বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের লালনপালন করা
বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের লালনপালন করা
ফিনল্যান্ডের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক
বিশ বছর বয়সি মার্কুস (বাঁদিকে) কারো সাহায্য ছাড়া খাওয়াদাওয়া করতে অথবা ঘুমাতে পারে না। তার ভাল ঘুম হয় না তাই সারারাত তার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। দুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ায় তার নিয়মিত প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু, মার্কুসের বাবামা তাকে অত্যন্ত ভালবাসে। তারা তার কোমল, সদয় ও স্নেহপরায়ণ স্বভাবকে খুবই উপলব্ধি করে। তাদের ছেলের বিভিন্ন অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, তারা তাকে নিয়ে গর্বিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে দেখেছে যে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ লোকেরই কোনো না কোনো ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বংশানুগতির সমস্যা, জন্মের সময় সৃষ্ট আঘাত, ছোটবেলায় মস্তিস্কে ইনফেকশন এবং পুষ্টিহীনতা ও সেইসঙ্গে মাদকদ্রব্য, মদ অথবা রাসায়নিক দ্রব্যাদি গ্রহণের কারণে মানসিক অক্ষমতা হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কারণটা অজানা থেকে যায়। বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন ছেলেমেয়ের বাবামা হলে কেমন লাগে? কীভাবে এই বাবামারা উৎসাহ পেতে পারে?
যখন দুঃসংবাদ জানানো হয়
যখনই বাবামা জানতে পারে যে, তাদের সন্তানের মানসিক অক্ষমতা রয়েছে, তখন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। “আমার স্বামী ও আমি যখন জানতে পেরেছিলাম যে, আমাদের মেয়ের ডাউন সিন্ড্রম (বিকলাঙ্গতা) রয়েছে, তখন আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল আর আমাদের মন একেবারে ভেঙে গিয়েছিল,” সির্খকা স্মরণ করে বলেন। মার্কুসের মা আ্যনি বলেন: “আমাকে যখন বলা হয়েছিল যে সে মানসিকভাবে অক্ষম হবে, তখন আমি চিন্তা করছিলাম যে অন্যেরা তাকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে। কিন্তু, শীঘ্রই আমি সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠেছিলাম এবং তার প্রয়োজনগুলো ও সেইসঙ্গে তার জন্য আমি কী করতে পারি, সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলাম।” ইর্মগার্ডও একই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। “ডাক্তাররা যখন আমাদের মেয়ে উনিকির অক্ষমতা সম্বন্ধে আমাদের জানিয়েছিল,” তিনি বলেন, “তখন আমি শুধু এটাই চিন্তা করছিলাম যে, কীভাবে আমি আমার ছোট্ট মেয়েকে সাহায্য করতে পারি।” এই ধরনের রোগনির্ণয়ের পর, সির্খকা, আ্যনি এবং ইর্মগার্ডের মতো অভিভাবকরা কী করতে পারে?
“সবচেয়ে প্রথমে আপনি যে-বিষয়টা করতে পারেন,” অক্ষম ছেলেমেয়েদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় তথ্যপ্রচার কেন্দ্র পরামর্শ দেয়, “সেটা হল, তথ্য সংগ্রহ করা—আপনার সন্তানের অক্ষমতা, সুপ্রাপ্য সেবা ও সেইসঙ্গে যতটা সম্ভব পূর্ণরূপে আপনার সন্তানের বিকাশের জন্য আপনার করণীয় বিষয়গুলো সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা।” এই তথ্যগুলো কাজে লাগালে তা আপনাকে এক উদ্দেশ্য এনে দিতে পারে এবং আপনার সন্তানের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। এটা অনেকটা একটা মানচিত্রে ভ্রমণের অগ্রগতি অঙ্কন করার মতো, যেখানে যতটুকু ভ্রমণ করা হয়েছে ও যে-নতুন অবস্থানগুলোতে পৌঁছানো হয়েছে, সেগুলো উল্লেখ করা হয়।
আশার আলো
বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও, শৈশবের মানসিক অক্ষমতার গাঢ় অন্ধকারে আশার আলো থাকতে পারে। কীভাবে?
প্রথমত, বাবামারা এটা জেনে সান্ত্বনা পেতে পারে যে, এইরকম বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই কষ্টভোগ করে না। ড. রবার্ট আইজেকসন তার প্রতিবন্ধী শিশু (ইংরেজি) বইয়ে লেখেন: “অধিকাংশ ছেলেমেয়েই আনন্দিত হতে এবং অন্যদের সাহচর্য, গানবাজনা, কিছু খেলাধুলা, সুস্বাদু খাবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা উপভোগ করতে সক্ষম।” যদিও তারা হয়তো স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের তুলনায় কমই সফল হয় এবং এক ছোট্ট জগতে বাস করে, তবে প্রায়ই স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা তাদের “প্রাসাদে” যতটা না আনন্দিত হয়ে থাকে, তার চেয়ে বেশি তারা তাদের “ছোট্ট কুটিরে” হয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত, বাবামারা তাদের সন্তানের কষ্টার্জিত সম্পাদনগুলোর জন্য গর্ববোধ করতে পারে। প্রতিটা নতুন কাজ শেখা একটা উচ্চ পর্বতে আরোহণ করার সমান আর একেবারে চূড়া থেকে দেখা, বাবামা ও সেইসঙ্গে সন্তান উভয়ের জন্যই পরিতৃপ্তিদায়ক। উদাহরণস্বরূপ, ব্রায়েন টিউবারাস স্ক্লোরোসিস (ক্রমোজম সংক্রান্ত রোগবিশেষ), সিজার (হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া) এবং অটিজমে (শিশুদের কঠিন মানসিক রোগে) ভুগছে। বুদ্ধিমান হলেও সে কথা বলতে পারে না এবং তার হাতগুলোকে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে, ধীরে ধীরে সে একটুও না ফেলে পুরো আধাকাপ পানীয় পান করতে শিখেছে। মন ও শরীরের এতটা সমন্বয় লাভ করতে পারায় ব্রায়েন সম্পূর্ণ নিজে নিজে তার প্রিয় পানীয়—দুধ—পান করতে পারে।
ব্রায়েনের বাবামা তার এই সাফল্যকে তার বিভিন্ন অক্ষমতার ওপর আরেকটা ছোট বিজয় হিসেবে দেখে থাকে। “আমরা আমাদের সন্তানকে বনের মধ্যে একটা শক্ত কাঠের গাছ হিসেবে দেখে থাকি,” তার মা লরি বলেন। “যদিও শক্ত কাঠের একটা গাছ অন্যান্য গাছের মতো দ্রুত বৃদ্ধি পায় না কিন্তু এটা মহামূল্যবান কাঠ উৎপন্ন করে। একইভাবে, অক্ষমতা রয়েছে এমন ছেলেমেয়েরাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, বাবামার কাছে তারা সেই ছোট্ট ওক এবং সেগুন গাছের মতো হয়ে ওঠে, যেগুলোর স্থায়ী মূল্য রয়েছে।”
তৃতীয়ত, সন্তানের স্নেহপরায়ণ স্বভাব দেখে অনেক বাবামার মন ভরে যায়। ইর্মগার্ড বলেন: “উনিকি একটু তাড়াতাড়ি বিছানায় যেতে পছন্দ করে এবং যাওয়ার আগে সে পরিবারের সবাইকে চুমু দিয়ে যায়। আমরা বাড়ি ফিরে আসার আগেই যদি সে বিছানায় চলে যায়, তা হলে জেগে থাকতে পারেনি বলে ক্ষমা চেয়ে সে ছোট্ট একটা নোট লিখে রাখে। সে আরও লেখে যে, সে আমাদের ভালবাসে এবং আমাদেরকে আবার সকালে দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছে।”
মার্কুস কথা বলতে পারে না কিন্তু বাবামাকে যে সে ভালবাসে, তা বোঝানোর জন্য অনেক কষ্ট করে সাংকেতিক ভাষার কিছু শব্দ শিখেছে। অক্ষম শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠা টিয়ার বাবামা এভাবে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছিল: “সে আমাদের জীবনকে প্রেম, উষ্ণতা, স্নেহ, আলিঙ্গন এবং চুমোয় ভরিয়ে দিয়েছে।” বলা বাহুল্য যে, এই সমস্ত ছেলেমেয়ের প্রতি তাদের বাবামার প্রচুর ভালবাসা এবং স্নেহ প্রকাশ করতে হবে আর তা মৌখিক ও দৈহিক উভয়ভাবেই।
চতুর্থত, সন্তান যখন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস প্রকাশ করে, তখন খ্রিস্টান বাবামারা গভীর পরিতৃপ্তি বোধ করে। একটা উপযুক্ত উদাহরণ হল ইউহা। তার বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় সে প্রার্থনা করতে পারে কি না, সেই বিষয়ে অনুমতি চেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। সংক্ষিপ্ত প্রার্থনায় ইউহা তার এই বিশ্বাস প্রকাশ করেছিল যে, তার বাবা ঈশ্বরের স্মৃতিতে রয়েছেন এবং ঈশ্বর তাঁর নিরূপিত সময়ে তাকে পুনরুত্থিত করবেন। এরপর সে তার পরিবারের সদস্যদের প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করেছিল।
একইভাবে, ঈশ্বরের প্রতি উনিকির নির্ভরতাও তার বাবামাকে আনন্দিত করে। উনিকি যে-বিষয়গুলো শেখে, তার সমস্তকিছুই সে বুঝতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, সে বাইবেলের অনেক চরিত্র সম্বন্ধে জানে কিন্তু সেগুলো তার মনের মধ্যে এলোমেলোভাবে রয়েছে—পাজলের কয়েকটা টুকরোর মতো, যেগুলো একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র গঠন করতে পারে না। তা সত্ত্বেও সে এটা বুঝতে পারে যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর একদিন এই পৃথিবীর সমস্ত সমস্যা দূর করবেন। উনিকি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে বাস করার জন্য অপেক্ষা করে আছে, যেখানে সে তার পূর্ণ মানসিক শক্তি ফিরে পাবে।
কম নির্ভরশীল হতে উৎসাহিত করা
মানসিকভাবে অক্ষম ছেলেমেয়েরা চিরকাল শিশুই থাকে না—তারা মানসিকভাবে অক্ষম এমন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠে। তাই, বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য বাবামাদের সাহায্য করা উচিত। মার্কুসের মা আ্যনি বলেন: “মার্কুসের জন্য সমস্তকিছু করে দেওয়া আমাদের জন্য অনেক সহজ ছিল এবং আমরা তাড়াতাড়ি তা করতে পারতাম। কিন্তু, সে যেন নিজের কাজ যতটা সম্ভব নিজেই করতে পারে, তার জন্য সাহায্য করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম।” উনিকির মা বলেন: “উনিকির অনেক চমৎকার গুণ আছে কিন্তু মাঝে মাঝে সে জেদ করে। সে করতে চায় না এমন কিছু তাকে দিয়ে করাতে চাইলে, আমাদের তাকে মনে করিয়ে দিতে হয় যে আমাদেরকে খুশি করতে চায়। আর এমনকি সে কোনো একটা কাজ করতে রাজি হলেও কাজের সময় আমাদের লক্ষ রাখতে হয় আর তা শেষ না করা পর্যন্ত তাকে উৎসাহ দিতে হয়।”
ব্রায়েনের মা লরি তার ছেলের জীবনকে আরও পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য সবসময় বিভিন্ন উপায় খুঁজে থাকেন। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে লরি এবং তার স্বামী ব্রায়েনকে টাইপ করা শিখতে সাহায্য করেছে। অনেক পরিতৃপ্তি সহকারে ব্রায়েন এখন তার বন্ধু ও পরিবারের কাছে ইমেইল করতে পারে। কিন্তু সে যখন টাইপ করে, তখন তার কবজিতে ভর দেওয়ার জন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়। বাবামা তাকে সেই পর্যন্ত উন্নতি করতে সাহায্য করছে, যেখানে তার শুধু কনুইয়ের ওপর ভর করার প্রয়োজন হবে। তারা জানে যে, কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত মাত্র কয়েক ইঞ্চি, ক্রমবর্ধমান স্বনির্ভরতার এক বিরাট মাত্রাকে প্রকাশ করবে।
তবে, বাবামাদের তাদের সন্তানদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা অথবা তাদের ওপর খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। প্রত্যেকটা সন্তানের ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন শিশু (ইংরেজি) বইটি বলে: “অভিজ্ঞতাভিত্তিক এক উত্তম প্রচলিত পদ্ধতি হল, স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করার এবং হতাশা রোধ করতে যথেষ্ট সাহায্য করার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।”
সাহায্যের সর্বমহান উৎস
অক্ষম ছেলেমেয়ে রয়েছে এমন বাবামাদের অনেক ধৈর্য এবং সহ্যশক্তির প্রয়োজন। একটার পর একটা সমস্যা আসলে অনেক বাবামা হতাশ হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া একসময় ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আসে। বাবামাদের চোখের জল ফেলতে হয় এবং মাঝে মাঝে তারা হয়তো নিজেদের জন্য করুণা বোধ করে। কী করা যেতে পারে?
বাবামারা “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতে পারে। (গীতসংহিতা ৬৫:২) তিনি সাহস, প্রত্যাশা এবং সহ্য করার জন্য শক্তি দান করেন। (১ বংশাবলি ২৯:১২; গীতসংহিতা ২৭:১৪) আমাদের দুঃখের সময় তিনি আমাদেরকে সান্ত্বনা দেন এবং চান যেন আমরা বাইবেলের জোগানো “প্রত্যাশায় আনন্দ” করি। (রোমীয় ১২:১২; ১৫:৪, ৫; ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪) ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে এমন বাবামারা এই আস্থা রাখতে পারে যে, ভবিষ্যতে যখন ‘অন্ধরা দেখিবে, বধিররা শুনিবে, খঞ্জেরা হাঁটিবে ও গোঙ্গারা আনন্দগান করিবে,’ তখন তাদের প্রিয় সন্তানও নিখুঁত মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উপভোগ করবে।—যিশাইয় ৩৫:৫, ৬; গীতসংহিতা ১০৩:২, ৩. (g ৪/০৬)
বাবামারা যা করতে পারে
◼ আপনার সন্তানের অক্ষমতা সম্বন্ধে নিজেকে প্রশিক্ষিত করুন এবং সেই সম্বন্ধে জানুন।
◼ এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
◼ আপনার সন্তানকে স্বনির্ভরতার সম্ভাব্য পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করুন।
◼ ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহস, প্রত্যাশা ও শক্তি চান।
অন্যেরা যা করতে পারে
◼ সন্তানের সঙ্গে তাদের বয়স অনুযায়ী এবং আন্তরিকভাবে কথা বলুন।
◼ বাবামার সঙ্গে তাদের সন্তান সম্বন্ধে কথা বলুন আর তাদের প্রশংসা করুন।
◼ অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হোন এবং বিবেচনা দেখান।
◼ বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন ছেলেমেয়ের বাবামা ও পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করুন।
[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
অন্যেরা যেভাবে সাহায্য করতে পারে
দর্শকরা যেমন ম্যারাথন দৌড়বিদদের ধৈর্য দেখে মুগ্ধ হয়, তেমনই আপনিও যে-বাবামারা অক্ষম সন্তানের যত্ন নিয়ে থাকে—দিনে ২৪ ঘন্টা, সপ্তাহে ৭ দিনই—তাদের সহ্যশক্তি দেখে বিস্মিত হতে পারেন। ম্যারাথন ধাবনক্ষেত্রের দর্শকরা সাধারণত দৌড়বিদদের সতেজ করার জন্য জলের বোতল দিয়ে থাকে। আপনি কি সেই বাবামাদের সতেজ করতে পারেন, যারা বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে এমন সন্তানের আজীবন যত্ন নেওয়ার কাজে রত আছেন?
একটা যে-উপায়ে আপনি সাহায্য করতে পারেন তা হল, তাদের ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে কেবল কথা বলে। প্রথম প্রথম আপনি হয়তো একটু অস্বস্তিবোধ করতে পারেন কারণ সে হয়তো খুব একটা অথবা একেবারেই সাড়া না-ও দিতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন যে, এইরকম অনেক ছেলেমেয়ে শুনতে ভালবাসে আর আপনি যা বলেন সেটা নিয়ে হয়তো গভীরভাবে চিন্তা করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের মন সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলের মতো, যার বেশির ভাগ অংশই জলের নীচে থাকে আর তাদের চেহারায় হয়তো গভীর অনুভূতি ফুটে ওঠে না। *
কীভাবে আপনি আলোচনাকে সহজ করতে পারেন, সেই বিষয়ে শিশুচিকিৎসার স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ড. আ্যনিকি কয়িসটিনেন এই পরামর্শ দিয়েছেন: “প্রথমে আপনি তাদের পরিবার সম্বন্ধে অথবা অবসর সময় কাটানোর বিষয়ে কথা বলতে পারেন। তাদের সঙ্গে তাদের প্রকৃত বয়স অনুযায়ী কথা বলুন, এমনভাবে কথা বলবেন না যেন আপনি ছোট কারো সঙ্গে কথা বলছেন। ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করে একই সময়ে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলুন। আপনা যা বলছেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করার জন্য তাদের সময় দিন।”
বাবামার সঙ্গেও আপনার কথা বলা প্রয়োজন। তারা যে-আবেগগত প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করে, তা যখন আপনি জানতে পারবেন, তখন তাদের প্রতি আপনার সহমর্মিতা আরও বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কুসের মা আ্যনি তার প্রিয় ছেলেকে আরও ভালভাবে জানতে আকাঙ্ক্ষী। মার্কুস কথা বলতে অথবা তার মনে কী চলছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারে না বলে আ্যনির অনেক দুঃখ লাগে। এ ছাড়া, তিনি এইরকম দুঃশ্চিন্তা করেন যে, তিনি হয়তো তার ছেলের আগে মারা যাবেন, তাকে মা ছাড়া রেখে যাবেন।
মানসিকভাবে অক্ষম সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য বাবামা যতটুকুই করুক না কেন, তারা প্রায়ই মনে করে যে তাদের আরও বেশি কিছু করা উচিত। ব্রায়েনের মা লরি ব্রায়েনের যত্ন নিতে গিয়ে প্রতিটা ছোটোখাটো ভুলের জন্য নিজেকে দোষ দেন। তার অন্য ছেলেমেয়ের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে না পারার কারণেও তিনি অপরাধী বোধ করেন। এই ধরনের বাবামা এবং তাদের অনুভূতির প্রতি আপনার আগ্রহ ও সম্মান, তাদের এবং তাদের সন্তানদের মর্যাদা দেয় ও সমর্থন জোগায়। এই বিষয়ে ইর্মগার্ড বলেন: “আমার মেয়ে সম্বন্ধে কথা বললে আমার শুনতে অনেক ভাল লাগে। যারা উনিকির সঙ্গে আমার জীবনের সুখ-দুঃখের ভাগী হতে ইচ্ছুক, তাদেরকে আমি খুবই ভালবাসি।”
এ ছাড়া—ছোট-বড়—আরও অনেক উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সাহায্য করতে পারেন। আপনি হয়তো বাবামা এবং তাদের সন্তানকে আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন অথবা আপনার পরিবারের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য বলতে পারেন। এ ছাড়া, বাবামার বিশ্রামের সময় আপনার পক্ষে হয়তো তাদের সন্তানের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা কাটানো সম্ভবপর হতে পারে।
[পাদটীকা]
^ ২০০০ সালের ৮ই মে সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “লয়িডার নিঃশব্দ যাত্রা” প্রবন্ধটা দেখুন।
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
অকপট চিন্তা দেখানো বাবামা ও সন্তানকে মর্যাদা দান করে
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
উনিকির মতো মানসিকভাবে অক্ষম শিশুদের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নেহের প্রয়োজন
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
লরি তার ছেলে ব্রায়েনকে টাইপ করা শিখতে সাহায্য করেছে, তাকে স্বনির্ভরশীল হতে উৎসাহ দিয়েছে