যিহোবা, সত্যের ঈশ্বর
যিহোবা, সত্যের ঈশ্বর
“সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], সত্যের ঈশ্বর, তুমি আমাকে মুক্ত করিয়াছ।”—গীতসংহিতা ৩১:৫.
১. যখন অসত্য বলে কিছুই ছিল না, তখন স্বর্গে ও পৃথিবীতে কেমন অবস্থা ছিল?
এমন এক সময় ছিল, যখন অসত্য বলে কিছু ছিল না। অদৃশ্য স্বর্গে বসবাসরত আত্মিক প্রাণীরা তাদের সৃষ্টিকর্তা, ‘সত্যের ঈশ্বরকে’ সেবা করছিল। (গীতসংহিতা ৩১:৫) সেখানে কোনো মিথ্যা ছিল না, কোনো প্রবঞ্চনা ছিল না। যিহোবা তাঁর আত্মিক পুত্রদেরকে যা সত্য তা জানাতেন। তিনি তা করতেন কারণ তিনি তাদের ভালবাসতেন ও তাদের মঙ্গলের প্রতি গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। পৃথিবীতেও একই অবস্থা ছিল। যিহোবা প্রথম পুরুষ ও নারীকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাঁর নিযুক্ত মাধ্যমের সাহায্যে তিনি সবসময় এক স্পষ্ট, অকপট ও সত্যনিষ্ঠ উপায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তা কত চমৎকারই না ছিল!
২. কে অসত্য প্রবর্তন করেছিল এবং কেন?
২ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের একজন আত্মিক পুত্র দুঃসাহস দেখিয়ে যিহোবার বিরোধিতা করে নিজেকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ঈশ্বর হিসেবে তুলে ধরে। এই আত্মিক প্রাণী, যে শয়তান দিয়াবল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, সে চেয়েছিল যেন অন্যেরা তাকে উপাসনা করে। তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সে অন্যদেরকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার এক উপায় হিসেবে অসত্যের প্রবর্তন করেছিল। তা করে, সে “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা” উভয়ই হয়ে উঠেছিল।—যোহন ৮:৪৪.
৩. আদম ও হবা শয়তানের মিথ্যার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং এর ফল কী হয়েছিল?
৩ শয়তান একটা সাপের মাধ্যমে প্রথম নারী হবাকে বলেছিল যে, যদি সে ঈশ্বরের আজ্ঞার অবাধ্য হয় ও নিষিদ্ধ ফলটি খায়, তা হলে সে মরবে না। সেটা ছিল একটা মিথ্যা। সে তাকে আরও বলেছিল যে, সেটা খেয়ে সে ঈশ্বরের মতো হয়ে যাবে, ভাল-মন্দ জানতে পারবে। সেটাও ছিল একটা মিথ্যা। যদিও এর আগে হবাকে কেউ কখনও মিথ্যা বলেনি কিন্তু সে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিল যে, সাপের কাছ থেকে সে যা শুনেছিল, তা তার স্বামী আদমকে ঈশ্বর যা বলেছিলেন, সেটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। তা সত্ত্বেও, সে শয়তানকে বিশ্বাস করা বেছে নিয়েছিল, যিহোবাকে নয়। পুরোপুরি প্রবঞ্চিত হয়ে, সে ফলটি নেয় ও খায়। পরে, আদমও সেই ফল খেয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) হবার মতো আদমও আগে কখনও কোনো মিথ্যা কথা শোনেনি, তবে সে প্রবঞ্চিত হয়নি। (১ তীমথিয় ২:১৪) আদম তার কাজের দ্বারা দেখিয়েছিল যে সে তার নির্মাতাকে অগ্রাহ্য করেছে। মানবজাতির জন্য এর পরিণতি ছিল ধ্বংসাত্মক। আদমের অবাধ্যতার কারণে পাপ ও মৃত্যু—সেইসঙ্গে কলুষতা ও অবর্ণনীয় কষ্ট—তার সমস্ত বংশধরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।—রোমীয় ৫:১২.
৪. (ক) এদনে বলা মিথ্যাগুলো কী ছিল? (খ) শয়তানের দ্বারা ভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
৪ অসত্যও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, এদন উদ্যানে যে-মিথ্যাগুলো বলা হয়েছিল সেগুলো স্বয়ং যিহোবার সত্যবাদিতার বিরুদ্ধে আক্রমণ ছিল। শয়তান দাবি করেছিল যে, ঈশ্বর ছলপূর্বক প্রথম মানব দম্পতিকে ভাল কিছু থেকে বঞ্চিত করছিলেন। অবশ্যই বিষয়টা তা ছিল না। আদম ও হবা তাদের অবাধ্যতার জন্য উপকৃত হয়নি। তারা মারা গিয়েছিল, ঠিক যিহোবা যেমনটা বলেছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিহোবার বিরুদ্ধে শয়তানের অপবাদপূর্ণ আক্রমণ অব্যাহত ছিল আর তা এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, শত শত বছর পর প্রেরিত যোহন লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, শয়তান “সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) শয়তান দিয়াবলের দ্বারা ভ্রান্ত হওয়া এড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই যিহোবা ও তাঁর বাক্যের সত্যতার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। কীভাবে আপনি যিহোবার ওপর আপনার নির্ভরতাকে বৃদ্ধি ও মজবুত করতে পারেন এবং তাঁর শত্রুর দ্বারা ছড়ানো প্রবঞ্চনা ও মিথ্যাগুলোর বিরুদ্ধে নিজেকে শক্তিশালী করতে পারেন?
যিহোবা সত্য জানেন
৫, ৬. (ক) যিহোবার কোন জ্ঞান রয়েছে? (খ) মানুষের জ্ঞানকে কীভাবে যিহোবার জ্ঞানের সঙ্গে তুলনা করা যায়?
৫ বাইবেল প্রায়ই যিহোবাকে “সমুদয়ের সৃষ্টিকর্ত্তা” হিসেবে শনাক্ত করে। (ইফিষীয় ৩:৯) তিনি “আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তের নির্ম্মাণকর্ত্তা।” (প্রেরিত ৪:২৪) যেহেতু যিহোবা হলেন সৃষ্টিকর্তা, তাই তিনি সমস্ত কিছু সম্বন্ধে সত্য জানেন। উদাহরণস্বরূপ: এমন একজন ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন, যিনি তার নিজের ঘরের নকশা তৈরি করেন ও পরে সেটা নির্মাণ করেন আর তা করার সময় প্রতিটা কাঠামো নিজে স্থাপন করেন ও সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ নিজে করেন। তিনি ঘরের ভিতর এবং বাইরের সমস্ত কিছু জানবেন এবং এই সম্বন্ধে যেকোনো দর্শকের চেয়ে তার বোধগম্যতা আরও অনেক বেশি থাকবে। লোকেরা যে-বস্তুগুলোর নকশা নিজেরা তৈরি করে ও বানায় সেই ব্যাপারে তারা ভাল জানে। একইভাবে, সৃষ্টিকর্তা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেই সম্বন্ধে যা যা জানা দরকার সমস্তই তিনি জানেন।
৬ ভাববাদী যিশাইয় যিহোবার জ্ঞানের পরিধি সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। আমরা পড়ি: “কে আপন করতলে জলরাশি মাপিয়াছে, বিঘত দিয়া আকাশমণ্ডল পরিমাণ করিয়াছে, পৃথিবীর ধূলা পালিতে ভরিয়াছে, পাল্লাতে পর্ব্বতগণকে, ও নিক্তিতে উপপর্ব্বতগণকে তৌল করিয়াছে? কে সদাপ্রভুর আত্মার পরিমাণ করিয়াছে? কিম্বা তাঁহার মন্ত্রী হইয়া তাঁহাকে শিক্ষা দিয়াছে? তিনি কাহার কাছে মন্ত্রণা গ্রহণ করিয়াছেন? কে তাঁহাকে বুদ্ধি দিয়াছে, ও বিচারপথ দেখাইয়াছে, তাঁহাকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়াছে, ও বিবেচনার মার্গ জানাইয়াছে?” (যিশাইয় ৪০:১২-১৪) সত্যিই, যিহোবা “জ্ঞানের ঈশ্বর” এবং “জ্ঞানে সিদ্ধ।” (১ শমূয়েল ২:৩; ইয়োব ৩৬:৪; ৩৭:১৬) সেই তুলনায় আমরা কত কম জানি! মানবজাতির দ্বারা পুঞ্জীভূত প্রচুর জ্ঞান সত্ত্বেও, ভৌত সৃষ্টি সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতা এমনকি “[ঈশ্বরের] মার্গের প্রান্ত” পর্যন্তও পৌঁছে না। ‘পরাক্রমের গর্জ্জনের’ তুলনায় এটা এক “কাকলীমাত্র।”—ইয়োব ২৬:১৪.
৭. যিহোবার জ্ঞান সম্বন্ধে দায়ূদ কী উপলব্ধি করেছিলেন আর তাই আমাদের অবশ্যই কী স্বীকার করতে হবে?
৭ যেহেতু যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই এটা যুক্তিসংগত যে, তিনি আমাদের সম্বন্ধে ভাল জানেন। রাজা দায়ূদ এটা উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে অনুসন্ধান করিয়াছ, আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ। তুমিই আমার উপবেশন ও আমার উত্থান জানিতেছ, তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ। তুমি আমার পথ ও আমার শয়ন তদন্ত করিতেছ, আমার সমস্ত পথ ভালরূপে জান। যখন আমার জিহ্বাতে একটী কথাও নাই, দেখ, সদাপ্রভু, তুমি উহা সমস্তই জানিতেছ।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১-৪) দায়ূদ অবশ্যই উপলব্ধি করেছিলেন যে, মানুষেরা স্বাধীন ইচ্ছা, ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার অথবা তাঁর অবাধ্য হওয়ার যে-ক্ষমতা তিনি আমাদের দিয়েছেন, সেটা অনুশীলন করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০; যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫) তা সত্ত্বেও, আমরা নিজেদের যতটা জানি, এর চেয়ে হাজার গুণ ভালভাবে যিহোবা আমাদেরকে জানেন। আমাদের জন্য যা সর্বোত্তম তা-ই তিনি চান এবং তিনি আমাদের পথগুলোকে পরিচালনা দেওয়ার মতো অবস্থানে আছেন। (যিরমিয় ১০:২৩) বস্তুতপক্ষে, তাঁর চেয়ে ভালভাবে সজ্জিত আর কোনো শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শদাতা নেই, যিনি আমাদের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে এবং আমাদের বিজ্ঞ ও সুখী করতে পারেন।
যিহোবা সত্যবাদী
৮. কীভাবে আমরা জানি যে যিহোবা সত্যবাদী?
৮ সত্য জানা এক বিষয় আর সবসময় সত্য বলা, সত্যবাদী হওয়া, সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, দিয়াবল “সত্যে থাকে নাই।” (যোহন ৮:৪৪) অন্যদিকে, যিহোবা “সত্যে মহান্।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬) শাস্ত্র বার বার যিহোবার সত্যবাদিতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেয়। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, “মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য” এবং ঈশ্বর “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।” (ইব্রীয় ৬:১৮; তীত ১:২) সত্যবাদিতা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমরা যিহোবার ওপর ভরসা রাখতে ও নির্ভর করতে পারি কারণ তিনি সত্যবাদী; তিনি তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের সঙ্গে কখনও প্রতারণা করেন না।
৯. কীভাবে যিহোবার নাম সত্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৯ যিহোবার নামই তাঁর সত্যবাদিতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেয়। এই ঐশিক নামের অর্থ “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” এটা যিহোবাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে, যিনি যা কিছু প্রতিজ্ঞা করেন, পর্যায়ক্রমে সেগুলো সমস্তই পরিপূর্ণ করেন। আর কেউই সেই অবস্থানে নেই। যেহেতু যিহোবা সর্বোচ্চ ব্যক্তি, তাই কোনো কিছুই তাঁর উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবে পরিণত করাকে থামাতে পারে না। যিহোবা কেবল সত্যবাদীই নন কিন্তু তিনি যা বলেন, সেগুলোর সমস্তই পূর্ণ করতে একা তাঁরই সেই শক্তি ও প্রজ্ঞা রয়েছে।
১০. (ক) যিহোশূয় কীভাবে যিহোবার কথার সত্যতা দেখেছিলেন? (খ) যিহোবার কোন প্রতিজ্ঞাগুলো আপনি পরিপূর্ণ হতে দেখেছেন?
১০ যিহোশূয় ছিলেন অনেকের মধ্যে একজন, যিনি সেই উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো দেখেছিলেন, যেগুলো যিহোবার সত্যবাদিতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল। যিহোবা যখন মিশরীয়দের ওপর দশটা আঘাত এনেছিলেন, যেগুলোর প্রত্যেকটার বিষয়ে আগে থেকেই বলেছিলেন, তখন যিহোশূয় মিশরে ছিলেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে যিহোশূয় মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করার এবং তাদেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার ও শক্তিশালী কনানীয় সৈন্যবাহিনী, যারা তাদের বিরোধিতা করেছিল, তাদের পরাজিত করার বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা দেখেছিলেন। যিহোশূয় তার জীবনের শেষ দিকে ইস্রায়েল জাতির প্রাচীনবর্গকে বলেছিলেন: “তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল [“সত্য,” NW] হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪) যদিও আপনি যিহোশূয়ের মতো অলৌকিক কাজগুলো দেখেননি কিন্তু আপনার জীবনে কি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর সত্যতা অভিজ্ঞতা করেছেন?
যিহোবা সত্য প্রকাশ করেন
১১. কী দেখায় যে, যিহোবা মানবজাতিকে সত্য জানাতে চান?
১১ এমন একজন বাবা অথবা মায়ের কথা কল্পনা করুন, যার প্রচুর জ্ঞান রয়েছে কিন্তু তিনি তার সন্তানের সঙ্গে খুব কমই কথা বলেন। আপনি কি কৃতজ্ঞ নন যে, যিহোবা সেইরকম নন? যিহোবা প্রেম দেখিয়ে মানবজাতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তিনি তা উদারভাবেই করেন। শাস্ত্র তাঁকে “সর্বমহান শিক্ষক” (NW) বলে। (যিশাইয় ৩০:২০) তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়ার কারণে তিনি এমনকি সেই ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন, যারা তাঁর কথা শোনার প্রতি আগ্রহী নয়। উদাহরণস্বরূপ, যিহিষ্কেলকে সেই লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যাদের সম্বন্ধে যিহোবা জানতেন যে, তারা সংবেদনশীল নয়। যিহোবা বলেছিলেন: “হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি যাও, ইস্রায়েল-কুলের নিকটে যাইয়া তাহাদিগকে আমার বাক্য সকল বল।” এরপর তিনি সাবধান করে দিয়েছিলেন: “ইস্রায়েল-কুল তোমার কথা শুনিতে সম্মত হইবে না, যেহেতু তাহারা আমার কথা শুনিতে সম্মত নয়; কারণ ইস্রায়েল-কুল সকলেই দৃঢ়-কপাল ও কঠিনচিত্ত।” সেটা ছিল এক কঠিন কার্যভার কিন্তু যিহিষ্কেল বিশ্বস্তভাবে সেই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন এবং তা করতে গিয়ে তিনি যিহোবার সমবেদনাকে প্রতিফলিত করেছিলেন। যদি আপনার প্রচারের কার্যভার কঠিন হয়ে থাকে এবং আপনি ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখেন, তা হলে আপনি এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন যে, তিনি আপনাকে শক্তিশালী করবেন ঠিক যেমন ভাববাদী যিহিষ্কেলকে করেছিলেন।—যিহিষ্কেল ৩:৪, ৭-৯.
১২, ১৩. কোন কোন উপায়ে ঈশ্বর মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?
১২ যিহোবা চান যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) তিনি ভাববাদীদের দ্বারা, স্বর্গদূতেদের দ্বারা আর এমনকি তাঁর প্রিয় পুত্র যিশু খ্রিস্টের দ্বারা কথা বলেছেন। (ইব্রীয় ১:১, ২; ২:২) পীলাতকে যিশু বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে।” পরিত্রাণের জন্য যিহোবার ব্যবস্থা সম্বন্ধে সত্যটি সরাসরি ঈশ্বরের পুত্রের কাছ থেকে জানার এক অমূল্য সুযোগ পীলাতের হয়েছিল। কিন্তু, পীলাত সত্যের পক্ষে ছিলেন না এবং তিনি যিশুর কাছ থেকে শিখতে চাননি। এর পরিবর্তে, পীলাত উদাসীনভাবে বলেছিলেন: “সত্য কি?” (যোহন ১৮:৩৭, ৩৮) তার জন্য কতই না দুঃখের বিষয়! কিন্তু, অনেকে যিশু যে-সত্য ঘোষণা করেছিলেন, তা শুনেছিল। তাঁর শিষ্যদের তিনি বলেছিলেন: “ধন্য তোমাদের চক্ষু, কেননা তাহা দেখে, এবং তোমাদের কর্ণ, কেননা তাহা শুনে।”—মথি ১৩:১৬.
১৩ যিহোবা বাইবেলের মাধ্যমে সত্যকে সংরক্ষণ করেছেন এবং সব জায়গার লোকেরা যাতে এটি পায় সেই ব্যবস্থা করেছেন। বাইবেল বিষয়গুলোকে একেবারে সত্যভাবেই প্রকাশ করে। এটি ঈশ্বরের গুণাবলি, উদ্দেশ্য এবং আজ্ঞাগুলো ও সেইসঙ্গে মানবজাতির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়গুলোর প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে বর্ণনা করে। যিহোবার কাছে প্রার্থনায় যিশু বলেছিলেন: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) এই কারণে বাইবেল এক অদ্বিতীয় বই। একমাত্র এটিই ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছিল, যিনি সমস্ত কিছু জানেন। (২ তীমথিয় ৩:১৬) এটি মানবজাতির জন্য এক অমূল্য উপহার, যেটিকে ঈশ্বরের দাসেরা মূল্যবান মনে করে। আমরা প্রতিদিন তা পড়ে বিজ্ঞ হই।
সত্যকে ধরে রাখুন
১৪. কিছু বিষয় কী যা যিহোবা বলেন যে তিনি করবেন আর কেন আমাদের তাঁকে বিশ্বাস করা উচিত?
১৪ যিহোবা তাঁর বাক্যে আমাদের যা বলেন সেটাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তিনি নিজের সম্বন্ধে যা বলেন তিনি ঠিক তা-ই এবং তিনি যা বলেন ঠিক তা-ই করবেন। ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার প্রতিটা কারণ আমাদের রয়েছে। আমরা এই কথা বিশ্বাস করতে পারি, যখন যিহোবা বলেন যে, “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।” (২ থিষলনীকীয় ১:৮) আমরা যিহোবার এই কথাগুলোও বিশ্বাস করতে পারি, যখন তিনি বলেন যে, যারা ধার্মিকতা অনুধাবন করে তাদের তিনি ভালবাসেন, যারা বিশ্বাস অনুশীলন করে তাদের তিনি অনন্তজীবন দেবেন এবং ব্যথা, যন্ত্রণা এবং এমনকি মৃত্যুকে তিনি নির্মূল করবেন। যিহোবা এই শেষ প্রতিজ্ঞাটির নির্ভরযোগ্যতার ওপর জোর দিয়েছিলেন, প্রেরিত যোহনকে এই নির্দেশনা দেওয়ার দ্বারা: “লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫; হিতোপদেশ ১৫:৯; যোহন ৩:৩৬.
১৫. কিছু মিথ্যা কী, যা শয়তান ছড়িয়ে থাকে?
১৫ শয়তান যিহোবার একেবারে বিপরীত। অন্যদের জ্ঞানালোকিত করার পরিবর্তে সে প্রবঞ্চনা করে। লোকেদেরকে বিশুদ্ধ উপাসনা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শয়তান তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক অনেক মিথ্যা কথা ছড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, শয়তান আমাদের বিশ্বাস করাতে চায় যে, ঈশ্বর আমাদের নিকটবর্তী হওয়ার কোনো প্রয়োজনই বোধ করেন না এবং পৃথিবীর দুঃখকষ্ট দেখে তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়াই হয় না। অথচ বাইবেল দেখায় যে, যিহোবা তাঁর সৃষ্টির জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং মন্দতা ও দুঃখকষ্টের জন্য গভীর দুঃখবোধ করেন। (প্রেরিত ১৭:২৪-৩০) এ ছাড়া শয়তান লোকেদের বিশ্বাস করাতে চায় যে, আধ্যাত্মিক বিষয়ে ব্যস্ত থাকা মানে কেবল সময় নষ্ট করা। অন্যদিকে, শাস্ত্র আমাদের আশ্বাস দেয় যে, “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” সেইসঙ্গে সেগুলো স্পষ্টভাবে বলে যে, “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা”—ইব্রীয় ৬:১০; ১১:৬.
১৬. কেন খ্রিস্টানদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে ও সত্যকে ধরে রাখতে হবে?
১৬ শয়তানের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৪) হবার মতো কেউ কেউ শয়তান দিয়াবলের দ্বারা পুরোপুরি প্রবঞ্চিত হয়। অন্যেরা আদমের পথ অনুসরণ করে, যে প্রবঞ্চিত হয়নি ঠিকই কিন্তু স্বেচ্ছায় অবাধ্যতার পথ বেছে নিয়েছিল। (যিহূদা ৫, ১১) তাই, খ্রিস্টানদের সতর্ক থাকা এবং সত্যকে ধরে রাখা অত্যাবশ্যক।
যিহোবা “নিষ্কপট বিশ্বাস” চান
১৭. যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১৭ যেহেতু যিহোবা তাঁর সমস্ত পথে সত্য, তাই তিনি আশা করেন যে, তাঁর উপাসকরাও সত্যবাদী হবে। গীতরচক লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার তাম্বুতে কে প্রবাস করিবে? তোমার পবিত্র পর্ব্বতে কে বসতি করিবে? যে ব্যক্তি সিদ্ধ আচরণ ও ধর্ম্মকর্ম্ম করে, এবং হৃদয়ে সত্য কহে।” (গীতসংহিতা ১৫:১, ২) যে-যিহুদিরা এই গানটি গেয়েছিল, যিহোবার পবিত্র পবর্তের উল্লেখ তাদেরকে নিঃসন্দেহে সিয়োন পর্বতের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল, যেখানে রাজা দায়ূদ তার নির্মিত তাঁবুতে নিয়ম সিন্দুক এনে রেখেছিলেন। (২ শমূয়েল ৬:১২, ১৭) পর্বত ও তাঁবু রূপকভাবে যিহোবা যেখানে বাস করতেন, সেই জায়গার কথা মনে করিয়ে দিত। সেখানে লোকেরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য তাঁর নিকটবর্তী হতে পারত।
১৮. (ক) ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য কী করা দরকার? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে?
১৮ যেকেউ যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চান, তাকে অবশ্যই “হৃদয়ে” সত্য বলতে হবে, শুধুমাত্র তার ওষ্ঠাধরে নয়। ঈশ্বরের প্রকৃত বন্ধুদের সৎহৃদয়ের হতে হবে এবং “অকল্পিত [“নিষ্কপট,” NW] বিশ্বাস” থাকার প্রমাণ দিতে হবে কারণ সত্যবাদিতার কাজগুলো হৃদয় থেকে আসে। (১ তীমথিয় ১:৫; মথি ১২:৩৪, ৩৫) ঈশ্বরের একজন বন্ধু প্রতারক বা প্রবঞ্চক নন, কারণ “সদাপ্রভু . . . ছলপ্রিয়কে ঘৃণা করেন।” (গীতসংহিতা ৫:৬) সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিরা তাদের ঈশ্বরকে অনুকরণ করে সত্যবাদী হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। পরের প্রবন্ধটি এই বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কেন যিহোবা সমস্ত কিছু সম্বন্ধে সত্য জানেন?
• কী দেখায় যে, যিহোবা সত্যবাদী?
• কীভাবে যিহোবা সত্য প্রকাশ করেছেন?
• সত্য সম্বন্ধে আমাদের কাছ থেকে কী চাওয়া হয়?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
সত্যের ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেই সম্বন্ধে তিনি জানেন
[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো সত্য হবে