?

যেহেতু “ঈশ্বর আত্মা,” তাই আমরা আমাদের আক্ষরিক চোখ দিয়ে তাঁকে দেখতে পারি না। (যোহন ৪:২৪) সেইজন্য বাইবেল ভাষালঙ্কার ব্যবহার করে থাকে, যেমন উপমা, রূপক এবং নরত্বারোপ, যাতে আমরা ঈশ্বরের শক্তি, মহত্ত্ব এবং কাজগুলো উপলব্ধি করতে পারি। নরত্বারোপ হচ্ছে নর বা মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলোকে, মানুষ নয় এমন কিছুর প্রতি আরোপ করা। তাই, এমনকি যদিও আমরা জানি না যে, ঈশ্বরের আত্মিক দেহ দেখতে কেমন কিন্তু বাইবেল ঈশ্বরের চোখ, কান, হাত, বাহু, আঙুল, পা ও হৃদয় থাকার বিষয়ে বলে।—আদিপুস্তক ৮:২১; যাত্রাপুস্তক ৩:২০; ৩১:১৮; ইয়োব ৪০:৯; গীতসংহিতা ১৮:৯; ৩৪:১৫.

এই ধরনের বর্ণনামূলক ভাষার অর্থ নয় যে, ঈশ্বরের আত্মিক দেহে ঠিক মানুষের দেহের মতো একই অঙ্গগুলো রয়েছে। নরত্বারোপকে আক্ষরিকভাবে নেওয়া উচিত নয়। এগুলো মানুষকে কেবলমাত্র ঈশ্বর সম্বন্ধে আরও ভাল বোধগম্যতা দান করতে সাহায্য করে। এই ধরনের ভাষালঙ্কার ছাড়া ঈশ্বরের যেকোনো বর্ণনা সামান্য মানুষদের বুঝতে অসম্ভব না হলেও কঠিন হবে। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে, যিহোবা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব মানুষের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছে। বাইবেল স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে যে, মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল—ঈশ্বরকে মানুষের প্রতিমূর্তিতে নয়। (আদিপুস্তক ১:২৭) বাইবেল লেখকরা যেহেতু “ঈশ্বর-নিশ্বসিত,” তাই ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে তাদের বর্ণনা বাস্তবে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত গুণাবলিরই বর্ণনা—সেই গুণাবলি, যেগুলো তিনি তাঁর মনুষ্য সৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন পরিমাণে গেঁথে দিয়েছিলেন। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) মানুষের গুণাবলি ঈশ্বরের মধ্যে থাকার পরিবর্তে, আসলে ঈশ্বরের গুণাবলিই মানুষের মধ্যে রয়েছে।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

নোহ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পেয়েছিলেন

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাহাম ঈশ্বরের অনুভূতিগুলো অনুভব করেছিলেন

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

দায়ূদ যিহোবার ওপর তার পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি যখন বাইবেল পড়েন, তখন আপনি শিখতে পারেন যে কীভাবে ঈশ্বরকে আনন্দিত করা যায়

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Courtesy of Anglo-Australian Observatory, photograph by David Malin