সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ইতালিতে সান্ত্বনার কথা বলা

ইতালিতে সান্ত্বনার কথা বলা

আমরা বিশ্বাসের লোক

ইতালিতে সান্ত্বনার কথা বলা

 যিহোবা “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।” যিহোবার দাসরা তাঁর মতো হতে শেখেন তাই তারা “সমস্ত ক্লেশের মধ্যে . . . সান্ত্বনা করেন।” (২ করিন্থীয় ১:৩, ৪; ইফিষীয় ৫:১) আর যিহোবার সাক্ষিদের প্রচার কাজের একটা বড় উদ্দেশ্য হল এটাই।

এক অসহায় মহিলাকে সাহায্য করা

ইদানীং দরিদ্রতা ও যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচার জন্য এবং আরেকটু ভালভাবে বেঁচে থাকার আশায় অনেকেই ধনী দেশগুলোতে গিয়ে থাকতে শুরু করেছেন। কিন্তু নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এত সোজা নয়। মোনজোলা নামে আলবেনিয়ার এক মহিলা তার লোকেদের সঙ্গে ইতালির বরগোমানেরোতে থাকতেন। যেহেতু তিনি ইতালিতে বেআইনীভাবে বাস করছিলেন, তাই ওয়ান্ডার সঙ্গে কথা বলতে তিনি ইতস্তত করতেন। কিন্তু ওয়ান্ডা যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন মোনজোলার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজে নিয়েছিলেন। ভাষা তাদের মধ্যে একটা দেয়াল তৈরি করলেও মোনজোলা ঈশ্বরের বাক্য শেখার জন্য খুব আগ্রহ দেখান। কিন্তু কয়েক দিন অধ্যয়ন করার পর একদিন ওয়ান্ডা এসে দেখেন যে ঘরে কেউ নেই। পরে ওয়ান্ডা জানতে পারেন যে মোনজোলার প্রেমিক কাকে খুন করেছে আর তাই তাদের সবাইকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে!

চার মাস পর, মোমজোলার সঙ্গে ওয়ান্ডার আবার দেখা হয়। ওয়ান্ডা বলে, “সে একেবারে রোগা হয়ে গিয়েছিল, চেহারা একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল যে তার ওপর দিয়ে বড় কোন ঝড় বয়ে গেছে।” মোনজোলা বলেছিলেন যে তার প্রেমিক জেলে আছে আর যখন সে তার বন্ধুবান্ধবদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল, তারা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। খুব হতাশ হয়ে সে সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। আর তখনই তার ওয়ান্ডার কথা মনে পড়ে যায়, যিনি তাকে বাইবেলের বিষয়ে বলেছিলেন। আর এখন আবার ওয়ান্ডার সঙ্গে দেখা হওয়ায় মোনজোলা কতই না খুশি!

মোনজোলার সঙ্গে আবার বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সভাতে আসতে শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি ইতালিতে থাকার আইনসংগত অধিকারও পেয়ে যান। এক বছর পর মোনজোলা বাপ্তিস্ম নিয়ে একজন যিহোবার সাক্ষি হন। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো থেকে তিনি এতটাই সান্ত্বনা পেয়েছিলেন যে বাইবেল থেকে সান্ত্বনার কথা জানানোর জন্য তিনি তার নিজের দেশ আলবেনিয়াতে ফিরে যান।

শরণার্থী শিবিরে প্রচার করা

ইতালির বেশ কিছু মণ্ডলী মোনজোলার মতো শরণার্থীদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফ্লোরেন্সের একটা মণ্ডলী নিয়মিতভাবে এক শরণার্থী শিবিরে গিয়ে প্রচার করে। সেই শিবিরে পূর্ব ইউরোপ, ম্যাসেডনিয়া এবং কসোভোর মতো আলাদা আলাদা দেশের লোকেরা থাকত আর তাদের দুঃখদুর্দশার সীমা ছিল না। কেউ কেউ নেশা করত ও মদ খেত। আবার অনেকে চুরি জোচ্চুরি করে তাদের সংসার চালাত।

এইরকম এলাকায় প্রচার করা সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু, পূর্ণ-সময়ের প্রচারিকা আমাদের এক বোন পাওলা, জ্যাকলিনা নামে একজন ম্যাসেডনীয় মহিলার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন। পাওলার সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করার পর জ্যাকলিনা তার বান্ধবী সুজানাকে বাইবেল পরীক্ষা করে দেখার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। আবার সুজানাও তার আত্মীয়দের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওই পরিবারের পাঁচজন নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করতে ও সভাতে আসতে শুরু করেন আর তারা যা শিখছিলেন সেগুলো নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে শুরু করেন। নানরকম অসুবিধা থাকলেও তারা যিহোবা ও তাঁর বাক্য থেকে অনেক সান্ত্বনা লাভ করেন।

একজন নান যিহোবার কাছ থেকে সান্ত্বনা পান

ফরমিয়া শহরে আ্যসুন্তা নামে একজন পূর্ণ-সময়ের প্রচারিকা, রাস্তায় একজন মহিলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন যিনি ঠিক করে চলতে পারছিলেন না। সেই মহিলা ছিলেন একজন নান ও তার নাম ছিল পালমিরা। তিনি এমন একটা ধর্মীয় সংগঠনে কাজ করতেন যেখানে অসুস্থ ও দুর্বল লোকেদেরকে হাসপাতালে ও ঘরে ঘরে গিয়ে সেবা করা হতো।

আ্যসুন্তা ওই নানকে বলেছিলেন: “আপনিও কোন রোগে কষ্ট পাচ্ছেন, তাই না? দুঃখের বিষয় যে আমাদের সবারই কোন না কোন সমস্যা আছে।” তার কথা শুনে সেই নান কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন যে তিনি খুবই অসুস্থ। আ্যসুন্তা তাকে উৎসাহ দিয়ে বলেন যে বাইবেলের ঈশ্বর তাকে সান্ত্বনা দিতে পারেন। আ্যসুন্তা তাকে বাইবেল-ভিত্তিক কিছু পত্রিকা দেন ও তিনি সেগুলো নিয়ে নেন।

পরের বার যখন আ্যসুন্তা তার কাছে যায় তখন কথায় কথায় এই নান বলেন যে তিনি সত্যিই ভীষণ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি যে সংস্থায় কাজ করতেন সেটা নানরা চালাত আর তিনি সেখানে অনেক সময় ধরে কাজ করছিলেন। কিন্তু রোগের জন্য তাকে কিছু সময়ের জন্য কাজ ছাড়তে হয়েছিল কিন্তু তারপর তাকে আর কাজে নেওয়া হয়নি। কিন্তু পালমিরা নান হিসেবে সারা জীবন ঈশ্বরের সেবা করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। “চিকিৎসার” জন্য যখন তিনি চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন তখন সেখানে তার খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল যাতে তিনি মনের দিক দিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। পালমিরা বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন এবং এক বছর ধরে খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে আসতে থাকেন। তারপর তিনি অন্য একটা এলাকায় চলে যাওয়ায় আ্যসুন্তা তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। দুবছর পর আ্যসুন্তা তাকে আবার খুঁজে পান। কিন্তু তার পরিবারের লোকেরা ও পাদ্রিরা খুব বিরোধিতা করতে থাকে। তবুও তিনি আবার বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়ে একজন যিহোবার সাক্ষি হন।

হ্যাঁ, অনেকেই ‘সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ বার্তা শুনে খুবই উৎসাহ পান। (রোমীয় ১৫:৪, ৫) তাই ইতালির যিহোবার সাক্ষিরা স্থির করেছেন যে তারা সবসময় অন্যদেরকে সান্ত্বনার কথা জানিয়ে ঈশ্বরকে অনুকরণ করে চলবেন।