সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনকাহিনি

আমি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহচর্য থেকে উপকৃত হয়েছি

আমি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহচর্য থেকে উপকৃত হয়েছি

যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডেকোটার ব্রুকিংজে কোনো এক স্নিগ্ধ সকালে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল। আমি তখন বুঝতে পারি, খুব শীঘ্র এই এলাকায় প্রচণ্ড শীত পড়বে। জেনে অবাক হবেন, ঠিক সেই দিনই আমরা কয়েক জন একটা উত্তাপহীন গোলা ঘরের মধ্যে শীতে কাঁপছিলাম। আর আমরা গবাদি পশুর জন্য ব্যবহৃত একটা জল খাওয়ার পাত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, যেটার কিছু অংশ ঠাণ্ডা জলে পূর্ণ করা হয়েছিল! এর কারণ কী তা বোঝার জন্য, আমি আপনাদের আমার ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে কিছু বলছি।

পরিবারের সঙ্গে আমার ছেলেবেলা

আলফ্রেড জ্যাঠা ও আমার বাবা

আমার জন্ম ১৯৩৬ সালের ৭ মার্চ। পরিবারে চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে আমি সবার ছোটো। সাউথ ডেকোটার পূর্বাঞ্চলে একটা ছোট্ট খামার বাড়িতে আমরা থাকতাম। চাষবাস ও গবাদি পশু পালন করা ছিল আমাদের পরিবারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কিন্তু তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল না। আমার বাবা-মা ১৯৩৪ সালে বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন। তারা যেহেতু আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন, তাই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাই ছিল তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়। আমার বাবা ক্ল্যারেন্স এবং পরে আমার জ্যাঠা আলফ্রেড, মণ্ডলীতে কোম্পানি দাস (এখন প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর) হিসেবে সেবা করেছিলেন। আমাদের ছোটো মণ্ডলীটা সাউথ ডেকোটার কনডে শহরে অবস্থিত ছিল।

আমাদের পরিবারের তালিকার একটা নিয়মিত অংশ ছিল, খ্রিস্টীয় সভাতে যোগ দেওয়া ও ভবিষ্যতের বিষয়ে বাইবেলের অপূর্ব আশা সম্বন্ধে অন্যদের বলার জন্য ঘরে ঘরে প্রচারে যাওয়া। বাবা-মায়ের উদাহরণ এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ আমাদের ছোটোদের উপর এক গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। আমার দিদি ডরথি ও আমি ছয় বছর বয়সে প্রকাশক হয়েছিলাম। ১৯৪৩ সালে আমি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ যোগ দিয়েছিলাম, যা সেই বছরই আমাদের সভাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

১৯৫২ সালে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সময়

সম্মেলনগুলো আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। ভাই গ্র্যান্ট সুইটার ১৯৪৯ সালে সাউথ ডেকোটার সু ফলসে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনের অতিথি বক্তা ছিলেন। তার বক্তৃতা আমার এখনও মনে আছে, যেটার শিরোনাম ছিল, “আপনারা যখন ভাবছেন তার চেয়েও দেরিতে!” তিনি বক্তৃতায় এই বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন, সমস্ত উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানকে ঈশ্বরের স্থাপিত রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য নিজের জীবন পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে হবে। এটা আমাকে যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। পরের সীমা সম্মেলনে, ব্রুকিংজে আমি একটা ঠাণ্ডা জলের পাত্রের সামনে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, যে-বিষয়ে প্রথমে উল্লেখ করেছি। স্টিলের সেই জলাধার আমাদের চার জনের বাপ্তিস্মের ‘পুল’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই দিনটা ছিল ১৯৪৯ সালের ১২ নভেম্বর।

তখন থেকে আমি অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করার লক্ষ্যস্থাপন করি। আমি ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, ১৫ বছর বয়সে অগ্রগামী সেবা শুরু করি। বাইবেল বলে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে” আর আমার পরিবারে এমন জ্ঞানী বা বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ছিলেন, যারা আমার অগ্রগামী সেবার সিদ্ধান্তে আমাকে সমর্থন করেছিলেন। (হিতো. ১৩:২০) জুলিয়াস জ্যাঠা আমার অগ্রগামী সঙ্গী হয়েছিলেন, যার বয়স ছিল ৬০ বছর। আমাদের মধ্যে বয়সের অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, আমরা প্রচারে একসঙ্গে অনেক আনন্দদায়ক সময় কাটিয়েছি। তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা অর্জন করতে পেরেছি। খুব শীঘ্র ডরথি দিদিও অগ্রগামী সেবা শুরু করেছিল।

সীমা অধ্যক্ষরা ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রকাশ করেন

আমি ছোটো থাকতে, বাবা-মা সবসময় সীমা অধ্যক্ষদের ও তাদের স্ত্রীদের আমাদের ঘরে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। তাদের মধ্যে জেসি ও লিন ক্যান্টওয়েল দম্পতি আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। আমি যে অগ্রগামী সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটার পিছনে একটা কারণ ছিল তাদের উৎসাহ। আমার প্রতি তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ আমার মধ্যে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যস্থাপন করার প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল। আমাদের কাছাকাছি মণ্ডলীগুলোতে সেবা করার সময় তারা মাঝে মাঝে আমাকে তাদের সঙ্গে প্রচারে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতেন। তা কতই-না আনন্দদায়ক ও গঠনমূলক ছিল!

এরপর, বাড মিলার ও তার স্ত্রী জোন, আমাদের মণ্ডলীতে ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেন। তখন আমার বয়স ১৮ বছর আর তাই আমাকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। সামরিক বাহিনীতে কাদের যোগ দিতে হবে, তা স্থানীয় একটা কমিটি নির্ধারণ করত। সেই কমিটি আমাকে প্রথমে এমন শ্রেণিতে রেখেছিল, যার ফলে আমার মনে হয়েছিল, রাজনৈতিক বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার ব্যাপারে যিশু তাঁর অনুসারীদের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমি সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছি না। আর আমি রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে চেয়েছিলাম। (যোহন ১৫:১৯) তাই আমি সেই কমিটির কাছে আবেদন করেছিলাম, যেন আমাকে ধর্মীয় পরিচারকদের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কমিটির শুনানির সময় ভাই মিলার নিজে থেকে আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। তার এই মনোভাব আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল। তিনি মিশুক স্বভাবের ছিলেন আর সহজে ভয় পেতেন না। তার মতো আধ্যাত্মিকমনা একজন ব্যক্তিকে আমার পাশে পেয়ে আমার মনোবল কতই-না বেড়ে গিয়েছিল! সেই শুনানির পর, ১৯৫৪ সালের গ্রীষ্মের শেষের দিকে কমিটি আমাকে পরিচারকদের শ্রেণিভুক্ত করেছিল। এর ফলে আমার জন্য আরেকটা আধ্যাত্মিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ খুলে গিয়েছিল।

ফার্মে একটা ট্রাকের সামনে, আমি তখন নতুন বেথেলকর্মী

এই সময়ে, আমি নিউ ইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের বেথেলে সেবা করার আমন্ত্রণ পাই। সেটাকে তখন ওয়াচটাওয়ার ফার্ম বলা হতো। আমি সেখানে প্রায় তিন বছর সেবা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে থাকার সময় আমার চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল কারণ সেখানে বিভিন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল আর আমি তাদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম।

বেথেল সেবা

ভাই ফ্রাঞ্জের সঙ্গে ডব্লিউবিবিআর রেডিও স্টেশনের সামনে

স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের সেই ফার্মে ডব্লিউবিবিআর রেডিও স্টেশনও ছিল। যিহোবার সাক্ষিরা ১৯২৪ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সেই স্টেশন পরিচালনা করেছে। বেথেল পরিবারের মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন সদস্যকে সেই ফার্মে নিযুক্ত করা হয়েছিল। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই যুবক ছিলাম আর বলতে গেলে আমাদের অভিজ্ঞতাও কম ছিল। কিন্তু, একজন বয়স্ক অভিষিক্ত ভাই এলডন উডওয়ার্থ আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি সত্যিই একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তার পিতৃসুলভ স্নেহ আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছিল। কখনো কখনো, অন্যদের অসিদ্ধতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যখন কঠিন মনে হতো, তখন ভাই উডওয়ার্থ বলতেন, “যদিও আমরা অসিদ্ধ, কিন্তু প্রভু আমাদের দারুণ উপায়ে ব্যবহার করছেন।”

প্রচার কাজে হ্যারি পিটারসনের অসাধারণ উদ্যোগ ছিল

আমরা ভাই ফ্রেডরিক ডব্লিউ ফ্রাঞ্জের সঙ্গেও কাজ করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম। তার প্রজ্ঞা ও শাস্ত্র সম্বন্ধে অসাধারণ জ্ঞান আমাদের সকলের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তিনি আমাদের প্রত্যেকের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রকাশ করতেন। ভাই হ্যারি পিটারসন আমাদের বাবুর্চি হিসেবে সেবা করতেন; আমাদের জন্য তার আসল নাম পাপাইরাপুলাস ডাকার চেয়ে তার পদবি ধরে ডাকা আরও সহজ ছিল। তিনিও একজন অভিষিক্ত ভাই আর তিনি পরিচর্যায় অসাধারণ উদ্যোগী ছিলেন। ভাই পিটারসন বেথেলে নিজের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতেন আর তিনি কখনো ক্ষেত্রের পরিচর্যাকে কম গুরুত্ব দেননি। তিনি প্রতি মাসে শত শত পত্রিকা অর্পণ করতেন। এ ছাড়া, শাস্ত্র সম্বন্ধে তার প্রচুর জ্ঞান ছিল আর তিনি আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতেন।

বিজ্ঞ বোনদের কাছ থেকে উপকৃত হই

ফার্মে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী সেখানেই একটা ফ্যাক্টরিতে ক্যানজাত করা হতো। পুরো বেথেল পরিবারের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৪৫,০০০ ঝুড়ি ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাত করে ক্যানে ভরা হতো। সেই সময়ে, আমি এট্টা হুথের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, যিনি সত্যিই একজন বিজ্ঞ বোন। আমরা যেসব খাবার ক্যানে ভরতাম, সেগুলোর প্রস্তুতপ্রণালী দেখাশোনা করার দায়িত্ব তার উপর ছিল। এই কাজ করার সময় স্থানীয় বোনেরা সাহায্য করতে আসতেন আর বোন এট্টা তাদের কাজ সংগঠিত করতেন। যদিও খাদ্যসামগ্রী প্রক্রিয়াজাতকরণে বোন এট্টা মূল ভূমিকা পালন করতেন, কিন্তু ফার্মের তত্ত্বাবধানকারী ভাইদের প্রতি সম্মান বজায় রাখার ব্যাপারে তিনি সতর্কতার সঙ্গে উত্তম উদাহরণস্থাপন করতেন। ঈশ্বরদত্ত মস্তক ব্যবস্থার প্রতি বশীভূত থাকার ব্যাপারে আমি তাকে এক উত্তম উদাহরণ বলে মনে করি।

এট্টা হুথ ও অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে

খাদ্যসামগ্রী ক্যানজাত করার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য যে-যুবতী বোনেরা আসত, তাদের মধ্যে একজন হল অ্যাঞ্জেলা রোমানো। সে সত্যে আসার পর বোন এট্টা তাকে সাহায্য করেছিলেন। এভাবে, বেথেলে সেবা করার সময় আরেকজন বিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, যে বিগত ৫৮ বছর ধরে আমার পাশে পাশে রয়েছে। অ্যাঞ্জি ও আমি ১৯৫৮ সালের এপ্রিল মাসে বিয়ে করি আর আমরা একসঙ্গে সেবা করার বিভিন্ন সুযোগ উপভোগ করেছি। যিহোবার প্রতি অ্যাঞ্জির একনিষ্ঠ আনুগত্য এত বছর ধরে আমাদের বৈবাহিক জীবনে শক্তির এক উৎস হয়ে এসেছে। আমরা যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হই না কেন, আমি তার উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি।

মিশনারি কার্যভার এবং ভ্রমণ কাজ

স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে অবস্থিত ডব্লিউবিবিআর অফিস ১৯৫৭ সালে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল আর তখন আমি অল্পসময়ের জন্য ব্রুকলিন বেথেলে সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এরপর, অ্যাঞ্জিকে বিয়ে করার পর আমি বেথেল ছেড়ে চলে যাই আর আমরা প্রায় তিন বছর ধরে স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করি। এমনকী কিছুটা সময় ধরে আমি নতুন মালিকের অধীনে সেই রেডিও স্টেশনে কাজ করেছি, যেটাকে ডব্লিউপিওডব্লিউ নাম দেওয়া হয়েছিল।

অ্যাঞ্জি ও আমি আমাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাতে আমরা যেখানে প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি। এর ফলে, ১৯৬১ সালের শুরুর দিকে আমরা ন্যাব্রাসকার ফলস্‌ সিটিতে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করতে পেরেছি। এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর পরই আমরা রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাই। তখন নিউ ইয়র্কের সাউথ ল্যানসিংয়ে এক মাসের এই কোর্স করানো হতো। আমরা সেই স্কুল উপভোগ করেছিলাম আর আশা করেছিলাম, ন্যাব্রাসকায় ফিরে গিয়ে আমাদের সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগাব। কিন্তু, এক নতুন কার্যভার—কাম্বোডিয়ায় মিশনারি হিসেবে সেবা করার সুযোগ—পেয়ে আমরা অবাক হয়ে যাই! দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অপূর্ব দেশে আমরা এমন বিচিত্র সব দৃশ্য, আওয়াজ ও ঘ্রাণের সঙ্গে পরিচিত হই, যেগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের আগে কখনো হয়নি। আমরা মনে-প্রাণে চেয়েছিলাম, যেন সেখানে সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে পারি।

কিন্তু, সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় আর তাই আমাদের দক্ষিণ ভিয়েতনামে চলে যেতে হয়। আরও দুঃখের বিষয় হল, দু-বছরের মধ্যে আমার গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয় আর তাই আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয় যেন আমরা নিজেদের দেশে ফিরে যাই। শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য আমার কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরেই, আমরা আবার পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করেছিলাম।

১৯৭৫ সালে অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে একটা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়

১৯৬৫ সালের মার্চ মাসে, আমরা বিভিন্ন মণ্ডলীতে ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ পাই। অ্যাঞ্জি ও আমি ৩৩ বছর ধরে সীমা ও জেলার কাজে সাহায্য করেছি আর এর মধ্যে ছিল সম্মেলনের আয়োজন করা ও সম্মেলন পূর্ববর্তী বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা। সম্মেলনগুলো সবসময় আমার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে এসেছে আর তাই এই কাজ সংগঠিত করতে পেরে আমার ভালো লাগত। আমরা কয়েক বছর ধরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ছিলাম আর সেই সময়ে ইয়াংকি স্টেডিয়ামে বেশ কয়েকটা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।

বেথেলে ফিরে আসি ও বিভিন্ন স্কুলে সেবা করি

বিশেষ পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করেছে এমন অনেকের মতো, অ্যাঞ্জি এবং আমার সামনেও বিভিন্ন রোমাঞ্চকর ও সেইসঙ্গে কঠিন কার্যভার এসেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৯৫ সালে আমাকে মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-এ শিক্ষা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর তিন বছর, আমাদের বেথেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রায় ৪০ বছর আগে যেখানে আমি বিশেষ পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করেছিলাম, সেখানে ফিরে আসা সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল। আমি কিছু সময় পরিচর্যা বিভাগে এবং বেশ কয়েকটা স্কুলে একজন নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছি। পরিচালকগোষ্ঠী ২০০৭ সালে গঠিত নতুন ঐশিক বিদ্যালয় বিভাগ-এর অধীনে বেথেলে বিভিন্ন স্কুলের ব্যবস্থা করেছিল আর আমি কয়েক বছর সেই বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম।

সম্প্রতি আমরা এই ধরনের স্কুলের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন রদবদল দেখতে পেয়েছি। ২০০৮ সালে, মণ্ডলীর প্রাচীনদের জন্য স্কুল শুরু হয়েছে। এর পরের দু-বছরে ১২,০০০-রেরও বেশি প্রাচীন প্যাটারসন ও ব্রুকলিন বেথেলে শিক্ষা লাভ করেছেন। এখনও বিভিন্ন জায়গায় এই স্কুলের আয়োজন করা হচ্ছে আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্ষেত্রের পরিচর্যা সংক্রান্ত নির্দেশকরা সেগুলো পরিচালনা করছেন। ২০১০ সালে, মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-এর নাম পরিবর্তন করে অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল রাখা হয় এবং খ্রিস্টান দম্পতিদের জন্য বাইবেল স্কুল নামে আরেকটা নতুন স্কুল গঠন করা হয়।

২০১৫ সাল থেকে, এই দুটো স্কুলকে যুক্ত করে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল গঠন করা হয়। এখানে যাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে দম্পতি থাকতে পারে কিংবা অবিবাহিত ভাই অথবা বোনেরাও থাকতে পারে। বিভিন্ন শাখা অফিস এই স্কুলের ব্যবস্থা করবে, তা জানতে পেরে সারা বিশ্বের অনেকে রোমাঞ্চিত হয়েছিল। এভাবে ঐশিক শিক্ষা ছড়িয়ে যেতে দেখে আমি রোমাঞ্চিত হই আর যারা এই ধরনের প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ গ্রহণ করে নেয়, তাদের অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

একটা জলাধারে বাপ্তিস্ম নেওয়ার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত, আমি যখন আমার জীবনের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমি সত্যে চলার পথে বিভিন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তির সহযোগিতার জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই। তারা সকলে আমার বয়সি ছিলেন না কিংবা আমার সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকেও ছিলেন না। কিন্তু, তারা সত্যিকার অর্থেই আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন। যিহোবার প্রতি তাদের গভীর প্রেম তাদের কাজে ও মনোভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তাঁর সংগঠনে এমন অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের সাহচর্য আমরা লাভ করতে পারি। আমি সেটাই করেছি আর সত্যিই উপকৃত হয়েছি।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে আমার খুব ভালো লাগে