বাইবেল থেকে আমরা যা জানতে পারি
“সৃষ্টিকালে যে দিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্ম্মাণ করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত এই।” (আদিপুস্তক ২:৪) বাইবেলের এই কথা থেকে আমরা জানতে পারি যে, কীভাবে আমাদের গ্রহ অস্তিত্বে এসেছিল। বাইবেলের এই কথার সঙ্গে বিজ্ঞানের কি কোনো মিল রয়েছে? এই বিষয়ে কিছু উদাহরণ লক্ষ করুন।
এই নিখিলবিশ্ব কি চিরকাল ধরেই অস্তিত্বে ছিল?
আদিপুস্তক ১:১ বলে: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।”
১৯৫০ সালের আগে পর্যন্ত বড়ো বড়ো বিজ্ঞানী এটাই মনে করতেন যে, এই নিখিলবিশ্ব চিরকাল ধরেই অস্তিত্বে ছিল। কিন্তু, আরও কিছু সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী বেশিরভাগ বিজ্ঞানী এখন মেনে নিয়েছেন যে, এই নিখিলবিশ্ব সত্যিই একসময় আরম্ভ হয়েছে।
পৃথিবী শুরুতে কেমন ছিল?
আদিপুস্তক ১:২, ৯ পদে বাইবেল বলে, পৃথিবী যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন সেটা “ঘোর ও শূন্য ছিল” এবং জলময় ছিল।
বাইবেলের এই কথার সঙ্গে বিজ্ঞানীরাও একমত। জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিক শি বলেন যে, পৃথিবীতে শুরুর দিকে অক্সিজেন ছিল না কিংবা তখন কোনো গাছপালা অথবা কোনো জীবিত বস্তুও ছিল না। এ ছাড়া, অ্যাস্ট্রোনমি নামক একটা ম্যাগাজিনে এভাবে বলা হয়েছে, “একটা নতুন গবেষণার মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে যে, সেই সময় পুরো পৃথিবী জলময় ছিল। শুকনো ভূমি প্রায় ছিলই না।”
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কীভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়েছিল?
আদিপুস্তক ১:৩-৫ পদ অনুযায়ী প্রথমদিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এতটাই ঘন ছিল যে, যে-পরিমাণ আলো পৃথিবীতে ঢুকতে পারত, তা কোথা থেকে আসছে, বোঝা যেত না। কিন্তু, এর অনেক পরে যখন বায়ুমণ্ডল পাতলা হয়, তখন চাঁদ আর সূর্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়।—আদিপুস্তক ১:১৪-১৮.
বাইবেল এটা বলে না, সমস্ত কিছু পৃথিবীতে ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছিল কিংবা এই দিনগুলো ২৪ ঘণ্টার ছিল।
স্মিথসোনিয়ান এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সেন্টার বলে যে, প্রথম দিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ঘন হওয়ায় সামান্য আলোই পৃথিবীতে ঢুকতে পারত। এই রিসার্চ সেন্টার আরও বলে: “পুরো পৃথিবীর উপর কুয়াশার মতো মিথেন গ্যাসের এক ঘন আবরণ ছিল।” পরে, “সেই মিথেন গ্যাসের আবরণ সরে যায় এবং পরিষ্কার নীল আকাশ দেখা যায়।”
পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রথমে কোন প্রাণীর জীবন শুরু হয়েছিল?
আদিপুস্তক ১:২০-২৭ পদ অনুযায়ী প্রথমে মাছ, তার পর পাখি, বিভিন্ন পশু এবং সবার শেষে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অনেক আগেই মাছ অস্তিত্বে এসেছিল এবং তারও অনেক পরে মানুষ অস্তিত্বে এসেছে।
বাইবেল এটা বলে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবিত বস্তুর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা দিতে পারে না।
বাইবেল যা বলে, সেই বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা
কিছু লোক বলে যে, বিজ্ঞানীরা যা খুঁজে পেয়েছেন, সেটার সঙ্গে বাইবেলের কথার কোনো মিল নেই। তবে বেশিরভাগ সময়, বাইবেল আসলে কী বলে, তা ভালোভাবে না বুঝেই তারা এমন দাবি করে থাকে।
বাইবেলে এটা বলে না, এই নিখিলবিশ্ব কিংবা এই পৃথিবী শুধুমাত্র ৬,০০০ বছর আগে অস্তিত্বে এসেছে। এর পরিবর্তে এটি শুধুমাত্র এটা জানায় যে, পৃথিবী ও নিখিলবিশ্ব “আদিতে” সৃষ্টি করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:১) বাইবেলে নির্দিষ্টভাবে এটা বলা নেই, “আদিতে” মানে কত বছর আগে।
বাইবেল এটা বলে না, সমস্ত কিছু পৃথিবীতে ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছিল কিংবা এই দিনগুলো ২৪ ঘণ্টার ছিল। এর পরিবর্তে, বাইবেলে “দিন” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, যা কয়েক পর্যায়কালকে বোঝায়। উদাহরণ হিসেবে, এই পৃথিবী এবং এখানে থাকা জীবন একটা নির্দিষ্ট পর্যায়কালে সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেটাকে “দিন” বলা হয়েছে, “যে দিন সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] a ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্ম্মাণ করিলেন।” আর এর মধ্যে আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ে উল্লেখিত ছয় “দিন” অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই, পৃথিবীকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার জন্য এবং এতে জীবন সৃষ্টি করার জন্য ঈশ্বর যে-ছয় “দিন” ব্যবহার করেছিলেন, তা সম্ভবত খুবই দীর্ঘ পর্যায়কালকে বোঝায়।
বাইবেল এটা বলে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবিত বস্তুর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা দিতে পারে না। আদিপুস্তক বই উল্লেখ করে যে, সমস্ত পশুপাখিকে “স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী” সৃষ্টি করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:২৪, ২৫) বাইবেলে যখন “জাতি” শব্দটা ব্যবহার করা হয়, তখন সেটা বিভিন্ন ধরনের প্রাণীকে বোঝায়। এর অর্থ হল, একটা ‘জাতির’ মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতি থাকতে পারে। এই কথা অনুযায়ী এটাও সম্ভব যে, একটা ‘জাতির’ মধ্যে এবং প্রজাতির ধরনের মধ্যে একই জায়গায় থাকা সত্ত্বেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
আপনার কী মনে হয়?
আগে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, এই নিখিলবিশ্ব যেভাবে আরম্ভ হয়েছিল, পৃথিবী শুরুতে যেমন ছিল এবং এখানে জীবন যেভাবে অস্তিত্বে এসেছে, সেই সম্বন্ধে বাইবেলে একেবারে সঠিক বিবরণ রয়েছে। তাহলে কী মনে হয়, যিনি এই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সম্বন্ধে কি বাইবেল সঠিকভাবে জানাতে পারে না? এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুযায়ী আধুনিক দিনের বিজ্ঞানীরাও গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন যে, জীবনের অস্তিত্ব এমন এক উৎস থেকে এসেছে, যা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। b