সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর যেভাবে চিন্তা দেখান, তা থেকে আপনি উপকৃত হতে পারেন

ঈশ্বর যেভাবে চিন্তা দেখান, তা থেকে আপনি উপকৃত হতে পারেন

ঈশ্বর আমাদের দেহকে সেরে ওঠার অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহের কোনো অংশ যখন কেটে যায়, ছড়ে যায় কিংবা ফেটে যায়, তখন “ছোটো ও বড়ো সমস্ত ধরনের আঘাতকে সারিয়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক জটিল প্রক্রিয়া কাজ করতে শুরু করে।” (জন্‌স হপকিংস মেডিসিন) দেহ সঙ্গেসঙ্গে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার, রক্তনালিকাগুলো প্রসারিত করার, ক্ষতস্থান মেরামত করার ও কলাগুলোকে দৃঢ় করার কাজ শুরু করে দেয়।

বিবেচনা করুন: সৃষ্টিকর্তা যদি আমাদের দেহকে শারীরিক আঘাত সারিয়ে তোলার ক্ষমতা দিয়ে গঠন করে থাকেন, তা হলে আমরা কি তাঁর এই প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে পারি না যে, তিনি আমাদের আবেগগত আঘাত সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন? গীতরচক লিখেছিলেন: “তিনি ভগ্নচিত্তদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের ক্ষত সকল বাঁধিয়া দেন।” (গীতসংহিতা ১৪৭:৩) কিন্তু আপনি যদি আবেগগত কিংবা মানসিকভাবে কষ্ট পান, তা হলে কীভাবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে আপনার  ক্ষত বেঁধে দেবেন?

ঈশ্বরের প্রেম সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের যা শিক্ষা দেয়

ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন: “ভয় করিও না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; ব্যাকুল হইও না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব।” (যিশাইয় ৪১:১০) একজন ব্যক্তি যিনি জানেন, যিহোবা তার বিষয়ে চিন্তা করেন, তিনি মনের শান্তি উপভোগ করেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মোকাবিলা করার শক্তি অর্জন করেন। প্রেরিত পৌল “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি” বলতে অন্তরের এই শান্তভাবকে বুঝিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলিপীয় ৪:৪-৭, ৯, ১৩.

বিভিন্ন শাস্ত্রপদ আমাদের এই বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে, মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫ পদ আমাদের জানায়, ঈশ্বর কী  করবেন আর কেন  আমরা তাঁর এই প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে পারি:

  • “তিনি” মানুষের “সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” যিহোবা আমাদের সমস্ত  দুঃখকষ্ট ও উদ্‌বিগ্নতা দূর করে দেবেন, এমনকী সেই চিন্তাগুলোও, যেগুলো হয়তো অন্যদের চোখে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

  • স্বর্গীয় মহিমায় “সিংহাসনে বসিয়া” সমস্ত সৃষ্টির সর্বশক্তিমান রাজা দুঃখকষ্ট রোধ করার ও আমাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান জন্য তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ব্যবহার করবেন।

  • যিহোবা নিশ্চয়তা দেন, তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো “বিশ্বসনীয় ও সত্য।” আরেকভাবে বললে, সত্য ঈশ্বর হিসেবে যিহোবা তাঁর সুনাম বজায় রাখার জন্য এই নিশ্চয়তা দেন, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো রাখবেন।

“তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল। আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি কহিলেন, দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি। পরে তিনি কহিলেন, লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.

নিখিলবিশ্ব ও বাইবেল উভয়ই আমাদের স্বর্গীয় পিতার ব্যক্তিত্ব এবং গুণাবলি প্রকাশ করে। সৃষ্টি ঈশ্বরকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে জানার ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু বাইবেল আমাদের সরাসরি আমন্ত্রণ করে। বাইবেল বলে: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) এ ছাড়া, প্রেরিত ১৭:২৭ পদ আমাদের জানায়: “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।”

আপনি যখন ঈশ্বরকে জানার জন্য সময় বের করে নেবেন, তখন আপনি এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হবেন যে, ‘তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৭) যিহোবার উপর এইরকম আস্থা গড়ে তুললে কোন কোন ব্যাবহারিক উপকার লাভ করা যায়?

জাপানে বসবাসরত তোওরুর কথা বিবেচনা করুন। তার মা যদিও একজন খ্রিস্টান ছিলেন, কিন্তু তিনি ইয়াকুজা অর্থাৎ জাপানের মাফিয়া দলের দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, ঈশ্বর আমাকে ঘৃণা করেন। আমার ধারণা ছিল, আমার আশেপাশের লোকেরা, বিশেষ করে যারা আমার ঘনিষ্ঠ, তাদের মৃত্যু আমার জন্য শাস্তি স্বরূপ।” তোওরু স্বীকার করেন, ওই ধ্বংসাত্মক পরিবেশ ও মানসিক পরিস্থিতিতে, তিনি একজন “নির্দয় ও অনুভূতিহীন ব্যক্তি” হয়ে উঠেছিলেন। নিজের জীবনের লক্ষ্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি জানান, “আমি আমার চেয়ে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিকে হত্যা করে যুবক বয়সেই মারা যেতে চেয়েছিলাম আর এভাবে সুনাম অর্জন করতে চেয়েছিলাম।”

পরবর্তী সময়ে, তোওরু ও তার স্ত্রী হান্না বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন আর এরপর নিজের জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন করেন। হান্না বলেন, “আমি নিজের চোখে আমার স্বামীকে পরিবর্তিত হতে দেখি।” এখন তোওরু আস্থা সহকারে স্বীকার করেন: “এমন একজন ঈশ্বর আছেন, যিনি সত্যিই আমাদের প্রত্যেকের জন্য চিন্তা করেন। তিনি চান না, কেউ মারা যাক আর যারা তাদের ভুলের জন্য সত্যিই অনুতপ্ত, তাদের তিনি ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। তিনি আমাদের সেই কথাগুলো শোনেন, যেগুলো আমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে বলতে পারি না আর সেই বিষয়গুলো বোঝেন, যেগুলো অন্য কেউ বুঝবে না। আসন্ন ভবিষ্যতে যিহোবা সমস্ত সমস্যা, দুঃখকষ্ট ও যন্ত্রণা দূর করে দেবেন। এমনকী এখনই, তিনি অপ্রত্যাশিত উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন। আমরা যখন হীনাবস্থা বা হতাশার মধ্যে থাকি, তখন তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন ও সাহায্য করেন।”—গীতসংহিতা ১৩৬:২৩.

ঈশ্বর সমস্ত দুঃখজনক ঘটনার শেষ আনতে ও প্রত্যেকের চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারেন আর শীঘ্রই তিনি তা করবেন। তোওরুর অভিজ্ঞতা দেখায়, এই বিষয়টা জানা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত আশা প্রদান করে আর সেইসঙ্গে এখনই আরও ভালোভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। হ্যাঁ, এমনকী চারিদিকে দুঃখকষ্ট থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বর যেভাবে আপনার জন্য চিন্তা দেখান, তা থেকে আপনি উপকৃত হতে পারেন।