অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৯
যখন আমাদের কোনো প্রিয়জন যিহোবাকে ছেড়ে চলে যায়
“তাহারা . . . কতবার তাঁহাকে মনঃপীড়া দিল।”—গীত. ৭৮:৪০.
গান ৪২ ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর’
সারাংশ *
১. যখন কোনো ব্যক্তি সমাজচ্যুত হয়, তখন তার পরিবারের সদস্যেরা কেমন অনুভব করে?
আপনার পরিবারের কোনো সদস্য কি মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তা হলে আপনি নিশ্চয়ই অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন। বোন হিল্ডা * বলেন: “বিয়ের ৪১ বছর পর যখন আমার স্বামী মারা যায়, তখন আমার মনে হয়েছিল, এর চেয়ে খারাপ আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু, সেই সময় আমি আরও বেশি কষ্ট পাই, যখন আমার ছেলে মণ্ডলী ও সেইসঙ্গে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে চলে যায়।”
২-৩. গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১ পদ অনুযায়ী যখন কেউ সত্য ছেড়ে চলে যায়, তখন যিহোবা কেমন অনুভব করেন?
২ যিহোবা আপনার কষ্ট খুব ভালোভাবে বোঝেন কারণ তিনিও এইরকম কষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। স্বর্গে তাঁর কিছু সন্তান তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। (যিহূদা ৬) আর পৃথিবীতে তাঁর লোকেরা বার বার তাঁকে দুঃখ দিয়েছিল। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১.) বর্তমানেও, কেউ যখন তাঁকে ছেড়ে চলে যায়, তখন তিনি খুব দুঃখ পান। তাই, আস্থা রাখুন যে, তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন এবং আপনাকে উৎসাহিত করবেন।
৩ কিন্তু, যিহোবার কাছে থেকে সাহায্য লাভ করার জন্য আপনাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হবে, সেই পদক্ষেপগুলো কী। এ ছাড়া, এও তুলে ধরা হবে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে। তবে আসুন প্রথমে জানি যে, আপনার কী করা উচিত নয়।
নিজেকে দোষ দেবেন না
৪. যখন কোনো সন্তান যিহোবাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন বাবা-মায়েরা কেমন অনুভব করে?
৪ যখন কোনো সন্তান যিহোবাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন বাবা-মায়েরা প্রায়ই এইরকম চিন্তা করে থাকে, ‘আমরা যদি তাকে যিহোবা সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে
শেখাতাম, তা হলে আজ হয়তো সে যিহোবাকে ছেড়ে যেত না!’ ভাই লুকের ছেলে যখন সমাজচ্যুত হয়, তখন তারও ঠিক এইরকমটা মনে হয়। তিনি বলেন: “আমার মনে হয়েছিল, এতে আমারই ভুল আছে। আমি খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখতাম। অনেক বার তো আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতাম।” বোন এলিজাবেথের ছেলে যখন সমাজচ্যুত হয়, তখন বোনেরও ঠিক এইরকমটা মনে হয়। তিনি চিন্তা করতেন, “ছেলেকে বড়ো করে তোলার ক্ষেত্রে কোথায় আমার ত্রুটি ছিল যে, ও সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছে?”৫. যখন কেউ যিহোবাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন ভুলটা আসলে কার?
৫ মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আমাদের প্রত্যেককে বেছে নিতে হবে যে, আমরা যিহোবার সেবা করব কি করব না। (যিহো. ২৪:১৫) এইরকমটা দেখা গিয়েছে, যে-অল্পবয়সিদের বাবা-মা সত্যে ছিল না কিংবা যারা তাদের যিহোবা সম্বন্ধে ভালোভাবে শেখায়নি, তাদের মধ্যে কিছু সন্তান যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপর দিকে, এমন অল্পবয়সিরাও রয়েছে, যাদের বাবা-মায়েরা তাদের যিহোবা সম্বন্ধে ভালোভাবে শিখিয়েছে, কিন্তু তারা সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছে। আপনার সন্তানেরা যদি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেয়, তা হলে নিজেকে দোষ দেবেন না।
৬. যখন বাবা কিংবা মা সত্য ছেড়ে চলে যায়, তখন সন্তানেরা কেমন অনুভব করে?
৬ কখনো কখনো বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ এক জন যিহোবা ও নিজের পরিবার ছেড়ে চলে যান। (গীত. ২৭:১০) এটা সন্তানদের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে কারণ তারা তাদের বাবা-মাকে খুব ভালোবাসে এবং তাদের অনেক সম্মান করে। বোন এস্টারের বাবা যখন সমাজচ্যুত হন, তখন তার প্রতি এমনই কিছু হয়েছিল। তিনি বলেন: “আমি খুব কান্নাকাটি করতাম কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম, বাবা শুধু সত্য থেকেই দূরে সরে যায়নি, কিন্তু যিহোবাকেও পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করেছে। আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি। তাই, আমি চিন্তা করতে করতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তাম যে, বাবার কী হবে। আর মাঝে মাঝে আমি খুব ঘাবড়ে যেতাম।”
৭. যিহোবা সেই সন্তানদের জন্য কেমন অনুভব করেন, যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ এক জন সমাজচ্যুত হয়েছেন?
৭ সন্তানেরা, তোমাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ এক জন যদি সমাজচ্যুত হন, তা হলে তোমাদের কষ্টের মধ্যে দেখে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আস্থা রাখতে পারো, যিহোবাও তোমাদের কষ্ট বোঝেন। তিনি তোমাদের ভালোবাসেন আর এটা দেখে খুব খুশি হন যে, তোমরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য প্রচেষ্টা করে চলেছ। আর আমরাও তা দেখে খুব খুশি হই। মনে রেখো, তোমাদের বাবা কিংবা মা যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটার জন্য তোমরা দায়ী নও। আগে আমরা যেমনটা আলোচনা করেছিলাম, যিহোবা মানুষকে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছেন। আর প্রত্যেক খ্রিস্টানকে “নিজ নিজ দায়িত্বের ভার বহন” করতে হবে।—গালা. ৬:৫, পাদটীকা।
৮. একজন ব্যক্তি যখন সমাজচ্যুত হন, সেইসময় তার পরিবারের সদস্যেরা কী করতে পারে? (এ ছাড়া, “ যিহোবার কাছে ফিরে আসুন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
৮ আপনার পরিবারের একজন সদস্য যখন যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেন, তখন সাধারণভাবেই আপনি এই আশা রাখবেন যে, একদিন তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করার জন্য পরিশ্রম করুন। আপনার উদাহরণ দেখে আপনার পরিবারের সদস্যেরা শিখতে পারবে আর হতে পারে সেই ব্যক্তিও, যিনি সমাজচ্যুত হয়েছেন। আপনি আপনার কষ্ট কাটিয়ে ওঠার জন্যও শক্তি লাভ করবেন। আসুন দেখি, আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করার জন্য আপনি কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন।
যেভাবে আপনি আপনার বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে পারেন
৯. আপনি আপনার বিশ্বাস কীভাবে দৃঢ় রাখতে পারেন? (এ ছাড়া, “ যে-শাস্ত্রপদগুলো থেকে সান্ত্বনা লাভ করা যায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
৯ উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজে রত থাকুন। যেমন প্রতিদিন বাইবেল পড়ুন, তা নিয়ে ধ্যান করুন আর প্রতিটা সভায় উপস্থিত থাকুন। এভাবে, আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে। বোন জোয়ানার উদাহরণ লক্ষ করুন, যার বাবা ও বোন সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বোন জোয়ানা বলেন: “আমি যখন বাইবেল থেকে অবীগল, ইষ্টের, ইয়োব, যোষেফ, যিশু ও অন্যান্য ব্যক্তি সম্বন্ধে পড়ি, তখন আমি শান্তভাব বজায় রাখতে পারি। আমি ভালো বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে পারি। এ ছাড়া, ব্রডকাস্টিং-এর গানগুলো শোনার মাধ্যমে আমি উৎসাহিত হই।”
১০. গীতসংহিতা ৩২:৬-৮ পদ অনুযায়ী আপনার কষ্ট সহ্য করার জন্য আপনাকে কী করতে হবে?
১০ যিহোবাকে নিজের মনের কথা খুলে বলুন। আপনি যতই হতাশ হোন না কেন, তাঁর কাছে প্রার্থনা করা বন্ধ করবেন না। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি পরিস্থিতিকে সেভাবে দেখতে আপনাকে সাহায্য করেন, যেভাবে তিনি দেখে থাকেন। আপনি তাঁকে এও বলতে পারেন, তিনি যেন আপনাকে “বুদ্ধি” দেন এবং আপনার “গন্তব্য পথ” দেখান। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:৬-৮.) প্রার্থনায় মনের কথা খুলে বললে আপনার আবারও সেই বেদনাদায়ক বিষয়গুলো মনে পড়ে যেতে পারে ঠিকই, কিন্তু আস্থা রাখুন যে, যিহোবা আপনার কষ্ট বোঝেন। তিনি আপনাকে অনেক ভালোবাসেন আর তিনি চান যেন আপনি আপনার মনের অবস্থা তাঁকে বলেন।—যাত্রা. ৩৪:৬; গীত. ৬২:৭, ৮.
১১. ইব্রীয় ১২:১১ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থাকে সমর্থন করা উচিত? (এ ছাড়া, “ সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থা—যিহোবার প্রেমের প্রমাণ” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১১ প্রাচীনদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করুন। সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থা সত্যিই যিহোবার কাছ থেকে এক প্রেমময় ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার কারণে সবাই উপকৃত হয়, এমনকী সেই ব্যক্তিও, যিনি পাপ করেছেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:১১.) মণ্ডলীতে কিছু ব্যক্তি হয়তো অন্যায়কারী ব্যক্তির ভুলগুলোর উপর মনোযোগ না দিয়ে প্রাচীনদের সিদ্ধান্তের ত্রুটি বের করে। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের কাছে সমস্ত তথ্য নেই। তাই, ভালো হবে যেন আমরা প্রাচীনদের উপর নির্ভরতা রাখি। তারা যখন কোনো বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করেন, তখন তারা বাইবেলের নীতিগুলো অনুসরণ করেন এবং “সদাপ্রভুর” পক্ষ থেকে “বিচার” করেন।—২ বংশা. ১৯:৬.
১২. যখন লোকেরা সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছে, তখন কী হয়েছে?
১২ আমরা যখন প্রাচীনদের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি, তখন আমরা সমাজচ্যুত ব্যক্তিকে যিহোবার কাছে ফিরে আসতে সাহায্য করি। আগে উল্লেখিত বোন এলিজাবেথ বলেন: “আমার ছেলের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ না রাখা অনেক কঠিন ছিল। তবে, এর ফলাফল ভালো হয়েছে। আমার ছেলে যখন যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিল, তখন সে বলেছিল, প্রাচীনেরা তাকে সমাজচ্যুত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে এও বলেছিল, সেই সময় সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছিল। আমি এই বিষয়টা বুঝতে পেরেছি যে, যিহোবা যখনই কাউকে শাসন করেন, তখন সেটা তারই উপকার নিয়ে আসে।” বোনের স্বামী মার্ক বলেন: “পরে আমাদের ছেলে আমাদের বলেছিল, একটা যে-কারণে সে ফিরে আসতে পেরেছে, তা হল আমরা তার সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ রাখিনি। আমি খুব খুশি যে, যিহোবা আমাদের তাঁর আজ্ঞা পালন করার জন্য শক্তি দিয়েছিলেন।”
১৩. আপনার কষ্টের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
১৩ এমন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন, যারা আপনার কষ্ট বোঝে। পরিপক্ব ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটান। তারা তাদের কথার দ্বারা আপনাকে উৎসাহিত করবে। (হিতো. ১২:২৫; ১৭:১৭) আগে উল্লেখিত বোন জোয়ানা বলেন: “আমি নিজেকে খুব একা বলে মনে করতাম। কিন্তু, আমি যখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতাম, তখন তারা আমাকে অনেক উৎসাহিত করত।” তবে, মণ্ডলীতে যদি কেউ এমন কিছু বলে ফেলে, যেটার কারণে আপনার কষ্ট আরও বেড়ে যায়, তা হলে?
১৪. কেন আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি ধৈর্য ধরা উচিত?
১৪ ভাই-বোনদের প্রতি ধৈর্য ধরুন। প্রত্যেকে সবসময় সঠিক কথা বলবে না। (যাকোব ৩:২) আমরা সবাই অসিদ্ধ। তাই, কিছু লোক হয়তো এটা বুঝতে পারে না যে, তারা কী করবে। কিংবা হতে পারে, তারা অজান্তে এমন কিছু বলে ফেলে, যেটা আপনাকে দুঃখ দেয়। এইরকম ক্ষেত্রে প্রেরিত পৌলের পরামর্শ মনে রাখুন: “কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ করার কারণও থাকে, তবুও সবসময় একে অন্যকে সহ্য করো এবং পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করো।” (কল. ৩:১৩) একজন বোনের এক আত্মীয় সমাজচ্যুত হয়েছিলেন। বোন বলেন: “অনেক সময়ে ভাই-বোনেরা আমাকে উৎসাহিত করতে চাইত। কিন্তু, তারা অজান্তেই আমাকে দুঃখ দিত। যিহোবার সাহায্যে আমি তাদের ক্ষমা করতে পেরেছি।” এখন আসুন দেখি, মণ্ডলী এমন লোকদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে, যাদের পরিবারের কোনো সদস্য সমাজচ্যুত হয়েছে।
ভাই-বোনেরা সাহায্য করতে পারে
১৫. যখন কেউ সমাজচ্যুত হয়, তখন আমরা তার পরিবারের সদস্যদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
১৫ সমাজচ্যুত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রেমের সঙ্গে আচরণ করুন। যখন বোন মিরিয়ামের ভাই সমাজচ্যুত হয়েছিলেন, তখন বোন সভায় যেতে ইতস্তত বোধ করতেন। তিনি বলেন: “আমি চিন্তা করতাম, লোকেরা কী বলবে।
তবে, মণ্ডলীতে এমন অনেক ভাই-বোন ছিল, যারা আমার ভাইয়ের সমাজচ্যুত হওয়ার কারণে দুঃখী ছিল। তারা আমার ভাইয়ের বিষয়ে কোনো খারাপ কথা বলেনি। তাদের জন্যই আমার মনে হয়েছিল, এই কঠিন সময়ে আমি একা নই।” আরেকজন বোন বলেন: “যখন আমার ছেলে সমাজচ্যুত হয়েছিল, তখন অনেক ভাই-বোন আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য এসেছিল। কিছু লোক বুঝতে পারত না যে, তারা কী বলবে, কিন্তু তবুও তারা এসেছিল। অনেক ভাই-বোন আমার সঙ্গে কেঁদেছিল এবং অনেকে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য চিঠি লিখেছিল। তারা যা-কিছু করেছিল, সেগুলো আমাকে অনেক সান্ত্বনা প্রদান করেছিল।”১৬. মণ্ডলী কোন কোন উপায়ে পরিবারের সদস্যদের ক্রমাগত সাহায্য করতে পারে?
১৬ সমাজচ্যুত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করে চলুন। কখনো কখনো দেখা গিয়েছে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা সমাজচ্যুত ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আমাদের এমনটা করা উচিত নয়। তাদের এই সময়ে আমাদের ভালোবাসা ও উৎসাহের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) বিশেষভাবে সেই সন্তানদের, যাদের বাবা কিংবা মা সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমাদের তাদের উৎসাহিত করা উচিত এবং তাদের প্রশংসা করা উচিত। যখন বোন মারিয়ার স্বামী সমাজচ্যুত হন এবং তাকে ও তার সন্তানদের ছেড়ে চলে যান, তখন মারিয়া ভাই-বোনদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য লাভ করেন। বোন বলেন: “কিছু ভাই-বোন বাড়িতে এসে আমাদের জন্য রান্না করত আর সন্তানদের সঙ্গে অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করত। তারা আমার কষ্ট বুঝতে পারত এবং আমার সঙ্গে কাঁদত। যখন লোকেরা আমার সম্বন্ধে মিথ্যা কথা ছড়াত, তখন তারা আমার হয়ে কথা বলত। সত্যিই, তারা আমাকে অনেক উৎসাহিত করেছিল!”—রোমীয় ১২:১৩, ১৫.
১৭. প্রাচীনেরা সেই লোকদের কীভাবে সান্ত্বনা দিতে পারেন, যারা কষ্টের মধ্যে রয়েছে?
১৭ প্রাচীনেরা, যখনই আপনারা সুযোগ পান, তখনই সমাজচ্যুত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের উৎসাহিত করুন। এমন লোকদের সান্ত্বনা দেওয়া বিশেষভাবে আপনাদের দায়িত্ব। (১ থিষল. ৫:১৪) সভার আগে ও পরে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করুন এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করুন। তাদের সঙ্গে প্রচারে যান এবং আপনাদের পারিবারিক উপাসনায় তাদের আমন্ত্রণ জানান। যারা কষ্টের মধ্যে থাকে, প্রাচীনদের তাদের যত্ন নেওয়া উচিত, তাদের প্রতি প্রেম ও সমবেদনা দেখানো উচিত।—১ থিষল. ২:৭, ৮.
আশা ছেড়ে দেবেন না, যিহোবার উপর নির্ভর করুন
১৮. দ্বিতীয় পিতর ৩:৯ পদ অনুযায়ী যারা পাপ করে, তাদের কাছ থেকে যিহোবা কী চান?
১৮ যিহোবা “চান না, কেউ ধ্বংস হয়ে যাক, বরং চান যেন সকলে অনুতপ্ত হয়।” (পড়ুন, ২ পিতর ৩:৯.) কোনো ব্যক্তি হয়তো গুরুতর পাপ করেছে। তারপরও, যিহোবার দৃষ্টিতে তার জীবনের মূল্য রয়েছে। যিহোবা আমাদের সবার জন্য তাঁর একজাত পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন, এমনকী সেই পাপী ব্যক্তির জন্যও। যিহোবা চান, যারা তাঁর কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছে, তারা যেন আবার তাঁর কাছে ফিরে আসে। যিশু হারানো ছেলের যে-দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবা তাদের জন্য পথ চেয়ে রয়েছেন। (লূক ১৫:১১-৩২) অনেক লোক যিহোবার কাছে ফিরে এসেছে এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আনন্দের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানিয়েছে। আগে উল্লেখিত বোন এলিজাবেথ সেইসময় খুব খুশি হয়েছিলেন, যখন তার ছেলে যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিল। বোন বলেন: “আমি সেই ভাই-বোনদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ, যারা আমাদের উৎসাহিত করেছিল। তাদের কারণে আমরা আশা ছেড়ে দিইনি।”
১৯. কেন আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি?
১৯ আমরা সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি। তিনি আমাদের কখনোই এমন কিছু করতে বলবেন না, যেটা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তিনি হলেন উদার ও সমবেদনাময় পিতা। তিনি সেই লোকদের অনেক ভালোবাসেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর উপাসনা করে। তাই আস্থা রাখুন, যিহোবা কঠিন সময়ে আপনাকে ছেড়ে দেবেন না। (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) আগে উল্লেখিত মার্ক বলেন: “যিহোবা কখনো আমাদের ছেড়ে দেননি। তিনি কঠিন সময়ে আমাদের পাশে ছিলেন।” যিহোবা আপনাকেও ক্রমাগত “অসাধারণ শক্তি” দেবেন। (২ করি. ৪:৭) যখন আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যিহোবাকে ছেড়ে চলে যায়, তখনও আপনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারেন আর এই আশা রাখতে পারেন, সে যিহোবার কাছে ফিরে আসবে।
গান ৩৮ যিহোবার ওপর তোমার ভার অর্পণ করো
^ অনু. 5 যখন কেউ যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেয়, তখন তার পরিবারের সদস্যেরা খুব দুঃখ পায়। এই প্রবন্ধে আমরা জানব, যখন এমনটা হয়, তখন যিহোবা কেমন অনুভব করেন। এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হবে, তার পরিবারের সদস্যেরা কীভাবে এই কষ্ট সহ্য করতে পারে আর কীভাবে নিজেদের বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে পারে। এখানে এও উল্লেখ করা হবে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে।
^ অনু. 1 এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।