ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে সুসজ্জীভূত
ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে সুসজ্জীভূত
“ঈশ্বর . . . আমাদিগকে . . . পরিচারক হইবার উপযুক্তও [“যথাযোগ্যও,” NW] করিয়াছেন।” —২ করিন্থীয় ৩:৫, ৬.
১, ২. মাঝে মাঝে প্রচার করার কোন্ চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তারা কেন ব্যর্থ হয়?
আপনাকে যদি এমন একটা কাজ দেওয়া হয় যা করার যোগ্যতা আপনার নেই, তাহলে আপনার কেমন লাগবে? একটু ভেবে দেখুন: কাজটা করার জন্য আপনার যে জিনিসগুলো দরকার তা আপনার সামনেই রয়েছে আর যন্ত্রপাতিও হাতের কাছেই আছে। কিন্তু, কাজটা কীভাবে করতে হবে সেই সম্বন্ধে আপনার কোন ধারণাই নেই। আরও দুঃখজনক ব্যাপার হল, এই কাজটা করা খুবই জরুরি। কারণ লোকেরা আপনার মুখ চেয়ে বসে আছেন। কী এক হতাশাজনক পরিস্থিতি!
২ এইরকম এক উভয়সংকট একেবারে কাল্পনিক ঘটনা নয়। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। কখনও কখনও খ্রীষ্টীয়জগতের কোন একটা সম্প্রদায় ঘরে-ঘরে প্রচার করার ব্যবস্থা শুরু করে। কিন্তু, তাদের এই চেষ্টা বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থ হয় এবং কয়েক সপ্তা বা মাসের মধ্যেই তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কেন? কারণ খ্রীষ্টীয়জগৎ তার অনুসারীদের এই কাজের জন্য যোগ্য হতে সাহায্য করেনি। এমনকি পাদরিদেরও প্রচার কাজ করার মতো যোগ্যতা নেই, যদিও তারা বছরের পর বছর বিভিন্ন স্কুল ও সেমিনারগুলোতে পড়াশোনা করেছেন। কেন আমরা তা বলতে পারি?
৩. দ্বিতীয় করিন্থীয় ৩:৫, ৬ পদে কোন্ শব্দটা তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর মানে কী?
৩ ঈশ্বরের বাক্য ব্যাখ্যা করে যে, কোন্ বিষয় একজনকে খ্রীষ্টীয় সুসমাচারের প্রকৃত প্রচারক হওয়ার যোগ্য করে তোলে। প্রেরিত পৌল লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “আমরা যে আপনারাই কিছুর মীমাংসা করিতে নিজ গুণে উপযুক্ত [“যথাযোগ্য,” NW], তাহা নয়; কিন্তু আমাদের উপযোগিতা [“যথাযোগ্যতা,” NW] ঈশ্বর হইতে উৎপন্ন; তিনিই আমাদিগকে . . . পরিচারক হইবার উপযুক্তও [“যথাযোগ্যও,” NW] করিয়াছেন।” (২ করিন্থীয় ৩:৫, ৬) লক্ষ্য করুন যে, এখানে ‘যথাযোগ্য’ শব্দটাকে তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মানে কী? ভাইন্স এক্সপোজিটরি ডিকশনারি অফ বিবলিক্যাল ওয়ার্ডস বলে: “যখন কোন বস্তুর বিষয়ে বলা হয়, তখন [মূল গ্রিক শব্দটা] ‘যথেষ্ট’ অর্থে ব্যবহার করা হয় . . .; আর কোন ব্যক্তির বিষয়ে বলার সময় এটা ‘উপযোগী’ ও ‘উপযুক্ত’-কে বোঝায়।” অর্থাৎ যারা ‘যথাযোগ্য’ তারা তাদেরকে দেওয়া কাজ করার জন্য উপযোগী এবং উপযুক্ত। হ্যাঁ, সুসমাচারের প্রকৃত পরিচারকরা এই কাজ করার জন্য যোগ্য। তারা এই কাজ করার জন্য উপযোগী, মানানসই বা উপযুক্ত।
৪. (ক) পৌলের উদাহরণ কীভাবে দেখায় যে, খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার জন্য যোগ্য হওয়া কেবল নির্দিষ্ট কিছু লোকেদের জন্যই নয়? (খ) আমাদেরকে যোগ্য করে তোলার জন্য যিহোবা যে তিনটে মাধ্যম ব্যবহার করেন, সেগুলো কী?
৪ কিন্তু এই যোগ্যতা কোথা থেকে আসে? একজন ব্যক্তির প্রতিভা, মেধা নাকি নামকরা স্কুলগুলোর বিশেষ শিক্ষা থেকে? প্রেরিত পৌলের এই সমস্ত বিষয়ই ছিল। (প্রেরিত ২২:৩; ফিলিপীয় ৩:৪, ৫) কিন্তু, তিনি নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, পরিচারক হিসেবে তার যে-যোগ্যতাগুলো ছিল, তা তিনি উচ্চশিক্ষার স্কুলগুলো থেকে অর্জন করেননি বরং যিহোবা ঈশ্বর তাকে তা দিয়েছিলেন। আর এই যোগ্যতাগুলো কি শুধু নির্দিষ্ট কিছু লোকেদের জন্য? করিন্থীয় মণ্ডলীকে পৌল “আমাদের যথাযোগ্যতা” সম্বন্ধে লিখেছিলেন। এর থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, যিহোবা তাঁর সমস্ত বিশ্বস্ত দাসের প্রতি লক্ষ্য রাখেন যেন তারা উপযোগী হতে পারেন ও তিনি তাদেরকে যে কাজ দিয়েছেন তা করতে সমর্থ হন। এই কাজের জন্য আজকে যিহোবা কীভাবে সত্য খ্রীষ্টানদেরকে যোগ্য করে তোলেন? আসুন তিনটে মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করি, যা তিনি ব্যবহার করে থাকেন: (১) তাঁর বাক্য, (২) তাঁর পবিত্র আত্মা এবং (৩) তাঁর পার্থিব সংগঠন।
যিহোবার বাক্য আমাদের যোগ্য করে
৫, ৬. সত্য খ্রীষ্টানদের ওপর পবিত্র শাস্ত্র কেমন প্রভাব ফেলে?
৫ প্রথমত, ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে আমাদেরকে পরিচারক হিসেবে যোগ্য করে তোলে? পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব [“সম্পূর্ণ উপযোগী,” NW], সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) তাই বলা যায়, পবিত্র শাস্ত্র আমাদেরকে ‘সৎকর্ম্ম’ করতে অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দিতে ‘সম্পূর্ণ উপযোগী ও সুসজ্জীভূত’ করে তুলতে পারে। তাহলে, এখন খ্রীষ্টীয়জগতের গির্জাগুলোর অনুসারীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদের বাইবেল পড়ার সুযোগ আছে। কীভাবে এই একই বই কিছু লোককে উপযোগী পরিচারক হওয়ার জন্য সাহায্য করেছে এবং কিছুজনকে করেনি? এর উত্তর আমরা বাইবেলের প্রতি আমাদের মনোভাব কীরকম তার থেকে পাই।
৬ কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, গির্জায় যায় এমন অনেকে বাইবেলের বার্তাকে “ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া” মেনে নেন না। (১ থিষলনীকীয় ২:১৩) এই ব্যাপারে খ্রীষ্টীয়জগতের এক কলঙ্কজনক ইতিহাস রয়েছে। থিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউশনগুলোতে কয়েক বছর পড়াশোনা করার পর, পাদরিরা কি ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে সজ্জীভূত হন? না। কিছু ছাত্র বাইবেল বিশ্বাসী হিসেবে সেমিনারিতে পড়াশোনা শুরু করেন কিন্তু পড়াশোনা শেষে সন্দেহবাদী হিসেবে গ্র্যাজুয়েট হন। পরে তারা ঈশ্বরের বাক্যকে—যাদের অনেকেই আর বিশ্বাস করেন না—প্রচার না করে বরং তাদের পরিচর্যায় অন্যান্য বিষয়কে যুক্ত করেন যেমন, রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ান, সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার জন্য খ্রীষ্টীয় নীতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন বা উপদেশ দেওয়ার সময় এই জগতের দর্শনবিদ্যার ওপর জোর দেন। (২ তীমথিয় ৪:৩) অথচ, প্রকৃত খ্রীষ্টানরা যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ অনুসরণ করে চলেন।
৭, ৮. ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি যীশুর মনোভাব কীভাবে তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতাদের চেয়ে আলাদা ছিল?
৭ যীশু তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতাদেরকে তাঁর চিন্তাভাবনার ওপর প্রভাব ফেলতে দেননি। তিনি তাঁর প্রেরিতদের মতো অল্প কয়েকজনের কাছে হোক বা অনেক লোকেদের কাছেই হোক, সবসময় পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষা দিতেন। (মথি ১৩:১০-১৭; ১৫:১-১১) এই অভ্যাসই তাঁকে তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতাদের থেকে আলাদা করেছিল। তারা ঈশ্বরের গভীর বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে সাধারণ লোকেদেরকে নিরুৎসাহিত করতেন। আসলে, সেই সময়ের একজন শিক্ষক মনে করতেন যে, শাস্ত্রের কিছু অংশের অর্থ এত গভীর ও বোঝা এত কঠিন ছিল যে, তা নিয়ে তিনি শুধু তার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে পারেন আর তা আলোচনা করার সময় খুবই নিচু স্বরে ও সেইসঙ্গে মাথায় কাপড় দিয়ে করতে হতো। ওই ধর্মীয় নেতারা ঈশ্বরের নাম উচ্চারণের বিষয়ে যেরকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন, তেমনই বাইবেলের কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা করার বিষয়েও তা-ই ছিলেন।
৮ যীশু তাদের মতো ছিলেন না। তিনি ভাল করে জানতেন যে, শুধু নির্দিষ্ট কিছু লোক নয় বরং সমস্ত লোকেদের “ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়” তা নিয়ে চিন্তা করা দরকার। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) তাই, পণ্ডিতদের এক উঁচু শ্রেণীর দলকে জ্ঞানের চাবি দেওয়ার ব্যাপারে যীশু আগ্রহী ছিলেন না। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমি যাহা তোমাদিগকে অন্ধকারে বলি, তাহা তোমরা আলোতে বলিও; এবং যাহা কাণে কাণে শুন, তাহা ছাদের উপরে প্রচার করিও।” (মথি ৪:৪; ১০:২৭) যীশু যত লোকেদের কাছে সম্ভব ঈশ্বরের জ্ঞান সম্বন্ধে জানাতে চেয়েছিলেন।
৯. সত্য খ্রীষ্টানরা কীভাবে বাইবেল ব্যবহার করেন?
৯ আমাদের সবসময় ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে, আমরা যখন কিংডম হলে বক্তৃতা দিই, তখন বাইবেল থেকে শুধু বেছে বেছে কয়েকটা পদ পড়াই যথেষ্ট নয়। আমাদের সেই পদগুলো বুঝিয়ে দিতে, উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করতে এবং কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা বলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হল, বাইবেলের পৃষ্ঠা থেকে বার্তা তুলে এনে শ্রোতাদের মনে ছেপে দেওয়া। (নহিমিয় ৮:৮, ১২) এছাড়াও, প্রাচীনরা যদি কাউকে পরামর্শ দেওয়ার বা সংশোধন করার দরকার বলে মনে করেন, তখন তাদের বাইবেল ব্যবহার করা উচিত। যিহোবার লোকেরা যদিও বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেন এবং বিভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছেন কিন্তু তবুও, তারা সবাই সর্বশ্রেষ্ঠ বই বাইবেলকে সম্মান করেন।
১০. বাইবেলের অনুপ্রাণিত বার্তা আমাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?
১০ ঈশ্বরের বাক্যকে যখন এইরকম সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তখন এর অনেক শক্তি থাকে। (ইব্রীয় ৪:১২) এর বার্তা লোকেদেরকে তাদের জীবনে বড় বড় পরিবর্তন করতে পরিচালিত করে, তারা বিভিন্ন অশাস্ত্রীয় অভ্যাস যেমন, ব্যভিচার, পারদারিকতা, প্রতিমাপূজা, অতিরিক্ত মদ খাওয়া এবং চুরি করা থেকে ফিরে আসেন। এটা অনেককে পুরনো ব্যক্তিত্ব বদলে নতুন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। (ইফিষীয় ৪:২০-২৪) আমরা যদি মানুষের ধারণা বা পরম্পরাগত রীতিনীতিগুলোর চেয়ে ঈশ্বরের বাক্যকে বেশি সম্মান করি এবং বিশ্বস্তভাবে ব্যবহার করি, তাহলে এটা আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে উপযোগী ও সম্পূর্ণ সজ্জীভূত করবে।
যিহোবার আত্মা আমাদেরকে যোগ্য করে
১১. যিহোবার পবিত্র আত্মাকে উপযুক্তভাবেই “সহায়” বলা হয়েছে কেন?
১১ দ্বিতীয়ত, আমাদেরকে সুসজ্জীভূত করার ক্ষেত্রে যিহোবার পবিত্র আত্মা বা কার্যকারী শক্তির যে ভূমিকা রয়েছে, আসুন আমরা তা নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের কখনও ভুলে গেলে চলবে না যে, যত শক্তি আছে সেগুলোর মধ্যে যিহোবার আত্মা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে এই অসাধারণ শক্তি দিয়েছেন, যাতে তা সমস্ত সত্য খ্রীষ্টানদের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই, উপযুক্তভাবেই যীশু পবিত্র আত্মাকে “সহায়” বলেছিলেন। (যোহন ১৬:৭) তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে যিহোবার কাছে সেই আত্মা চাইতে বলেছিলেন আর তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, যিহোবা উদারভাবে এটা তাদেরকে দেবেন।—লূক ১১:১০-১৩; যাকোব ১:১৭.
১২, ১৩. (ক) পরিচর্যায় আমাদেরকে সাহায্যের জন্য পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা কেন জরুরি? (খ) ফরীশীরা কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, পবিত্র আত্মা তাদের ওপর কাজ করেনি?
১২ পবিত্র আত্মার জন্য আমাদের রোজ প্রার্থনা করা দরকার, বিশেষ করে সেটা যেন আমাদের প্রচার কাজে সাহায্য করে। এই সক্রিয় শক্তি আমাদের ওপর কীরকম ছাপ ফেলে? এটা আমাদের মন ও হৃদয়ের ওপর ছাপ ফেলে, নিজেদেরকে বদলাতে, আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব হতে ও পুরনো ব্যক্তিত্ব বদলে নতুন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করে। (কলসীয় ৩:৯, ১০) এটা আমাদেরকে খ্রীষ্ট যেরকম গুণাবলি দেখিয়েছিলেন, সেই মহামূল্যবান গুণগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই গালাতীয় ৫:২২, ২৩ পদের কথাগুলো মুখস্ত বলতে পারি। এই পদগুলোতে ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলোর তালিকা দেওয়া আছে। এই তালিকার প্রথম ফলটা হল প্রেম। আমাদের পরিচর্যার জন্য এই গুণটা থাকা খুবই জরুরি। কেন?
১৩ প্রেম হল মহা চালিকাশক্তি। যিহোবা ও লোকেদের প্রতি প্রেমই সত্য খ্রীষ্টানদেরকে সুসমাচার প্রচার করতে পরিচালিত করে। (মার্ক ১২:২৮-৩১) এইরকম প্রেম ছাড়া আমরা ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে সত্যিকারভাবে যোগ্য হতে পারি না। যীশু ও ফরীশীদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা দেখুন। মথি ৯:৩৬ পদ যীশুর সম্বন্ধে বলে: “কিন্তু বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” সাধারণ লোকেদের প্রতি ফরীশীদের মনোভাব কেমন ছিল? তারা বলেছিল: “এই যে লোকসমূহ ব্যবস্থা জানে না, ইহারা শাপগ্রস্ত।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যোহন ৭:৪৯) লোকেদের প্রতি ফরীশীদের কোন ভালবাসাই ছিল না বরং তারা লোকেদের কত তুচ্ছ ভাবতেন। তাই এটা স্পষ্ট যে, যিহোবার আত্মা তাদের ওপর কাজ করেনি।
১৪. পরিচর্যায় প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যীশুর উদাহরণ আমাদেরকে কীভাবে প্রেরণা দেওয়া উচিত?
১৪ যীশু লোকেদের জন্য মন থেকে চিন্তা করতেন। তিনি তাদের দুঃখ সম্বন্ধে জানতেন। তিনি জানতেন যে, তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে এবং পালকবিহীন মেষপালের মতো তারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল। যোহন ২:২৫ পদ আমাদের বলে যে, যীশু “মনুষ্যের অন্তরে কী আছে, তাহা . . . জানিতেন।” তিনি যেহেতু সৃষ্টির সময়ে যিহোবার প্রধান কার্যকারী ছিলেন, তাই মানুষের স্বভাবচরিত্র তিনি খুব ভালভাবে বুঝতেন। (হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১) সেটাই তাঁর ভালবাসাকে আরও গভীর করেছিল। এই ভালবাসা যেন প্রচার কাজ করে চলার জন্য সবসময় আমাদের প্রেরণা দেয়! আমাদের যদি মনে হয় যে এই বিষয়ে আমরা আরও উন্নতি করতে পারি, তাহলে আসুন আমরা যিহোবার পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করি এবং আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি। যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন। আমরা যাতে খ্রীষ্টের মতো হতে পারি যিনি সুসমাচার প্রচার করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন, তার জন্য সাহায্য করতে তিনি আমাদেরকে এই অপ্রতিরোধ্য শক্তি দেবেন।
১৫. যিশাইয় ৬১:১-৩ পদের কথাগুলো কীভাবে যীশুর প্রতি উপযুক্ত ছিল কিন্তু একই সময়ে কীভাবে তা অধ্যাপক ও ফরীশীদের অবস্থা প্রকাশ করে দেয়?
১৫ যীশু কোথা থেকে যোগ্যতাগুলো পেয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, “প্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন।” (লূক ৪:১৭-২১) হ্যাঁ, যিহোবা নিজে তাঁকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে নিযুক্ত করেছিলেন। তাই, যীশুর কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেটের দরকার ছিল না। তাঁর দিনের ওই ধর্মীয় নেতারা কি পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত ছিলেন? না। কিংবা তারা যিশাইয় ৬১:১-৩ পদের এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করার জন্যও সুসজ্জীভূত ছিলেন না, যা যীশু জোরে জোরে পড়েছিলেন ও নিজের প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন। দয়া করে ওই পদগুলো নিজে পড়ে দেখুন যে, ওই কপট অধ্যাপক ও ফরীশীদের সেই যোগ্যতা ছিল না। গরিবদের কাছে ঘোষণা করার জন্য তাদের কাছে কোন সুসমাচার ছিল না। আর তারা কীভাবে বন্দিদের কাছে মুক্তির কথা ও অন্ধদের কাছে চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা প্রচার করতে পারতেন? আধ্যাত্মিক অর্থে তারা নিজেরাই তো অন্ধ ছিলেন এবং মানুষের তৈরি পরম্পরাগত রীতিনীতিগুলোর দাসত্বে বন্দি ছিলেন! এই লোকেদের বিপরীতে, আমরা কি লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য?
১৬. আজকে যিহোবার লোকেরা পরিচারক হিসেবে তাদের যোগ্যতার জন্য কোন্ আস্থা রাখতে পারেন?
১৬ এটা ঠিক যে, আমরা খ্রীষ্টীয়জগতের উচ্চশিক্ষার স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করিনি। থিওলজি বিষয়ক সেমিনারি থেকেও আমাদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি। তাহলে, এর মানে কি এই যে আমাদের যোগ্যতাগুলোর অভাব রয়েছে? কখনোই না! যিহোবা ঈশ্বর আমাদের তাঁর সাক্ষি হিসেবে নিযুক্ত করেন। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) আমরা যদি তাঁর আত্মার জন্য প্রার্থনা করি ও এর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি, তাহলে সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। অবশ্য, আমরা অসিদ্ধ বলে মহান শিক্ষক যীশুর মতো উদাহরণ দেখাতে পারি না। কিন্তু, যিহোবা যে আমাদেরকে তাঁর বাক্যের শিক্ষক হিসেবে যোগ্য ও সুসজ্জীভূত করতে তাঁর আত্মাকে ব্যবহার করেন, সেটার জন্য আমরা কি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ নই?
যিহোবার সংগঠন আমাদেরকে যোগ্য করে
১৭-১৯. যিহোবার সংগঠনের জোগানো সপ্তাহের পাঁচটা সভা কীভাবে আমাদেরকে পরিচারক হিসেবে যোগ্য করে তোলে?
১৭ এখন আসুন আমরা, যিহোবা তাঁর বাক্যের শিক্ষক হিসেবে আমাদেরকে সুসজ্জীভূত করার জন্য তৃতীয় যে মাধ্যমটা ব্যবহার করেন, তা নিয়ে আলোচনা করি আর তা হল তাঁর পার্থিব মণ্ডলী বা সংগঠন, যা আমাদেরকে পরিচারক হতে প্রশিক্ষণ দেয়। কীভাবে? আমরা যে শিক্ষা কার্যক্রম উপভোগ করি, তা একটু ভেবে দেখুন! সপ্তায় আমরা পাঁচটা খ্রীষ্টীয় সভায় যোগ দিই। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমরা যিহোবার সংগঠনের জোগানো একটা বই দিয়ে বাইবেলকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করার জন্য মণ্ডলীর বই অধ্যয়নে ছোট ছোট দলে মিলিত হই। শুনে ও মন্তব্য করে আমরা একে অন্যের কাছ থেকে শিখি ও একে অন্যকে উৎসাহ দিই। এছাড়াও, বই অধ্যয়ন অধ্যক্ষ আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশনা দেন ও আমাদের যত্ন নেন। জনসাধারণের সভা এবং প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে, আমরা প্রচুর আধ্যাত্মিক খাবার খেয়ে থাকি।
১৮ কীভাবে শিক্ষা দিতে হয়, সেই বিষয়ে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত বক্তৃতাগুলো তৈরি করে আমরা শিখি যে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করতে হয়। (১ পিতর ৩:১৫) আপনার কি কখনও পরিচিত একটা বিষয়ের ওপর বক্তৃতা দিতে গিয়ে সেখান থেকে নতুন কিছু শিখেছেন বলে মনে হয়েছে? অনেকেই এমনটা মনে করেন। অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় কোন একটা বিষয়ে আমাদের জ্ঞান যতটা বাড়ে আর কোন কিছুতে ততটা বাড়ে না। এমনকি আমরা যদি নিজেরা কোন বক্তৃতা না-ও দিই, তারপরও আমরা ভাল শিক্ষক হতে শিখি। প্রতিটা ছাত্রছাত্রীর ভাল গুণগুলো আমরা খেয়াল করি এবং চিন্তা করি যে, কীভাবে আমরা ওই গুণগুলো অনুকরণ করতে পারি।
১৯ পরিচর্যা সভাও ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে আমাদেরকে সুসজ্জীভূত করে তোলে। প্রতি সপ্তায় আমরা প্রাণবন্ত বক্তৃতা ও আলোচনাগুলো শুনি এবং বিভিন্ন নমুনা দেখি, যা আমাদেরকে পরিচর্যার জন্য তৈরি করে। কোন্ উপস্থাপনাটা আমরা ব্যবহার করব? আমাদের প্রচারের এলাকায় যে কঠিন সমস্যাগুলো রয়েছে, তা আমরা কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি? প্রচার করার আর কোন্ উপায়গুলো রয়েছে, যা আমরা কাজে লাগাতে পারি? পুনর্সাক্ষাৎ ও বাইবেল অধ্যয়ন করানোর সময় কী আমাদেরকে আরও দক্ষ শিক্ষক করে তুলবে? (১ করিন্থীয় ৯:১৯-২২) এই প্রশ্নগুলো পরিচর্যা সভায় তুলে ধরা হয় ও বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। এই সভার অনেক বিষয়ই আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-য় দেওয়া প্রবন্ধগুলোর ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়, যা অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমাদেরকে সুসজ্জীভূত করে তুলতে আরেকটা হাতিয়ার।
২০. সভা ও অধিবেশনগুলো থেকে কীভাবে আমরা পুরোপুরি উপকার লাভ করতে পারি?
২০ সভাগুলোর জন্য আগে থেকে তৈরি হয়ে, সেগুলোতে যোগ দিয়ে ও সেখান থেকে আমরা যা শিখি তা শিক্ষক হিসেবে আমাদের কাজে প্রয়োগ করে, আমরা নিজেদেরকে সুসজ্জীভূত করার জন্য অনেক প্রশিক্ষণ পাই। এই সভাগুলো ছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে। ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে সুসজ্জীভূত করার জন্য আমাদের বড় বড় সভাগুলো, যেমন অধিবেশন ও সম্মেলনগুলো রয়েছে। আর মনোযোগ দিয়ে শোনার এবং এখান থেকে পাওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর জন্য আমরা কত অধীর আগ্রহ নিয়েই না অপেক্ষা করে আছি!—লূক ৮:১৮.
২১. কোন্ প্রমাণ দেখায় যে আমাদের প্রশিক্ষণ কাজে এসেছে আর এর জন্য কে কৃতিত্ব পান?
২১ যিহোবা যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন, তাতে কি কোন লাভ হয়েছে? বাস্তব ঘটনাগুলোই এর উত্তর দিক। প্রতি বছর, লক্ষ লক্ষ লোকেদেরকে বাইবেলের মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো এবং ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে যা চান, সেই মতো জীবনযাপন করতে সাহায্য করা হচ্ছে। আমাদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে কিন্তু এর জন্য আমরা কেউই কৃতিত্ব নিতে পারি না। আমাদেরকে যীশুর মতো করে বাস্তবসম্মতভাবে বিষয়টাকে দেখতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” প্রথমদিকের প্রেরিতদের মতো, আমরাও অনেক বিষয়ে অশিক্ষিত ও সামান্য লোক। (যোহন ৬:৪৪; প্রেরিত ৪:১৩) আমাদের সাফল্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে, যিনি সৎহৃদয়ের লোকেদের সত্যে নিয়ে আসেন। প্রেরিত পৌল এই বিষয়টাকে সুন্দরভাবে বলেছিলেন: “আমি রোপণ করিলাম, আপল্লো জল সেচন করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন।”—১ করিন্থীয় ৩:৬.
২২. খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় যাওয়ার বিষয়ে কেন আমাদের কখনও নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়?
২২ হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে আমাদের কাজের সঙ্গে যিহোবা ঈশ্বর সরাসরি জড়িত। শিক্ষক হিসেবে আমরা হয়তো সবসময় নিজেদেরকে যোগ্য মনে না-ও করতে পারি। কিন্তু মনে রাখবেন, যিহোবাই লোকেদেরকে তাঁর ও তাঁর পুত্রের কাছে নিয়ে আসেন। যিহোবাই তাঁর বাক্য, পবিত্র আত্মা ও তাঁর পার্থিব সংগঠনের মাধ্যমে নতুনদের কাছে পরিচারক হিসেবে আমাদের যোগ্য করে তোলেন। ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে সুসজ্জীভূত করার জন্য তিনি এখন যে ভাল ভাল বিষয়গুলো জোগাচ্ছেন, আসুন আমরা তা কাজে লাগিয়ে যিহোবার প্রশিক্ষণে সাড়া দিই!
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীভাবে বাইবেল আমাদেরকে প্রচার কাজের জন্য সুসজ্জীভূত করে?
• পরিচারক হিসেবে আমাদেরকে যোগ্য করার জন্য পবিত্র আত্মা কোন্ ভূমিকা পালন করে?
• সুসমাচারের প্রচারক হিসেবে যোগ্য হতে যিহোবার পার্থিব সংগঠন কোন্ কোন্ উপায়ে আপনাকে সাহায্য করেছে?
• পরিচর্যায় যোগ দেওয়ার সময় কেন আমাদের আস্থা রাখা উচিত?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে যীশু লোকেদের জন্য ভালবাসা দেখিয়েছিলেন