ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করুন, মানুষকে নয়
ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করুন, মানুষকে নয়
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, পৃথিবী জুড়ে ধার্মিকতার প্রেমিকরা ঈশ্বরকে কীভাবে গৌরব প্রদান করা যায়, সেই বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিদের “ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করুন” জেলা সম্মেলনগুলোতে সমবেত হয়ে শিক্ষা লাভ করেছে। এতে যে-শিক্ষামূলক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছিল, আসুন আমরা তা পুনরালোচনা করি।
বেশির ভাগ বাইবেল ভিত্তিক কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে তিন দিন এবং যারা বিশেষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে যোগ দিতে সক্ষম হয়েছিল, তাদের জন্য এটা চার দিন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা সব মিলিয়ে ৩০টিরও বেশি শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু শুনেছিল, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল বিভিন্ন বক্তৃতা যা আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি উপলব্ধিকে আরও গভীর করেছে, বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে, বিভিন্ন নমুনা বাইবেলের নীতিগুলোর বাস্তব ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে এবং এক ঐতিহাসিক নাটক যা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল, সেটা তুলে ধরেছিল। যদি আপনি সম্মেলনগুলোর কোনো একটায় উপস্থিত হয়ে থাকেন, তা হলে এই প্রবন্ধটা পড়ার সময় আপনার নোটগুলো আরেকবার দেখুন না কেন? আমরা নিশ্চিত যে, তা করা এক সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ভোজের প্রিয় স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেবে এবং সেইসঙ্গে শিক্ষণীয় হবে।
প্রথম দিনের বিষয়বস্তু: ‘হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], তুমিই প্রতাপ [“গৌরব,” NW] গ্রহণের যোগ্য’
শুরুর গান ও প্রার্থনার পর প্রথম বক্তা উপস্থিত সকলকে “ঈশ্বরের গৌরব করতে একত্রিত” বক্তৃতার মাধ্যমে সম্মেলনের প্রধান কারণের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে উষ্ণভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ থেকে উদ্ধৃত করে বক্তা সম্মেলনের পুরো বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করার অর্থ কী। গীতসংহিতা বই ব্যবহার করে তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করার সঙ্গে “উপাসনা,” “স্তব করা,” এবং “প্রশংসা” জড়িত।—গীতসংহিতা ৯৫:৬; ১০০:৪, ৫; ১১১:১, ২.
পরের বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, “যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে তারা আশীর্বাদ লাভ করে।” বক্তা এক আগ্রহজনক মন্তব্য করেছিলেন। যেহেতু বিশ্বব্যাপী দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৪টা জায়গায় ষাট লক্ষেরও বেশি যিহোবার সাক্ষি রয়েছে, তাই এটা বলা যেতে পারে যে, যারা যিহোবার গৌরব করছে তাদের সূর্য কখনোই অস্ত যায় না। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫) কোনো ধরনের বিশেষ পূর্ণ-সময়ের সেবায় জড়িত রয়েছে এমন বেশ কিছু খ্রিস্টান ভাইবোনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এই বক্তৃতার এক মূল্যবান বৈশিষ্ট্য ছিল, যা শ্রোতাদের হৃদয়কে উষ্ণ করেছিল।
পরের বক্তৃতা ছিল “সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে।” যদিও নীরব, তবুও আক্ষরিক আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের মহিমাকে যিশাইয় ৪০:২৬.
মহিমান্বিত করে এবং তাঁর প্রেমময় যত্নের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতাকে আরও গভীর করতে সাহায্য করে। মনোযোগপূর্বক বিস্তারিত বিবরণের মাধ্যমে এটা বর্ণনা করা হয়েছিল।—তাড়না, বিরোধিতা, জাগতিক প্রভাব এবং পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলো সত্য খ্রিস্টানদের নীতিনিষ্ঠাকে পরীক্ষার মুখোমুখি করে থাকে। তাই, “নীতিনিষ্ঠার পথে চলুন” বক্তৃতা শ্রোতাদের পূর্ণ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য ছিল। গীতসংহিতা ২৬ অধ্যায়ের প্রতিটা পদের আলোচনা আর সেইসঙ্গে এক স্কুল পড়ুয়া সাক্ষির সাক্ষাৎকার, যে তার নৈতিকতার পক্ষে দৃঢ় ছিল এবং আরেক জন যিনি আপত্তিকর আমোদপ্রমোদগুলোতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতেন কিন্তু সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা তুলে ধরা হয়েছিল।
“গৌরবান্বিত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনগুলো আমাদের উদ্দীপিত করে!” এই মুখ্য বক্তৃতা দিয়ে সকালের কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। বক্তা ভাববাদী দানিয়েল এবং প্রেরিত যোহন ও পিতরের উদাহরণ উল্লেখ করেছিলেন, যাদের বিশ্বাস ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গৌরবান্বিত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনগুলোর দ্বারা উদ্দীপিত হয়েছিল। আমরা যে এখন শেষকালে বাস করছি, সেই বিষয়ে স্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে যারা তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে, তাদের বিষয়ে উল্লেখ করে বক্তা বলেছিলেন: “আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে, এই ব্যক্তিরা রাজ্যের গৌরবে খ্রিস্টের উপস্থিতির বাস্তবতার প্রতি আবারও মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে এবং আধ্যাত্মিক শক্তিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য সাহায্য পাবে।”
দুপুরের কার্যক্রম যে-বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেটার শিরোনাম ছিল, “নম্র ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবার গৌরব প্রকাশিত হয়।” বক্তা দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবা কীভাবে নম্রতার উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যদিও তিনি নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। (গীতসংহিতা ১৮:৩৫) যারা প্রকৃতই নম্র, তাদের প্রতি যিহোবা অনুগ্রহ দেখান কিন্তু তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতিরোধ করেন, যারা শুধুমাত্র তাদের বন্ধুবান্ধব বা তাদের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যবহার করার সময় নিজেদের নম্র দেখায় অথচ তাদের অধীনস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা রূঢ় ব্যবহার করে।—গীতসংহিতা ১৩৮:৬.
এরপর একটা সিম্পোজিয়ামে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে তুলে ধরা হয়েছিল, যা এই মুখ্য বিষয়ের বিভিন্ন দিকের ওপর জোর দিয়েছিল: “আমোষের ভবিষ্যদ্বাণী—আমাদের দিনের জন্য এর বার্তা।” আমোষের উদাহরণ উল্লেখ করে প্রথম বক্তা যিহোবার আসন্ন বিচার সম্বন্ধে লোকেদের সাবধান করার যে-দায়িত্ব আমাদের রয়েছে, সেটার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। তার বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল, “সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বলুন।” দ্বিতীয় বক্তা এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন: “যিহোবা কি এই পৃথিবীর দুষ্টতা ও দুঃখকষ্টকে কখনও শেষ করবেন?” তার বিষয়বস্তু “দুষ্টদের বিরুদ্ধে ঐশিক বিচার” দেখিয়েছিল যে, ঐশিক বিচার সবসময় যথোপযুক্ত, তা থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাওয়া যায় না এবং সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা এটার উপযুক্ত। সিম্পোজিয়ামের শেষ বক্তা এই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, “যিহোবা হৃদয়ের পরীক্ষা করেন।” যারা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী তারা আমোষ ৫:১৫ পদের কথাগুলোতে মনোযোগ দেবে: “মন্দকে ঘৃণা কর ও উত্তমকে ভালবাস।”
মদ্যজাতীয় পানীয়, যেমন মদ বা দ্রাক্ষারস মানুষের চিত্তানন্দজনক, তবে সেটার অপব্যবহার হতে পারে। “মদের অপব্যবহারের ফাঁদ এড়িয়ে চলুন” বক্তৃতায় বক্তা অপরিমিত মাত্রায় মদ খাওয়ার কারণে ঘটতে পারে এমন বিপদগুলো তুলে ধরেন, এমনকি একজন ব্যক্তি যদি মাতাল না-ও হন। তিনি এক নির্দেশনামূলক নীতি দিয়েছিলেন: যেহেতু মদের প্রভাব সহ্য করার শক্তি বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন, তাই যতটুকু পরিমাণ আপনার ‘সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতাকে’ দুর্বল করে দেয়, সেটাই ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য অতিরিক্ত হবে।—হিতোপদেশ ৩:২১, ২২.
যেহেতু আমরা বিষম সময়ে বাস করছি, তাই পরবর্তী বিষয় “যিহোবা, আমাদের ‘সঙ্কটকালে দৃঢ় দুর্গ’” সান্ত্বনাজনক প্রমাণিত হয়েছিল। প্রার্থনা, পবিত্র আত্মা এবং সহখ্রিস্টানরা আমাদের তা মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।
ওই দিনের শেষ বক্তৃতা “‘সেই উত্তম দেশ’—পরমদেশের পূর্বাভাস,” যেটা সকলের জন্য এক আনন্দপূর্ণ চমক দিয়ে শেষ হয়েছিল—বাইবেলের মানচিত্রগুলো সহ এক নতুন প্রকাশনা! এর শিরোনাম হল, সেই উত্তম দেশ দেখুন (ইংরেজি)।
দ্বিতীয় দিনের বিষয়বস্তু: “প্রচার কর জাতিগণের মধ্যে তাঁহার গৌরব”
দৈনিক শাস্ত্রপদ বিবেচনা করার পর, সম্মেলনের দ্বিতীয় সিম্পোজিয়াম উপস্থাপন করা হয়েছিল যেটার বিষয়বস্তু ছিল, “‘যিহোবার গৌরব দর্পণের ন্যায় প্রতিফলিত করুন।’”
প্রথম অংশ “সব জায়গায় সুসমাচার ছড়িয়ে দিয়ে” বিষয়ের ওপর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছিল এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যার বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো পুনরায় অভিনয় করে দেখানোকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। দ্বিতীয় বক্তৃতা “যাদের অন্ধ করে রাখা হয়েছে তাদের আবরণী তুলে নিয়ে” বিষয়টা উপস্থাপনা করার সময় বক্তা একটা পুনর্সাক্ষাতের নমুনা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। “আমাদের পরিচর্যায় অধিক উপচে পড়ে” শিরোনামের শেষ বক্তৃতা ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতাগুলো সহ আগ্রহজনক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জোরালো হয়েছিল।কার্যক্রমের পরবর্তী অংশের শিরোনাম ছিল, “অকারণে দ্বেষ করা হয়।” এতে সেইসব বিশ্বস্ত ব্যক্তির উৎসাহজনক সাক্ষাৎকারগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা বিরোধিতার মধ্যে ঈশ্বরের শক্তিতে নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিল।
সম্মেলনের সবচেয়ে প্রত্যাশিত বিষয় ছিল বাপ্তিস্মের বক্তৃতা আর এরপরে যোগ্য প্রার্থীদের জলে সম্পূর্ণ নিমজ্জন। জলে
বাপ্তিস্ম যিহোবার কাছে একজন ব্যক্তির পূর্ণরূপে নিজেকে উৎসর্গ করাকে চিহ্নিত করে। তাই, এই বিষয়বস্তু খুবই উপযুক্ত ছিল: “আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করে।”দুপুরের কার্যক্রম আত্মপরীক্ষা করতে উৎসাহিত করে এমন এক বক্তৃতার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, যেটার বিষয় ছিল, “শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি অনুশীলন করা।” বক্তা এই আগ্রহজনক বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছিলেন: খ্রিস্টের নম্রতা অনুকরণ করার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যায়। তাই, একজন খ্রিস্টানের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য দায়িত্ব লাভের প্রত্যাশা করা উচিত নয়। তার নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি কি সেই সাহায্যকারী কাজগুলো করতে ইচ্ছুক, যেগুলো খুব সহজে লোকেদের চোখে পড়ে না?’
আপনি কি কখনও ক্লান্ত বোধ করেন? এর উত্তর একেবারে স্পষ্ট। “ক্লান্ত কিন্তু ক্লান্তিতে অবসন্ন নয়” বক্তৃতাটা সকলেই উপভোগ করেছিল। দীর্ঘ সময় ধরে সত্যে আছে এমন সাক্ষিদের সাক্ষাৎকার দেখিয়েছিল যে, যিহোবা আমাদের “তাঁহার আত্মা দ্বারা . . . সবলীকৃত” করতে পারেন।—ইফিষীয় ৩:১৬.
উদারতা এমন এক গুণ, যেটা নিয়ে আমরা জন্মাইনি কিন্তু এটা আমাদের অবশ্যই শিখতে হয়। “‘দানশীল হোন, সহভাগীকরণে তৎপর হোন’” অংশটাতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। আর ভাবিয়ে তোলার মতো এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল: “আমরা কি দিনের মধ্যে আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে কয়েক মিনিট সময় ভাগ করে নিতে তৈরি আছি, যারা বয়স্ক, অসুস্থ, হতাশ বা একাকী?”
“‘অপরিচিতদের রব’ থেকে সাবধান থাকুন,” বক্তৃতাটা শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এই বক্তৃতা যিশুর অনুসারীদের মেষের সঙ্গে তুলনা করেছিল, যারা “উত্তম মেষপালক” হিসেবে যিশুর রব শোনে এবং দিয়াবলের প্রভাবাধীনে বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশিত “অপরিচিতদের রব” শোনে না।
সমবেত সংগীত এক সুরে গাইতে হবে, যাতে তা বোঝা যায়। ঈশ্বরের গৌরব করতে সারা পৃথিবীর সত্য উপাসকদের অবশ্যই এক হতে হবে। তাই, “‘এক মুখে’ ঈশ্বরের গৌরব করুন” বক্তৃতা, যেভাবে আমরা ‘বিশুদ্ধ ওষ্ঠে’ কথা বলতে পারি এবং “একযোগে” যিহোবার সেবা করতে পারি, সেই বিষয়ে উপকারজনক শিক্ষা দিয়েছিল।—সফনিয় ৩:৯.
যেসব বাবামায়ের মূলত অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে রয়েছে, তারা ওই দিনের শেষ বক্তৃতার মাধ্যমে প্রচুর আনন্দিত হয়েছিল, যেটার বিষয় ছিল, “আমাদের সন্তানেরা—এক মূল্যবান উত্তরাধিকার।” ২৫৬ পৃষ্ঠার একটা নতুন বই প্রকাশ করা হয়েছিল, যা শ্রোতাদের আনন্দপূর্ণভাবে চমকে দিয়েছিল। মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো (ইংরেজি) হল এমন একটা বই, যা বাবামাদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবে পুরস্কারদায়ক সময় কাটাতে সাহায্য করবে, যারা তাদের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার।
তৃতীয় দিনের বিষয়বস্তু: “সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর”
আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার ওপর দৈনিক শাস্ত্রপদের অনুস্মারকগুলো দিয়ে সম্মেলনের শেষ দিন শুরু হয়েছিল। এই দিনের কার্যক্রমের প্রথম অংশে পারিবারিক ব্যবস্থার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রথম বক্তৃতা, “বাবামায়েরা, পারিবারিক বৃত্তকে শক্তিশালী করুন” শ্রোতাদের মনকে প্রস্তুত করেছিল।
পরিবারের জন্য বাবামায়ের বস্তুগত বিষয় জোগানোর বিষয়ে বাবামায়ের দায়িত্ব সম্বন্ধে পুনরালোচনা করার পর বক্তা প্রমাণ করেছিলেন যে, বাবামার প্রধান দায়িত্ব হল, সন্তানদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো জোগানো।পরবর্তী বক্তা ছেলেমেয়েদের সম্বোধন করেছিলেন এবং এই বিষয়টা আলোচনা করেছিলেন, “অল্পবয়সীরা যেভাবে যিহোবার প্রশংসা করছে।” তিনি বলেছিলেন যে, অল্পবয়সীদের ‘শিশিরের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কারণ তারা সংখ্যায় অনেক এবং তাদের যৌবনের উদ্যোগ সতেজতাদায়ক। যিহোবার সেবায় প্রাপ্তবয়স্করা তাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। (গীতসংহিতা ১১০:৩) এই অংশে উদাহরণযোগ্য অল্পবয়সীদের আনন্দজনক সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বাইবেলের ঐতিহাসিক নাটকগুলো সবসময়ই জেলা সম্মেলনের এক রোমাঞ্চকর বিষয় আর এই সম্মেলনও এর ব্যতিক্রম ছিল না। “বিরোধিতা সত্ত্বেও সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেওয়া” নাটকটা যিশুর প্রথম শতাব্দীর অনুসারীদের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছিল। এটা শুধুমাত্র আনন্দদায়কই ছিল না, বরং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যে তা শিক্ষামূলক ছিল। নাটকের পরবর্তী বক্তৃতা “‘ক্ষান্ত না হইয়া’ সুসমাচার প্রচার করুন” নাটকের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেছিল।
শ্রোতাদের সকলেই তৃতীয় দিনের কার্যক্রমের মূল বিষয়বস্তু, জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা, “আজকে কারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করছে?” শোনার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল। বক্তা প্রমাণ করেছিলেন যে, কীভাবে বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রগুলো ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করেনি। একমাত্র তাঁর নামের লোকেরা, যারা যিহোবা সম্বন্ধে সত্য প্রচার করছে ও শিক্ষা দিচ্ছে, আজকে তারাই তাঁর নামকে প্রকৃতপক্ষে গৌরবান্বিত করছে।
জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতার পর সেই সপ্তাহের শিক্ষার জন্য প্রহরীদুর্গ পত্রিকার সারাংশ আলোচনা করা হয়। এরপর শেষ বক্তৃতা “যিহোবার গৌরবার্থে ‘প্রচুর ফলে ফলবান্ হও’” তুলে ধরা হয়েছিল। বক্তা উপস্থিত সকলকে নিজের বলে গ্রহণ করার জন্য দশটা মূলবিষয় সম্বলিত একটা সংকল্প উপস্থাপন করেছিলেন। এটাতে সৃষ্টিকর্তা যিহোবাকে গৌরব প্রদান করার বিভিন্ন উপায় ছিল। পৃথিবীব্যাপী সমস্ত সম্মেলনে এক সর্বসম্মত “হ্যাঁ” উচ্চারিত হয়েছিল।
এইভাবে উপস্থিত প্রত্যেকের কানে “ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করুন” বিষয়বস্তু ধ্বনিত হয়ে সম্মেলন শেষ হয়েছিল। অতএব আমরা যেন যিহোবার আত্মা এবং তাঁর সংগঠনের দৃশ্যত অংশের সাহায্যে সর্বদা মানুষকে নয়, বরং ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করার চেষ্টা করি।
[২৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো
অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সমাবেশগুলোতে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এইভাবে অতিথি ও আমন্ত্রণকারীদের মধ্যে “পারস্পরিক উৎসাহ বিনিময়” হয়েছিল। (রোমীয় ১:১২, NW) পুরনো ব্যক্তিদের সঙ্গে আবারও দেখা হয়েছিল এবং নতুনদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। কার্যক্রমের এই শিরোনাম, “অন্যান্য দেশ থেকে রিপোর্টগুলো,” আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল।
[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
নতুন প্রকাশনাগুলো যা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে
“ঈশ্বরকে গৌবর প্রদান করুন” জেলা সম্মেলনগুলোতে দুটো নতুন প্রকাশনা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই উত্তম দেশ দেখুন প্রকাশনাটা বাইবেলের জায়গাগুলোর সুস্পষ্ট মানচিত্র এবং ছবি সহ টেকসই মলাটের ৩৬ পৃষ্ঠার এক প্রকাশনা। এর প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা রঙিন এবং অশূর, বাবিলন, মাদীয়-পারসিক, গ্রিস ও রোম সাম্রাজ্যগুলোর মানচিত্র রয়েছে। যিশুর পরিচর্যার জায়গাগুলো এবং খ্রিস্টধর্মের প্রসারের এলাকাগুলোর জন্য আলাদা মানচিত্র রয়েছে।
মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো বইটি ২৩০টা ছবি সহ ২৫৬ পৃষ্ঠার একটা বই। এই বই থেকে শুধুমাত্র ছবিগুলো দেখে এবং ভাবিয়ে তোলার মতো প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনেক আনন্দদায়ক সময় কাটানো যেতে পারে। এই নতুন প্রকাশনাটা পরিকল্পনা করা হয়েছে আমাদের অল্পবয়সীদের ওপর শয়তানের আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে, যার লক্ষ্য তাদের নৈতিকতাকে কলুষিত করা।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
মিশনারিরা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করেছিল
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
“ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করুন” সম্মেলনগুলোতে বাপ্তিস্ম ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যুবক ও বৃদ্ধ সবাই বাইবেলের নাটক উপভোগ করেছিল