শাসন—ঈশ্বরের প্রেমের এক প্রমাণ
“প্রভু [“যিহোবা,” NW] যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন।”—ইব্রীয় ১২:৬.
১. কীভাবে বাইবেল প্রায়ই শাসনের বিষয়ে বর্ণনা করে?
আপনি যখন “শাসন” শব্দটা শোনেন, তখন আপনার মনে কোন চিত্র ভেসে ওঠে? অনেকের মনে শাস্তি দেওয়ার চিত্র ভেসে ওঠে কিন্তু আসলে, শাসন হল সেটার চেয়ে আরও বেশি কিছু। বাইবেল বলে যে, উপদেশ বা শাসন আমাদের জন্য উত্তম এবং কখনো কখনো বাইবেলে এটাকে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, প্রেম ও জীবনের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। (হিতো. ১:২-৭; ৪:১১-১৩) এর কারণ হল প্রভু যিহোবার কাছ থেকে আসা শাসন প্রমাণ করে যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং চান যেন আমরা চিরকাল বেঁচে থাকি। (ইব্রীয় ১২:৬) যদিও ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া শাসনের মধ্যে মাঝে মাঝে শাস্তি অন্তর্ভুক্ত থাকে, কিন্তু এটা কখনোই নিষ্ঠুরতাপূর্ণ অথবা ক্ষতিকারক নয়। সত্যি বলতে কী, “শাসন” শব্দটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থের সঙ্গে শিক্ষার বিষয়টা জড়িত রয়েছে, ঠিক যেমন একজন বাবা অথবা মা তার প্রিয় সন্তানকে শিক্ষা দেন।
২, ৩. কীভাবে শাসন হয়তো শিক্ষা ও শাস্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
২ এই উদাহরণটা নিয়ে চিন্তা করুন। জনি নামে একটি ছোটো ছেলে বাড়ির মধ্যে একটা বল নিয়ে খেলা করছে। তার মা তাকে বলেন: “জনি, তোমাকে আগেও বলেছি, বাড়ির মধ্যে বল নিয়ে খেলতে নেই! বল লেগে কিছু ভেঙে যেতে পারে।” কিন্তু, জনি মায়ের কথায় কান না দিয়ে বল নিয়ে খেলতেই থাকে। হঠাৎ, বলটা একটা ফুলদানিতে গিয়ে লাগে আর সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়! এরপর, জনির মা তাকে শাসন করার জন্য কী করেন? তিনি তাকে এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে শিক্ষা দেন যে, সে যেটা করেছে, সেটা কেন ভুল। তিনি চান যেন জনি এটা বোঝে যে, বাবা-মায়ের বাধ্য হওয়া তার জন্য ভালো এবং তারা যে-নিয়মগুলো স্থাপন করেন, সেগুলো প্রয়োজনীয় ও যুক্তিসংগত। জনি যাতে এই শিক্ষাটা বুঝতে পারে, সেইজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, কিছু সময়ের জন্য তার বলটা নিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়াও উপযুক্ত হবে। জনি এতে মোটেও খুশি হয়নি, তবে এটা তাকে মনে রাখতে সাহায্য করেছিল যে, সে যদি তার বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তা হলে তাকে সেটার পরিণতি ভোগ করতে হবে।
৩ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা ঈশ্বরের গৃহের অর্থাৎ পরিবারের সদস্য। (১ তীম. ৩:১৫) আমাদের পিতা যিহোবা ঈশ্বরের কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং আমরা যখন তাঁর অবাধ্য হই, তখন আমাদের শাসন করার অধিকার রয়েছে। এ ছাড়া, আমাদের কাজের কারণে যদি মন্দ পরিণতি দেখা দেয়, তা হলে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া প্রেমময় শাসন আমাদের এটা মনে রাখতে সাহায্য করতে পারে যে, তাঁর বাধ্য হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। (গালা. ৬:৭) ঈশ্বর আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং তিনি চান না যে, আমরা কষ্ট পাই।—১ পিতর ৫:৬, ৭.
৪. (ক) আমরা কীভাবে অন্যদের প্রশিক্ষণ দিই বলে যিহোবা চান? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
৪ আমরা যখন বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে শাসন প্রদান করি, তখন আমরা কোনো সন্তান অথবা বাইবেল ছাত্রকে খ্রিস্টের অনুসারী হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারি। আমরা বাইবেল ব্যবহার করে আমাদের ছাত্রদের শিক্ষা দিই যে, কোন বিষয়গুলো সঠিক আর সেইসঙ্গে ‘যিশু আমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছেন সে সমস্ত’ তাদের বুঝতে ও “পালন করিতে” সাহায্য করি। (মথি ২৮:১৯, ২০; ২ তীম. ৩:১৬) যিহোবা চান যেন তারা এভাবেই শাসন বা প্রশিক্ষণ লাভ করুক, যাতে তারাও অন্যদের খ্রিস্টকে অনুসরণ করার জন্য সাহায্য করতে পারে। (পড়ুন, তীত ২:১১-১৪.) এখন আসুন, আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করি: (১) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া শাসন কীভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন? (২) যে-ব্যক্তিরা ঈশ্বরের কাছ থেকে শাসন লাভ করেছিল, তাদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (৩) যিহোবা ও তাঁর পুত্র যেভাবে শাসন করেন, কীভাবে আমরা সেটা অনুকরণ করতে পারি?
ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে শাসন করেন
৫. কীভাবে যিহোবার কাছ থেকে আসা শাসন প্রমাণ করে যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন?
৫ যিহোবা আমাদের সংশোধন করেন, শিক্ষা দেন ও প্রশিক্ষিত করেন কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন। তিনি চান যেন আমরা তাঁর নিকটে থাকি এবং চিরকাল বেঁচে থাকি। (১ যোহন ৪:১৬) তিনি কখনো আমাদের অপমান করেন না অথবা এমনটা মনে করানোর চেষ্টা করেন না যে, আমরা অযোগ্য। (হিতো. ১২:১৮) এর পরিবর্তে, যিহোবা আমাদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন এবং আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করতে দেন। আপনি কি দেখতে পান, কীভাবে বাইবেল, আমাদের প্রকাশনা, বাবা-মা অথবা প্রাচীনদের কাছ থেকে পাওয়া শাসন প্রমাণ করে যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন? সত্যি বলতে কী, আমরা যে ভুল করেছি, সেটা নিজেরা বুঝতে পারার আগেই প্রাচীনরা যখন মৃদুতা ও প্রেমের সঙ্গে আমাদের সংশোধন করার চেষ্টা করেন, তখন তারা আসলে আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেমকে অনুকরণ করেন।—গালা. ৬:১.
৬. কীভাবে শাসন ঈশ্বরের প্রেমকে প্রকাশ করে, এমনকী যদিও শাসনের কারণে কোনো ব্যক্তি একটা কার্যভার পালন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন?
৬ কখনো কখনো শাসন কেবল পরামর্শের চেয়ে আরও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। কোনো ব্যক্তি যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে তিনি মণ্ডলীতে নির্দিষ্ট কিছু কার্যভার পালন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন। যখন এমনটা ঘটে, এমনকী তখনও সেই শাসন ওই ব্যক্তির প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসাকে প্রকাশ করে। উদাহরণ স্বরূপ, এটা হয়তো তাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, বাইবেল অধ্যয়ন করা, ধ্যান করা ও প্রার্থনা করার পিছনে আরও বেশি সময় ব্যয় করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলো করার ফলে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। (গীত. ১৯:৭) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়তো সেই দায়িত্ব অথবা কার্যভারগুলো ফিরে পেতে পারেন, যেগুলো তিনি একসময় হারিয়েছিলেন। এমনকী কোনো ব্যক্তিকে যখন সমাজচ্যুত করা হয়, তখনও সেটা যিহোবার ভালোবাসার প্রমাণ দেয় কারণ এই ব্যবস্থা মণ্ডলীকে খারাপ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখে। (১ করি. ৫:৬, ৭, ১১) আর যেহেতু প্রভু যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া শাসন সবসময়ই ন্যায্য, তাই এটা সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তিকে বুঝতে সাহায্য করে যে, তার পাপ কতটা গুরুতর। এর ফলে, তিনি মন ফেরাতে বা অনুতপ্ত হতে পারেন।—প্রেরিত ৩:১৯.
যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া শাসন আমাদের উপকৃত করে
৭. শিব্ন কে ছিলেন এবং তিনি কোন মন্দ গুণ গড়ে তুলেছিলেন?
৭ শাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝার জন্য আমরা এখন দু-জন ব্যক্তির উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব, যারা যিহোবার কাছ থেকে শাসন লাভ করেছিলেন। একজন হলেন, রাজা হিষ্কিয়ের সময়কার একজন ইস্রায়েলীয় ব্যক্তি শিব্ন এবং আরেক জন হলেন, আমাদের সময়কার একজন ভাই, গ্রেয়াম। শিব্ন “বাটীর অধ্যক্ষ,” খুব সম্ভবত রাজা হিষ্কিয়ের বাড়ির অধ্যক্ষ ছিলেন আর তার হাতে প্রচুর কর্তৃত্ব ছিল। (যিশা. ২২:১৫) কিন্তু, শিব্ন অহংকারী হয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যদের এমনটা মনে করাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি এমনকী নিজের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করে একটা কবর তৈরি করেছিলেন এবং ‘প্রতাপ-রথ সকলে’ চড়ে যাতায়াত করতেন।—যিশা. ২২:১৬-১৮.
৮. কীভাবে যিহোবা শিব্নকে শাসন করেছিলেন এবং কীভাবে আমরা জানি যে, তিনি হয়তো সেই শাসন থেকে উপকৃত হয়েছিলেন?
৮ যেহেতু শিব্ন গৌরব লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন, তাই ঈশ্বর তার কার্যভার অন্য একজন ব্যক্তি ইলীয়াকীমকে দিয়েছিলেন। (যিশা. ২২:১৯-২১) এটা সেইসময় ঘটেছিল, যখন অশূর-রাজ সন্হেরীব যিরূশালেমকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিলেন। পরবর্তী সময়, সন্হেরীব যিহুদিদের ভয় দেখানোর জন্য এবং রাজা হিষ্কিয়কে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য কয়েক জন রাজকর্মচারী ও এক বিশাল সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন। (২ রাজা. ১৮:১৭-২৫) হিষ্কিয় ইলীয়াকীম ও আরও দু-জন ব্যক্তিকে সেই রাজকর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করতে পাঠিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন শিব্ন, যিনি সেইসময় একজন লেখক বা সচিব হিসেবে কাজ করছিলেন। এখান থেকে আমরা বুঝি যে, শিব্ন হয়তো নম্র হতে শিখেছিলেন এবং তিনি অসন্তুষ্ট হননি কিংবা দুঃখে ভেঙে পড়েননি। তিনি একটা কম গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। শিব্নের প্রতি যা ঘটেছিল, সেখান থেকে আমরা তিনটে শিক্ষা লাভ করতে পারি। সেগুলো কী?
৯-১১. (ক) শিব্নের কাছ থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি? (খ) যিহোবা শিব্নের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটা সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?
৯ প্রথমত, শিব্ন যে তার পদ হারিয়েছিলেন, সেটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার” আসে। (হিতো. ১৬:১৮) আমাদের হয়তো মণ্ডলীতে বিশেষ কার্যভার রয়েছে আর অন্যেরা হয়তো মনে করে যে, আমরা হলাম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যদি তা-ই হয়, তা হলে আমরা কি নম্রতা বজায় রাখব? আমরা কি এটা মনে রাখব যে, আমাদের কাছে থাকা যেকোনো দক্ষতা আসলে যিহোবার কাছ থেকেই এসেছে এবং আমাদের করা যেকোনো ভালো কাজ একমাত্র তাঁর কারণেই সম্ভবপর হয়েছে? (১ করি. ৪:৭) প্রেরিত পৌল এই সতর্কবাণী দিয়েছিলেন: “আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী প্রত্যেক জনকে বলিতেছি, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক; কিন্তু . . . সে সুবোধ হইবারই চেষ্টায় আপনার বিষয়ে বোধ করুক।”—রোমীয় ১২:৩.
১০ দ্বিতীয়ত, যিহোবা শিব্নকে দৃঢ়ভাবে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটা এই বিষয়টাকে ইঙ্গিত করতে পারে যে, যিহোবার বিশ্বাস ছিল, শিব্ন পরিবর্তিত হতে পারেন। (হিতো. ৩:১১, ১২) এটা সেই ব্যক্তিদের জন্য একটা শিক্ষা, যারা কোনো বিশেষ কার্যভার হারিয়েছে। তারা রেগে যাওয়ার এবং অসন্তুষ্ট হওয়ার পরিবর্তে যিহোবাকে তাদের সর্বোত্তমটা দেওয়া চালিয়ে যেতে পারে। তারা সেই শাসনকে যিহোবার প্রেমের একটা প্রমাণ হিসেবে দেখা বেছে নিতে পারে। মনে রাখবেন, আমাদের পিতা পরিশেষে সেই ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করবেন, যারা নত থাকবে বা নম্রতা বজায় রাখবে। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৬, ৭.) আমরা যদি নম্র ও নরম মাটির মতো হই, তা হলে যিহোবার প্রেমময় শাসন আমাদের গঠন করতে পারে।
১১ তৃতীয়ত, যিহোবা শিব্নের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেখান থেকেও আমরা একটা মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারি। যদিও যিহোবা যেভাবে শাসন করেন, সেটা দেখায় তিনি পাপকে ঘৃণা করেন, তবে এটা এও দেখায়, তিনি সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যিনি পাপ করে ফেলেছেন। যিহোবা লোকেদের মধ্যে ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন। আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা কিংবা একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি যিহোবা যেভাবে শাসন করেন, সেটাকে অনুকরণ করবেন?—যিহূদা ২২, ২৩.
১২-১৪. (ক) কোনো কোনো ব্যক্তি যখন যিহোবার কাছ থেকে শাসন লাভ করে, তখন তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য একজন ভাইকে তার মনোভাব পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল এবং সেটার ফলাফল কী হয়েছিল?
১২ দুঃখের বিষয় হল, কোনো কোনো ব্যক্তিকে যখন শাসন করা হয়, তখন তারা এতটাই দুঃখ পায় যে, তারা ঈশ্বর ও মণ্ডলীর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। (ইব্রীয় ৩:১২, ১৩) এর অর্থ কি এই যে, কেউই তাদের সাহায্য করতে পারবে না? না! গ্রেয়ামের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যাকে একসময় সমাজচ্যুত করা হয়েছিল এবং পরে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। কিন্তু, পুনর্বহাল হওয়ার পর তিনি প্রচার করা ও সভায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একজন প্রাচীন গ্রেয়ামের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করেছিলেন এবং একসময়, গ্রেয়াম সেই প্রাচীনকে তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
১৩ সেই প্রাচীন স্মরণ করে বলেন: “গ্রেয়ামের সমস্যাটা ছিল অহংকার। তিনি সেই প্রাচীনদের সম্বন্ধে সমালোচনা করতেন, যারা তাকে সমাজচ্যুত করার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই, পরবর্তী কয়েকটা অধ্যয়ন পর্বে আমরা এমন কিছু শাস্ত্রপদ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, যেগুলো অহংকার ও সেটার প্রভাব সম্বন্ধে তুলে ধরে। গ্রেয়াম ঈশ্বরের বাক্যের আয়নায় নিজেকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলেন এবং তিনি যা দেখেছিলেন, সেটা তার মোটেও ভালো লাগেনি! এর ফলাফল চমৎকার হয়েছিল! তিনি যে অহংকারের ‘কড়িকাটের’ কারণে অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন এবং তার সমালোচনাপূর্ণ মনোভাব যে আসলে তার সমস্যা, তা স্বীকার করার পর তিনি দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করতে শুরু করেছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভায় যোগ দেওয়া, মনপ্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করা এবং প্রতিদিন প্রার্থনা করাকে তার অভ্যাসে পরিণত করা শুরু করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি নিজের পরিবারের মস্তক হিসেবে তার আধ্যাত্মিক দায়িত্বগুলো পালন করতে শুরু করেছিলেন আর এতে, তার স্ত্রী ও সন্তানেরা অনেক আনন্দিত হয়েছিল।”—লূক ৬:৪১, ৪২; যাকোব ১:২৩-২৫.
১৪ সেই প্রাচীন আরও বলেন: “একদিন, গ্রেয়াম আমাকে এমন কিছু বলেছিলেন, যেটা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে সত্য সম্বন্ধে জানি আর আমি অগ্রগামী হিসেবেও সেবা করেছি। কিন্তু, একমাত্র এখনই আমি মন থেকে বলতে পারি, আমি যিহোবাকে ভালোবাসি।’” শীঘ্রই, গ্রেয়ামকে সভার সময় মাইক্রোফোন দেখাশোনার কাজে সাহায্য করার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেই কার্যভার লাভ করে খুব খুশি হয়েছিলেন। সেই প্রাচীন বলেন: “গ্রেয়ামের উদাহরণ আমাকে শিখিয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যখন শাসন গ্রহণ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের সামনে নিজেকে নত করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি অনেক আশীর্বাদ লাভ করেন!”
শাসন করার সময় ঈশ্বর ও খ্রিস্টকে অনুকরণ করুন
১৫. আমরা যে-শাসন প্রদান করি, সেটা যাতে কার্যকরী হয়, সেইজন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১৫ আমরা যদি ভালো শিক্ষক হতে চাই, তা হলে প্রথমে আমাদের অবশ্যই ভালো ছাত্র হতে হবে। (১ তীম. ৪:১৫, ১৬) একইভাবে, আপনি যদি এমন কেউ হন, যাকে যিহোবা অন্যদের শাসন করার জন্য ব্যবহার করেন, তা হলে আপনাকে অবশ্যই নম্রতা বজায় রাখতে হবে এবং আপনার জীবনে যিহোবাকে নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। অন্যেরা যখন দেখবে, আপনি একজন নম্র ব্যক্তি, তখন তারা আপনাকে সম্মান করবে এবং তাদের পক্ষে আপনার কাছ থেকে উপদেশ বা পরামর্শ গ্রহণ করা আরও সহজ হবে। এক্ষেত্রে আমরা যিশুর উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি।
১৬. কার্যকরী উপায়ে শাসন ও শিক্ষা প্রদান করার বিষয়ে আমরা যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
১৬ যিশু সবসময় তাঁর পিতার বাধ্য হয়েছিলেন, এমনকী সেইসময়ও যখন তা করা খুবই কঠিন ছিল। (মথি ২৬:৩৯) তিনি তাঁর শ্রোতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর শিক্ষা ও প্রজ্ঞা তাঁর পিতার কাছ থেকে এসেছে। (যোহন ৫:১৯, ৩০) যিশু নম্র ও বাধ্য ছিলেন আর এটা তাকে একজন সমবেদনাময় শিক্ষক হতে সাহায্য করেছিল। আন্তরিক লোকেরা তাঁর চারপাশে থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করত। (পড়ুন, লূক ৪:২২.) যিশুর সদয় কথাগুলো সেই ব্যক্তিদের উৎসাহিত করেছিল, যারা নিরুৎসাহিত ছিল এবং দুর্বল বোধ করত। (মথি ১২:২০) তিনি তাঁর প্রেরিতদের সদয় ও প্রেমময় উপায়ে সংশোধন করেছিলেন, এমনকী যদিও তিনি এই কারণে বিরক্ত হতে পারতেন যে, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এই বিষয়টা নিয়ে প্রেরিতরা তর্ক করছিলেন।—মার্ক ৯:৩৩-৩৭; লূক ২২:২৪-২৭.
১৭. কোন গুণগুলো প্রাচীনদের ভালোভাবে মণ্ডলীর যত্ন নিতে সাহায্য করবে?
১৭ প্রাচীনরা যখনই বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে শাসন প্রদান করুন না কেন, তাদের খ্রিস্টকে অনুকরণ করা প্রয়োজন। এভাবে তারা এই বিষয়ে প্রমাণ দেবেন যে, তারা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের দ্বারা নির্দেশিত হতে চান। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুক ভাবে কর; নিরূপিত অধিকারের উপরে কর্ত্তৃত্বকারীরূপে নয়, কিন্তু পালের আদর্শ হইয়াই কর।” (১ পিতর ৫:২-৪) যে-প্রাচীনরা আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বর ও খ্রিস্টের বশ্যতা স্বীকার করবেন, তারা নিজেরা উপকৃত হবেন এবং তাদের যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিরাও উপকৃত হবে।—যিশা. ৩২:১, ২, ১৭, ১৮.
১৮. (ক) যিহোবা বাবা-মায়েদের কাছ থেকে কী আশা করেন? (খ) কীভাবে ঈশ্বর বাবা-মায়েদের সাহায্য করেন?
১৮ পরিবারের মধ্যে শাসন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করার বিষয়ে কী বলা যায়? যিহোবা পরিবারের মস্তকদের বলেন: “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফি. ৬:৪) প্রশিক্ষণ ও শাসন প্রদান করার কি সত্যিই প্রয়োজন রয়েছে? বাইবেল দেখায় যে, যিহোবা বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের শাসন করার দায়িত্ব দেন এবং তারা যদি সেই দায়িত্ব পালন না করেন, তা হলে তাদের অবশ্যই তাঁর কাছে নিকাশ দিতে হবে! (১ শমূ. ৩:১২-১৪) কিন্তু, বাবা-মায়েরা যখন প্রার্থনায় যিহোবার কাছে সাহায্য চান এবং নির্দেশনার জন্য তাঁর বাক্য ও পবিত্র আত্মার উপর নির্ভর করেন, তখন যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা প্রজ্ঞা ও শক্তি দেন।—পড়ুন, যাকোব ১:৫.
কীভাবে চিরকাল শান্তিতে থাকা যায়, তা শিখুন
১৯, ২০. (ক) আমরা যখন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া শাসন গ্রহণ করি, তখন কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করা যায়? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
১৯ আমরা যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া শাসন গ্রহণ করি এবং যিহোবা ও যিশু যেভাবে শাসন প্রদান করেন, সেটাকে অনুকরণ করি, তা হলে আমরা অগণিত আশীর্বাদ লাভ করব! আমাদের পরিবার ও মণ্ডলীতে শান্তি থাকবে এবং সকলেই অনুভব করবে যে, অন্যেরা তাদের ভালোবাসে ও মূল্যবান বলে মনে করে আর সেইসঙ্গে তারা সুরক্ষিত বোধ করবে। এটা ভবিষ্যতে আমরা যে-শান্তি ও সুখ লাভ করব, সেটার কেবল এক আভাস মাত্র। (গীত. ৭২:৭) যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া শাসন আমাদের প্রস্তুত করছে, যাতে আমরা আমাদের পিতা যিহোবার অধীনে চিরকাল এক শান্তিপূর্ণ ও একতাবদ্ধ পরিবার হিসেবে একত্রে বেঁচে থাকতে পারি। (পড়ুন, যিশাইয় ১১:৯.) আমরা যদি এই বিষয়টা মনে রাখি, তা হলে আমরা বুঝতে পারব যে, শাসন আসলে কী: আমাদের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা প্রকাশ করার একটা চমৎকার উপায়।
২০ পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা পরিবার ও মণ্ডলীতে শাসন প্রদান করার বিষয়ে আরও কিছু শিখব। আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যে, কীভাবে আমরা নিজেদের শাসন করতে পারি। আর আমরা এও শিখব যে, কীভাবে আমরা এমন কিছু এড়াতে পারি, যেটা যেকোনো শাসনের চেয়ে আরও বেশি দুঃখজনক।