বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্ব নিরীক্ষা
দীর্ঘসূত্রিতা ও স্বাস্থ্য
ভ্যানকুভার সান খবরের কাগজে উল্লেখিত একটা গবেষণা বলে, “দীর্ঘসূত্রিতা আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে।” সম্প্রতি, কানাডার টরেন্টোতে আমেরিকার মনস্তাত্ত্বিক সোসাইটির আয়োজিত একটা সম্মেলনে কানাডার ২০০ জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে করা একটা গবেষণায় “দেখা গিয়েছিল যে, দীর্ঘসূত্রী ব্যক্তিরা তাদের কাজ দেরি করে করায় এতটা চাপের মধ্যে থাকে যে, তারা চাপের কারণে অন্যদের চেয়ে আরও বেশি অসুস্থতায় ভোগে। . . . পরীক্ষার সময় আসলে দীর্ঘসূত্রী ব্যক্তিদের চাপের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তাদের খুশমেজাজের জায়গায় তখন মাথা ব্যথা, কোমর ব্যথা, ঠাণ্ডা, অনিদ্রা এবং এলার্জি দেখা গিয়েছিল। তারা শ্বাসকষ্ট, ইনফেকশন এবং মাইগ্রেন ব্যথায় ভুগেছিল।” (g০২ ৪/৮)
সুমেরু সংক্রান্ত সতর্কবাণী
কানাডার দ্যা গ্লোব আ্যন্ড মেইল খবরের কাগজ বলে, “এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে গ্রহের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ পরিবর্তনশীল সুমেরু অঞ্চল গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যদি সেখানকার শিল্পের উন্নতি ধীরগতি করা না হয়।” পুরো সুমেরু অঞ্চলের ওপর মানব উন্নয়নের সমষ্ঠিগত প্রভাবের ওপর রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের একটা রিপোর্ট এই বিষয়ে মন্তব্য করে। ওই রিপোর্ট অনুসারে, ১৯৪০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যে-হারে শিল্পের উন্নতি হয়েছে, সেই একই হারে হতে থাকলে এর ফল খুবই খারাপ হবে। বলা হয়েছে যে, ক্ষয়ক্ষতি অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে, কারণ সুমেরু অঞ্চলের অনেক পশুপাখি ভ্রমণশীল। খবরের কাগজ বলে, ‘পৃথিবীর সুমেরু অঞ্চলের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অঞ্চল ইতিমধ্যেই শিল্পের উন্নতিতে [চরমভাবে] ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।” (g০২ ৩/২২)
‘ধর্ম দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’
ব্রাজিলের শহুরে গরিব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে করা একটা সমীক্ষা প্রকাশ করেছে যে, যদিও ৬৭ শতাংশ লোক দাবি করে যে তারা ক্যাথলিক কিন্তু আসলে মাত্র ৩৫ শতাংশ লোক যীশু, মরিয়ম ও গির্জার মতবাদ বিশ্বাস করে বলে স্বীকার করে। এর চেয়েও কম, মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যক্তি প্রতি সপ্তায় গির্জায় যায়। ন্যাশনাল কনফারেন্স অফ ব্রাজিলিয়ান বিশপস্ এর আয়োজিত সমীক্ষা এও দেখায় যে, অনেকে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক (৪৪ শতাংশ), বিবাহবিচ্ছেদ (৫৯ শতাংশ), পুনর্বিবাহ (৬৩ শতাংশ) এবং গর্ভনিরোধ পদ্ধতি (৭৩ শতাংশ) সম্বন্ধে গির্জার শিক্ষার সঙ্গে একমত হয় না। থিওলজিয়ান সেভেরিনো ভিস্যান্ট বলেন, গির্জার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে কারণ এর যাজকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ব্রাজিলের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বাহ্যিক মতবাদগুলোর প্রভাব কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন: “নতুন প্রজন্মের ক্যাথলিকদের অপেক্ষবাদ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং তারা ধর্মকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখে।”(g০২ ৩/৮)
দুপুরে একটু ঘুমানোর উপকারিতা
লন্ডনের দ্যা টাইমস পত্রিকা রিপোর্ট দেয়, লখবুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম বিষয়ক ব্রিটিশ অধ্যাপক জিম হর্ন, দুপুরে ঘুমঘুম ভাব থেকে স্বস্তি পাওয়ার সবচেয়ে ভাল প্রতিকার সম্বন্ধে বলেন যে, “সাধারণত দশ মিনিট ঘুমিয়ে নেওয়াই” যথেষ্ট। হর্ন দাবি করেন “এটা যেকোন চিকিৎসার মতো: ঠিক যখন যন্ত্রণা লাগে সেই সময়ে আপনি যদি চিকিৎসা করান, তা হলে তা তত বেশি কার্যকারী হয়।” যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কোম্পানি, তাদের কর্মীরা যাতে দুপুরে একটু ঘুমাতে পারে সেইজন্য বিছানা, কম্বল, বালিশ ও হালকা সংগীত এবং সেইসঙ্গে প্রতি ২০ মিনিটে আ্যলার্ম দেওয়া ঘড়ির ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু অধ্যাপক হর্ন সাবধান করেন যে, আপনি যদি অনেকক্ষণ যেমন ২৫ মিনিট ঘুমান, তা হলে সজাগ হতে আপনার খারাপ লাগবে। “দশ মিনিটের বেশি ঘুমালে আপনার শরীর ভাবতে শুরু করবে যে, এখন রাত ও গভীর ঘুম আসতে শুরু করে।”(g০২ ৩/৮)
পুরুষদের মাছ খেতে উৎসাহিত করা হয়
স্টকহোমের কারোলিন্সকা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলেন, যে-পুরুষরা বেশি পরিমাণে স্যামন, হেরিং ও ম্যাকেরেলের মতো তৈলাক্ত মাছ খান, তাদের মুত্রথলীর গ্রন্থিতে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি, যারা মাঝেমধ্যে মাছ খান তাদের চেয়ে দুই বা তিনগুণ কম থাকে। ৬,২৭২ জন পুরুষকে নিয়ে ৩০ বছর ধরে এক গবেষণায় ঝুঁকির অন্যান্য কারণ, যেমন ধূমপানকেও বিবেচনা করা হয়েছে। গবেষকরা শেষে বলেছিলেন যে, “তথাকথিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডগুলো [বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছগুলোতে পাওয়া যায়] মুত্রথলী গ্রন্থির ক্যানসার প্রতিরোধ করে বলে মনে হয়।” ওই রিপোর্ট বলে, একই ফ্যাটি এসিডগুলো “হার্ট আ্যটাকের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।” তাই, বিশেষজ্ঞরা লোকেদের “সপ্তাহে এক বা দুবার” মাছ খেতে উপদেশ দেন। (g০২ ৪/৮)
বিরক্তিকর আগাছাকে ব্যবহার করা হয়
ইন্ডিয়া টুডে বলে, “কচুরিপানা, ল্যানটান এবং পারথেনিয়ামের মতো আগাছাগুলো আবার আগের মতো বেড়ে যাওয়ায় তা সংস্কারকদের হতাশ করেছে।” বেড়া হিসেবে কাজ করবে এই উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে ব্রিটিশরা ভারতে ল্যানটানা কামারাকে নিয়ে আসে আর তা ২,০০,০০০ একর জমিকে দখল করে ও এগুলোকে হাতে, রাসায়নিকভাবে বা জীববিজ্ঞানের পন্থায় নির্মূল করা অসাধ্য বলে মনে হয়। এই আগাছার বিষাক্ত প্রভাব অন্যান্য গাছের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করেছিল এবং এটা আবিষ্কৃত হওয়ার পর পুরো গ্রামকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু, লাস্সিওয়ালা গ্রামবাসীদের কাছে এই আগাছা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে। ঘরবাড়ি খাড়া করার জন্য ও মুরগির ঘর বানানোর জন্য মাটির সঙ্গে ল্যানটানা ব্যবহার করা হয়। এর বাকল উঠিয়ে নেওয়ার পর কীটপতঙ্গ ও জীবাণু-প্রতিরোধী এই আগাছাগুলো দিয়ে চমৎকার আসবাবপত্র ও ঝুড়ি বানানো যায়। ল্যানটানার পাতা মশা তাড়াতে এবং আগরবাতি বানাতে ব্যবহার করা হয়। গাছের শিকড় গুড়ো করে দাঁতের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়।(g০২ ৪/২২)
সবচেয়ে সঠিক সময়রক্ষক
লন্ডনের দ্যা টাইমস রিপোর্ট করে, যুক্তরাষ্ট্রের এক দল বিজ্ঞানী এক মারকারি-আয়ন ঘড়ি আবিষ্কার করেছে, যা ‘প্রতি ফেমিটোসেকেন্ডের—বিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ের এককের’ হিসাব রাখে। কথিত আছে যে, এটা “ওয়ার্ল্ডওয়াইড টাইমকিপিং স্ট্যান্ডার্ড, কো-অর্ডিনেটেড ইউনিভারসেল টাইম (ইউটিসি)-র সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য যে-পারমাণবিক ঘড়ি ব্যবহার করা হয়, সেটার চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ বেশি সঠিক।” পদার্থবিজ্ঞানী স্কট ডিডামস্ ব্যাখা করেন: “মহাবিশ্ব সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য মৌলিক পদার্থবিদ্যায় এটা সরাসরি ব্যবহৃত হবে।” পরে টেলিফোন নেটওয়ার্ক এবং নৌচালনবিদ্যা উপগ্রহের জন্যও উপকারজনক হবে। ডিডামস্ যদিও দাবি করেন যে, সময়রক্ষক এই যন্ত্রটা “বিশ্বের সবচেয়ে সঠিক ঘড়ি” কিন্তু তিনি বলেন যে, এটাকে আরও উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। (g০২ ৪/২২)
যুবক-যুবতীদের ডায়েটিং
গ্লোব আ্যন্ড মেইল খবরের কাগজ বলে যে, সম্প্রতি, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১,৭৩৯ জন কানাডীয় মেয়েদের নিয়ে করা একটা সমীক্ষা প্রকাশ করে যে, শতকরা ২৭ ভাগ মেয়ের খাদ্যের প্রতি অনীহার লক্ষণ রয়েছে। শহর, মফস্বল এবং গ্রাম থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা একটা প্রশ্নের জরীপের উত্তর দিয়েছিল, যেটা খাদ্যের প্রতি তাদের মনোভাব ও দেহের আকার নিয়ে অসন্তোষকে পরীক্ষা করেছিল। উপাত্ত প্রকাশ করেছিল যে, কিছু যেমন ১২ বছর বয়সী কিশোরীরা তাদের ওজন কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে মদ্য জাতীয় পানীয় খেয়েছিল ও খাবার ফেলে দিয়েছিল (নিজে নিজে বমি করে) বা শরীরের ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন বড়ি, জোলাপ এবং প্রস্রাবের চাপ বাড়ায় এমন ওষুধ খেয়েছিল। টরেন্টোর ইউনিভারসিটি হেল্থ নেটওয়ার্ক এর গবেষণা বিজ্ঞানী ড. জেনিফার জোনের কথা অনুসারে, বিশেষ করে মেয়েদের “খাবার ও ব্যায়ামের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তোলা দরকার। নিজেদের শরীর সম্বন্ধে তাদের জানা দরকার এবং আরও জানা দরকার যে, বিজ্ঞাপনে, পত্রিকায় ও রক ভিডিওতে তারা শরীরের যে-ছবিগুলো দেখে সেগুলো আসলে স্বাভাবিক নয়।” গ্লোব আরও বলে যে, “অনেক কিশোরীরা জানে না যে, বয়ঃসন্ধির সময়ে কিছু মেদ জমা হওয়া স্বাভাবিক আর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ।” (g০২ ৪/২২)
মশা নিধন
সিঙ্গাপুরে একটা খামার কোন কীটনাশক ছাড়াই মশা ধ্বংস করার জন্য একটা যন্ত্র তৈরি করছে। লন্ডনের দি ইকোনমিস্ট বলে, এটা হল ৩৮ সেন্টিমিটার লম্বা একটা কালো প্লাস্টিকের বাক্স যা “প্রায় মানুষের শরীরের মতোই তাপ ও কার্বন ডাই অক্সাইড বিকীর্ণ করে।” মশারা যেহেতু দেহের উষ্ণতায় ও নিঃশ্বাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাধ্যমে তাদের শিকার খুঁজে থাকে, তাই এই যন্ত্রটা “মশাদের ফাঁদে ফেলে এমন চিন্তা করিয়ে যে, এরা এখানে খাবার খুঁজে পাবে।” এই বাক্সটাকে বিদ্যুতের সাহায্যে গরম করা হয় এবং ছোট্ট একটা বাক্স থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে। উজ্জ্বল বাতিগুলো পতঙ্গকে বাক্সের একটা খাঁজের দিকে প্রলোভিত করে। এরপর একটা ফ্যানের সাহায্যে মশাগুলোকে জলের নিচের দিকে চালিত করে, যেখানে এগুলো ডুবে যায়। এই যন্ত্রটা একরাতে প্রায় ১,২০০টা মশাকে আটকে ফেলতে পারে এবং ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু বহনকারী নিশাচর আ্যনোফিলকে অথবা ইয়েলো ফিভার ও ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী যা দিনের বেলা কামড়ায় এমন এডিস মশাকে ধরার জন্য সমন্বয় করা যেতে পারে। আরেকটা উপকার হল যে, নিরীহ পতঙ্গ যেমন প্রজাপতিকে এটা ধ্বংস করে না।(g০২ ৪/৮)
তুষ গাছকে রক্ষা করে
পেরুর খবরের কাগজ এল কোমারসিও রিপোর্ট করে, উত্তর পেরুর ইটখোলাগুলোর বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তুষের ব্যবহার, অনেক বিপদাপন্ন ক্যরোব গাছকে জ্বালানির জন্য কেটে ফেলা থেকে রক্ষা করছে। ২১ জন ইট প্রস্তুতকারীদের ব্যবহৃত কৃষিকাজের বর্জ্য তুষ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হওয়ার পরিমাণকে কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া, চুল্লির দেওয়ালকে বালি, মাটি, গুড়ের তৈরি আঠালো মিশ্রণ—যা তাপ অপরিবাহিতাকে উন্নত করে এবং গরম কমে যাওয়াকে কমায়—দিয়ে প্লাস্টার করে চুল্লির কার্যকারিতা শতকরা ১৫ ভাগ বেড়ে গেছে। শক্তিশালী দ্রব্যকে বানানোর আশায় ইট তৈরির মিশ্রণে তুষের ছাই ব্যবহার করার ব্যাপারে গবেষণা চালানো হচ্ছে। এল কোমারসিও বলে, “এ ছাড়া এর ব্যবহার দূষণ এবং বর্জ্য পদার্থ জমে থাকার সমস্যা কমায়।”(g০২ ৪/৮)