কারো কাছে কি একটা পেনসিলআছে?
কারো কাছে কি একটা পেনসিলআছে?
ব্রিটেনের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক
এটা বেশ সস্তা, চাইলেই পাওয়া যায় এবং বলতে গেলে এর কোনো ওজনই নেই। এটাকে স্বচ্ছন্দে পকেটে ভরে রাখা যায়। এটার কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয় না, কখনো ফুটো হয় না এবং এর দাগকে সহজেই মুছে ফেলা যায়। বাচ্চারা এটা দিয়ে লিখতে শেখে, প্রতিভাবান শিল্পীরা এটা দিয়ে চিত্রকর্ম তৈরি করে এবং আমরা অনেকেই নোট লেখার জন্য এটাকে হাতের কাছেই রাখি। হ্যাঁ, এই সামান্য পেনসিলই হচ্ছে বিশ্বে সাধ্যের মধ্যে থাকা ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত লেখার সামগ্রী। এটার উদ্ভাবন ও প্রসারের বিস্ময়কর কাহিনি, ইংল্যান্ডের এক গ্রামে আকস্মিক আবিষ্কারের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
কৃষ্ণসীস
ষোড়শ শতাব্দীতে, উত্তর ইংল্যান্ডের লেক ডিসট্রিক্ট উপত্যকার বোরোডেল পাহাড়ের নীচে এক অদ্ভুত কালো পদার্থের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। যদিও সেই খনিজ পদার্থ দেখতে কয়লার মতো ছিল কিন্তু এটাকে পোড়ানো যায়নি; আর এটা একটা লেখার উপাদানে এক চকচকে, কালো, সহজেই মুছে ফেলা যায় এমন একটা চিহ্ন রেখে গিয়েছিল। যেহেতু এটার গঠন পিচ্ছিল, তাই লোকেরা এর টুকরোগুলোকে ভেড়ার চামড়া দিয়ে মুড়ে রাখত বা এর ছোট ছোট দণ্ডকে সুতো দিয়ে মুড়ে রাখত। সবচেয়ে প্রথমে কে কৃষ্ণসীসকে কাঠের খণ্ডের মধ্যে ঢোকানোর চিন্তাভাবনা করেছেন, তা কেউই জানে না কিন্তু ১৫৬০ এর দশকের মধ্যে, প্রাচীন পেনসিলগুলো ইউরোপ মহাদেশে পৌঁছে গিয়েছিল।
শীঘ্রই, কৃষ্ণসীসকে উত্তোলন করা হয়েছিল এবং শিল্পীদের চাহিদাকে পূরণ করার জন্য রপ্তানি করা হয়েছিল; আর সপ্তদশ শতাব্দীতে এটা মূলত সব জায়গাতেই ব্যবহৃত হতে থাকে। একইসময়ে, পেনসিল প্রস্তুতকারকরা আরও ভাল লেখার সামগ্রী উৎপাদনের জন্য কৃষ্ণসীসকে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিল। খাঁটি হওয়ায় এবং সহজেই উত্তোলন করতে পারার কারণে বোরোডেলের সেই সামগ্রী, চোর ও কালোবাজারিদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছিল। এর ফলে, ব্রিটিশ আইনসভা ১৭৫২ সালে একটা আইন পাশ করায়, যেখানে বলা হয়েছিল যে, কৃষ্ণসীস চুরি করলে শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড দেওয়া হবে অথবা দূরে বন্দি শিবিরে নির্বাসিত করা হবে।
১৭৭৯ সালে, সুইডিশ রসায়নবিদ কার্ল ডব্লু. শ্যালি এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করেন যে, কৃষ্ণসীস আসলে মোটেও সীসা ছিল না বরং তা ছিল খাঁটি কার্বনের এক নরম রূপ। দশ বছর পর, জার্মান ভূতত্ত্ববিদ আব্রাহাম জি. ভার্নার এটাকে গ্রাফাইট নাম দিয়েছিলেন, যেটি গ্রিক শব্দ গ্রাফিন থেকে এসেছিল, যেটির অর্থ হচ্ছে “লেখা।” হ্যাঁ, এদের নামের বৈসাদৃশ্যে, পেনসিলে আসলে কোনো সীসাই নেই!
পেনসিলের প্রসার
ইংল্যান্ডের গ্রাফাইট বছরের পর বছর ধরে পেনসিল তৈরি শিল্পের ওপর একচেটিয়া ব্যাবসা করেছিল কারণ কোনো প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়াই এটা ব্যবহারোপযোগী ছিল। যেহেতু ইউরোপ মহাদেশে প্রাপ্ত গ্রাফাইট নিকৃষ্ট মানের ছিল, তাই সেখানকার পেনসিল প্রস্তুতকারকরা তাদের পেনসিলের সীসকে উন্নত করার উপায় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিল। ফরাসি প্রকৌশলী নিকলা-ঝাক কঁতে গ্রাফাইটের গুঁড়ো ও কাদা মিশিয়েছিলেন, সেই মিশ্রণকে কাঠির মতো সরু আকার দিয়েছিলেন এবং সেগুলোকে চুল্লিতে পুড়িয়েছিলেন। গ্রাফাইটের পরিমাণ ও কাদার পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য করে, তিনি সরু সরু সীস বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা বিভিন্ন আভার কালো রং উৎপন্ন করেছিল—যে-প্রক্রিয়াটা আজও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কঁতে ১৭৯৫ সালে তার আবিষ্কারের বিষয়টা প্রকাশ করেছিলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে, পেনসিল উৎপাদন এক লাভজনক ব্যাবসা হয়ে উঠেছিল। সাইবেরিয়া, জার্মানি ও বর্তমানে যেটা চেক প্রজাতন্ত্র সেই দেশসহ বেশ কয়েকটা জায়গাতে গ্রাফাইট আবিষ্কার করা হয়েছিল। প্রথমে জার্মানি ও এরপর যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটা কারখানা খোলা হয়েছিল। যান্ত্রিকীকরণ ও বহুল পরিমাণে উৎপাদন পেনসিলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এমনকি স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও পেনসিল ব্যবহার করতে শুরু করেছিল।
আধুনিক পেনসিল
প্রতি বছর, বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি পেনসিল উৎপাদন করা হয়ে থাকে আর তাই পেনসিল এক অত্যাধুনিক বিবিধ ব্যবহারোপযোগী লেখার ও আঁকার সামগ্রী হয়ে উঠেছে। একটা আদর্শ কাঠের পেনসিল ৩৫ মাইল দীর্ঘ এক লাইন আঁকতে ও ৪৫,০০০টি শব্দ লিখতে পারে। ধাতু অথবা প্লাস্টিকের, যান্ত্রিক (বা যে-পেনসিলের সীস বাইরের খাপ ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে সম্মুখে চালিত হয়) পেনসিলগুলোতে সরু সরু সীস থাকে, যেগুলোকে কখনো ধারানোর প্রয়োজন হয় না। গ্রাফাইটের জায়গায়, রং পেনসিলগুলো বিভিন্ন রং ও রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করে থাকে, যা নানা রঙে পাওয়া যায়।
বিবিধ ব্যবহারোপযোগী, দীর্ঘস্থায়ী, সাধারণ ও কার্যকর সামান্য পেনসিল সেকেলে হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণই প্রকাশ করে না। তাই, ভবিষ্যতে ঘরে বা কাজে যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি হয়তো কাউকে জিজ্ঞেস করতে শুনবেন, “কারো কাছে কি একটা পেনসিল আছে?” (g ৭/০৭)
[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
কীভাবে পেনসিলের মধ্যে সীস ঢোকানো হয়?
মিহি করে গুঁড়ো করা গ্রাফাইট, কাদা ও জলের মিশ্রণকে এক সরু ধাতব টিউবের ভিতর ঠেসে ঢোকানো হয় আর সেগুলো লম্বা স্প্যাগেটির মতো দেখতে সুতোর মতো বেরিয়ে আসে। এগুলোকে শুকিয়ে, কেটে ও চুল্লির মধ্যে পোড়ানোর পর সীসটাকে গরম তেল ও মোমের মধ্যে ডুবানো হয়। কাঠ, সাধারণত সিডার গাছের (পাইন জাতীয় চিরহরিৎ বৃক্ষ) কাঠ, যেটাকে সহজেই ধারালো করা যায়, সেটাকে একটা অর্ধেক পেনসিলের সমান পুরু পাতের—মসৃণ ও খাঁজকাটা কাঠের টুকরোর—আকারে কাটা হয়। সীসগুলো পাতের খাঁজকাটা অংশে ঢুকানো হয় এবং প্রথমটার ওপর দ্বিতীয় আরেকটা পাত আঠা দিয়ে ঠেসে আটকে দেওয়া হয়। আঠা শুকিয়ে যাওয়ার পর, একেকটা পেনসিলকে আলাদা আলাদাভাবে কাটা হয়। আকার দেওয়ার, সিরিশকাগজ দিয়ে ঘষে মসৃণ করার, রং করার এবং প্রস্তুতকারকের ট্রেডমার্ক ও অন্যান্য বিষয় ছাপ দেওয়ার পর মসৃণ পেনসিলটা ব্যবহারোপযোগী হয়। মাঝে মাঝে পেনসিলের এক প্রান্তে একটা রবার জুড়ে দেওয়া হয়।
[সৌজন্যে]
Faber-Castell AG
[২০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
আমার কোন পেনসিল ব্যবহার করা উচিত?
আপনার যে-পেনসিলটা প্রয়োজন, তা বাছাই করার জন্য পেনসিলের একপাশে যে-অক্ষর বা নম্বরগুলো ছাপ দেওয়া থাকে, সেগুলো লক্ষ করুন। এগুলো পেনসিলের সীস কতটা শক্ত বা নরম তা ইঙ্গিত করে। নরম সীসে গাঢ় দাগ বসে।
HB হচ্ছে বিবিধ ব্যবহারোপযোগী, মাঝারি মানের সীস।
B নরম সীসকে বোঝায়। ২B বা ৬B নম্বরগুলো সীস কতটা নরম তা ইঙ্গিত করে—নম্বর যত বেশি হবে, সীস তত নরম হবে।
H শক্ত সীসের ইঙ্গিত দেয়। নম্বর যত বেশি—২H, ৪H, ৬H ও ইত্যাদি—সীস তত শক্ত।
F ইঙ্গিত করে যে, এর এক সূচালো প্রান্ত রয়েছে।
কিছু কিছু দেশে ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ২ নম্বর পেনসিল হচ্ছে HB পেনসিলের মতো। সেই পদ্ধতিতে, নম্বর যত বেশি হবে, সীস তত শক্ত হবে।