সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জগতের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করুন

জগতের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করুন

“দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা . . . জগতের।”—কল. ২:৮.

গান সংখ্যা: ২৩, ২৬

১. কলসীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল কী লিখেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

 প্রেরিত পৌল প্রায় ৬০-৬১ খ্রিস্টাব্দে রোমে কারাবদ্ধ থাকার সময় কলসীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন তাদের ‘আত্মিক বুদ্ধির’ অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখার ক্ষমতার প্রয়োজন রয়েছে। (কল. ১:৯) পৌল বলেছিলেন: “[আমি] এ কথা বলিতেছি, যেন কেহ প্ররোচক বাক্যে তোমাদিগকে না ভুলায়। দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।” (কল. ২:৪, ৮) এরপর, পৌল ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, কেন কিছু কিছু জনপ্রিয় ধারণা আসলে ভুল কিন্তু তা সত্ত্বেও, কেন অনেকে সেগুলো পছন্দ করে। উদাহরণ স্বরূপ, এইরকম কোনো কোনো ধারণার কারণে লোকেরা মনে করতে পারে, তারা অন্যদের চেয়ে বিজ্ঞ ও উত্তম। তাই, পৌল ভাইদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তারা জগতের চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলার ও মন্দ অভ্যাসগুলো প্রত্যাখ্যান করার জন্য সাহায্য লাভ করতে পারে।—কল. ২:১৬, ১৭, ২৩.

২. কেন আমরা জগতের চিন্তাভাবনার উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

যে-লোকেরা জগতের মতো চিন্তাভাবনা করে, তারা যিহোবার নীতিগুলো উপেক্ষা করে এবং আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে তাদের ধারণাগুলো ধীরে ধীরে ঈশ্বরের প্রজ্ঞার উপর আমাদের আস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। আমরা সবাই টেলিভিশনে, ইন্টারনেটে, কর্মস্থলে অথবা স্কুলে জগতের চিন্তাভাবনার সম্মুখীন হই। এই মন্দ প্রভাব এড়িয়ে চলার জন্য আমরা কী করতে পারি? এই প্রবন্ধে আমরা জগতের চিন্তাভাবনার পাঁচটা উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব এবং দেখব যে, কীভাবে আমরা এই ধারণাগুলো প্রত্যাখ্যান করতে পারি।

আমাদের কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করার প্রয়োজন রয়েছে?

৩. অনেকে কোন ধারণাটা পছন্দ করে এবং কেন?

“আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেই একজন ভালো ব্যক্তি হতে পারি।” এই ধারণাটা বর্তমানে অনেক দেশে খুবই প্রচলিত। যারা এমনটা বলে থাকে, তারা হয়তো ঈশ্বর আছেন কি না, সেই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেনি কিন্তু তারা কেবল এটা মনে করে আনন্দ পায় যে, তাদের যা ইচ্ছা, তা-ই করার স্বাধীনতা রয়েছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০:৪.) অন্যেরা মনে করে, তারা এমনটা বলার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিচয় দেয় যে, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেই উত্তম নীতি পালন করতে পারি।”

৪. যে-ব্যক্তি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই, তাকে সাহায্য করার জন্য আমরা কী বলতে পারি?

সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই, এই বিষয়টা বিশ্বাস করা কি যুক্তিযুক্ত? অনেকে যখন এর উত্তর জানার জন্য বিজ্ঞানের শরণাপন্ন হয়, তখন তারা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। কিন্তু, সত্যটা খুবই সরল। একটা বাড়ি কি এমনি এমনিই তৈরি হয়ে যেতে পারে? অবশ্যই না! কোনো ব্যক্তিকে এটা নির্মাণ করতে হবে। তবে, একটা বাড়ির চেয়ে জীবিত বিষয়গুলো আরও বেশি জটিল হয়। এমনকী সবচেয়ে মৌলিক জীবিত কোষগুলোও সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে, যেটা একটা বাড়ি কখনো করতে পারবে না। এর অর্থ হল, কোষগুলো একইসঙ্গে তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে পারে এবং নতুন কোষগুলোকে সেই তথ্য প্রেরণ করতে পারে, যাতে সেই নতুন কোষগুলোও নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। কে জীবিত কোষগুলোকে এই সমস্ত কিছু করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন? বাইবেল উত্তর দেয়: “প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।”—ইব্রীয় ৩:৪.

৫. ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেই আমরা ভালো বিষয়গুলো নির্ণয় করতে পারি, এই ধারণা সম্বন্ধে কী বলা যায়?

ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেই আমরা ভালো বিষয়গুলো নির্ণয় করতে পারি, এই ধারণা সম্বন্ধে কী বলা যায়? এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের বাক্য বলে, এমনকী যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তারাও হয়তো উত্তম নীতি পালন করতে পারে। (রোমীয় ২:১৪, ১৫) উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো তার বাবা-মাকে সম্মান করেন ও ভালোবাসেন। কিন্তু, তিনি যদি যিহোবার মান অনুসরণ না করেন, তা হলে তিনি খুবই মন্দ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। (যিশা. ৩৩:২২) বর্তমানে, অনেক বুদ্ধিমান লোক এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, জগতের ভয়ংকর সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। (পড়ুন, যিরমিয় ১০:২৩.) তাই, আমাদের কখনোই এমনটা মনে করা উচিত নয়, আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেই এবং তাঁর মান অনুসরণ না করেই ভালো বিষয়গুলো নির্ণয় করতে পারব।—গীত. ১৪৬:৩.

আমাদের কি ধর্মের প্রয়োজন রয়েছে?

৬. অনেকে ধর্মের বিষয়ে কী মনে করে?

“আপনি ধর্ম ছাড়াই সুখী হতে পারেন।” অনেকে ধর্মকে একঘেয়ে ও মূল্যহীন বলে মনে করে। এ ছাড়া, অনেক ধর্ম নরকাগ্নির শিক্ষা দেয়, অর্থ দেওয়ার জন্য লোকেদের জোর করে অথবা রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন করে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দিন দিন আরও বেশি লোক বলে থাকে, তারা ধর্ম ছাড়াই সুখে আছে! তারা হয়তো এমনটা বলতে পারে, “আমি ঈশ্বরের বিষয়ে আগ্রহী কিন্তু আমি কোনো ধর্মের সদস্য হতে চাই না।”

৭. কীভাবে সত্য ধর্ম আপনাকে সুখী করতে পারে?

আমরা কি ধর্ম ছাড়া প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারি? এটা ঠিক যে, একজন ব্যক্তি মিথ্যা ধর্মের সদস্য না হয়ে সুখী হতে পারেন। কিন্তু, ‘পরম ধন্য ঈশ্বর’ বা সুখী ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে কোনো ব্যক্তিই প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারে না। (১ তীম. ১:১১) যিহোবার করা প্রত্যেকটা কাজই অন্যদের সাহায্য করে। তাঁর দাস হিসেবে আমরা ধন্য বা সুখী কারণ আমরাও অন্যদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজি। (প্রেরিত ২০:৩৫) উদাহরণ স্বরূপ চিন্তা করুন, কীভাবে সত্য উপাসনা একটা পরিবারকে সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। আমরা আমাদের বিবাহসাথির প্রতি সম্মান ও বিশ্বস্ততা দেখাতে, দায়িত্বপ্রাপ্ত সন্তান মানুষ করে তুলতে ও আমাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখাতে শিখি। সত্য উপাসনা যিহোবার লোকেদের শান্তিতে একসঙ্গে কাজ করতে এবং তাদের ভাইদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে সাহায্য করে।—পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪.

৮. কী লোকেদের সুখী হতে সাহায্য করে, তা বোঝার জন্য কীভাবে লূক ১১:২৮ পদ আমাদের সাহায্য করতে পারে?

তাহলে, একজন ব্যক্তি কি ঈশ্বরের সেবা না করেই প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারেন? কী লোকেদের সুখী করে তোলে? কোনো কোনো ব্যক্তি তাদের কেরিয়ার, খেলাধুলা অথবা বিভিন্ন শখের পিছনে সময় ব্যয় করে আনন্দ খুঁজে পায়। অন্যেরা আবার তাদের পরিবার ও বন্ধুদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়। এই বিষয়গুলো আনন্দ নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু আমাদের জীবনের আরও মহৎ এক উদ্দেশ্য রয়েছে, যেটা অনন্ত সুখ নিয়ে আসতে পারে। আমরা পশুদের চেয়ে আলাদা আর তাই আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারি এবং তাঁর উপাসনা করতে পারি। তিনি আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, আমরা যখন এই কাজগুলো করি, তখন আমরা ধন্য বা সুখী হই। (পড়ুন, লূক ১১:২৮.) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন যিহোবার উপাসনা করার জন্য আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলিত হই, তখন আমরা আনন্দ ও উৎসাহ লাভ করি। (গীত. ১৩৩:১) এ ছাড়া, আমরা এক বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের অংশ হতে পেরে, শুচি জীবনযাপন করতে পেরে এবং ভবিষ্যতের জন্য এক চমৎকার আশা লাভ করতে পেরে আনন্দিত হই।

আমাদের কি নৈতিক মানের প্রয়োজন রয়েছে?

৯. (ক) যৌনতা সম্বন্ধে একটা জনপ্রিয় ধারণা কী? (খ) কেন ঈশ্বরের বাক্য বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক করাকে অন্যায় বলে তুলে ধরে?

“বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক করার মধ্যে দোষের কী রয়েছে?” লোকেরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে: “আপনারা এত নিয়ম মেনে চলেন কেন? জীবন উপভোগ করুন!” কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য ব্যভিচার বা যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার বিষয়টাকে নিষেধ করে। a (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৮.) যেহেতু যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই তাঁর আমাদের জন্য আইন তৈরি করার অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, একজন পুরুষ ও একজন নারী যদি একে অপরকে বিয়ে করেন, একমাত্র তা হলেই তারা তাদের বিয়ের মধ্যে যৌন সম্পর্ক করতে পারেন। যিহোবা আমাদের বিভিন্ন আইন দেন কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন। তিনি জানেন যে, আমরা যদি সেই আইনগুলো অনুসরণ করি, তা হলে আমাদের জীবন আরও উত্তম হবে। একটা পরিবার যদি ঈশ্বরের আইনের বাধ্য হয়, তা হলে সেই পরিবার আরও প্রেমময় হয়ে উঠবে, একে অপরের প্রতি আরও সম্মান দেখাবে এবং সুরক্ষিত বোধ করবে। কিন্তু, ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের শাস্তি দেবেন, যারা তাঁর আইন সম্বন্ধে জানা সত্ত্বেও সেগুলোর অবাধ্য হয়।—ইব্রীয় ১৩:৪.

১০. কীভাবে একজন খ্রিস্টান যৌন অনৈতিকতার প্রতিরোধ করতে পারেন?

১০ বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে আমরা যৌন অনৈতিকতাকে এড়িয়ে চলতে পারি। আমাদের অবশ্যই নিজেদের চোখকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল। আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও।” (মথি ৫:২৮, ২৯) তাই, আমাদের অবশ্যই পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক সংগীত এড়িয়ে চলতে হবে। পৌল বলেছিলেন: “তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন।” (কল. ৩:৫) এ ছাড়া, আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।—ইফি. ৫:৩-৫.

আমাদের কি জাগতিক কেরিয়ারের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত?

১১. কেন আমাদের মধ্যে হয়তো একটা উত্তম কেরিয়ার গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা আসতে পারে?

১১ “একটা উত্তম কেরিয়ার আপনাকে সুখী করে তুলবে।” লোকেরা হয়তো আমাদের একটা জাগতিক কেরিয়ারের পিছনে নিজেদের বেশিরভাগ সময় ও শক্তি ব্যয় করার বিষয়ে বলতে পারে, বিশেষভাবে এমন একটা কেরিয়ার, যা আমাদের বিখ্যাত, ক্ষমতাবান অথবা ধনী করে তুলতে পারে। যেহেতু অনেকে মনে করে যে, একটা উত্তম কেরিয়ার হল সুখী হওয়ার চাবিকাঠি, তাই আমরাও হয়তো তাদের মতো চিন্তা করা শুরু করতে পারি।

১২. একটা উত্তম কেরিয়ার কি আপনাকে সুখী করে তুলবে?

১২ এটা কি সত্য যে, একটা কেরিয়ার যা আপনাকে ক্ষমতাবান ও বিখ্যাত করে তোলে, তা আপনাকে সুখীও করে তুলবে? না। এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন। শয়তান ক্ষমতাবান ও বিখ্যাত হতে চেয়েছিল। এক অর্থে বললে, সে যা চেয়েছিল, তা সে হতে পেরেছে। কিন্তু, সে খুবই রেগে আছে আর সে মোটেও সুখী নয়। (মথি ৪:৮, ৯; প্রকা. ১২:১২) এর বিপরীতে চিন্তা করুন, আমরা যখন ঈশ্বর সম্বন্ধে এবং তিনি যে-চমৎকার ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই সম্বন্ধে অন্যদের জানতে সাহায্য করি, তখন আমরা কতটা সুখী হই! এই জগতের কোনো কেরিয়ারই আপনাকে সেই ধরনের সুখ দিতে পারবে না। এ ছাড়া, এক উত্তম কেরিয়ার গড়ে তুলতে গিয়ে প্রায়ই লোকেরা প্রতিযোগিতাপরায়ণ, আক্রমণাত্মক ও অন্যদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। কিন্তু, অবশেষে তারা নিজেদের জীবনে শূন্যতা অনুভব করে। বাইবেল বলে, তারা “বায়ুভক্ষণ” করে।—উপ. ৪:৪.

১৩. (ক) আমাদের কাজকে কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত? (খ) কী পৌলকে সত্যিই সুখী করে তুলেছিল?

১৩ এটা ঠিক যে, জীবনযাপনের জন্য আমাদের অর্থ উপার্জন করতে হবে এবং আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ বাছাই করার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু, আমাদের কাজ যেন আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে না ওঠে। যিশু বলেছিলেন: “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” (মথি ৬:২৪) যিহোবার সেবা করা এবং অন্যদের বাইবেল সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দ এনে দেয়। প্রেরিত পৌল এই ধরনের আনন্দ অনুভব করেছিলেন। যুবক বয়সে তিনি এক সফল কেরিয়ার গড়ে তোলার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। পরবর্তী সময়, তিনি যখন দেখেছিলেন যে, কীভাবে লোকেরা ঈশ্বরের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিল এবং কীভাবে সেটি তাদের জীবনকে পরিবর্তন করেছিল, তখন তিনি সত্যিই সুখী হয়েছিলেন। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ২:১৩, ১৯, ২০.) জগতের কোনো কেরিয়ারই আমাদের সেই সুখ প্রদান করতে পারে না, যেটা যিহোবার সেবা করা এবং তাঁর সম্বন্ধে অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে লাভ করা যায়!

আমরা যখন অন্যদের ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করি, তখন আমরা সুখী হই (১২, ১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

আমরা কি জগতের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি?

১৪. কেন অনেকে এই ধারণাটা পছন্দ করে যে, মানুষ নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে?

১৪ “মানুষ নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে।” অনেকে এই ধারণাটা পছন্দ করে। কেন? এই ধারণাটা যদি সত্য হতো, তা হলে এর অর্থ হতো, আমাদের ঈশ্বরের নির্দেশনার প্রয়োজন নেই আর আমরা যা ইচ্ছা, তা-ই করতে পারি। আপনি হয়তো লোকেদের বলতে শুনেছেন, যুদ্ধ, অপরাধ, রোগব্যাধি ও দরিদ্রতার মতো সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। একটা রিপোর্টে বলা হয়েছিল: “মানবজাতি যে-কারণে আরও ভালো হয়ে উঠছে, তা হল মানুষ এই জগৎকে আরও উত্তম এক স্থানে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এই কথাগুলো কি সত্য? মানুষ কি অবশেষে এই জগতের সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ খুঁজে বের করায় সফল হচ্ছে? আসুন, আমরা কিছু তথ্য পরীক্ষা করে দেখি।

১৫. কেন আমরা বলতে পারি যে, জগতের সমস্যাগুলো খুবই গুরুতর?

১৫ যুদ্ধ: প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬ কোটিরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। কেবল ২০১৫ সালে ১ কোটি ২৪ লক্ষ লোক যুদ্ধ অথবা তাড়নার কারণে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে, যে-লোকেরা তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, তাদের মোট সংখ্যা ৬ কোটি ৫০ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। অপরাধ: কোনো কোনো জায়গায় কিছু ধরনের অপরাধ কমে গিয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে, সাইবার অপরাধ, ঘরোয়া দৌরাত্ম্য, সন্ত্রাসবাদ ও কলুষতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। রোগব্যাধি: এটা ঠিক যে, মানুষ কিছু কিছু রোগের প্রতিকার খুঁজে বের করেছে। কিন্তু, ২০১৩ সালে একটা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, প্রতি বছর ৯০ লক্ষ লোক, যাদের বয়স ৬০ বছরের নীচে, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগ ও ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়। দরিদ্রতা: বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, কেবল আফ্রিকায় বসবাসরত চরম দরিদ্র লোকেদের সংখ্যা ১৯৯০ সালে যেখানে ২৮ কোটি ছিল, ২০১২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৬. (ক) কেন একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্য জগতের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে? (খ) ঈশ্বরের রাজ্য কী করবে, সেই বিষয়ে যিশাইয় ও একজন গীতরচক কী বলেছিলেন?

১৬ এই তথ্যগুলো আমাদের অবাক করে না। বর্তমানে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো স্বার্থপর লোকেদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই লোকেরা যুদ্ধ, অপরাধ, রোগব্যাধি ও দরিদ্রতা দূর করতে পারে না। একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্য তা করতে পারে। (গীত. ৪৬:৮, ৯) চিন্তা করুন, যিহোবা মানবজাতির জন্য কী করবেন। যুদ্ধ: তাঁর রাজ্য যুদ্ধের সমস্ত কারণ যেমন, স্বার্থপরতা, কলুষতা, দেশপ্রেম, মিথ্যা ধর্ম ও সেইসঙ্গে শয়তানকেও দূর করে দেবে। অপরাধ: ঈশ্বরের রাজ্য অপরাধ দূর করে দেবে। এমনকী এখনই এই রাজ্য লক্ষ লক্ষ লোককে একে অন্যকে ভালোবাসতে ও একে অপরের প্রতি আস্থা গড়ে তুলতে শেখাচ্ছে। অন্য কোনো সরকার এমনটা করতে পারে না। (যিশা. ১১:৯) রোগব্যাধি: যিহোবা শীঘ্রই রোগব্যাধি দূর করে দেবেন এবং সমস্ত লোককে নিখুঁত স্বাস্থ্য প্রদান করবেন। (যিশা. ৩৫:৫, ৬) দরিদ্রতা: তিনি দরিদ্রতা দূর করে দেবেন এবং সকলের পক্ষে সুখী জীবনযাপন করা ও তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করাকে সম্ভবপর করে তুলবেন। এটা যেকোনো অঙ্কের অর্থের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান।—গীত. ৭২:১২, ১৩.

‘কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা জানুন’

১৭. কীভাবে আপনি জগতের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন?

১৭ তাই, আপনি যদি এমন কোনো জনপ্রিয় ধারণা সম্বন্ধে শোনেন, যেটা আপনার বিশ্বাসকে পরীক্ষায় ফেলে, তা হলে সেই বিষয়ে বাইবেল যা বলে, তা শিখুন। বিষয়টা নিয়ে কোনো পরিপক্ব ভাই অথবা বোনের সঙ্গে আলোচনা করুন। এই বিষয়ে চিন্তা করুন যে, কেন লোকেরা সেই ধারণাটা পছন্দ করে, কেন সেটা ঠিক নয় এবং কীভাবে আপনি সেটা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। আমরা পৌলের এই কথা অনুসরণ করার মাধ্যমে জগতের চিন্তাভাবনা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করতে পারি: ‘বাহিরের লোকদের প্রতি বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ করুন। কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা জানুন।’—কল. ৪:৫, ৬.

a কোনো কোনো বাইবেল অনুবাদে যোহন ৮:১-১১ পদে যে-কথাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো মূল ভাষার বাইবেলের অংশ ছিল না। কেউ কেউ এই শাস্ত্রপদগুলো পড়ার পর ভুলভাবে এই উপসংহারে এসেছে, যে-ব্যক্তির মধ্যে পাপ নেই, একমাত্র তিনিই ব্যভিচারের দোষে দোষী কোনো ব্যক্তির বিচার করতে পারেন। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া ঈশ্বরের আইনে বলা হয়েছিল: “কোন পুরুষ যদি পরস্ত্রীর সহিত শয়ন কালে ধরা পড়ে, তবে . . . উভয়ে হত হইবে।”—দ্বিতীয়. ২২:২২.