সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | অল্পবয়সিরা

বাবা কিংবা মাকে মৃত্যুতে হারানো

বাবা কিংবা মাকে মৃত্যুতে হারানো

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

ড্যামি ছয় বছর বয়সে তার বাবাকে হারায়, যিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মারা গিয়েছিলেন। ডেরিক নয় বছর বয়সে তার বাবাকে হারায়, যিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। জেনি সাত বছর বয়সে তার মাকে হারায়, যিনি দীর্ঘ এক বছর ওভারিয়ান ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর মারা গিয়েছিলেন। a

একেবারে ছোটোবেলাতেই এই তিন জন তাদের প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারায়। তুমিও কি কাউকে মৃত্যুতে হারিয়েছ? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে এই প্রবন্ধ তোমাকে শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। b তবে, প্রথমে শোক করা সম্বন্ধে কিছু বিষয় জেনে রাখো।

তোমার যা জানা উচিত

শোক করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এর অর্থ হল, তোমার দুঃখপ্রকাশ করার ধরন অন্যের চেয়ে আলাদা হতেই পারে। কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা (ইংরেজি) নামক বই বলে, “মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার কোনো ফর্মূলা বা নিয়ম নেই।” গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, শোককে চেপে রেখো না। কেন? কারণ . . .

শোক চেপে রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। শুরুতে উল্লেখিত জেনি বলে: “বোনের কথা ভেবে মনে হয়েছিল, আমার ভেঙে পড়লে চলবে না, তাই আমি নিজের আবেগ প্রকাশ করিনি। এমনকী এখনও আমার মধ্যে বেদনাদায়ক অনুভূতিগুলো চেপে রাখার প্রবণতা রয়েছে, যদিও তা করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়।”

বিশেষজ্ঞরাও এই বিষয়ে একমত। শোকার্ত কিশোর-কিশোরী (ইংরেজি) নামক বই বলে, ‘তুমি তোমার আবেগকে চিরকাল চেপে রাখতে পারবে না। পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে তা প্রকাশ পেতে পারে, হতে পারে কান্না কিংবা শারীরিক অসুস্থতার মাধ্যমে।’ একজন ব্যক্তি যখন নিজের শোক চেপে রাখেন, তখন তিনি হয়তো নিজের কষ্ট ভুলে থাকার জন্য মদ কিংবা মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

শোকের মুহূর্তে মানুষের অনুভূতি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, মৃত ব্যক্তি তাদের “ছেড়ে চলে গিয়েছেন,” এমনটা মনে করে কেউ কেউ তার উপর রাগ করে। অন্যেরা এইরকমটা ভেবে ঈশ্বরকে দোষারোপ করে যে, তিনি চাইলে এই মৃত্যুকে রোধ করতে পারতেন। আবার অনেক শোকার্ত ব্যক্তি অপরাধবোধে ভোগে, কারণ তারা সেই ব্যক্তির প্রতি এমন কিছু করেছিল বা তাকে এমন কিছু বলেছিল, যেটার জন্য এখন ক্ষমা চাওয়ার আর কোনো উপায় নেই।

স্পষ্টতই, শোক করার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। কীভাবে তুমি তোমার শোক কাটিয়ে উঠতে পার এবং জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পার?

তুমি যা করতে পার

কারো কাছে মনের কথা খুলে বলো। এই কঠিন সময়ে তোমার হয়তো নিজেকে আলাদা করে রাখার ইচ্ছে হতে পারে। কিন্তু তুমি যদি পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা বন্ধুর কাছে নিজের অনুভূতির কথা খুলে বলো, তা হলে সেটা তোমাকে শোকে ডুবে না গিয়ে বরং তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১৮:২৪.

ডায়েরি লেখো। যিনি মারা গিয়েছেন, তার সম্বন্ধে কিছু লেখো। যেমন, তার সঙ্গে কাটানো সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত। তার প্রশংসনীয় গুণাবলি সম্বন্ধে লেখো। তুমি কোনগুলো অনুকরণ করতে চাও?

তুমি হয়তো নেতিবাচক চিন্তাভাবনার দ্বারা জর্জরিত। কারণ তুমি হয়তো তোমার বাবা কিংবা মাকে রূঢ়ভাবে এমন কিছু বলেছিলে, যেটা তুমি ভুলতে পারছ না। তোমার অনুভূতি ও এর কারণ লিখে রাখো। যেমন, “আমার নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয় কারণ মারা যাওয়ার আগের দিন বাবার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল।”

তুমি যদি নিজেকে দোষী বলে মনে করো, তা হলে এই অনুভূতি কতটা যথার্থ, তা পরীক্ষা করে দেখো। শোকার্ত কিশোর-কিশোরী নামক বই বলে, ‘তুমি যে আর ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবে না, তা জানতে না বলে নিজেকে দোষ দিও না। সবাই এমন কিছু বলে ফেলে কিংবা করে ফেলে, যেটার জন্য পরে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।’—বাইবেলের নীতি: ইয়োব ১০:১.

নিজের শরীরের যত্ন নাও। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নাও, শরীরচর্চা করো আর পুষ্টিকর খাবার খাও। তোমার যদি খাওয়ার ইচ্ছে না থাকে, তা হলে একেবারে পেট ভরে খাওয়ার পরিবর্তে সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে কিছু খাও—অন্ততপক্ষে যতদিন না তোমার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হয়। অস্বাস্থ্যকর মুখরোচক খাবার খেয়ে কিংবা মদ্যপান করে তোমার শোক ভুলে থাকার চেষ্টা কোরো না।

প্রার্থনায় ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলো। বাইবেল বলে: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন।” (গীতসংহিতা ৫৫:২২) প্রার্থনা শুধুমাত্র মনের শান্তি লাভ করার এক উপায় নয়। এটা হল সেই ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলা, যিনি “আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।”—২ করিন্থীয় ১:৩, ৪.

একটা যে-উপায়ে ঈশ্বর শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দেন, সেটা হল তাঁর বাক্য বাইবেল। যারা মারা গিয়েছে, তারা কী অবস্থায় রয়েছে এবং পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়, তা পরীক্ষা করে দেখতে পার। c—বাইবেলের নীতি: গীতসংহিতা ৯৪:১৯.

a পরের প্রবন্ধে তুমি ড্যামি, ডেরিক ও জেনির অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে আরও জানতে পারবে।

b এই প্রবন্ধে যদিও বাবা কিংবা মায়ের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু এখানে পাওয়া নীতিগুলো ভাই-বোন অথবা বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিও প্রযোজ্য।

c ২০১৬ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার নং ৩ সংখ্যার ৩-৮ পৃষ্ঠায় দেওয়া “প্রিয়জনের মৃত্যু” নামক প্রচ্ছদ প্রবন্ধ দেখো। এই পত্রিকা www.jw.org থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করার জন্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশনাদি-র অধীনে দেখো।